নবজাতকের যত্ন নেবেন যেভাবে

অধ্যাপক ডা. শাহীন আক্তার
Thumbnail image

জন্মের পরপরই নবজাতককে বুকের দুধ পান করাতে শুরু করা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। জন্মের পর যত দ্রুত সম্ভব, এমনকি গর্ভফুল প্রসব হওয়ার আগেই বাচ্চাকে মায়ের বুকে দিতে হবে। শিশুর জন্মের পর এক থেকে দুই দিন বুকের দুধ ভালোভাবে আসে না। তখন ঘন হালকা হলুদ রঙের যে শালদুধ বের হয়, সেটি পুষ্টিগুণে এবং রোগ প্রতিরোধক্ষমতায় উচ্চমানের। দুধ খাওয়াতে শুরু করলে মায়ের বুকে দুধের প্রবাহ বাড়বে এবং শিশুটিও দ্রুত দুধ খাওয়া শিখে যাবে।

উষ্ণতা
উষ্ণতার জন্য শিশুকে একটি মোটা তোয়ালে দিয়ে পেঁচিয়ে না রেখে কয়েক স্তরে নরম সুতি কাপড় দিয়ে প্যাঁচানো ভালো। অতিরিক্ত রংচঙে, জরিযুক্ত বা সিনথেটিক কাপড় দিয়ে প্যাঁচানো উচিত নয়। বাজার থেকে কাপড় কিনে সরাসরি শিশুকে না পরিয়ে ধুয়ে রোদে শুকিয়ে তারপর পরানো উচিত।

নাভির যত্ন
চিকিৎসক, প্রশিক্ষিত ধাত্রী বা নার্স প্রসবের পরপরই শিশুর নাভিটি জীবাণুমুক্ত ব্লেড দিয়ে কাটবেন এবং দুটি জীবাণুমুক্ত ক্ল্যাম্প বা সুতা দিয়ে নাভি বেঁধে দেবেন। এরপর নাভিতে একবার ঘন স্পিরিট লাগিয়ে দিতে হবে। বাসায় আনার পরে নাভিতে কোনো ধরনের সেঁক দেওয়া যাবে না। এ ছাড়া কোনো মলম বা স্পিরিট দেওয়ার দরকার নেই। নাভি শুকনো ও পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। নাভি ঝরে যাওয়ার পরও নাভিমূলে কোনো রকম সেঁক বা মলম দেওয়ার দরকার নেই।

শিশুর ত্বকের যত্ন
শিশুর ত্বকে আমরা সরিষার তেলসহ বিভিন্ন ধরনের তেল বা লোশন মাখি। সরিষার তেল ত্বকের জন্য উপকারী নয়, তা যত খাঁটিই হোক না কেন। অলিভ অয়েল শিশুর ত্বকের জন্য ভালো। শিশুকে বেবি সোপ দিয়ে গোসল করানোর আগে বা পরে অলিভ অয়েল দিয়ে ম্যাসাজ করানো ভালো। মাঝেমধ্যে সকালের নরম রোদে শিশুকে রাখা যায়। লক্ষ রাখতে হবে, খোলামেলা রাখার কারণে যেন ঠান্ডা লেগে না যায়। নবজাতকের চোখে বা ভ্রুতে কাজল দেওয়া ঠিক নয়। এতে চোখে জীবাণুর সংক্রমণ হতে পারে।

অতিথি
নবজাতককে দেখতে অনেক আত্মীয়স্বজন যেন ঘরে ভিড় না করে, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। অনেকের শ্বাসতন্ত্রের বা ত্বকের সংক্রমণ থেকে নবজাতক বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হতে পারে।

বিপৎচিহ্ন
যেসব লক্ষণ দেখলে নবজাতককে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যেতে হবে, সেগুলোই বিপৎচিহ্ন। যেমন ১০০ ডিগ্রি বা এর বেশি জ্বর আসা অথবা শিশুর শরীরের তাপমাত্রা ৯৭ ডিগ্রির নিচে নেমে এসে ঠান্ডা হয়ে যাওয়া। শিশু বুকের দুধ টানতে না পারলে, খেতে আগ্রহী না হলে, শিশু ঘন ঘন শ্বাস নিলে, অর্থাৎ প্রতি মিনিটে ৬০ বারের বেশি শ্বাস নিলে, বুকের খাঁচা দেবে গেলে, শিশু নিস্তেজ হয়ে গেলে, বেশি নড়াচড়া না করলে বা খিঁচুনি হলে, শিশুর জন্ডিস দেখা দিলে অর্থাৎ হাত-পায়ের তালু হলুদ হয়ে গেলে দ্রুত চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যেতে হবে। কারণ, এগুলো কোনো না কোনো রোগের বা শারীরিক সমস্যার বিপৎচিহ্ন। 

আরও যত্ন প্রসঙ্গে
শিশুর যত্ন প্রসঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ আরেকটি ব্যাপার হলো প্রসূতির যত্ন। প্রসব-পরবর্তী অনেক মা খুব অসহায় বোধ করেন। মাকে পরিপূর্ণ মানসিক সহায়তা দেওয়া জরুরি। মায়ের খাবার যেন সুষম হয়, অর্থাৎ খাবারে যেন ভিটামিন, প্রোটিন, মিনারেলসহ সব খাদ্য উপাদান থাকে, সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে। অনেক সময় প্রসূতি নিজের শারীরিক সমস্যা এবং শিশুর যত্নে ব্যস্ত থাকার কারণে ঘুমাতে পারেন না। পরিবারের সবাই মিলে নতুন মাকে ঘুমানোর সুযোগ করে দিতে হবে। মনে রাখতে হবে, মা সুস্থ থাকলে, শিশুও সুস্থভাবে বেড়ে উঠতে পারবে।

অধ্যাপক ডা. শাহীন আক্তার,বিভাগীয় প্রধান নবজাতক, শিশু, কিশোর বিভাগ, এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, ঢাকা

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত