মেক্সিকোর ওপর শুল্ক আরোপ করলে ৪ লাখ মার্কিনি চাকরি হারাবে

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ : ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ১৯: ২৩
ট্রাম্পের শুল্ক আরোপের উদ্যোগ মার্কিন শ্রমবাজারে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে সতর্ক করেছেন মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট শেইনবাউম। ছবি: সংগৃহীত

যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প মেক্সিকোর ওপর শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছেন। তাঁর ঘোষণার প্রতিক্রিয়ায় মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট এবং অর্থমন্ত্রী দেশটির ওপর প্রস্তাবিত মার্কিন শুল্কের প্রতিক্রিয়া কী হবে, সে বিষয়ে স্পষ্ট বার্তা দিয়েছেন। বলেছেন, এই শুল্কের কারণে যুক্তরাষ্ট্রে ৪ লাখ মানুষ চাকরি হারানোর ঝুঁকি পড়বেন। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরার প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

গতকাল বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট ক্লাউদিয়া শেইনবাউম বলেন, ‘যদি ট্রাম্প তাঁর পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করেন, তবে মেক্সিকোর প্রতিক্রিয়া হবে খুব দ্রুত। যদি যুক্তরাষ্ট্র শুল্ক আরোপ করে, মেক্সিকোও শুল্ক বাড়াবে।’

মেক্সিকোর অর্থমন্ত্রী মার্সেলো এবরার্ড ট্রাম্পকে আঞ্চলিক বাণিজ্য যুদ্ধ শুরু করা থেকে বিরত থাকার হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, এর ফলে যুক্তরাষ্ট্রের শ্রমিকদের ‘ব্যাপক ক্ষতি’ হবে। মেক্সিকোয় উৎপাদন কারখানা পরিচালনাকারী মার্কিন গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর তথ্যে ভিত্তিতে বলেছেন, ‘এর ফলে, যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ৪ লাখ চাকরি হারাবে যুক্তরাষ্ট্রে।’

মার্সেলো এবরার্ড আরও বলেন, ‘এর প্রভাব কেবল শ্রমিকদের উপরই নয়, যুক্তরাষ্ট্রের ভোক্তাদের ওপরও পড়বে।’ উদাহরণ হিসেবে এবরার্ড বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে বিক্রি হওয়া বেশির ভাগ পিকআপ ট্রাক মেক্সিকোতে তৈরি হয়। ট্রাম্পের শুল্কের কারণে নতুন গাড়ির খরচ ৩ হাজার ডলার পর্যন্ত বাড়তে পারে বলে দাবি করেন তিনি। এবরার্ড বলেন, ‘তাই আমরা বলি, এটি হবে আত্মঘাতী পদক্ষেপ।’

ট্রাম্প প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যে, তিনি চীন, কানাডা ও মেক্সিকোসহ অন্যান্য দেশগুলোর ওপর শুল্ক আরোপের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের উৎপাদন শিল্পকে পুনরুজ্জীবিত করবেন। তবে এই পদক্ষেপ নিয়ে অর্থনীতিবিদেরা সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। তারপরও কানাডা ও মেক্সিকোর প্রতি নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্টের কঠোর অবস্থান অনেককে বিস্মিত করেছে।

গত সোমবার এক বিবৃতিতে ট্রাম্প বলেন, যদি এই তিনটি দেশ যুক্তরাষ্ট্রে অনিয়মিত অভিবাসন এবং মাদক পাচার প্রতিরোধে আরও বেশি পদক্ষেপ না নেয়, তবে তিনি ২৫ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক বৃদ্ধি করবেন। তবে শেইনবাউম এর আগে এই হুমকিকে ‘অগ্রহণযোগ্য’ বলে উল্লেখ করেছিলেন।

শেইনবাউম জানান, তিনি ট্রাম্পের সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন। সেখানে যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকো সীমান্ত দিয়ে অভিবাসন নিয়ে কথা হয়েছে। তিনি এই বিষয়ে ট্রাম্পের উদ্বেগ প্রশমিত করার চেষ্টা করেছেন। তিনি বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে আমার চমৎকার আলোচনা হয়েছে। আমরা মেক্সিকোর অভিবাসন সংক্রান্ত কৌশল নিয়ে আলোচনা করেছি এবং আমি জানিয়েছে যে, মেক্সিকো ব্যাপক নজরদারি করার কারণে এখন আর অভিবাসীবাহী ক্যারাভানগুলো উত্তর সীমান্তে পৌঁছাচ্ছে না।’

এদিকে, কর্মকর্তারা সতর্ক করে বলেছেন, ট্রাম্পের নতুন শুল্ক আরোপের হুমকি ইউএসএমসিএ (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, মেক্সিকো এবং কানাডার মধ্যে) মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির লঙ্ঘন হতে পারে। এই চুক্তি তিনটি দেশের মধ্যে বেশির ভাগ শুল্ক নিষিদ্ধ করেছে। ট্রাম্প তাঁর প্রথম মেয়াদে এই চুক্তিটি পর্যালোচনা করেছিলেন। সে সময় তিনি অভিযোগ করেছিলেন, এই চুক্তির কারণে মার্কিন ব্যবসায় উদ্যোগগুলো প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যে পড়েছে।

অপরদিকে, কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো বলেছেন, তিনি এরই মধ্যে ট্রাম্পের সঙ্গে শুল্ক হুমকি নিয়ে কথা বলেছেন এবং দুই দেশের মধ্যে দীর্ঘদিনের সম্পর্কের গুরুত্ব তুলে ধরেছেন। ট্রুডো বলেন, ‘আমরা যেসব চ্যালেঞ্জ নিয়ে একসঙ্গে কাজ করতে পারি তা নিয়ে আলোচনা করেছি। এটি একটি ভালো ফোনালাপ ছিল। এটি এমন একটি সম্পর্ক, যা যত্নসহকারে পরিচালনা করতে হয় এবং আমরা সেভাবেই করব।’

বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান বার্কলেসের বিশ্লেষকেরা বলেছেন, তারা অনুমান করেছেন ট্রাম্পের প্রস্তাবিত শুল্ক ‘ডেট্রয়েট থ্রি হিসেবে পরিচিত গাড়ি নির্মাতাদের—জেনারেল মোটরস, স্টেলান্টিস এবং ফোর্ড—মুনাফা পরিপূর্ণভাবে কমিয়ে ফেলতে পারে।

বার্কলেসের বিশ্লেষকেরা গত মঙ্গলবার এক নোটে লিখেছেন, ‘যদিও সাধারণভাবে মনে করা হয় যে, মেক্সিকো বা কানাডা থেকে আমদানি কারা যেকোনো গাড়ি বা যন্ত্রাংশের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করলে তা ব্যাঘাত সৃষ্টি করবে, কিন্তু বিনিয়োগকারীরা এই ব্যাঘাত কতটা মারাত্মক হতে পারে তা যথাযথভাবে উপলব্ধি করছেন না।’

তবে এত কিছুর পরও ট্রাম্পের দল এই ইস্যুতে অনড় অবস্থান নিয়েছে। ট্রাম্পের ট্রানজিশন টিমের মুখপাত্র ব্রায়ান হিউজ বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলে, এই শুল্ক আরোপ যুক্তরাষ্ট্রের উৎপাদক ও শ্রমিকদের বিদেশি কোম্পানি এবং বাজারের ‘অন্যায্য কার্যক্রম’ থেকে সুরক্ষা দেবে। তিনি বলেন, ‘ট্রাম্প এমন নীতি প্রণয়ন করবেন, যা যুক্তরাষ্ট্রের মানুষের জীবনযাত্রাকে আরও সাশ্রয়ী ও সমৃদ্ধ করবে।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত