Ajker Patrika

হামাস-ইসরায়েল, নেতানিয়াহু ও গণতন্ত্র প্রসঙ্গে যা বললেন নোবেল বিজয়ী হার্তা মুয়েলার

আপডেট : ১০ জুন ২০২৪, ১৪: ২১
হামাস-ইসরায়েল, নেতানিয়াহু ও গণতন্ত্র প্রসঙ্গে যা বললেন নোবেল বিজয়ী হার্তা মুয়েলার

হার্তা মুয়েলার। ২০০৯ সালে সাহিত্যে নোবেল বিজয়ী রোমানিয়ার বংশোদ্ভূত জার্মান লেখিকা। সম্প্রতি কথা বলেছেন হামাস, ইসরায়েল, বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু, বৈশ্বিক গণতন্ত্রসহ বিভিন্ন ইস্যুতে। ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম হারেৎজকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, ৭ অক্টোবর হামাস ‘শোয়াহ’ বা বিপর্যয়কেই উসকে দিতে চেয়েছিল। এ সময় তিনি ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুকে দুর্নীতিবাজ ও ক্ষমতালোভী বলেও আখ্যা দেন। 

হার্তা মুয়েলার পরিবার একসময় জার্মান নাৎসি বাহিনীর সঙ্গে যুক্ত ছিল। তবে তিনি কখনোই তাঁর পরিবারের এই বিষয়কে এড়িয়ে যাননি। বরং সব সময়ই বিশ্বের নির্যাতিত মানুষের কণ্ঠস্বর হয়ে ওঠার চেষ্টা করেছেন। রোমানিয়ার শাসক নিকোলাই চচেস্কুর বিরুদ্ধেও কলম ধরেছেন তিনি। সম্প্রতি তিনি ইনস্টিটিউশন অব জিউয়িশ কালচার ইন সুইডেনের একটি আলোচনা সভায় যোগ দেন একমাত্র অ-ইহুদি আলোচক হিসেবে। 
 
সেই আলোচনা সভায় হার্তা মুয়েলার বলেন, ‘আমি ইসরায়েলকে ছাড়া বর্তমান বিশ্ব কল্পনাও করতে পারি না।’ হারেৎজকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে হার্তা মুয়েলার দ্ব্যর্থহীনভাবে নাৎসি ও হামাসের নৃশংসতার মধ্যে তুলনা করেছেন এবং ৭ অক্টোবরের ঘটনা নিয়ে বৈশ্বিক পরিমণ্ডলে বামদের নীরবতাকে তিনি বর্ণনা করেছেন পশ্চিমা গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের পশ্চাদপসরণের লক্ষণ হিসেবে। 

হার্তা মুয়েলার বলেন, ‘৭ অক্টোবরের হত্যাকাণ্ডকে নাৎসিদের হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে তুলনা করা কি ঠিক হবে? আমি মনে করি, আমাদের এমনটাই করা উচিত। কারণ হামাস নিজেই শোয়াহে (বাইবেলে উল্লিখিত এই শব্দের অর্থ বিপর্যয়) স্মৃতি জাগিয়ে তুলতে চেয়েছিল এবং তাঁরা দেখাতে চেয়েছিল যে ইসরায়েল রাষ্ট্র আর ইহুদিদের বেঁচে থাকার বিষয়ে নিশ্চয়তা দিতে সক্ষম নয় এবং এই রাষ্ট্র একটি ভ্রম।’ 

ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী প্রসঙ্গে জার্মান এই সাহিত্যিক আরও বলেন, ‘নেতানিয়াহু হয়তো দুর্নীতিগ্রস্ত ও ক্ষমতালোভী, কিন্তু ইসরায়েল এখনো একটি গণতান্ত্রিক দেশ। সেখানে সত্যিকারের নির্বাচন হয়—স্বৈরাচারী দেশের মতো জাল নির্বাচন নয় এবং এর অর্থ হলো, ইসরায়েলের জনগণ ভোট দিতে পারে। তারা সম্ভবত তাকে এখন খুব সামান্যই ভোট দেবে, কারণ তিনি ও তাঁর কলঙ্কিত সরকার গুরুতর ভুল করেছেন, যার জন্য ইসরায়েলকে এখন মূল্য দিতে হচ্ছে।’ 

নোবেল বিজয়ী এই সাহিত্যিক আরও বলেন, নেতানিয়াহু হামাসকে সম্পূর্ণ ভুলভাবে বিবেচনা করেছেন। তিনি ভেবেছিলেন যে, তিনি এটিকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন। সংক্ষেপে বলতে গেলে, তিনি (ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ) আব্বাসকে দুর্বল করার জন্য হামাসকে শক্তিশালী করেছিলেন। স্পষ্টতই, নেতানিয়াহু তাঁর ব্যক্তিগত নিরাপত্তার ক্ষেত্রেই কেবল চতুর। 

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রীর ব্যর্থতা প্রসঙ্গে মুয়েলার আরও বলেন, যাই হোক না কেন, নেতানিয়াহু গাজা উপত্যকার ব্যাপারে খুব সামান্যই দৃষ্টিপাত করেছেন এবং কেবল পশ্চিম তীরে বসতি স্থাপনের দিকেই মনোনিবেশ করেছেন। চরমপন্থীদের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগের মাধ্যমে তিনি নিজেকে ব্ল্যাকমেইলের শিকার হওয়ার জন্য অরক্ষিত করে তুলেছেন। 

পশ্চিম তীরের ইসরায়েলি বসতি স্থাপন প্রসঙ্গে জার্মান এই সাহিত্যিক আরও বলেন, নেতানিয়াহুকে মেনে নিতে হবে যে, পশ্চিম তীরে বসতি স্থাপনকারী ইসরায়েলিরা ফিলিস্তিনিদের প্রতি প্রভুসুলভ জাতির মতো আচরণ করছে। তিনি বলেন, ‘এই আচরণ আমাকে প্রতিদিন ক্ষুব্ধ করে। এটি শুধু ইসরায়েলের সুনামই ক্ষতিগ্রস্ত করছে না, বরং এর গণতন্ত্র, মূল্যবোধ ও মানবতার ভাবমূর্তিকেও ক্ষুণ্ন করছে।’ 

এক প্রশ্নে হার্তা মুয়েলারের কাছে জানতে চাওয়া হয়, আপনি কি মনে করেন যে পশ্চিম একটি কম গণতান্ত্রিক সমাজে পরিণত হওয়ার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে? জবাবে তিনি বলেন, ‘এটি প্রায় সর্বত্রই ঘটছে—ইউরোপে, যুক্তরাষ্ট্রে সর্বত্র। এটা দুঃখজনক যে, পশ্চিম ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রের মতো মুক্ত সমাজে লোকজন আর গণতন্ত্র ও অন্যান্য ধরনের সরকারের মধ্যে পার্থক্য করে না। এই সমাজগুলো মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পতনের দিকে ধাবিত হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের মুক্ত সমাজ নিজেদের ভেঙে ফেলছে, যুক্তি ও যৌক্তিকতা নষ্ট করছে। এ ধরনের গণতন্ত্র আত্মবিধ্বংসী। ঠিক যেমন ট্রাম্প আবার নির্বাচনে জিতে গেলে যুক্তরাষ্ট্র আত্মহননে দিকে এগিয়ে যাবে।’ 

ইসরায়েলের ভবিষ্যৎ কী—এমন এক প্রশ্নের জবাবে নোবেল বিজয়ী এই সাহিত্যিক বলেন, ‘আমি আশা করি, বর্তমানে বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে থাকা শয়তানি ইহুদিবিদ্বেষ শেষ পর্যন্ত ঘুরে দাঁড়াবে এবং পরিস্থিতি আবারও যৌক্তিক হয়ে উঠবে। ভয়ংকর একনায়কতন্ত্র আমাদের সামনে রয়েছে, যা ব্যক্তি হিসেবে আমাদের প্রশ্নবিদ্ধ করে। যখন ইরান, চীন, রাশিয়া, পুতিন, খামেনি ও ট্রাম্প গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে সিদ্ধান্ত নেন, তখন আমি ভয় পাই যে, তাহলে একনায়কত্ব মানে কী? আমাদের ইসরায়েলকে দরকার।’ 

হারেৎজ থেকে সংক্ষেপে অনুবাদ করেছেন আব্দুর রহমান

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

রাশিয়াকে পশ্চিম সম্মান করলে আর যুদ্ধ হবে না: পুতিন

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ভ্লাদিমির পুতিন। ছবি: এএফপি
ভ্লাদিমির পুতিন। ছবি: এএফপি

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেছেন, ইউক্রেন যুদ্ধের পর আর কোনো যুদ্ধ হবে না—যদি পশ্চিমা দেশগুলো রাশিয়াকে সম্মান করে এবং দেশটির নিরাপত্তাগত স্বার্থকে গুরুত্ব দেয়। রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে প্রায় সাড়ে চার ঘণ্টাব্যাপী অনুষ্ঠান ‘ডিরেক্ট লাইন’-এ তিনি এই মন্তব্য করেন।

বিবিসির সাংবাদিক স্টিভ রোজেনবার্গের প্রশ্নের জবাবে পুতিন বলেন, ইউরোপীয় দেশগুলোকে আক্রমণ করার যে অভিযোগ তোলা হচ্ছে, তা সম্পূর্ণ ‘অর্থহীন’।

পুতিন দাবি করেন, রাশিয়ার প্রতি সম্মান দেখানো হলে এবং পূর্বদিকে ন্যাটোর সম্প্রসারণ নিয়ে পশ্চিমা দেশগুলো ‘প্রতারণা’ বন্ধ করলে নতুন কোনো বিশেষ সামরিক অভিযান হবে না। তিনি তাঁর পুরোনো অভিযোগের পুনরাবৃত্তি করে বলেন, ১৯৯০ সালে সোভিয়েত নেতা মিখাইল গর্বাচেভকে ন্যাটো সম্প্রসারণ না করার যে আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল, পশ্চিম তা মানেনি।

মস্কোর একটি হলে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে পুতিনের পেছনে রাশিয়ার বিশাল মানচিত্র ঝুলছিল। এই মানচিত্রে ইউক্রেনের দখলকৃত অঞ্চল, এমনকি ক্রিমিয়াও অন্তর্ভুক্ত ছিল। রুশ রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনের দাবি, ওই অনুষ্ঠানটিতে পুতিনকে উদ্দেশ্য করে ৩০ লাখের বেশি প্রশ্ন জমা পড়েছিল।

ইউক্রেন যুদ্ধের বিষয়ে পুতিন বলেন, তিনি ‘শান্তিপূর্ণভাবে’ যুদ্ধ শেষ করতে প্রস্তুত। তবে কোনো ধরনের আপসের ইঙ্গিত দেননি। তিনি আবারও দাবি করেন, ইউক্রেনকে ন্যাটোতে যোগ দেওয়ার চেষ্টা বাদ দিতে হবে এবং রাশিয়ার দখল করা চারটি অঞ্চল থেকে ইউক্রেনীয় সেনা সরিয়ে নিতে হবে। আংশিকভাবে দখল করে নেওয়া ইউক্রেনের দনবাস অঞ্চলের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ চায় রাশিয়া।

দেশের অর্থনীতির প্রশ্নে মূল্যস্ফীতি, প্রবৃদ্ধি কমে যাওয়া এবং ভ্যাট বৃদ্ধির বিষয় স্বীকার করেন পুতিন। অনুষ্ঠানের মধ্যেই রাশিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুদের হার কমিয়ে ১৬ শতাংশে নামানোর ঘোষণা দেয়। বিদেশনীতি, অর্থনীতি ও যুদ্ধের পাশাপাশি অনুষ্ঠানজুড়ে উঠে আসে মাতৃভূমি, প্রবীণ সেনাদের সম্মান এবং সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন সমস্যা।

পুতিন পশ্চিমাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে বলেন, তারা ইউক্রেনের মাধ্যমে রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালাচ্ছে। তবে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ইউরোপের সঙ্গে ‘সমান মর্যাদা ও পারস্পরিক সম্মানের ভিত্তিতে’ কাজ করতে তিনি আগ্রহ প্রকাশ করেন। রাশিয়া ভবিষ্যতে ন্যাটোর ওপর হামলা চালাতে পারে—পশ্চিমা গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর এমন আশঙ্কার কথা আবারও তা নাকচ করে দেন তিনি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

জানুয়ারিতে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে রোহিঙ্গা গণহত্যার শুনানি

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৩: ৫৬
২০১৭ সালে প্রায় সাড়ে সাত লাখ রোহিঙ্গা প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। ছবি: এপির সৌজন্যে
২০১৭ সালে প্রায় সাড়ে সাত লাখ রোহিঙ্গা প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। ছবি: এপির সৌজন্যে

মিয়ানমারের বিরুদ্ধে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর গণহত্যার অভিযোগে করা মামলার মূল শুনানি আগামী জানুয়ারিতে শুরু হচ্ছে। জাতিসংঘের সর্বোচ্চ বিচারিক সংস্থা আন্তর্জাতিক বিচার আদালত (আইসিজে) জানিয়েছে, এ মামলার শুনানি চলবে আগামী ১২ থেকে ২৯ জানুয়ারি পর্যন্ত।

এই শুনানি আন্তর্জাতিক আইনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। কারণ, এক দশকের বেশি সময় পর এটি হবে আইসিজেতে কোনো গণহত্যা মামলার মূল বিষয়ের ওপর শুনানি। একই সঙ্গে গাজা যুদ্ধ নিয়ে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে দক্ষিণ আফ্রিকার দায়ের করা মামলাতেও এর প্রভাব পড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শুনানির প্রথম সপ্তাহে (১২ থেকে ১৫ জানুয়ারি) মামলার বাদী দেশ গাম্বিয়া আদালতে তাদের অভিযোগ উপস্থাপন করবে। পশ্চিম আফ্রিকার মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ গাম্বিয়া ২০১৯ সালে ইসলামি সহযোগিতা সংস্থার (ওআইসি) সমর্থনে এ মামলা দায়ের করে। মামলায় মিয়ানমারের বিরুদ্ধে রোহিঙ্গাদের ওপর গণহত্যা চালানোর অভিযোগ আনা হয়।

এরপর ১৬ থেকে ২০ জানুয়ারি পর্যন্ত মিয়ানমার তাদের অবস্থান তুলে ধরার সুযোগ পাবে। মিয়ানমার সরকার বরাবরই গণহত্যার অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে।

আইসিজে জানিয়েছে, এ মামলায় তিন দিন সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে। তবে এসব শুনানি জনসাধারণ ও গণমাধ্যমের জন্য বন্ধ থাকবে।

জাতিসংঘের একটি তদন্ত মিশন ২০১৭ সালে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর অভিযানে ‘গণহত্যামূলক কর্মকাণ্ড’ সংঘটিত হয়েছিল বলে প্রতিবেদন দেয়। ওই অভিযানে প্রায় সাড়ে সাত লাখ রোহিঙ্গা প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়।

মিয়ানমার অবশ্য জাতিসংঘের ওই প্রতিবেদনকে ‘পক্ষপাতদুষ্ট ও ত্রুটিপূর্ণ’ বলে দাবি করেছে। দেশটির বক্তব্য, সে সময়কার অভিযান ছিল রোহিঙ্গা বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে, যারা নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর হামলা চালিয়েছিল।

মামলাটি ১৯৪৮ সালের জাতিসংঘের গণহত্যা সনদ অনুযায়ী দায়ের করা হয়েছে। নাৎসি জার্মানির হাতে ইহুদিদের গণহত্যার পর এ সনদ প্রণয়ন করা হয়। এতে গণহত্যা বলতে কোনো জাতিগত, ধর্মীয় বা নৃগোষ্ঠীকে পুরোপুরি বা আংশিকভাবে ধ্বংস করার উদ্দেশ্যে সংঘটিত হত্যাকাণ্ড, গুরুতর শারীরিক বা মানসিক ক্ষতি, কিংবা পুরোপুরি ধ্বংসের উদ্দেশ্যে সৃষ্ট পরিস্থিতিকে বোঝানো হয়েছে।

গাম্বিয়া ও মিয়ানমার—দুই দেশই এ সনদের স্বাক্ষরকারী হওয়ায় আইসিজের এ মামলার বিচারিক এখতিয়ার রয়েছে।

১৯৪৮ সালের গণহত্যা সনদের পর আইসিজে এখন পর্যন্ত মাত্র একবার গণহত্যার ঘটনা নিশ্চিত করেছে। এটি ছিল ১৯৯৫ সালে বসনিয়ার স্রেব্রেনিৎসায় প্রায় ৮ হাজার মুসলিম পুরুষ ও কিশোর হত্যাকাণ্ড।

গাম্বিয়া ও মামলায় হস্তক্ষেপকারী অন্য দেশগুলো হলো কানাডা, ফ্রান্স, জার্মানি ও যুক্তরাজ্য। এই পাঁচ দেশ আদালতে যুক্তি দিয়েছে, গণহত্যা শুধু ব্যাপক হত্যাকাণ্ডের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। তাদের মতে, জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুতি, শিশুদের বিরুদ্ধে অপরাধ এবং যৌন ও লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতাও গণহত্যার উদ্দেশ্য হিসেবে বিবেচনায় নেওয়া উচিত।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বাংলাদেশ প্রসঙ্গে বাজপেয়ির ‘সেই বক্তব্য’ সামনে আনলেন শশী থারুর

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
কংগ্রেস সাংসদ ও ভারতের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির (পররাষ্ট্রবিষয়ক) প্রধান শশী থারুর। ছবি: পিটিআই
কংগ্রেস সাংসদ ও ভারতের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির (পররাষ্ট্রবিষয়ক) প্রধান শশী থারুর। ছবি: পিটিআই

ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ও জুলাই অভ্যুত্থানের অন্যতম যোদ্ধা শরিফ ওসমান বিন হাদির মৃত্যুকে কেন্দ্র করে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে বাংলাদেশ। গতকাল বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ, সংবাদমাধ্যমের ভবনে অগ্নিসংযোগ এবং ভারতীয় আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে স্লোগান দেওয়ার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন কংগ্রেস সাংসদ ও ভারতের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির (পররাষ্ট্রবিষয়ক) প্রধান শশী থারুর।

শশী থারুর সতর্ক করে বলেছেন, বাংলাদেশে চলমান এই সহিংসতা সাধারণ বাংলাদেশিদের সহায়তা করার ক্ষেত্রে ভারতের সক্ষমতাকে সংকুচিত করে দিচ্ছে। তিনি ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারি বাজপেয়ির সেই বিখ্যাত উক্তি স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেন, ‘ভূগোল পরিবর্তন করা যায় না। আমরা যেখানে আছি সেখানেই থাকব, তারাও সেখানেই থাকবে। তাদের উচিত আমাদের সঙ্গে মিলেমিশে কাজ করতে শেখা।’

বাংলাদেশে সংবাদমাধ্যমের ওপর হামলা এবং ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে থারুর বলেছেন, ‘সহিংসতার কারণে আমাদের দুটি ভিসা সেন্টার বন্ধ করে দিতে হয়েছে। এটি অত্যন্ত হতাশাজনক। কারণ, যেসব বাংলাদেশি ভারতে আসতে চান, তাঁরাই এখন অভিযোগ করছেন যে আগে যেভাবে সহজে ভিসা পাওয়া যেত, এখন তা পাওয়া যাচ্ছে না।’

থারুর উল্লেখ করেন, বর্তমান পরিস্থিতি ভারত সরকারের পক্ষে সাধারণ বাংলাদেশিদের সাহায্য করা কঠিন করে তুলছে।

বাংলাদেশ সরকারকে ভারতের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখার ওপর গুরুত্বারোপ করে থারুর বলেন, ‘আমি আশা করি পরিস্থিতি দ্রুত স্বাভাবিক হবে। আমি বাংলাদেশের জনগণ ও সরকারকে বলব যেন তারা প্রতিবেশীর সঙ্গে এই ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের গুরুত্ব বোঝে। বাজপেয়ি সাহেব পাকিস্তানের ক্ষেত্রে যেমনটি বলেছিলেন—আমরা আমাদের ভূগোল পরিবর্তন করতে পারি না। আমরা যেখানে আছি সেখানেই থাকব, তারাও সেখানেই থাকবে। তাদের উচিত আমাদের সঙ্গে মিলেমিশে কাজ করতে শেখা।’

শশী থারুর জানান, নয়াদিল্লি পুরো পরিস্থিতি খুব নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে এবং ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় কর্মকর্তারা সরাসরি বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করবেন। তিনি বলেন, ‘ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশন সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করবে এবং পরিস্থিতি শান্ত করার জন্য যা যা করা প্রয়োজন তা করতে অনুরোধ জানাবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ভারতে তেল দিয়ে ফেরার পথে বিধ্বস্ত রুশ জাহাজ—প্রতিশোধের হুমকি পুতিনের

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ২২: ৫৩
ছবি: সিএনএন
ছবি: সিএনএন

ভূমধ্যসাগরের নিরপেক্ষ জলসীমায় ইউক্রেনীয় ড্রোন হামলায় একটি রুশ তেলবাহী ট্যাংকার ধ্বংসের ঘটনায় উত্তেজনা আরও বেড়েছে। হামলার পর রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন প্রতিশোধ নেওয়ার হুমকি দিয়েছেন। ইউক্রেন একে ‘অভূতপূর্ব বিশেষ অভিযান’ হিসেবে দাবি করলেও, রাশিয়া এটিকে আন্তর্জাতিক নৌ নিরাপত্তার জন্য নতুন হুমকি বলে আখ্যা দিয়েছে।

শুক্রবার (১৯ ডিসেম্বর) প্রকাশিত এক ভিডিওতে দেখা গেছে—ইউক্রেনীয় ড্রোনের আঘাতে রাশিয়ার ‘শ্যাডো ফ্লিট’ বা গোপন নৌবহরের অন্তর্ভুক্ত তেলবাহী ট্যাংকার ‘কেনডিল’-এ ভয়াবহ বিস্ফোরণ ঘটেছে।

ইউক্রেনের নিরাপত্তা সংস্থা এসবিইউ জানিয়েছে, হামলাটি ইউক্রেন থেকে প্রায় ১ হাজার ২০০ মাইল দূরে সংঘটিত হয়। কর্মকর্তাদের ভাষ্য অনুযায়ী, এটি প্রথমবারের মতো কৃষ্ণসাগরের বাইরে এবং নিরপেক্ষ জলসীমায় ইউক্রেনের কোনো ড্রোন হামলা।

ইউক্রেন দাবি করেছে, হামলার সময় ট্যাংকারটি খালি ছিল এবং এতে কোনো তেল বা জ্বালানি বহন করা হচ্ছিল না। ফলে পরিবেশগত কোনো ঝুঁকি তৈরি হয়নি। তবে বিস্ফোরণে জাহাজটি ‘গুরুতরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত’ হয়েছে বলে তারা দাবি করেছেন।

ইউক্রেনীয় কর্মকর্তারা আরও জানিয়েছেন, ট্যাংকারটি চলতি মাসের শুরুর দিকে ভারতের গুজরাট রাজ্যের সিক্কা বন্দরে তেল খালাস করে ফিরে যাচ্ছিল।

এই ঘটনার পর মস্কো কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। বছরের শেষ প্রান্তিকে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে প্রেসিডেন্ট পুতিনকে ভূমধ্যসাগরে রুশ ট্যাংকারে হামলার বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘এই ধরনের হামলা কিছু বাস্তব লক্ষ্যকে সামনে রেখে করা হয়—যেমন বিমা প্রিমিয়াম বাড়ানো। কিন্তু এতে সরবরাহ ব্যাহত হবে না এবং প্রত্যাশিত ফলও পাওয়া যাবে না। বরং এটি অতিরিক্ত হুমকি তৈরি করবে। আমাদের দেশ এর জবাব দেবে।’

পুতিন আরও বলেন—বেসামরিক অবকাঠামোর ওপর আঘাতের বিষয়েও রাশিয়া চুপ করে থাকবে না। তাঁর ভাষায়, ‘আমাদের পক্ষ থেকে সব সময়ই একটি পাল্টা আঘাত ঘটবে।’

বিশ্লেষকদের মতে, নিরপেক্ষ জলসীমায় ইউক্রেনের এই হামলা যুদ্ধের পরিধিকে নতুন মাত্রায় নিয়ে গেছে। একই সঙ্গে পুতিনের পাল্টা জবাবের ঘোষণা ইউক্রেন-রাশিয়া সংঘাতকে আরও বিস্তৃত ও অনিশ্চিত করে তুলতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত