সাংবাদিকদের ওপর নজরদারিতে ইসরায়েলি অ্যাপ

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ : ১৯ জুলাই ২০২১, ০২: ৫০
আপডেট : ১৯ জুলাই ২০২১, ০৪: ৩৯

বিশ্বের দেশে দেশে গণমাধ্যমের কণ্ঠরোধে প্রশাসনগুলো তৎপর হয়ে উঠেছে। কট্টর শাসকদের অধীনে পরিচালিত দেশগুলোয় সাংবাদিকদের ওপর নজরদারি করা হচ্ছে আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় অনেক বেশি। আর এ কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে ইসরায়েলি কোম্পানি এনএসও গ্রুপের তৈরি স্পাইওয়্যার পেগাসাস। পেগাসাস ব্যবহার করে বিশ্বের দেশে দেশে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের স্মার্টফোনে আড়িপাতার ঘটনা ফাঁস হয়েছে। এই তালিকায় তালিকায় রয়েছেন সম্পাদক, অনুসন্ধানী সাংবাদিকসহ বিভিন্ন সাংবাদিকের নাম। রোববার ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে এই তথ্য তুলে ধরা হয়।   

ফাঁস হওয়া তথ্যে ১৮০ জন সাংবাদিকের কথা বলা হয়েছে। যেখানে ফিনান্সিয়াল টাইমসের সম্পাদকের নম্বরও আছে। এ ছাড়া সিএনএন, নিউইয়র্ক টাইমস, ফ্রান্স ২৪, ইকোনমিস্ট, ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল, আল জাজিরা, ব্লুমবার্গ, এজেন্সি ফ্রান্স-প্রেসেস (এএফপি), আমেরিকা ভয়েস, এপি ও রয়টার্সের সাংবাদিকেরাও আছেন। 

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে,  পেগাসাস ব্যবহার করে আইফোন ও অ্যানড্রয়েড ফোনের সব মেসেজ, ফটো, ই-মেইল, কল রেকর্ড বের করা যায়।

ফাঁস হওয়া তালিকায় শত শত ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নির্বাহী, ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব, অ্যাকাডেমিক, এনজিও কর্মী, সরকারি কর্মকর্তা, মন্ত্রিসভার সদস্য, প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীরাও রয়েছেন। এই তালিকায় কাদের নম্বর আছে, তা পরে প্রকাশ করা হবে বলে গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

এনএসও বলে আসছিল যে,  যেকোনো দেশের সরকার যেগুলো প্যাগাসাসকে লাইসেন্স দেয়, তারা কেবল গুরুতর অপরাধ ও সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে গুপ্তচরবৃত্তি করার জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়। 

কিন্তু ফাঁস হওয়া তথ্যের বিশ্লেষণ থেকে দেখা যায়, সাংবাদিকদের ওপর তারা নজরদারি চালাচ্ছে। ফিনান্সিয়াল টাইমসের সম্পাদক রওলা খালাফের ফোনটি সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে নজরদারি করা হয়েছে। ২০১৮ সালে যখন তিনি পত্রিকাটির উপ সম্পাদক, তখন এ নজরদারি করা হয়।

ফিনান্সিয়াল টাইমসের এক মুখপাত্র বলেছেন, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা অত্যাবশ্যক এবং সাংবাদিকের ওপর আইনত কোনো রাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ বা নজরদারি গ্রহণযোগ্য নয়। 

অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ও প্যারিসভিত্তিক অলাভজনক সংবাদ সংস্থা ফরবিডেন স্টোরিজ প্রথম ফাঁস হওয়া এই তালিকা হাতে পায়। এর পর তারা গণমাধ্যমের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করে। 

বিশ্লেষণে দেখা যায়, শুধু আরব আমিরাত নয়, এই তালিকায় আজারবাইজান, বাহরাইন, হাঙ্গেরি, ভারত, কাজাখস্তান, মেক্সিকো, মরক্কো, রুয়ান্ডা এবং সৌদি আরব সরকার বিভিন্ন সাংবাদিককে টার্গেট করে নজরদারি চালাচ্ছে। 

এ বিষয়ে সাংবাদিকদের সুরক্ষার জন্য অলাভজনক কমিটির প্রোগ্রাম ডিরেক্টর কার্লোস মার্টিনিজ দে লা সারনা বলেছেন, সাংবাদিকদের আক্রমণ করার জন্য স্পাইওয়্যার ব্যবহার ক্রমবর্ধমান গুরুতর সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

একজন সাংবাদিকের ওপর নজরদারি রাখা শক্তিশালী প্রভাব ফেলে। আমাদের ডিভাইসগুলো প্রতিবেদনের কাজের মূল বিষয়, এটি সাংবাদিকদের যোগাযোগ উন্মোচন করে। সাংবাদিকদের উপকরণগুলো উন্মোচন করে, যা সাংবাদিককে হুমকির সম্মুখীন করে তোলে। 

এদিকে এনএসও তার ক্লায়েন্টদের কার্যক্রম সম্পর্কে করা 'মিথ্য দাবি' অস্বীকার করেছে। তারা বলছে, অপব্যবহারের প্রত্যেকটি বিষয় তারা তদন্ত করবে এবং যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। 

এ ছাড়া তারা বলেছে, সংস্থাটি জীবন রক্ষাকারী মিশনে রয়েছে। মিথ্যার ভিত্তিতে এটিকে অসম্মানিত করার যেকোনো প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়ার পরও তারা বিশ্বস্ততার সাথে এই মিশন অপরিবর্তিতভাবে শেষ করবে।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত