উবার ফাইলস: ফাঁস হওয়া সোয়া লাখ নথিতে আছে ইমানুয়েল মাখোঁর নাম

অনলাইন ডেস্ক
Thumbnail image

বিশ্বজুড়ে ট্যাক্সি সার্ভিসের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে মঞ্চে হাজির হওয়া উবারের বিজয় এখন আর কোনো গালগল্প নয়। কিন্তু রাইড শেয়ারিং অ্যাপভিত্তিক সেবাদাতা এই প্রতিষ্ঠানের ব্যবসা বিস্তারের পেছনে আছে অনেক অনৈতিক লেনদেন। অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্ম আইসিআইজের বরাত দিয়ে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান অন্তত সে কথাই জানিয়েছে।

দ্য গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়, উবার বিভিন্ন দেশে ব্যবসা বিস্তারের ক্ষেত্রে সেসব দেশের সরকারের কাছ থেকে অনৈতিক সুবিধা নিয়েছে। এ ক্ষেত্রে তারা অনৈতিক লেনদেন, যোগসাজশ, আইন লঙ্ঘন, প্রতারণা ইত্যাদির মতো সব বাঁকা ও কদর্য পথই নিয়েছে। উবারের ফাঁস হওয়া এই গোপন নথিকে আখ্যা দেওয়া হয়েছে ‘উবার ফাইলস’ হিসেবে।

উবারকে অনৈতিক সুবিধা দেওয়া প্রভাবশালীদের তালিকায় আছেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ। অর্থমন্ত্রী থাকার সময় উবারকে বিশেষ সুবিধা দিয়েছিলেন তিনি। মাখোঁ তেমন কিছুই করেননি। শুধু উবারের প্রতিদ্বন্দ্বী ট্যাক্সি শিল্পে নিয়ন্ত্রণ আরোপ করেছিলেন তিনি। যুক্তরাষ্ট্রে উবারকে সহায়তা করতে এগিয়ে এসেছিলেন সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার দুই উপদেষ্টা ডেভিড প্লুফ ও জিম মেসিনা। দেশটির রাজনীতিক, সরকারি কর্মকর্তা ও কূটনীতিকদের কাছে উবারকে পৌঁছানোর সুযোগ করে দিয়েছিলেন তাঁরা। নেদারল্যান্ডসে ব্যবসা প্রসারে উবারকে সহায়তা করেছিলেন ইউরোপিয়ান কমিশনের (ইসি) ভাইস প্রেসিডেন্ট নিলি ক্রোস। এ ঘটনায় দেশটির প্রধানমন্ত্রীও যুক্ত ছিলেন। তালিকায় ভারত, হাঙ্গেরি ও বেলজিয়ামের নামও রয়েছে।

যুক্তরাজ্যে উবারের ব্যবসা প্রসারের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন জর্জ অসবর্ন, সাজিদ জাভিদসহ ছয় মন্ত্রী। উবারের মূল লক্ষ্য ছিল তখন লন্ডনের তৎকালীন মেয়র ও সদ্য টোরি পার্টি থেকে পদত্যাগ করা বরিস জনসন।

ইন্টারন্যাশনাল কনসোর্টিয়াম অব ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিস্টসের (আইসিআইজে) মাধ্যমে উবারের ১ লাখ ২৪ হাজার গোপন নথি পেয়েছে গার্ডিয়ান। এর মধ্যে প্রতিষ্ঠানটির শীর্ষ কর্মকর্তাদের ই-মেইল, আই-মেসেজ (আইফোনের নিজস্ব বার্তা সরবরাহব্যবস্থা), হোয়াটসঅ্যাপের বার্তা রয়েছে। এ ছাড়া প্রতিষ্ঠানটির বিভিন্ন প্রেজেন্টেশন, নোটবুক, ইনভয়েসও রয়েছে। বিশ্বের ৪০টি দেশে উবারের ব্যবসার নানা গোপন নথি ও বার্তা রয়েছে।

উবার কাদের কাছ থেকে ব্যবসা বিস্তারের জন্য অনৈতিক সুবিধা নিয়েছে? উত্তরে গার্ডিয়ান বলছে, উবার তার ব্যবসা বিস্তারের ক্ষেত্রে বিভিন্ন দেশের প্রধানমন্ত্রী, প্রেসিডেন্ট, ধনকুবের, প্রভাবশালী ব্যক্তিদের সহায়তা পেয়েছে। কী ধরনের সহায়তা তারা নিয়েছে? উত্তর—বহু ধরনের। এমনকি কোনো দেশে রাইড শেয়ারিং অ্যাপের মাধ্যমে গাড়িসেবা দেওয়ার মতো আইন না থাকলে, সেখানে তারা এই নীতিনির্ধারক ও প্রভাবশালীদের সহায়তায় নতুন আইন পর্যন্ত করিয়েছে তারা।

শুধু তাই নয়, এই পুরো কার্যক্রমে উবার বিভিন্ন দেশের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাজে বাধাও দিয়েছে। পুলিশি তল্লাশিতে যেন তাদের এই কর্মকাণ্ড ধরা না পড়ে, সে জন্য তারা একটি কোড ব্যবহার করত। সিলিকন ভ্যালি থেকে নিজ প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ কর্মকর্তাদের পুলিশে তল্লাশিতে বাধা দানের বার্তাটি দিতে তারা শুধু দুটি শব্দ ব্যবহার করত—কিল সুইচ। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বুঝে যেতেন, তাদের কার্যালয়ে তল্লাশির সময় স্পর্শকাতর তথ্যাবলি পুলিশের ধরাছোঁয়ার বাইরে রাখতে হবে। এভাবে অন্তত ছয়টি দেশে তারা বার্তা পাঠিয়েছিল বলে জানিয়েছে গার্ডিয়ান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত