Ajker Patrika

নবীকে (সা.) নিয়ে দুই বিজেপি নেতার মন্তব্য: বিশ্বজুড়ে প্রতিবাদ জানাল যেসব দেশ-সংগঠন

আপডেট : ০৮ জুন ২০২২, ১৬: ৪৭
নবীকে (সা.) নিয়ে দুই বিজেপি নেতার মন্তব্য: বিশ্বজুড়ে প্রতিবাদ জানাল যেসব দেশ-সংগঠন

ইসলামের নবী হজরত মুহাম্মদকে (সা.) নিয়ে ভারতের ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টি–বিজেপির দুই নেতার বক্তব্যের তীব্র নিন্দা জানিয়েছে ২০টি দেশ ও সংগঠন। ওই দুই নেতার বক্তব্যে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বেশ বেকায়দায় পড়েছে মোদি সরকার। উপসাগরীয় দেশগুলোর পাশাপাশি উত্তর আফ্রিকার চারটি ও এশিয়ার চারটি দেশ তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে। 

ইসলামের নবীকে নিয়ে বিজেপির মুখপাত্র ও দলটির দিল্লি ইউনিটের মিডিয়া সেলের প্রধান নূপুর শর্মার মন্তব্যের কারণে নজিরবিহীন কূটনৈতিক প্রতিক্রিয়ার মুখে বিজেপি সরকার। পরিস্থিতি বিবেচনায় বিজেপি একটি বিবৃতি দিয়েছে। সেখানে ওই দুই নেতার নাম উল্লেখ করা হলেও দলীয় পদবি উল্লেখ করা হয়নি। তাঁরা দুজন যে ধরনের মন্তব্য করেছেন সেটির প্রকৃতি নিয়েও কোনো আলোচনায় যায়নি দলটি। এমনকি, ভারতের যে জনগোষ্ঠী–ভারতীয় মুসলমান–ওই দুই নেতার বক্তব্যে সবচেয়ে বেশি আঘাত পেয়েছেন তাঁদের উদ্দেশেও কোনো বার্তা দেওয়া হয়নি।

অবশ্য বিজেপি বিদেশি প্রতিবাদের চাপে এরই মধ্যে নূপুর শর্মাকে বরখাস্ত এবং নবীন জিন্দালকে বহিষ্কার করেছে। 

যেসব দেশ, সংস্থা এবং ধর্মীয় গোষ্ঠী বিজেপির ওই দুই নেতার বক্তব্যের প্রতিবাদ করেছে সেগুলো হলো: 

১. কাতার
নবী মুহাম্মদকে (সা.) নিয়ে বিজেপির দুই নেতার মন্তব্যে প্রতিক্রিয়ায় কাতার দেশটিতে নিযুক্ত ভারতীয় রাষ্ট্রদূত দীপক মিত্তালকে তলব করে ভারত সরকারকে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাওয়ার দাবি জানিয়েছে। গত ৫ জুন কাতার সরকার এই পদক্ষেপ নেয়। 

এমনকি দেশটিতে সফররত ভারতের উপরাষ্ট্রপতি ভেঙ্কাইয়া নাইড়ুর কাছেও কাছেও এই বিষয়ে তীব্র নিন্দা জানিয়েছে।

বিজেপির ওই দুই নেতার বক্তব্যের প্রতিবাদে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ঝড় তুলেছেন কাতারবাসীরা। জবাবে বিজেপি অনুসারীরাও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কাতার বর্জনের আহ্বান জানিয়েছে। টুইটারে #BycottQatarAirways এবং বয়কট কাতার ফুটবল বিশ্বকাপ ইত্যাদি লিখে জবাব দিচ্ছে। 

এদিকে, কাতারে নিযুক্ত ভারতীয় রাষ্ট্রদূতকে তলবের পর ভারতীয় দূতাবাস থেকে একটি বিবৃতি দেওয়া হয়েছে। সেখানে উল্লেখ করা হয়েছে, ভারতে কোনো ব্যক্তির ‘আক্রমণাত্মক টুইট’ কোনোভাবেই ভারত সরকারের দৃষ্টিভঙ্গিকে প্রতিফলিত করে না। এসব মন্তব্য ‘বিচ্ছিন্ন অংশের’ দৃষ্টিভঙ্গি মাত্র। 

২. কুয়েত
কুয়েত সরকারও দেশটিতে নিযুক্ত ভারতীয় রাষ্ট্রদূত সিবি জর্জকে তলব করে অফিশিয়াল প্রতিবাদলিপি হস্তান্তর করেছে। তাতে কুয়েতের তরফ থেকে বিজেপির ওই দুই নেতা নবী মুহাম্মদ সা. সম্পর্কে যে মন্তব্য করেছেন তার দৃঢ় প্রত্যাখ্যান এবং তীব্র নিন্দা জানানো হয়েছে। দেশটি বিজেপি ওই দুই নেতাকে বরখাস্ত করে যে বিবৃতি জারি করেছে তাকেও স্বাগত জানিয়েছে। 

কুয়েতের এমন প্রতিক্রিয়ায় দেশটিতে থাকা ভারতীয় দূতাবাস কাতারে ভারতীয় দূতাবাসের মতো একইরকম বিবৃতি দিয়ে নিজেদের অবস্থান জানিয়েছে। 

এদিকে, ওই বিতর্কিত মন্তব্যের প্রতিবাদে কুয়েতের একটি সুপারমার্কেট সব ধরনের ভারতীয় পণ্য নিষিদ্ধ করেছে। 

৩. ইরান
একই ঘটনায় গত ৫ জুন সন্ধ্যায় ইরানে নিযুক্ত ভারতীয় রাষ্ট্রদূত গাদ্দাম ধর্মেন্দ্রকে তলব করা হয়েছিল ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। ইরানের সংবাদমাধ্যম মেহের নিউজ জানিয়েছে, ইরান নবী মুহাম্মদ সা. নিয়ে বিজেপি নেতাদের বিতর্কিত মন্তব্যের ‘কড়া প্রতিবাদ’ জানিয়েছে। 

মেহের নিউজ আরও জানিয়েছে, ভারতীয় রাষ্ট্রদূত দুঃখ প্রকাশ করেছেন এবং বলেছেন, ইসলামের নবীকে নিয়ে যেকোনো অবমাননা অগ্রহণযোগ্য। এমন এক সময় এই ঘটনা ঘটল যখন ইরানের বর্তমান পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আব্দুল্লাহিয়ান ভারত সফরের পরিকল্পনা করেছিলেন। 

তবে এই বিষয়ে ভারতের পক্ষ থেকে কোনো ধরনে আনুষ্ঠানিক বক্তব্য জানানো হয়নি। 

৪. সৌদি আরব
ঘটনার একদিন পর সৌদি আবর ওই বিতর্কিত বিষয়ে তাদের অবস্থান ব্যক্ত করে। দেশটি বক্তব্যের তীব্র নিন্দা জানিয়ে সকলের ‘ধর্ম ও বিশ্বাসের প্রতি সম্মান’ প্রদর্শনের আহ্বান জানিয়েছে। দেশটি বলেছে, ওই বক্তব্যের মাধ্যমে নবী মুহাম্মদ সা. এর অবমাননা করা হয়েছে। 

সৌদি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে নিজেদের অবস্থান পরিষ্কার করেছে। বিবৃতিতে দেশটি, ‘ইসলামের বিরুদ্ধে যেকোনো বিদ্বেষকে চূড়ান্তভাবে প্রত্যাখ্যান’ করার বিষয়টি পুনর্ব্যক্ত করেছে। বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, সকল ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব এবং প্রতীকের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ ছড়ায় এমন সব কর্মকাণ্ডকেও চূড়ান্তভাবে প্রত্যাখ্যান করে বলে জানিয়েছে। 

তবে ঘটনার পর বিজেপি ওই মুখপাত্রকে বরখাস্ত করার বিষয়টিকে স্বাগত জানিয়েছে। 

এদিকে, সৌদি আরবের জ্যেষ্ঠ আলেমদের নিয়ে গঠিত কাউন্সিলও বিজেপির ওই দুই নেতার বিতর্কিত বক্তব্যের সমালোচনা করেছে। তাঁরা নবী মুহাম্মদ সা. এর চরিত্র এবং তাঁর কর্ম নিয়ে কোরআনের একটি আয়াতও উদ্ধৃত করে। 

মক্কা কর্তৃপক্ষ 
মক্কার মসজিদুল হারাম এবং মদিনা মসজিদে নববীর কর্তৃপক্ষ সৌদি সরকারের আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদের বাইরেও নবীকে নিয়ে ‘অবমাননাকর বক্তব্যের’ প্রতিবাদ জানিয়েছে। 

এ ক্ষেত্রেও ভারতের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক কোনো জবাব বা মন্তব্য করা হয়নি। 

৫. ওমান
ওমান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আন্ডার সেক্রেটারি শেখ খলিফা বিন আলি আল হারদি দেশটিতে নিযুক্ত ভারতীয় রাষ্ট্রদূত অমিত নারাঙকে তলব করেছিল। দেশটি জানিয়েছে, বিজেপির ওই দুই নেতার ‘আক্রমণাত্মক বক্তব্যের’ নিন্দা জানিয়েছে। ওমানও ঘটনার পর ওই দুই নেতাকে বরখাস্ত করতে বিজেপি গৃহীত পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছে। 

এ ক্ষেত্রে ভারত এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক বক্তব্য দেয়নি। 

৬. বাহরাইন
বিজেপি নেতাদের বক্তব্যের বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়ে গত সোমবার নিজেদের অবস্থান ব্যক্ত করে বিবৃতি দিয়েছে বাহরাইনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। 

বিবৃতিতে বিজেপি গৃহীত পদক্ষেপকে স্বাগত জানালেও বাহরাইনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, ‘মুসলমানদের অনুভূতিতে উসকানি এবং ধর্মীয় বিদ্বেষের প্ররোচনা হিসাবে নবী মুহাম্মদ সা. এর বিরুদ্ধে যে কোনো নিন্দনীয় অবমাননাকে নিন্দা করতে হবে।’ 

এ ক্ষেত্রেও ভারত এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক বক্তব্য দেয়নি। 

৭. আফগানিস্তান
তালেবানের নেতৃত্বাধীন আফগানিস্তানের সরকারও বিজেপির নেতাদের বক্তব্যের তীব্র নিন্দা জ্ঞাপন করে বিবৃতি জারি করেছে। দেশটির সবচেয়ে বড় সংবাদ সংস্থা পাজওয়ক নিউজ এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে। 

সংবাদ সংস্থাটি তালেবান মুখপাত্র জাবিহুল্লাহ মুজাহিদকে উদ্ধৃত করে জানিয়েছে জাবিহুল্লাহ মুজাহিদ এক টুইটে বলেছেন—‘ইসলামিক আমিরাত আফগানিস্তান ভারতের ক্ষমতাসীন দলের নেতা কর্তৃক ইসলামের নবী (সা.) এর বিরুদ্ধে অবমাননাকর শব্দ ব্যবহারের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছে। আমরা ভারত সরকারের প্রতি আহ্বান জানাই, এই ধরনের ধর্মান্ধদের যেন ইসলামের অবমাননা এবং মুসলমানদের অনুভূতিতে উসকানি দিতে না দেওয়া হয়।’ 

আফগানিস্তানের অবস্থানের বিপরীতেও ভারত কোনো বক্তব্য দেয়নি। 

৮. ইন্দোনেশিয়া
বিজেপি নেতাদের মন্তব্যের নিন্দা কেবল উপসাগরীয় দেশগুলোতেই সীমাবদ্ধ ছিল না। বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল মুসলিম দেশ ইন্দোনেশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও ভারতীয় রাষ্ট্রদূতকে তলব করেছিল। 

দেশটি বিজেপির দুই রাজনীতিবিদ কর্তৃক নবী সা. এর বিরুদ্ধে ‘অগ্রহণযোগ্য অবমাননাকর মন্তব্যের’ তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। 

এ ক্ষেত্রে ইন্দোনেশিয়ার প্রতিক্রিয়ার কোনো জবাব দেয়নি ভারত। 

৯. সংযুক্ত আরব আমিরাত
এ ঘটনায় উপসাগরীয় দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে পরে বিবৃতি দিয়েছে আরব আমিরাত। এক বিবৃতিতে দেশটির পররাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতা মন্ত্রণালয় বিজেপি নেতাদের বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়ে বলেছে তাঁরা ‘নৈতিক ও মানবিক মূল্যবোধ এবং নীতির পরিপন্থী সমস্ত অনুশীলন ও আচরণ দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান’ করেছে। 

ভারত আরব আমিরাতের প্রতিবাদেরও কোনো জবাব দেয়নি। 

১০. জর্ডান
জর্ডানও বিজেপির ওই দুই নেতার আপত্তিকর বক্তব্যের ‘শক্তিশালী ভাষায় প্রতিবাদ’ জানিয়েছে। 

জর্ডানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র হাইথাম আবু আলফুল বলেছেন, তাঁরা ‘ইসলামি এবং অন্যান্য ধর্মীয় ব্যক্তিত্বের বিরুদ্ধে যেকোনো ধরনের লঙ্ঘনকে প্রত্যাখ্যান করে এবং বিজেপির ওই দুই নেতার বক্তব্যকে চরমপন্থা ও ঘৃণা পোষণ করে এমন একটি কাজ হিসাবে বিবেচনা করছে। 

জর্ডানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র আরও বলেন, বিজেপির মুখপাত্রকে বরখাস্ত করার সিদ্ধান্ত ‘একটি সঠিক পদক্ষেপ’। 

জর্ডানের প্রতিক্রিয়ারও কোনো জবাব দেয়নি ভারত। 

১১. মালদ্বীপ
দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ মিত্রদের একটি মালদ্বীপ। দেশটি বিজেপির ওই দুই নেতার বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়ে বলেছে, তাঁরা ‘অবমাননাকর মন্তব্যের জন্য গভীরভাবে উদ্বিগ্ন।’ 

মালদ্বীপ ঘটনার পর ওই দুই নেতাকে বরখাস্ত করতে বিজেপি গৃহীত পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছে। 

ভারত এ ক্ষেত্রেও কোনো জবাব দেয়নি। 

১২. ইরাক
ঘটনার পর ইরাক সোমবার ভারতীয় রাষ্ট্রদূতকে তলব করে। সেসময় ইরাক এক বিবৃতিতে বলেছে, "এ ধরনের বিদ্বেষপূর্ণ ও অসম্মানজনক কাজগুলো ভয়াবহ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে। যদি এসব কাজ প্রতিহত করা না হয়, তবে তা ভয়ানক পরিণতির দিকে মোড় নিতে পারে। যা শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান নষ্টের পাশাপাশি অকল্পনীয় ক্ষতির কারণ হতে পারে, সেই সঙ্গে জনগণের মধ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধি করবে।’ 

বাগদাদের ভারতীয় দূতাবাস কাতারের ভারতীয় দূতাবাসের অনুকরণে একই জবাব দিয়েছে। 

১৩. লিবিয়া
উত্তর আফ্রিকার দেশ লিবিয়াও বিজেপির দুই নেতার বক্তব্যকে ‘অপমানজনক বক্তব্য’ বলে আখ্যা দিয়ে এর প্রতিবাদ জানিয়েছে। তবে ভারত কোনো জবাব দেয়নি। 

১৪. পাকিস্তান
পাকিস্তান নবীর (সা.) বিরুদ্ধে বিজেপির দুই নেতার বিতর্কিত মন্তব্যকে স্পষ্টভাবে প্রত্যাখ্যান করে এর নিন্দা জানাতে ভারতীয় শার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্সকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তলব করেছিল। 

পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ভারতীয় কূটনীতিককে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে যে—এই মন্তব্যগুলো ‘সম্পূর্ণভাবে অগ্রহণযোগ্য এবং তা কেবল পাকিস্তানের নয়, সারা বিশ্বের মুসলমানদের অনুভূতিকে গভীরভাবে আঘাত করেছে। 

পাকিস্তান সেনাবাহিনীও ঘটনার নিন্দা করে একটি পৃথক বিবৃতি দিয়েছে। 

পাকিস্তানের প্রতিবাদের জবাবে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র অরিন্দম বাগচি বলেছেন, ‘সরকার সব ধর্মকে সর্বোচ্চ সম্মান দেয়। ভারত সরকার পাকিস্তানের থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। পাকিস্তানে ধর্মান্ধদের প্রশংসা করা হয় এবং তাদের সম্মানে স্মৃতিস্তম্ভ তৈরি করা হয়। 

মিশর: ধর্মীয় ইস্যুতে নমনীয় মিশর সরকার এই ইস্যুতে কোনো প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেনি। তবে দেশটির দুই প্রধান ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান জোরালো প্রতিবাদ জানিয়েছে।

১৫. আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয়
মুসলমানদের অন্যতম প্রাচীন বিদ্যাপীঠ আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ও বিজেপির দুই নেতার বক্তব্য নিয়ে বিবৃতি দিয়েছে। 
 
আল আজহারের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘অজ্ঞ ভারতীয়’ যে মন্তব্য করেছে তা কেবল ‘চরমপন্থার সমর্থক এবং ঘৃণা ও রাষ্ট্রদ্রোহিতার সমর্থক এবং বিভিন্ন ধর্ম, সভ্যতা ও সংস্কৃতির অনুসারীদের মধ্যে শত্রুতার নীতি’ থেকেই উদ্ভূত হতে পারে। 

ভারত এ ক্ষেত্রেও কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি। 

১৬. মিশরের গ্র্যান্ড মুফতি
মিশরের গ্র্যান্ড মুফতি শাওকি আলামও বিজেপি নেতাদের বক্তব্যের নিন্দা করেছেন। তিনি বলেছেন, এ ধরনের ‘অপমান ঘৃণার অনুভূতিকে উসকে দেয় এবং রাষ্ট্রদ্রোহিতা বাড়ায়।’ আলাম নবী, ধর্ম, পবিত্র স্থান এবং ধর্মীয় প্রতীকগুলোর বিরুদ্ধে অবমাননাকে অপরাধ হিসেবে বিবেচনা করার আহ্বান জানিয়েছেন। 

ভারত এ ক্ষেত্রেও কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি। 

১৭. তুরস্ক
তুরস্কের ক্ষমতাসীন একে পার্টির সদস্য ও সাংবাদিক এবং সাবেক মন্ত্রী ওমের সেলিক বিজেপি নেতাদের মন্তব্যের নিন্দা করেছেন। সেলিক তাঁর টুইটারে লিখেছেন, ‘আমরা নবীর বিরুদ্ধে ভারতীয় শাসক দল–বিজেপির একজন কর্মকর্তার অবমাননাকর বক্তব্যের তীব্রতম শব্দে নিন্দা জানাচ্ছি। এটি শুধু ভারতের মুসলমানদের জন্যই নয়, সারা বিশ্বের মুসলমানদের জন্যও অপমানজনক। 

সেলিক আরও বলেন, ‘তুরস্ক আশা করে—ভারত সরকার ‘ক্রমবর্ধমান ইসলামভীতির বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা’ গ্রহণ করবে এবং মুসলমানদের ধর্মীয় স্বাধীনতাকে শক্তিশালী করবে। 

এ ক্ষেত্রে ভারত কোনো প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করছে বলে জানা যায়নি। 

১৮. মালয়েশিয়া 
মালয়েশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিজেপি নেতাদের মন্তব্যের নিন্দা করেছে এবং ভারতীয় হাইকমিশনারকে তলব করেছে। 

একটি বিবৃতিতে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, তাঁরা ‘উসকানিমূলক মন্তব্য’ দেওয়ার কর্মকর্তাদের বরখাস্ত করার বিজেপির সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে এবং ভারতকে ইসলামভীতি শেষ করতে এবং উসকানিমূলক কর্মকাণ্ড বন্ধ করার জন্য কাজ করতে আহ্বান জানিয়েছে। 

ভারতীয় কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি। 

১৯. অর্গানাইজেশন অব ইসলামিক কো-অপারেশন (ওআইসি) 
৫৭টি মুসলিম দেশের সংগঠন অর্গানাইজেশন অব ইসলামিক কো-অপারেশন (ওআইসি) বিজেপি নেতাদের মন্তব্যের নিন্দা করেছে এবং ভারতে মুসলমানদের ‘পরিকল্পিত’ হয়রানির বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। ওআইসি ভারতে মুসলমানদের অধিকার সুরক্ষিত করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে জাতিসংঘের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। 

ভারতীয় প্রতিক্রিয়া: ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বলেছেন, ভারত সরকার ‘ওআইসি সচিবালয়ের অযৌক্তিক এবং সংকীর্ণ মন্তব্যকে’ স্পষ্টভাবে প্রত্যাখ্যান করে। 

আপত্তিজনক টুইট ও মন্তব্যগুলো ভারত সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি প্রতিফলিত করে না উল্লেখ করে তিনি জোর দিয়ে বলেন, ‘আমরা ওআইসি সচিবালয়কে তার সাম্প্রদায়িক দৃষ্টিভঙ্গি অনুসরণ করা বন্ধ করতে এবং সমস্ত ধর্মের প্রতি যথাযথ সম্মান প্রদর্শনের জন্য অনুরোধ করব।’ 

২০. গালফ কো-অপারেশন কাউন্সিল (জিসিসি)
আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা গালফ কো-অপারেশন কাউন্সিলও এই মন্তব্যের নিন্দা জানিয়ে একটি বিবৃতি জারি করেছে। 

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, গালফ কো-অপারেশন কাউন্সিলের (জিসিসি) মহাসচিব মহাসচিব ডা. নায়েফ ফালাহ এম আল হাজরাফ নবী মোহাম্মদ সা. এর বিরুদ্ধে ভারতীয় ভারতীয় জনতা পার্টির মুখপাত্রের বক্তব্যের নিন্দা, প্রত্যাখ্যান ও নিন্দা করেছেন। 

ভারতীয় প্রতিক্রিয়ায় কোনো বক্তব্য দেয়নি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

‘মান বাঁচাতে’ ইউক্রেনকে ১০৫ বিলিয়ন ডলার ঋণ দিচ্ছে ইইউ

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
রাশিয়ার জব্দ করা অর্থ ব্যবহার না করে ইউক্রেনকে ১০৫ বিলিয়ন ডলারের বেশি ঋণ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। ছবি: সংগৃহীত
রাশিয়ার জব্দ করা অর্থ ব্যবহার না করে ইউক্রেনকে ১০৫ বিলিয়ন ডলারের বেশি ঋণ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। ছবি: সংগৃহীত

ইউক্রেনের সামরিক ও অর্থনৈতিক প্রয়োজন মেটাতে আগামী ২ বছরের জন্য বড় অঙ্কের সুদহীন ঋণ দিতে রাজি হয়েছেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) নেতারা। ইইউ কাউন্সিল প্রেসিডেন্ট আন্তোনিও কস্তা আজ শুক্রবার ভোরের দিকে এই ঘোষণা দেন। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল–জাজিরার প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

গত বৃহস্পতিবার গভীর রাত পর্যন্ত চলা বৈঠকে নেতারা সিদ্ধান্ত নেন, রাশিয়ার জব্দ করা সম্পদ আপাতত ব্যবহার না করে বরং পুঁজিবাজার থেকে অর্থ ধার করে ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা তহবিলের জোগান দেওয়া হবে। কূটনীতিকদের ভাষ্যমতে, বিষয়টি নিয়ে দীর্ঘ সময় ধরে নানা আইনি ও রাজনৈতিক জটিলতা কাটানোর চেষ্টা চলেছে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আন্তোনিও কস্তা লিখেছেন, ‘চুক্তি হয়ে গেছে। ২০২৬-২৭ সালের জন্য ইউক্রেনকে প্রায় ১০৫ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার সহায়তা দেওয়ার সিদ্ধান্তটি চূড়ান্ত হলো। আমরা কথা দিয়েছিলাম, আমরা তা রেখেছি।’

তহবিলের উৎস নিয়ে কস্তা বিস্তারিত কিছু না জানালেও রয়টার্সের কাছে আসা এক খসড়া নথি বলছে, এই অর্থ আসবে সরাসরি পুঁজিবাজার থেকে এবং এর নিশ্চয়তা থাকবে ইইউ বাজেটের ওপর। রাশিয়ার সম্পদ ব্যবহারের যে বিতর্কিত পরিকল্পনা নিয়ে আগে আলোচনা হচ্ছিল, তা থেকে আপাতত সরে আসা হয়েছে। তবে রাশিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সম্পদকে ভিত্তি করে কোনো ঋণ দেওয়া যায় কি না, তা নিয়ে ইউরোপীয় পার্লামেন্ট ও সরকারগুলোর মধ্যে আলোচনা চলবে।

এই চুক্তিতে হাঙ্গেরি, স্লোভাকিয়া ও চেক প্রজাতন্ত্রের ওপর কোনো আর্থিক দায় চাপানো হয়নি। কারণ দেশগুলো এই অর্থায়নে অংশ নিতে রাজি ছিল না। শর্ত অনুযায়ী, ইউক্রেন এই ঋণ তখনই শোধ করবে যখন তারা মস্কোর কাছ থেকে যুদ্ধের ক্ষতিপূরণ বা ‘ওয়ার রিপারেশন’ পাবে। ততক্ষণ পর্যন্ত রাশিয়ার সম্পদগুলো অচল অবস্থায় পড়ে থাকবে। তবে প্রয়োজনে সেই সম্পদ থেকে ঋণ শোধ করার অধিকারও ইইউ নিজের হাতে রেখেছে।

এক ইইউ কূটনীতিক রয়টার্সকে বলেন, ‘ইউক্রেনের জন্য অন্তত আগামী দুই বছরের অর্থের সংস্থান নিশ্চিত হওয়াটা একটা ইতিবাচক দিক।’ তবে অন্য একজন কূটনীতিকের মন্তব্য ছিল খানিকটা তির্যক। তিনি বলেন, ‘আমরা এখন ইউক্রেনকে বাঁচানোর চেয়ে বরং নিজেদের মান বাঁচানোর চেষ্টা করছি।’

রাশিয়ার টাকা ব্যবহারের ক্ষেত্রে মূল বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল বেলজিয়াম। রাশিয়ার জব্দ করা ২১০ বিলিয়ন ইউরোর মধ্যে ১৮৫ বিলিয়ন ইউরোই আছে বেলজিয়ামের ইউরোক্লিয়ার নামক প্রতিষ্ঠানে। মস্কোর আইনি ও আর্থিক পাল্টা আঘাতের ভয়ে বেলজিয়াম সরকার বেশ আতঙ্কিত ছিল। ক্রেমলিন আগেই জানিয়ে রেখেছে, তাদের সম্পদ ধরা হলে তারা আদালতে যাবে এবং রাশিয়ায় থাকা বিদেশি সম্পদ বাজেয়াপ্ত করবে।

এই বৈঠকের আগে জার্মান চ্যান্সেলর ফ্রিডরিখ ম্যার্ৎস সতর্ক করে বলেছিলেন, চুক্তির সম্ভাবনা ছিল ‘ফিফটি-ফিফটি।’ বেলজিয়ামের প্রধানমন্ত্রী বার্ট ডি ওয়েভারও আইনি ও আর্থিক ঝুঁকি নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন। তিনি চেয়েছিলেন অন্য ইইউ দেশগুলো যেন সম্ভাব্য সব ক্ষতির দায়ভার নিতে লিখিত প্রতিশ্রুতি দেয়।

শুক্রবার সকালে অবশ্য ডি ওয়েভার বেশ স্বস্তি প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, পুঁজিবাজার থেকে ঋণ নেওয়ার এই সিদ্ধান্তের ফলে ইইউ দেশগুলোর মধ্যে অন্তত বড় কোনো ‘বিশৃঙ্খলা বা বিভাজন’ তৈরি হয়নি।

রাশিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংক স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, এই সম্পদ ব্যবহারের যেকোনো চেষ্টা হলে তারা ইউরোপীয় ব্যাংকগুলোর বিরুদ্ধে মামলা করবে। বিশ্লেষক ক্রিস উইফার মনে করেন, মস্কো বিষয়টিকে একটি ‘আর্থিক যুদ্ধ’ হিসেবে দেখবে এবং কড়া প্রতিশোধ নেবে। তিনি বলেন, অনেক ইইউ রাষ্ট্রই এখন সরাসরি ইউক্রেনকে অর্থ দিতে হিমশিম খাচ্ছে, তাই তারা মরিয়া হয়ে বিকল্প কোনো উৎসের সন্ধান করছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

রাশিয়াকে এস-৪০০ আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ফেরত নিতে বলছে তুরস্ক, কিন্তু কেন

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১: ১৮
ধারণা করা হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে এফ–৩৫ ক্রয় নিষ্কণ্টক করতেই রাশিয়াকে এস–৪০০ আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ফেরত নিতে অনুরোধ জানিয়েছে তুরস্ক। ছবি: সংগৃহীত
ধারণা করা হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে এফ–৩৫ ক্রয় নিষ্কণ্টক করতেই রাশিয়াকে এস–৪০০ আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ফেরত নিতে অনুরোধ জানিয়েছে তুরস্ক। ছবি: সংগৃহীত

যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি অত্যাধুনিক এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান ক্রয়ের পথ সুগম করতে তুরস্ক রাশিয়ার কাছে তাদের সরবরাহ করা এস-৪০০ আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ফেরত নেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছে। মার্কিন সংবাদমাধ্যম ব্লুমবার্গের বরাত দিয়ে এই তথ্য জানিয়েছে লন্ডন থেকে প্রকাশিত মধ্যপ্রাচ্যকেন্দ্রিক সংবাদমাধ্যম মিডল ইস্ট আই।

গত বুধবার ব্লুমবার্গের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান গত সপ্তাহে তুর্কমেনিস্তান এক বৈঠকে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে এই অনুরোধ করেন। রুশ ও তুর্কি কর্মকর্তাদের মধ্যে প্রাথমিক আলোচনার পর এই শীর্ষ বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়।

বিষয়টি এমন এক সময়ে প্রকাশ্যে এল, যার কয়েক দিন আগে তুরস্কে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত টম বারাক জানান, আঙ্কারা এবং ওয়াশিংটন পুনরায় এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান উৎপাদন ব্যবস্থায় তুরস্কের অন্তর্ভুক্তি নিয়ে আলোচনা করছে। বারাক এক পোস্টে লেখেন, ‘তুরস্কের এফ-৩৫ প্রোগ্রামে পুনরায় যোগদানের ইচ্ছা এবং তাদের কাছে থাকা রুশ নির্মিত এস-৪০০ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা অব্যাহত রয়েছে।’

তুরস্ক কখনোই এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান নিজ বিমানবহরে যুক্ত করেনি, তবে ২০১৯ সালে রাশিয়ার কাছ থেকে এস-৪০০ কেনার পর এই যুদ্ধবিমানের যৌথ উৎপাদন কর্মসূচি থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিল দেশটিকে। সিরিয়ায় তুরস্কের সামরিক অভিযান এবং গ্রিসের আকাশসীমা লঙ্ঘনের কারণে মার্কিন কংগ্রেস আগে থেকেই তুরস্কের ওপর ক্ষুব্ধ ছিল এবং এই ক্রয়ের ফলে আঙ্কারার ওপর বিভিন্ন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়।

২০২০ সালে এক প্রতিরক্ষা বিলে সংশোধনীর মাধ্যমে তুরস্ককে এফ-৩৫ দেওয়া নিষিদ্ধ করা হয়। সে সময় শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়েছিল যে মার্কিন প্রেসিডেন্ট যদি নিশ্চিত করেন যে তুরস্কের কাছে এস-৪০০ আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা নেই, তাহলে এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান দেওয়া যেতে পারে। এ ছাড়া নিষেধাজ্ঞার ফলে মার্কিন ও তুর্কি প্রতিরক্ষা সংস্থার মধ্যে সহযোগিতাও স্থবির হয়ে পড়ে।

রাশিয়ার কাছে এস-৪০০ ফেরত নেওয়ার অনুরোধ এরদোয়ানের আগের অবস্থান থেকে এক বড় ধরনের প্যারাডাইম শিফট। আগে তুরস্ক চেয়েছিল এস-৪০০ নিজের কাছেই রাখতে (হয়তো অকেজো অবস্থায়) এবং সেই সঙ্গে এফ-৩৫ ক্রয় করতে। বিশ্লেষকদের মতে, একটি সম্ভাব্য সমাধান হতে পারে তুরস্ক এস-৪০০ কোনো গুদামে রাখবে এবং এটি ব্যবহার করবে না, যা ন্যাটো পরিদর্শকেরা নিয়মিত যাচাই করবেন। এর আগে তুরস্ক এই ব্যবস্থা অন্য কোনো দেশে পাঠাতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিল।

ডোনাল্ড ট্রাম্পের অধীনে যুক্তরাষ্ট্র ও তুরস্কের সম্পর্কের উন্নতি হয়েছে। ট্রাম্প সিরিয়ার ইস্যুতে এবং গাজায় হামাসকে যুদ্ধবিরতিতে রাজি করানোর ক্ষেত্রে তুরস্কের প্রভাবের ওপর নির্ভর করছেন। মার্কিন থিংকট্যাংক ফরেন পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের প্রেসিডেন্ট অ্যারন স্টেইন এর আগে বলেছিলেন, ট্রাম্প তুরস্কের সঙ্গে চুক্তিতে পৌঁছাতে আগ্রহী। তিনি বলেন, ‘এফ-৩৫-এর প্রধান গ্রাহক হলো তুরস্ক, সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং সৌদি আরব। ট্রাম্প তুরস্কের কাছে এফ-৩৫ বিক্রি করতে অত্যন্ত আগ্রহী। আমার ধারণা, তিনি প্রয়োজনে ইসরায়েলিদের আপত্তির বিরুদ্ধেও যেতে পারেন। ৪০টি জেটের অর্ডার অনেক বড় একটি বিষয়।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

সমুদ্র উপকূলে পাওয়া গ্যাস বিক্রি করে গাজা পুনর্গঠনের পরিকল্পনা যুক্তরাষ্ট্র–আরব আমিরাত ও ইসরায়েলের

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজার খান ইউনিস অঞ্চলের সমুদ্র উপকূল। ছবি: এএফপি
যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজার খান ইউনিস অঞ্চলের সমুদ্র উপকূল। ছবি: এএফপি

গাজার সমুদ্রতীরবর্তী গ্যাসক্ষেত্র থেকে প্রাপ্ত লভ্যাংশ ব্যবহার করে ধ্বংসপ্রাপ্ত এই উপত্যকার পুনর্গঠন কাজে ব্যয় করার বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েল এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত আলোচনা করেছে। সাবেক এক পশ্চিমা কর্মকর্তা এবং বর্তমানে কর্মরত এক পশ্চিমা ও এক আরব কর্মকর্তা লন্ডন থেকে প্রকাশিত মধ্যপ্রাচ্যকেন্দ্রিক সংবাদমাধ্যম মিডল ইস্ট আইকে এই তথ্য জানিয়েছেন।

সূত্রগুলো জানিয়েছে, এই আলোচনা বিভিন্ন আঙ্গিকে হয়েছে। এর মধ্যে একটি প্রস্তাব হলো—আবুধাবি ন্যাশনাল অয়েল কোম্পানি (এডনক) গাজার এখনো ব্যবহৃত হয়নি এমন গ্যাসক্ষেত্রগুলোর মালিকানায় অংশ নেবে এবং সেখান থেকে প্রাপ্ত অর্থ গাজার পুনর্গঠনে ব্যয় করা হবে।

আলোচনা এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। যুদ্ধবিরতি স্বাক্ষরের আগেই যুক্তরাষ্ট্র গাজার যুদ্ধোত্তর যে পরিকল্পনা শুরু করেছিল, তার অধিকাংশের মতোই এখানেও কোনো চূড়ান্ত প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়নি। তবে সাবেক ওই পশ্চিমা কর্মকর্তা জানান, ডিসেম্বরে গাজার গ্যাস থেকে অর্থ উপার্জনের ধারণাটি পুনরায় আলোচনায় আসে।

২০০০ সালে গাজার সামুদ্রিক এলাকায় গ্যাস আবিষ্কৃত হয়। এই গ্যাসক্ষেত্র উন্নয়নের অধিকার দুটি প্রতিষ্ঠানের হাতে রয়েছে: ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের সার্বভৌম তহবিল প্যালেস্টাইন ইনভেস্টমেন্ট ফোরাম এবং কনসোলিডেটেড কন্ট্রাক্টরস কোম্পানি। এটি একটি নির্মাণ ও জ্বালানি গোষ্ঠী, যার মালিক গ্রিসভিত্তিক এক প্রবাসী ফিলিস্তিনি পরিবার।

এই প্রকল্পের প্রায় ৪৫ শতাংশ মালিকানা একজন আন্তর্জাতিক অংশীদারের জন্য সংরক্ষিত। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের ওপর হামাসের হামলা এবং পরবর্তী যুদ্ধের আগে মিসর এই মালিকানায় অংশ নিতে আগ্রহী ছিল। জাতিসংঘ বর্তমান এই যুদ্ধকে ‘গণহত্যা’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে।

পূর্ব ভূমধ্যসাগরীয় গ্যাস বিশেষজ্ঞ এবং দ্য গাজা মেরিন স্টোরি বইয়ের লেখক মাইকেল ব্যারন বলেন, ‘প্রকল্পটি বাণিজ্যিকভাবে অত্যন্ত লাভজনক।’

ব্যারন যখন ১৫ বছর আগে এই প্রকল্পে কাজ করেছিলেন, তখন গ্যাসক্ষেত্রটি উন্নয়নের খরচ ধরা হয়েছিল ৭৫ কোটি ডলার। এটি থেকে প্রায় ৪০০ কোটি ডলার আয় হওয়ার কথা ছিল, যার মধ্যে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ ১৫ বছর ধরে বছরে ১০ কোটি ডলার করে লভ্যাংশ পেত। তিনি বলেন, ‘বর্তমানে এটি ফিলিস্তিনিদের সবচেয়ে মূল্যবান প্রাকৃতিক সম্পদ। এর উন্নয়ন পুনর্গঠন কাজে বড় অবদান রাখতে পারে।’

জাতিসংঘের অনুমান অনুযায়ী, গাজার পূর্ণ পুনর্গঠন খরচ অনেক বেশি—প্রায় ৭ হাজার কোটি ডলার। তবে যুক্তরাষ্ট্র এবং ইসরায়েল এই উপত্যকাকে সম্পূর্ণরূপে পুনর্নির্মাণের ধারেকাছেও নেই। বরং ডোনাল্ড ট্রাম্পের জামাতা জ্যারেড কুশনারের ঘনিষ্ঠ একদল মার্কিন প্রতিনিধি ইসরায়েল-অধিকৃত গাজার অর্ধাংশে অস্থায়ী আবাসন নির্মাণের একটি ছোট পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছেন।

সাবেক পশ্চিমা কর্মকর্তা জানান, তিনি মিসর ও সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ উপসাগরীয় দেশগুলোর উচ্চপদস্থ কূটনীতিকদের সাথে কথা বলেছেন। তারা সবাই গাজাকে বিভক্ত রাখার এই পরিকল্পনার বিরোধিতা করেছেন। ট্রাম্পের আন্তর্জাতিক বাহিনী মোতায়েনের পরিকল্পনাটিও থমকে আছে, কারণ আরব ও মুসলিম দেশগুলো হামাস এবং ইসরায়েলি সেনাদের মাঝখানে পড়ে যাওয়ার ভয়ে সেনা পাঠাতে ইচ্ছুক নয়।

কাতার এবং সৌদি আরব গাজার পুনর্গঠনে অর্থায়ন করার ব্যাপারে অনাগ্রহ প্রকাশ করেছে। কাতারের প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ বিন আবদুর রহমান আল-থানি জানিয়েছেন, অন্যরা যা ধ্বংস করেছে তা পুনর্নির্মাণের জন্য তারা চেক লিখবেন না। অন্যদিকে, সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানও ট্রাম্পের সাথে বৈঠকে কোনো তহবিলের প্রতিশ্রুতি দেননি।

এই পরিস্থিতিতে সংযুক্ত আরব আমিরাত গাজায় যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের প্রধান উপসাগরীয় অংশীদার হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। আবুধাবি বর্তমানে গাজায় বৃহত্তম মানবিক ত্রাণ দাতা।

ট্রাম্প প্রশাসন ইতিমধ্যে ইউক্রেনের যুদ্ধ এবং রুয়ান্ডা-কঙ্গো শান্তি চুক্তিকে যেভাবে ব্যবসায়িক লেনদেনের সাথে যুক্ত করেছে, গাজার ক্ষেত্রেও প্রাকৃতিক সম্পদ (গ্যাস) ব্যবহারের মাধ্যমে তারা একই পথে হাঁটতে চাইছে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ভিক্ষাবৃত্তির অভিযোগে বিভিন্ন দেশ থেকে ৩২ হাজারের বেশি পাকিস্তানি বহিষ্কার

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১: ০০
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

সংগঠিত ভিক্ষাবৃত্তি ও অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড নিয়ে ক্রমবর্ধমান উদ্বেগের মধ্যে সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাত পাকিস্তানি নাগরিকদের ওপর নজরদারি জোরদার করেছে। শুধু তা-ই নয়, চলতি বছর এখন পর্যন্ত ৩২ হাজারের বেশি পাকিস্তানিকে ভিক্ষাবৃত্তির অভিযোগে বিভিন্ন দেশ বহিষ্কার করেছে। পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষের মতে, এই প্রবণতা দেশটির আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করছে।

চলতি বছর ভিক্ষাবৃত্তির অভিযোগে সৌদি আরব ২৪ হাজার পাকিস্তানিকে বহিষ্কার করেছে। অন্যদিকে সংযুক্ত আরব আমিরাত অধিকাংশ পাকিস্তানি নাগরিকের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। দেশটির দাবি, অনেকে সে দেশে পৌঁছানোর পর ‘অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ছে।’

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি পাকিস্তানের ফেডারেল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সির (এফআইএ) বরাত দিয়ে এই তথ্য জানিয়েছে। সংস্থাটি বলেছে, ২০২৫ সালে সংগঠিত ভিক্ষুক সিন্ডিকেট নির্মূল এবং অবৈধ অভিবাসন ঠেকাতে কর্তৃপক্ষ বিমানবন্দরগুলোতে ৬৬ হাজার ১৫৪ জন যাত্রীকে নামিয়ে দিয়েছে (অফলোড করেছে)।

এফআইএর মহাপরিচালক রিফাত মুখতার বলেন, এই নেটওয়ার্কগুলো পাকিস্তানের সুনাম নষ্ট করছে। তিনি উল্লেখ করেন, এই প্রবণতা শুধু উপসাগরীয় দেশগুলোর মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। আফ্রিকা ও ইউরোপ ভ্রমণের ক্ষেত্রেও একই ধরনের ঘটনা শনাক্ত হয়েছে এবং কম্বোডিয়া ও থাইল্যান্ডের মতো দেশে পর্যটন ভিসার অপব্যবহারের প্রমাণ পাওয়া গেছে।

মুখতারের তথ্য অনুযায়ী, ভিক্ষাবৃত্তির অভিযোগে সৌদি আরব এ বছর ২৪ হাজার পাকিস্তানিকে ফেরত পাঠিয়েছে। দুবাই প্রায় ৬ হাজার ব্যক্তিকে এবং আজারবাইজান প্রায় আড়াই হাজার পাকিস্তানি ভিক্ষুককে বহিষ্কার করেছে। অর্থ্যাৎ ৩২ হাজারের বেশি পাকিস্তানিকে বহিষ্কার করা হয়েছে।

বিষয়টি গত বছরই সৌদি কর্তৃপক্ষের বিশেষ দৃষ্টি আকর্ষণ করে। ২০২৪ সালে রিয়াদ আনুষ্ঠানিকভাবে পাকিস্তানকে অনুরোধ করেছিল, যেন ভিক্ষুকেরা মক্কা ও মদিনায় ওমরাহ ভিসার অপব্যবহার করে ভিক্ষা করতে না পারে। সৌদি আরবের ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয় তখন সতর্ক করে দিয়েছিল যে এই চর্চা বন্ধে ব্যর্থ হলে তা পাকিস্তানের ওমরাহ ও হজযাত্রীদের জন্য বিরূপ পরিস্থিতির সৃষ্টি করতে পারে।

পাকিস্তানের আইন বিশেষজ্ঞরা বিষয়টিকে বিশ্লেষণ করেছেন। গত বছর দ্য ডন পত্রিকায় অ্যাটর্নি রাফিয়া জাকারিয়া ভিক্ষাবৃত্তিকে নিছক অভাবের তাড়না নয়, বরং একটি সুসংগঠিত উদ্যোগ হিসেবে বর্ণনা করেন।

তিনি লিখেছিলেন, ‘পাকিস্তানের একটি শিল্প, যা অত্যন্ত সুসংগঠিত এবং এর সদস্যদের কাজ নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে বেশ সফল, তা হলো ভিক্ষাবৃত্তি। এটি এখন এতই সফল একটি উদ্যোগ যে এটি অন্য দেশে রপ্তানি এবং সম্প্রসারণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’

তিনি আরও যোগ করেন, ‘অনেক পাকিস্তানি হয়তো হজের সময় নিজের চোখে দেখেছেন, এই ভিক্ষুকেরা মক্কা ও মদিনার পবিত্র স্থানগুলোর বাইরে আস্তানা গড়ে তোলে। তারা সেখানে বিদেশি হজযাত্রীদের টাকার জন্য সেভাবেই হয়রানি করে, যেভাবে পাকিস্তানের বাজারগুলোতে ক্রেতাদের করে থাকে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত