‘রহস্যময় গ্রাম’, যেখানে মেয়েরা ছেলে হয়ে যায়

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : ২০ নভেম্বর ২০২১, ১৯: ৩৯
Thumbnail image

একটি রহস্যময় গ্রাম। সেখানকার অনেক মেয়েরই বয়ঃসন্ধিতে এসে ছেলেদের সমস্ত বৈশিষ্ট্য প্রকাশ পায়।  ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জের ডোমিনিকান প্রজাতন্ত্রে গ্রামটি অবস্থিত। 

মার্কিন সংবাদমাধ্যম ওয়াশিংটন পোস্টের প্রতিবেদনে বলা হয়, ডোমিনিকান প্রজাতন্তের ছোট্ট গ্রাম লা স্যালিনাসের জন্ম নেওয়া জনি শৈশবে মেয়ে ছিল। তবে বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মেয়েদের মতো পোশাক পরতে এবং সাজতে ভাল লাগত না তার।  জনি বয়ঃসন্ধিতে পৌঁছনোর পরই তার বাহ্যিক পরিবর্তনগুলো চোখে পড়তে শুরু করে পরিবারের।
 
বয়ঃসন্ধি ছোঁয়া পর্যন্ত জনির পরিবারের কেউই জানতেন না তাঁদের আদরের ছোট মেয়েটি আসলে ছেলে। এ রকম ঘটনা জনির সঙ্গেই শুধু ঘটেনি।  স্যালিনাসে জনির মতো আরও অনেকে রয়েছে। বয়ঃসন্ধিতে পৌঁছে যাদের মধ্যে পুরুষের বৈশিষ্ট প্রকাশ পেয়েছে। কার্লা নামে সাত বছরের একটি মেয়েও যেমন পরবর্তীকালে কার্লোস হয়ে উঠেছিল।

কেন এমন হয়? গ্রামবাসীদের অনেকে বিশ্বাস করতেন, গ্রামের ওপর নাকি কোনও পুরনো অভিশাপ রয়েছে। সে কারণেই এমন ঘটনা ঘটছে। কিন্তু বিজ্ঞান কিছু অন্য কথা বলে।

চিকিৎসকদের মতে, জনি, কার্লোস এবং তাদের মতো গ্রামের অন্য অনেক শিশু এক বিরল জিনগত রোগে আক্রান্ত।

রোগটির নাম ফাইভ আলফা রিডাকটেজ ডেফিসিয়েন্সি। ফাইভ আলফা রিডাকটেজ মানব শরীরের একটি উৎসেচক। এই উৎসেচকের ঘাটতি দেখা দিলেই এমন ঘটনা ঘটে।

ক্যারিবীয় দ্বীপুঞ্জের ডোমিনিকান প্রজাতন্তের লা স্যালিনাস গ্রামের শিশুরা। ছবি: টুইটার

চিকিৎসকদের মতে , শরীরে যে জিনটি এই উৎসেচক তৈরির নির্দেশ বহন করে থাকে, তার মধ্যে কোনও সমস্যা দেখা দিলে এই উৎসেচক যথাযথ পরিমাণে উৎপন্ন হয় না।

ফাইভ আলফা রিডাকটেজ-এর কাজই হল স্ত্রী শরীরে পুরুষের বৈশিষ্ট্য বাহক হরমোন টেস্টোস্টেরন-এর বিপাক ঘটিয়ে তাকে ডিহাইড্রোটেস্টোস্টেরন-এ পরিণত করা।

স্ত্রী শরীরে এটাই স্বাভাবিক জৈবিক ক্রিয়া। এর ফলেই পুরুষের বৈশিষ্ট প্রকাশ পায় না এবং ওই ব্যক্তি এক জন স্ত্রী হিসাবে চিহ্নিত হন।

কিন্তু এই উৎসেচকের ঘাটতি দেখা দিলে টেস্টোস্টেরন-এর বিপাক ঘটিয়ে তাকে ডিহাইড্রোটেস্টোস্টেরন-এ পরিণত করার জৈবিক ক্রিয়াটি ব্যাহত হয়ে থাকে এবং শরীরে টেস্টোস্টেরন হরমোনের উপস্থিতির জন্য পুরুষের বৈশিষ্ট প্রকাশ পায়।

এই বিরল জিনগত রোগে আক্রান্তদের ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে, জিনগত ভাবে তারা পুরুষ হওয়া সত্ত্বেও বয়ঃসন্ধি পর্যন্ত তাদের মধ্যে পুরুষের বাহ্যিক বৈশিষ্টগুলি (যেমন পুরুষের লিঙ্গের বৃদ্ধি, পেশির গঠন ইত্যাদি) প্রকাশ পায় না। তার পর ধীরে ধীরে তা প্রকাশ পেতে শুরু করে।

জনি এবং কার্লোসের ক্ষেত্রেও ঠিক এমনই ঘটেছিল। ডোমিনিকান প্রজাতন্ত্রের স্যালিনাসে এই বিরল জিনগত রোগের প্রকোপ বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলের থেকে তুলনামূলক বেশিই চোখে পড়ে। সেখানকার প্রতি ৯০ শিশুর মধ্যে এক জন এই রোগে আক্রান্ত। তবে স্যালিনাসে এই রোগের প্রকোপ বেশি হওয়ার রহস্য আজও উন্মোচন হয়নি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত