জেরুসালেম পোস্টের প্রতিবেদন

গাজায় যুদ্ধবিরতি ও জিম্মি মুক্তির চুক্তি হতে পারে আজ

অনলাইন ডেস্ক
Thumbnail image
গাজায় ইসরায়েলি হামলায় বিধ্বস্ত একটি এলাকা থেকে সন্তানকে সরিয়ে নিচ্ছেন এক মা। ছবি: আনাদোলু

যদি শেষ মুহূর্তে কোনো অপ্রত্যাশিত ঘটনা না ঘটে, তবে আজ মঙ্গলবারই গাজায় যুদ্ধবিরতি ও একটি জিম্মি-বন্দী বিনিময় চুক্তি ঘোষণা করা হতে পারে। ইসরায়েল সরকারের ঘনিষ্ঠ সূত্র দেশটির সংবাদমাধ্যম জেরুসালেম পোস্টকে এমনটাই জানিয়েছে।

সূত্র জানিয়েছে, আজ কাতারে চুক্তি চূড়ান্ত করার জন্য বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। গতকাল সোমবার সূত্রটি জেরুসালেম পোস্টকে জানায়, হামাসের হাতে থাকা জিম্মিদের মুক্তির জন্য তিন ধাপের একটি পরিকল্পনায় ঐকমত্যে পৌঁছানো হয়েছে, তবে এ নিয়ে হামাসের প্রতিক্রিয়ার অপেক্ষা করা হচ্ছে।

চুক্তির আলোচনার সঙ্গে জড়িত এক ইসরায়েলি কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, ‘এই চুক্তিতে পৌঁছানোর জন্য আগামী ২৪ ঘণ্টা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। জিম্মি বিনিময় চুক্তির রূপরেখা পরিষ্কার এবং ইসরায়েল অনেক দূর এগিয়েছে। আমরা ধীরে এবং সাবধানতার সঙ্গে এগোচ্ছি। আশা করি, হামাস তাদের অস্বীকৃতি জানানো বন্ধ করবে।’

কাতারের রাজধানী দোহায় কাতার, মিসর ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় হামাস ও ইসরায়েল পরোক্ষভাবে এই যুদ্ধবিরতি ও জিম্মি মুক্তি নিয়ে আলোচনা চালাচ্ছে। আলোচনায় যুক্তরাষ্ট্রের বিদায়ী প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন প্রশাসনের কর্মকর্তা এবং নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের জন্য মনোনীত কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। এই আলোচনায় ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফও উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে, গতকাল সোমবার যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জেক সুলিভান জানান, এ সপ্তাহেই হতে পারে গাজার যুদ্ধবিরতি চুক্তি। গাজায় যুদ্ধবিরতি ও জিম্মি-বন্দী মুক্তির একটি চুক্তি প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিদায়ী প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের মেয়াদের শেষ সপ্তাহেই সম্পন্ন হতে পারে।

জেক সুলিভান বলেন, ‘আমরা একটি চুক্তির খুব কাছাকাছি এবং এটি এই সপ্তাহেই সম্পন্ন হতে পারে। আমি কোনো প্রতিশ্রুতি বা ভবিষ্যদ্বাণী করছি না, তবে এটি সম্ভব এবং আমরা তা বাস্তবায়নে কাজ করে যাচ্ছি।’ সুলিভান জানান, ২০২৩ সালের ৬ অক্টোবর হামাসের ইসরায়েলে আক্রমণের পর গাজায় যুদ্ধ শুরু হওয়ার সময়ের তুলনায় এখন একটি চুক্তি হওয়ার বিষয়ে তিনি অনেক বেশি আশাবাদী।

তিনি বলেন, ‘এর কারণ হলো, মতপার্থক্যগুলো অনেকটাই কমে এসেছে।’ হামাসের হাতে থাকা জিম্মি এবং ইসরায়েলের কারাগারে থাকা ফিলিস্তিনি বন্দীদের বিনিময়ের ফর্মুলা নিয়ে এবং গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর অবস্থান কেমন হবে, এসব বিষয়ে অগ্রগতি হয়েছে বলে তিনি জানান। তবে বিস্তারিত কোনো তথ্য দেননি।

সুলিভান বলেন, ‘ইসরায়েল গাজায় তাদের সামরিক লক্ষ্য অর্জন করেছে এবং হামাস ব্যাপক ধ্বংসাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘যখন এই দুই বিষয় একসঙ্গে মিলিয়ে দেখা হয়, আমরা মনে করি চুক্তি সম্পন্ন করার এটাই সঠিক সময়।’

এদিকে, মার্কিন সংবাদমাধ্যম এক্সিওস জানিয়েছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন আজ মঙ্গলবার গাজার পুনর্গঠন ও শাসনব্যবস্থা নিয়ে পরিকল্পনা উপস্থাপন করবেন। খবরে বলা হয়েছে, ব্লিঙ্কেন আজ মঙ্গলবার সকালে মার্কিন থিংক ট্যাংক আটলান্টিক কাউন্সিলে দেওয়া বক্তৃতায় তাঁর পরিকল্পনা তুলে ধরবেন।

হামাস-পরবর্তী গাজায় শাসনব্যবস্থা গঠনের পরিকল্পনা এই চুক্তির দ্বিতীয় ধাপ বাস্তবায়নের জন্য গুরুত্বপূর্ণ, যা একটি স্থায়ী যুদ্ধবিরতি ও যুদ্ধের সমাপ্তি নিশ্চিত করবে। ব্লিঙ্কেন গাজায় নিরাপত্তা, প্রশাসন ও পুনর্গঠনের পরিকল্পনা মার্কিন মিত্রদের সঙ্গে শেয়ার করেছেন এরই মধ্যে। এই পরিকল্পনা যুদ্ধবিরতি চুক্তির পর বাস্তবায়িত হবে।

প্যারিসে এক সংবাদ সম্মেলনে ব্লিঙ্কেন বলেন, ‘আমরা এটি ট্রাম্প প্রশাসনের কাছে হস্তান্তর করতে প্রস্তুত, যাতে তারা এটি নিয়ে কাজ করতে পারে এবং সুযোগ পেলে এগিয়ে নিতে পারে।’ তবে পরিস্থিতি পর্যালোচনা করা দেখা গেছে, এই পরিকল্পনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরে বিতর্কের জন্ম দিয়েছে এবং তীব্র অভ্যন্তরীণ বিরোধ তৈরি করেছে। কিছু কর্মকর্তার আশঙ্কা, এই পরিকল্পনা ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর স্বার্থ রক্ষা করবে এবং ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ ও প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসকে উপেক্ষা করবে।

এক্সিওস গত অক্টোবরে জানিয়েছিল, ইসরায়েল ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রস্তাবিত ধারণার ওপর ভিত্তি করে ব্লিঙ্কেন গাজার জন্য যুদ্ধ-পরবর্তী পরিকল্পনা তৈরি করছেন এবং এটি নির্বাচনের পরে উপস্থাপন করতে চান।

ব্লিঙ্কেন তাঁর পরামর্শদাতা ও ঘনিষ্ঠ বন্ধু জেমি রুবিনকে এই পরিকল্পনা প্রণয়নের দায়িত্বে নিযুক্ত করেন। কয়েক সপ্তাহ আগে রুবিন ইসরায়েল ও পশ্চিম তীরে গিয়েছিলেন এই পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা করতে। মার্কিন কর্মকর্তারা জানান, ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ পরিকল্পনার বিরুদ্ধে দীর্ঘ আপত্তির তালিকা তুলে ধরে ইঙ্গিত দেয় যে, তারা এটি সমর্থন করে না।

মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এরই মধ্যে ইসরায়েল সরকার, ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ, সংযুক্ত আরব আমিরাত, সৌদি আরব এবং অন্যান্য আরব দেশগুলোর সঙ্গে এই পরিকল্পনার মূল পয়েন্টগুলো নিয়ে আলোচনা করেছে। ব্লিঙ্কেনের পরিকল্পনা অনুযায়ী, একটি শাসন কাঠামো গঠন করা হবে, যেখানে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ও আরব দেশগুলো অংশ নেবে। তারা গাজায় নিরাপত্তা স্থিতিশীল করা এবং মানবিক সহায়তা পৌঁছে দেওয়ার জন্য সেনা পাঠাতে পারবে।

বক্তৃতায় ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের সংস্কারের আহ্বান জানানো হবে, একই সঙ্গে পরিষ্কার করা হবে যে, গাজার ভবিষ্যৎ শাসনে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষকে অন্তর্ভুক্ত করতেই হবে। ইসরায়েল সরকার চায়, আরব দেশগুলো যুদ্ধ পরবর্তী গাজা পরিস্থিতিতে অংশ নিক, তবে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষকে অন্তর্ভুক্ত করা কোনো পরিকল্পনায় এখন পর্যন্ত সম্মতি দেয়নি।

ব্লিঙ্কেনের বক্তৃতায় তিনি সেই নীতিমালা পুনর্ব্যক্ত করবেন, যা তিনি যুদ্ধের শুরুতে টোকিওতে বলেছিলেন। এর মধ্যে গাজায় ইসরায়েলি স্থায়ী দখলদারিত্ব, অঞ্চল সংকুচিত করা বা ফিলিস্তিনিদের জোরপূর্বক স্থানান্তরের বিরোধিতার বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত।

এক মার্কিন কর্মকর্তা বলেছেন, ‘ব্লিঙ্কেন এই যুদ্ধের ফলাফল নির্ধারণে ভূমিকা রাখতে চান এবং বক্তৃতায় তিনি পরিষ্কার করবেন, কীভাবে ইসরায়েল হামাসের বিরুদ্ধে কৌশলগত সাফল্য অর্জন করতে পারে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত