হাঁটতে গিয়ে ২৮ কোটি বছর আগের পায়ের ছাপ আবিষ্কার

অনলাইন ডেস্ক    
প্রকাশ : ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৩: ২০
ঘটনাস্থল থেকে নমুনা সংগ্রহ করছেন বিশেষজ্ঞ দল। ছবি: সংগৃহীত

গত গ্রীষ্মেই ক্লাউদিয়া স্টেফেনসেন এবং তাঁর স্বামী ইতালির আল্পস পর্বতে হাইকিং করছিলেন। বৃহস্পতিবার ফক্স নিউজ জানিয়েছে, পাহাড়ে হাঁটার সময় ওই দম্পতি একটি পাথরের গায়ে ‘অদ্ভুত নকশা’ দেখতে পেয়েছিলেন। সেই নকশাটি আসলে একটি প্রাগৈতিহাসিক পায়ের ছাপ। গবেষণায় দেখা গেছে, পায়ের ছাপটি কম করে হলেও ২৮ কোটি বছরের পুরোনো!

স্টেফেনসেন জানান, সেদিন খুব গরম ছিল। তাই তাঁরা এক শীতল হতে পাহাড়ে গিয়েছিলেন। ফেরার পথে একটি সরু রাস্তা ধরে খুব সাবধানে হাঁটতে হচ্ছিল তাঁদের।

স্টেফেনসেন বলেন, ‘আমার স্বামী সামনের দিকে তাকিয়ে হাঁটছিলেন। আর আমি পায়ের দিকে তাকিয়ে হাঁটছিলাম। এ সময়ই হঠাৎ একটি পাথরের অংশকে সিমেন্টের মতো মনে হলো। এটির ওপর আমি একটি অদ্ভুত বৃত্তাকার নকশা দেখলাম। কাছে গিয়ে বুঝলাম—এগুলো আসলে পায়ের ছাপ।’

পায়ের ছাপ বুঝতে পেরে স্টেফেনসেন কয়েকটি ছবিও তোলেন এবং ছবিগুলো তিনি তাঁর প্রকৃতির ফটোগ্রাফি বিশেষজ্ঞ এক বন্ধুর কাছে পাঠান। সেই ফটোগ্রাফার পরে মিলানের ন্যাচারাল হিস্ট্রি মিউজিয়ামের জীবাশ্মবিদ ক্রিশ্চিয়ানো ডাল সাসোর সঙ্গে যোগাযোগ করেন।

এ অবস্থায় একাধিক বিশেষজ্ঞের সাহায্যে ছাপগুলো বিশদভাবে পর্যবেক্ষণ করা হয়। বিশেষজ্ঞরা মত দিয়েছেন, পায়ের ছাপগুলো প্রাগৈতিহাসিক এক সরীসৃপের। বরফ গলে যাওয়ার কারণেই এগুলো বেরিয়ে এসেছে।

বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পর থেকে গবেষকেরা বারবার ওই এলাকাটি পরিদর্শন করেছেন। সেখানে তাঁরা আরও শত শত জীবাশ্ম, যেমন—প্রাগৈতিহাসিক সরীসৃপ, উভচর প্রাণী ও পোকামাকড়ের পায়ের ছাপ পেয়েছেন। এ ছাড়া গাছপালা, বীজ এবং বৃষ্টির ফোটার ছাপও আবিষ্কার করেছেন তাঁরা।

স্মিথসোনিয়ান ম্যাগাজিনের তথ্য অনুযায়ী, পায়ের ছাপগুলো পার্মিয়ান যুগের। ২৯ কোটি থেকে ২৫ কোটি বছর আগে পৃথিবীতে এই যুগ চলছিল। এটি ডাইনোসরদের উদ্ভবেরও আগের সময়।

পার্মিয়ান যুগের সমাপ্তি ঘটেছিল পৃথিবীর ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ বিলুপ্তির মধ্য দিয়ে। সে সময় সমুদ্রের ৯০ ভাগ এবং স্থলজ প্রাণীদের ৭০ ভাগ প্রাণের বিলুপ্তি ঘটেছিল।

ডাল সাসো বলেন, ‘তখনো ডাইনোসর ছিল না। তবে যেসব প্রাণী এই বড় পায়ের ছাপগুলো রেখে গেছে, তাদের দৈর্ঘ্য ২ থেকে ৩ মিটার পর্যন্ত ছিল।’

দুর্ঘটনাক্রমে হলেও স্টেফেনসেন এই আবিষ্কারে যুক্ত হতে পেরে খুব খুশি। তিনি বলেন, ‘আমি গর্বিত। কারণ বিজ্ঞানের জন্য সামান্য হলেও একটি অবদান রাখতে পেরেছি।’

আবিষ্কৃত জীবাশ্মগুলো নিয়ে আরও গবেষণা চলছে। এর কিছু নিদর্শন ইতিমধ্যেই মিলানের ন্যাচারাল হিস্ট্রি মিউজিয়ামে প্রদর্শনের জন্য আনা হয়েছে।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত