কাচিনের রণক্ষেত্রে হাল ছেড়ে দিয়েছে মিয়ানমারের জান্তাবাহিনী, দাবি বিদ্রোহীদের

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : ৩০ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২: ৩১
Thumbnail image
জান্তা ও বিদ্রোহী বাহিনীর যুদ্ধের মুখে এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যাচ্ছে ভামোর অধিবাসীরা। ছবি: ইরাবতী

মিয়ানমারের কাচিন রাজ্যের বিভিন্ন রণক্ষেত্র থেকে পালিয়ে যাচ্ছে জান্তাবাহিনীর কমান্ডার ও সদস্যরা। এমনটাই দাবি করেছে স্থানীয় বিদ্রোহী গোষ্ঠী কাচিন ইন্ডিপেন্ডেন্স আর্মি (কেআইএ)। গোষ্ঠীটি দাবি করেছে মিয়ানমারের জান্তা বাহিনীর একটি ব্যাটালিয়নের কমান্ডার কাচিন রাজ্যের মানসি থেকে পালিয়েছে। তারা শহরটি দখলের জন্য লড়াই করছে।

মিয়ানমারের সংবাদমাধ্যম ইরাবতীর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মানসি শহরে জান্তাবাহিনীর লাইট ইনফ্যান্ট্রি ব্যাটালিয়ন-৩১৯ এবং ৬০১ এবং আর্টিলারি ব্যাটালিয়ন-৫২৩ অবস্থান করছে। কেআইএ মুখপাত্র কর্নেল নও বুউ বলেন, ‘লাইট ইনফ্যান্ট্রি ব্যাটালিয়ন ৩১৯-এর কমান্ডার পালিয়েছেন বলে জানা গেছে। আমরা এখনো শহরে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছি।’

কর্নেল নও বুউ জানান, জান্তাবাহিনী মানসি রক্ষার জন্য বারবার বিমান হামলা, গোলাবর্ষণ এবং ড্রোন হামলা চালাচ্ছে। এ ছাড়া তারা মানসি থেকে তাদের শক্তিকেন্দ্র ভামোতে আর্টিলারি বা গোলন্দাজ অস্ত্র স্থানান্তর করছে বলে খবর পাওয়া গেছে। ভামোতে তাদের ২১ তম সামরিক অপারেশন কমান্ড অবস্থিত।

এর আগে, গত ৪ ডিসেম্বর কেআইএ এবং তার মিত্ররা মানসি ও ভামোতে একযোগে হামলা চালায়। এই হামলার ফলে বিপুল পরিমাণ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়। জান্তার গোলাবর্ষণে ভামোতে আটকা পড়া সাধারণ মানুষ নিহত হয়েছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশিত ভিডিওতে দেখা গেছে, কেআইএ ও তাদের মিত্ররা ভামো টেকনোলজিক্যাল ইউনিভার্সিটি এবং ভামোর আশপাশের অন্য চৌকিগুলোতে অবস্থান নিয়েছে, যা আগে জান্তাবাহিনীর দখলে ছিল।

ভামোতে কেআইএ-এর অগ্রগতির বিষয়ে এখনো কোনো নিশ্চিত তথ্য মেলেনি। ভামো একটি জেলা পর্যায়ের শহর। যেখানে ৮৮ তম লাইট ইনফ্যান্ট্রি ডিভিশন, বেশ কয়েকটি ইনফ্যান্ট্রি ব্যাটালিয়নের সদর দপ্তর এবং যুদ্ধ সহায়ক ইউনিট অবস্থান করছে।

ভামো স্কাউট টিম—যারা ভামো সংক্রান্ত তথ্য জানায়—বলেছে, কেআইএ ও তাদের মিত্ররা অপারেশন কমান্ড ঘেরাও করে রেখেছে এবং শহরের অন্যান্য জান্তা সদর দপ্তরে হামলা চালাচ্ছে। দলটি জানিয়েছে, ভামোতে প্রায় ১০,০০০ সাধারণ মানুষ এখনো অবস্থান করছে এবং হতাহতের ঘটনা ঘটেছে।

এই মাসে ভামো ও মানসির হাজার হাজার বাসিন্দা তাদের ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়েছেন, যাদের কেউ কেউ মান্দালয়ে অঞ্চলে পৌঁছেছেন। কিছু ভামোবাসী নৌকায় করে শ্বেগু টাউনশিপে পৌঁছেছেন, যেখানে তারা সাহায্য সংস্থাগুলোর সহায়তায় নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিয়েছেন।

এদিকে, মিয়ানমারের চিন রাজ্যের ৮০ শতাংশেরও বেশি এখন বিদ্রোহী গোষ্ঠীদের হাতে। স্থানীয় বিদ্রোহী গোষ্ঠী চিন ব্রাদারহুড জানিয়েছে, গত সপ্তাহের শেষ দিকে জান্তা বাহিনীকে মিন্দাত ও কানপেতলেত টাউনশিপ থেকে তাড়িয়ে দেওয়ার পর চিন রাজ্যের ৮০ শতাংশের বেশি এলাকা বর্তমানে বিরোধী বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে।

চিন ব্রাদারহুডের মুখপাত্র ইয়াও মাং ইরাবতীকে বলেছেন, দক্ষিণ চিন রাজ্য জান্তা বাহিনীর হাত থেকে মুক্ত হয়েছে এবং তাদের বাহিনী রাজ্যের উত্তরে ফালামের একমাত্র অবশিষ্ট জান্তা অবস্থান ২৬৮-পদাতিক ব্যাটালিয়নের ওপর আক্রমণ চালাচ্ছে।

ইয়াও মাং বলেন, চিন রাজ্যের রাজধানী হাখা এবং অন্যান্য শহর ফালাম, তেদিম ও থানতলাং টাউনশিপে অবস্থানরত অবশিষ্ট জান্তা বাহিনী শহরগুলোর মধ্যে সীমাবদ্ধ। পালেতওয়া, মাতুপি, কানপেতলেত, মিন্দাত ও তোনজাং টাউনশিপ ইতিমধ্যে জান্তা বাহিনীর হাত থেকে কেড়ে নেওয়া হয়েছে। ইয়াও মাং বলেন, মিন্দাতে ১৩ জন রাজনৈতিক বন্দী মুক্তি পেয়েছে এবং রোববার সকালে বিরোধী বাহিনী পৌঁছানোর পর জান্তা বাহিনী কানপেতলেত ছেড়ে চলে যায়।

অপরদিকে, এদিকে, রাখাইনেও বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে খুব একটা সুবিধা করতে পারছে না জান্তাবাহিনী। গত ২১ ডিসেম্বর মিয়ানমারের জান্তা বাহিনীর পশ্চিমাঞ্চলীয় হেডকোয়ার্টার দখলে নেওয়ার দাবি করে বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি (এএ)। তারা জানিয়েছে, তারা আরাকান রাজ্যের রাজধানী সিতওয়ে থেকে ৩১৮ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থিত আন টাউনশিপের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। এর আগে শুক্রবার কেন্দ্রীয় আরাকানে জান্তা বাহিনীর পশ্চিমাঞ্চলীয় আঞ্চলিক সামরিক কমান্ড সদর দপ্তরের নিয়ন্ত্রণও নেয় আরাকান আর্মি।

সামরিক বাহিনীর কাছ থেকে আন টাউনশিপের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর আরাকান আর্মি এখন আরাকানের ১৪টি টাউনশিপ নিয়ন্ত্রণ করছে। এর মধ্যে রয়েছে আরাকানের—পায়েকতাউ, মিনব্যা, ম্রউক-উ, কিয়াকতাউ, মিয়েবন, পন্নাগিউন, রামরি, রথিডং, বুথিডং, থানদে, টাউংগুপ, মংডু এবং চিনল্যান্ডের পালেতওয়া।

আরাকান আর্মি আরও বেশ কয়েকটি বিদ্রোহী গোষ্ঠীর সমন্বয়ে ২০২৩ সালের ১৩ নভেম্বর আরাকানকে জান্তা বাহিনীর শাসন থেকে মুক্ত করার জন্য আক্রমণ চালানোর পর এএ—এর দখলের বাইরে আছে মাত্র চারটি শহর—সিতওয়ে, কায়াকপায়ু, গাওয়া এবং মুনাউং।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

কারা পরিদর্শক হলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক

ট্রাম্পের অভিষেক: সি আমন্ত্রণ পেলেও পাননি মোদি, থাকছেন আরও যাঁরা

ট্রাম্পের শপথের আগেই বার্নিকাটসহ তিন কূটনীতিককে পদত্যাগের নির্দেশ

কিশোরগঞ্জে বিএনপি নেতা হত্যা: সাবেক চেয়ারম্যানসহ গ্রেপ্তার ৪

সংস্কারের কিছু প্রস্তাবে মনঃক্ষুণ্ন বিএনপি

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত