শ্রমিক ও নাগরিক সমাজ নিয়ন্ত্রণে ভিয়েতনামের কমিউনিস্ট সরকারের নির্দেশনা জারি

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ : ০২ মার্চ ২০২৪, ০১: ১০

ট্রেড ইউনিয়ন এবং শ্রমিকদের নানা তৎপরতা এবং নাগরিক সমাজের ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপের লক্ষ্যে একটি নির্দেশনা জারি করেছে ভিয়েতনামের ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টি। 

একটি অধিকার পর্যবেক্ষক সংস্থা অনুসারে, এই নির্দেশনার লক্ষ্য অসন্তোষ দমন। এমনকি ভিয়েতনাম মানবাধিকার সমুন্নত রাখতে জাতিসংঘের কাছে যে অঙ্গীকার করেছে এই নির্দেশনা জারি তার স্পষ্ট লঙ্ঘন। 

 ‘নির্দেশিকা ২৪’ শীর্ষক আদেশের অনেকগুলো বিধানের মধ্যে একটি হলো, সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের ট্রেড ইউনিয়ন এবং শ্রম বিরোধগুলো ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ করতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া জাতিগত বা ধর্মের ভিত্তিতে যেন নতুন শ্রমিক সংগঠন প্রতিষ্ঠিত না হয় সেটি নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে। শুক্রবার (১ মার্চ) ব্যাংকক–ভিত্তিক ভিয়েতনামে নিপীড়ন বিরোধী সংগঠন দ্য ৮৮ প্রজেক্ট সরকারের এই নির্দেশনাগুলো হাতে পেয়েছে। 

নির্দেশিকাটিতে বিদেশি সহায়তা এবং বিদেশি বিনিয়োগকারীদের প্রতি সতর্ক নজর রাখার কথাও বলা হয়েছে। এ ধরনের ব্যক্তি বা সংস্থা ‘ছায়ায় লুকিয়ে থাকতে পারে’ এবং দেশীয় বাজার বা ‘অত্যাবশ্যক অর্থনৈতিক খাত’ দখল করতে যেন না পারে—সে ব্যাপারে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। 

সরকারের এই আদেশগুলো ভিয়েতনামের প্রতিশ্রুতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক। দেশটি দীর্ঘ এক দশকের আলোচনার পর চলতি বছরের শেষ নাগাদ আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) ৮৭ কনভেনশন অনুসমর্থন করার কথা। কনভেনশনটি শ্রমিকদের অধিকার সমর্থন করে, যার মধ্যে ট্রেড ইউনিয়ন গঠনের অধিকারও রয়েছে। 

প্রজেক্ট ৮৮–এর সহ–পরিচালক বেন সোয়ান্তন এক বিবৃতিতে বলেন, ‘মুখোশ খুলে গেছে। ভিয়েতনামের নেতারা বলছেন যে, তাঁরা সরকারি নীতির বিষয় হিসেবে মানবাধিকার লঙ্ঘন করতে চান! তাঁরা এখন সরাসরি রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার অপব্যবহারের সঙ্গে জড়িয়ে গেছেন। তাঁদের আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় থেকে বিচ্ছিন্ন করা উচিত।’ 

ভিয়েতনামের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আল জাজিরার পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হলে তাৎক্ষণিকভাবে তারা সাড়া দেয়নি। 

অধিকার পর্যবেক্ষক সংস্থাগুলোর তথ্য অনুযায়ী, ভিয়েতনাম মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক উন্নয়নের মাত্র দুই মাস আগে, ২০২৩ সালের জুলাই মাসে কমিউনিস্ট পার্টির পলিটব্যুরোর নির্দেশিকা ২৪ জারি করা হয়। 

প্রজেক্ট ৮৮ বলেছে, ‘বিশ্বের কারখানা’ হিসেবে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক একত্রীকরণের মুখে নাগরিক সমাজের সমস্ত বিষয়ের ওপর নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখার জন্য চীনের কমিউনিস্ট পার্টি ২০১৩ সালে যে আদেশ জারি করেছিল, ভিয়েতনামের নির্দেশিকা ২৪ তার অনুরূপ। 

উল্লেখ্য, চীনের ওই উদ্যোগের এক দশক পর সরবরাহ চেইন বিঘ্নিত হওয়া এবং শ্রমব্যয় বেড়ে যাওয়ার কারণে অনেক বৈশ্বিক প্রতিষ্ঠান এখন তাদের ব্যবসা চীন থেকে দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ায় স্থানান্তর করছে। 

এই প্রবণতা ভিয়েতনামের মতো দেশগুলোর জন্য অর্থনৈতিক আশীর্বাদ। তবে কর্মকর্তাদের আশঙ্কা, আন্তর্জাতিক একত্রীকরণ এবং বাণিজ্য চুক্তি ‘জাতীয় নিরাপত্তার জন্য নতুন করে অসুবিধা এবং চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে’ এবং এতে ‘শাসন টিকিয়ে রাখা’ ঝুঁকির মুখে পড়তে পারে। 

নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, প্রতিকূল ও প্রতিক্রিয়াশীল শক্তিগুলো তাদের অন্তর্ঘাত এবং অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক রূপান্তর কার্যক্রম বৃদ্ধির জন্য আন্তর্জাতিক সংহতি প্রক্রিয়ার সদ্ব্যবহার করেছে... নাগরিক সমাজ জোট এবং নেটওয়ার্ক গঠন, স্বাধীন ট্রেড ইউনিয়ন—এসব দেশীয় রাজনৈতিক বিরোধিতার প্ল্যাটফর্ম তৈরির ভিত্তি তৈরি করেছে। 

নির্দেশিকায় শিল্প পার্ক, আবাসিক এলাকা এবং অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোর নিরাপত্তা বাড়ানোর কথা বলা হয়েছে, যেখানে শ্রমিকদের ঘনত্ব বেশি। সেই সঙ্গে ভিয়েতনামের নাগরিক যারা ব্যবসার জন্য বিদেশে ভ্রমণ করেন তাঁদের ওপর নজরদারি করতে বলা হয়েছে। 

 ‘জনপ্রিয় প্রবণতা (ট্রেন্ড), নাগরিক অবাধ্যতা বা অসহযোগ, ভুল দৃষ্টিভঙ্গি এবং প্রতিকূল শক্তির দ্বারা নাশকতার’ বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য কর্মকর্তাদের মিডিয়া এবং অন্যান্য প্রচারমাধ্যম ব্যবহার করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। অন্যথায় ভিয়েতনামী ঐতিহ্যের বিপরীতে একটি ‘সঙ্কর বিদেশি সংস্কৃতি’র প্রসার ঘটবে বলে সতর্ক করে দিয়েছেন কমিউনিস্ট নেতারা।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত