Ajker Patrika

অস্ট্রেলিয়ায় জোকোভিচ কাণ্ডে রাজনীতিতে চাপানউতর

অস্ট্রেলিয়ায় জোকোভিচ কাণ্ডে রাজনীতিতে চাপানউতর

পুরুষ টেনিসে বিশ্বে এক নম্বর তারকা নোভাক জোকোভিচ। তাঁকে ঘিরে চলমান বিপত্তি থেকে সহজে বের হতে পারছে না অস্ট্রেলিয়া সরকার। জোকোভিচ অস্ট্রেলিয়ান ওপেন শিরোপা জয়ের জন্য আসছেন, এই ঘোষণা দেওয়ার পর থেকেই বলতে গেলে মরিসন সরকার ব্যাকফুটে রয়েছে। 

কারণ টিকাবিরোধী হিসেবে জোকোভিচের নাম এর আগেই ‘বিখ্যাত’ হয়ে গেছে। এরপরও তিনি অস্ট্রেলিয়া ঢুকতে পেরেছেন। তাঁকে আটকও করা হয়। এরপর একটি আদালত তাঁর পক্ষেই রায় দেন। তা সত্ত্বেও জোকোভিচের ভিসা বাতিল করার সিদ্ধান্তের কী ব্যাখ্যা হতে পারে? কারণটা পরিষ্কার—সামনে নির্বাচন। অস্ট্রেলিয়ান ভোটারদের সামনে এ ছাড়া আর মুখ বাঁচানোর উপায় ছিল না মরিসনের। 

মনে হচ্ছে, ভোটের আগে মুখরক্ষার জন্য অস্ট্রেলিয়ার ক্ষমতাসীনেরা যেকোনো কূটনৈতিক বিপর্যয়, আন্তর্জাতিক অঙ্গনে জাতিকে বিব্রত করা এবং জোকোভিচের লাখ লাখ সমর্থকের ক্রোধ সহ্য করতে প্রস্তুত। 

জোকোভিচকে ঘিরে ঘটনাগুলো খেয়াল করলে সহজেই বোঝা যায়, দুই সপ্তাহ ধরে অস্ট্রেলিয়ার ফেডারেল সরকার একটা অবস্থান ভোটারদের দেখানোর চেষ্টা করে যাচ্ছে—কেউ-ই নিয়মের ঊর্ধ্বে নয়। এমনকি পুরুষ টেনিসে বিশ্বের এক নম্বর তারকা হলেও নয়। 

পাবলিককে কথায় কথায় আইন দেখানো, আইনের শাসন নিয়ে মুখে খই ফোটানোর কাজটা খুব সহজ। এই নীতি বাস্তবায়ন রাজনীতিকদের কাছে খুব জটিল জিনিস হলেও সাধারণ জনগণের কাছে অতি সহজ-সরল। অস্ট্রেলিয়ার রাজনীতিকেরা সেই রূপটাই দেখিয়েছেন। জোকোভিচের ঘটনাটি নিয়ে তাঁরা ত্যানা প্যাঁচিয়েছেন। 

অথচ জোকোভিচ আসার আগ মুহূর্ত পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন বলেছেন, কোনো খেলোয়াড় মেলবোর্নে পৌঁছানোর পর যদি দেখা যায় তাঁর নথিপত্র ঠিকঠাক নেই তাহলে ‘পরের ফ্লাইটেই বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হবে’। পরের দিন ৬ জানুয়ারি জোকোভিচের ভিসা বাতিলের পর মরিসন ওই বক্তব্যেরই পুনরুক্তি করে বলেন, ‘নিয়ম নিয়মই’। 

এরপর জোকোভিচ সরকারের সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করেন। মরিসন তখন বলেন, এখন এটা আদালতের এখতিয়ারের বিষয়। 

কিন্তু হঠাৎ করেই সরকারের অবস্থান খুবই নড়বড়ে হতে শুরু করে। ফেডারেল সরকারের পক্ষ থেকে করোনা বিধিনিষেধের সঙ্গে আইনি জটিলতাগুলো নিয়ে প্রশ্নের জবাব দিতে সময় চাওয়া হলে একজন বিচারক তা প্রত্যাখ্যান করেন। টিকা না নিয়েও জোকোভিচ অস্ট্রেলিয়ার উদ্দেশে প্রথম ফ্লাইটে কীভাবে চড়তে পারলেন তা নিয়েও প্রশ্ন উঠতে শুরু করে। অস্ট্রেলিয়ার অভিবাসন আইনের ত্রুটি নিয়েও অনেকে কথা বলতে থাকেন। 

বিচারক অ্যান্টনি কেলি যখন জোকোভিচের পক্ষে রায় দিয়েছিলেন—মেলবোর্ন বিমানবন্দরে ইমিগ্রেশন প্রক্রিয়ায় সম্ভাব্য ত্রুটির কথা উল্লেখ করে সরকারকে জোকোভিচের ভিসা ফিরিয়ে দিয়ে মুক্তি দেওয়ার নির্দেশ দেন বিচারক—তখনই কিন্তু পুরো বিষয়টি মিটে যেতে পারত। কিন্তু তা হয়নি। 

অস্ট্রেলিয়ার অভিবাসন মন্ত্রী অ্যালেক্স হকের কাছে ভিসা বাতিল করা এবং জোকোভিচকে দেশে ফেরত পাঠানোর নির্বাহী ক্ষমতা ছিল এবং তিনি সেই ক্ষমতা দেখালেন। 

আদালতের আদেশের পরও মন্ত্রী আগ বাড়িয়ে কেন এ কাজটা করলেন? পর্যবেক্ষকেরা বলছেন, পুরোটাই রাজনৈতিক। নোংরা রাজনীতি থেকে মুক্তি নেই! 

এখানে সরকারের সামনে দুটি বিষয় বিবেচনা করার আছে। 

প্রথমত, মরিসন প্রশাসনকে এই ঘটনা দারুণভাবে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলেছে। অস্ট্রেলিয়ানদের কাছে তো বটেই প্রকৃতপক্ষে বিশ্বের কাছে, এমন একটা বার্তা যাচ্ছে যে, রাজনীতিবিদেরা এমন একটা নিয়ম প্রয়োগ করছেন যা তাঁরা নিজেরাই ঠিকঠাক বোঝেন না! তাঁরা একে অপরের সঙ্গে কথা বলেন না বলেও মনে হচ্ছে। অর্থাৎ সরকারের সমন্বয়হীনতাই এখানে স্পষ্ট হচ্ছে। 

শুরু থেকেই দেখা যাচ্ছে, শুরুতে সরকারের একটি স্তর—ভিক্টোরিয়া রাজ্য— টেনিস অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে বিচ্ছিন্নভাবে সিদ্ধান্ত নিচ্ছিল। কেন্দ্র সরকারের কর্মকর্তারা সম্পূর্ণ ভিন্ন কথা বলছিলেন। টুর্নামেন্ট আয়োজকেরা অভিযোগ করছিলেন যে, তাঁরা এই ভজঘটের মধ্যে পড়ে গেছেন। 

দ্বিতীয়ত, কোভিডে কড়াকড়ি আর টেনিসে ছাড়— দেশজুড়ে ক্ষোভ এবং ক্রোধের জন্ম দিয়েছে। যখন অস্ট্রেলিয়ার দুটি সর্বাধিক জনবহুল রাজ্য, নিউ সাউথ ওয়েলস এবং ভিক্টোরিয়ায় কয়েক সপ্তাহ ধরে কয়েক হাজার কোভিড আক্রান্ত শনাক্ত হচ্ছে। পরীক্ষা কেন্দ্রগুলো হিমশিম খাচ্ছে, মৃত্যুর সংখ্যাও বাড়ছে। অবশ্য ইউরোপ বা যুক্তরাষ্ট্রের তুলনায় এখানে সংক্রমণ হার কম। যেখানে শুরু থেকেই অস্ট্রেলিয়া কঠোর কোভিড নিয়ম আরোপ করেছে। মাঝে মাঝে একক রোগী শনাক্তের পরই পুরো শহর বা রাজ্য লকডাউনের মতো ঘটনাও ঘটেছে। 

এমন পরিস্থিতিতে টেনিস নিয়ে সরকারের এমন লেজেগোবরে অবস্থায় অস্ট্রেলিয়ানরা নিজেদের উপেক্ষিত, পরিত্যক্ত বোধ করছেন। তাঁরা বলছেন, সরকার যা যা বলেছে আমরা সব করেছি। তাঁরা টিকা পেয়েছেন। অনেকে বুস্টারও পাচ্ছে। এরপরও ওমিক্রন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। জনগণের এখন দিশেহারা অবস্থা। আর কী কী করলে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে থাকবে! নতুন করে আর কঠোর লকডাউন আহ্বান করার মতো অবস্থায় কেউ নেই। 

জনগণের এই অবস্থার মধ্যে এমন একজন টেনিস তারকাকে নিয়ে হইচই চলছে যিনি গর্বের সঙ্গেই নিজেকে টিকাবিরোধী বলে প্রচার করেন! যিনি এরই মধ্যে কোভিড পজিটিভ থাকাকালীন আইসোলেশনের নিয়ম ভঙ্গ করেছেন এবং ভ্রমণ ভিসার নথিপত্রে মিথ্যা তথ্য দেওয়ার কথা স্বীকার করেছেন। 

কোনো সন্দেহ নেই, এই বিতর্কের ফেরে স্কট মরিসন সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। রাজ্য ও ফেডারেল সরকারের মধ্যে রাজনৈতিক বিরোধ; পারস্পরিক যোগাযোগ বিচ্ছিন্নতা; সমন্বয়হীনতা, কোন আইন কার জন্য প্রযোজ্য তা নিয়ে অস্পষ্টতা ও অস্বচ্ছতা; একজন টিকাবিরোধী বিখ্যাত ক্রীড়াবিদ যিনি কোভিড নিয়ম ভঙ্গ করেছেন—সব মিলিয়ে সরকারে একটি এলোমেলো ছবি মেলে ধরেছে। রাজনীতিকেরা এখন মরিয়া হয়ে সেই ছবিটা ঠিক করার চেষ্টা করছেন। 

এখন একটা বিষয় আরও স্পষ্ট হয়ে গেছে যে, আদালতের রায় মেনে জোকোভিচের ভিসা বাতিল না করলে সরকারকে আরও অনেক কিছুর ব্যাখ্যা দিতে হতো।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

আসামে মধ্যরাতে ট্রেনের ধাক্কায় ৭ হাতির মৃত্যু, রক্ষা পেলেন যাত্রীরা

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২০ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৩: ২১
শুক্রবার গভীর রাতে হাতির পালের ওপর উঠে যায় এক্সপ্রেস ট্রেন। ছবি: এক্স
শুক্রবার গভীর রাতে হাতির পালের ওপর উঠে যায় এক্সপ্রেস ট্রেন। ছবি: এক্স

ভারতের আসাম রাজ্যের হোজাই জেলায় এক মর্মান্তিক ট্রেন দুর্ঘটনায় প্রাণ হারাল সাতটি বন্য হাতি। গতকাল শুক্রবার দিবাগত গভীর রাতে সাইরাং-নয়াদিল্লি রাজধানী এক্সপ্রেসের সঙ্গে হাতির পালের এই ভয়াবহ সংঘর্ষ ঘটে। দুর্ঘটনায় একটি হাতি গুরুতর জখম হয়েছে, যার অবস্থা বর্তমানে আশঙ্কাজনক।

ভারতীয় গণমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, সংঘর্ষের তীব্রতা এতটাই বেশি ছিল যে রাজধানী এক্সপ্রেসের শক্তিশালী ইঞ্জিনসহ পাঁচটি বগি লাইনচ্যুত হয়ে পড়ে। তবে বড় ধরনের দুর্ঘটনা সত্ত্বেও ট্রেনের যাত্রীরা সবাই সুরক্ষিত রয়েছেন বলে নিশ্চিত করেছে রেল কর্তৃপক্ষ।

উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলের লামডিং ডিভিশনের অন্তর্গত যমুনামুখ-কামপুর সেকশনে শুক্রবার রাত ২টো ১৭ মিনিটে এই দুর্ঘটনা ঘটে। স্থানীয় ও রেল সূত্রে জানা গেছে, ওই সময় ১১-১২টি হাতির একটি পাল রেললাইন পার হচ্ছিল। ঘন কুয়াশা ও রাতের অন্ধকারের মধ্যে দ্রুতগতিতে থাকা সাইরাং-নয়াদিল্লি রাজধানী এক্সপ্রেসটি হাতির পালের ওপর উঠে পড়ে। ট্রেনের ধাক্কায় ছিটকে পড়ে সাতটি হাতি এবং ঘটনাস্থলেই তাদের মৃত্যু হয়। স্থানীয়দের দাবি, এই এলাকায় হাতির যাতায়াত থাকলেও ট্রেনের গতি নিয়ন্ত্রণ করার মতো পর্যাপ্ত সতর্কতা ছিল না।

উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলের মুখ্য জনসংযোগ কর্মকর্তা কপিঞ্জলকিশোর শর্মা জানিয়েছেন, যে স্থানে দুর্ঘটনাটি ঘটেছে সেখানে কোনো নির্ধারিত ‘এলিফ্যান্ট করিডর’ ছিল না। তিনি বলেন, ‘চালক লাইনের ওপর হাতির পাল দেখতে পেয়েই দ্রুত আপৎকালীন ব্রেক কষেছিলেন। কিন্তু ট্রেনের গতিবেগ অত্যন্ত বেশি থাকায় এবং দূরত্ব কম হওয়ায় ধাক্কা এড়ানো সম্ভব হয়নি।’

রেল কর্তৃপক্ষ আরও জানিয়েছে, দুর্ঘটনার পর ট্রেনের কোনো যাত্রী আহত হননি এবং লাইনচ্যুত বগিগুলো উদ্ধার করে লাইন সচল করার কাজ চলছে।

দুর্ঘটনাস্থলটি আসামের গুয়াহাটি থেকে ১২৬ কিলোমিটার দূরে হোজাই জেলায় অবস্থিত। খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই রেলের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, প্রকৌশলী এবং বন দপ্তরের কর্মীরা ঘটনাস্থলে পৌঁছান। আটকে পড়া যাত্রীদের গন্তব্যে পৌঁছে দিতে রেলের পক্ষ থেকে দ্রুত বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এই দুর্ঘটনার জেরে উত্তর-পূর্ব ভারতের সঙ্গে বাকি দেশের রেল যোগাযোগ সাময়িকভাবে ব্যাহত হয়েছে। একাধিক গুরুত্বপূর্ণ ট্রেনের যাত্রাপথ রিশিডিউল করা হয়েছে এবং অনেক ট্রেনকে বিকল্প পথে চালানো হচ্ছে।

বন দপ্তরের বিশেষ দল ইতিমধ্যে মৃত হাতিগুলোর ময়নাতদন্তের প্রক্রিয়া শুরু করেছে। প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, মৃত হাতিগুলোর মধ্যে প্রাপ্তবয়স্ক হাতির পাশাপাশি শাবকও থাকতে পারে। রেললাইনটি হাতির চলাচলের স্বাভাবিক পথ না হওয়া সত্ত্বেও কেন সেখানে হাতির পাল এল এবং চালকের কোনো গাফিলতি ছিল কি না, তা খতিয়ে দেখতে একটি উচ্চপর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। বন্য প্রাণীপ্রেমীরা এই ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ করেছেন এবং রেললাইনের ধারে সেন্সর বা আধুনিক নজরদারি ব্যবস্থা স্থাপনের দাবি জানিয়েছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

রাশিয়াকে পশ্চিম সম্মান করলে আর যুদ্ধ হবে না: পুতিন

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ভ্লাদিমির পুতিন। ছবি: এএফপি
ভ্লাদিমির পুতিন। ছবি: এএফপি

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেছেন, ইউক্রেন যুদ্ধের পর আর কোনো যুদ্ধ হবে না—যদি পশ্চিমা দেশগুলো রাশিয়াকে সম্মান করে এবং দেশটির নিরাপত্তাগত স্বার্থকে গুরুত্ব দেয়। রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে প্রায় সাড়ে চার ঘণ্টাব্যাপী অনুষ্ঠান ‘ডিরেক্ট লাইন’-এ তিনি এই মন্তব্য করেন।

বিবিসির সাংবাদিক স্টিভ রোজেনবার্গের প্রশ্নের জবাবে পুতিন বলেন, ইউরোপীয় দেশগুলোকে আক্রমণ করার যে অভিযোগ তোলা হচ্ছে, তা সম্পূর্ণ ‘অর্থহীন’।

পুতিন দাবি করেন, রাশিয়ার প্রতি সম্মান দেখানো হলে এবং পূর্বদিকে ন্যাটোর সম্প্রসারণ নিয়ে পশ্চিমা দেশগুলো ‘প্রতারণা’ বন্ধ করলে নতুন কোনো বিশেষ সামরিক অভিযান হবে না। তিনি তাঁর পুরোনো অভিযোগের পুনরাবৃত্তি করে বলেন, ১৯৯০ সালে সোভিয়েত নেতা মিখাইল গর্বাচেভকে ন্যাটো সম্প্রসারণ না করার যে আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল, পশ্চিম তা মানেনি।

মস্কোর একটি হলে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে পুতিনের পেছনে রাশিয়ার বিশাল মানচিত্র ঝুলছিল। এই মানচিত্রে ইউক্রেনের দখলকৃত অঞ্চল, এমনকি ক্রিমিয়াও অন্তর্ভুক্ত ছিল। রুশ রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনের দাবি, ওই অনুষ্ঠানটিতে পুতিনকে উদ্দেশ্য করে ৩০ লাখের বেশি প্রশ্ন জমা পড়েছিল।

ইউক্রেন যুদ্ধের বিষয়ে পুতিন বলেন, তিনি ‘শান্তিপূর্ণভাবে’ যুদ্ধ শেষ করতে প্রস্তুত। তবে কোনো ধরনের আপসের ইঙ্গিত দেননি। তিনি আবারও দাবি করেন, ইউক্রেনকে ন্যাটোতে যোগ দেওয়ার চেষ্টা বাদ দিতে হবে এবং রাশিয়ার দখল করা চারটি অঞ্চল থেকে ইউক্রেনীয় সেনা সরিয়ে নিতে হবে। আংশিকভাবে দখল করে নেওয়া ইউক্রেনের দনবাস অঞ্চলের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ চায় রাশিয়া।

দেশের অর্থনীতির প্রশ্নে মূল্যস্ফীতি, প্রবৃদ্ধি কমে যাওয়া এবং ভ্যাট বৃদ্ধির বিষয় স্বীকার করেন পুতিন। অনুষ্ঠানের মধ্যেই রাশিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুদের হার কমিয়ে ১৬ শতাংশে নামানোর ঘোষণা দেয়। বিদেশনীতি, অর্থনীতি ও যুদ্ধের পাশাপাশি অনুষ্ঠানজুড়ে উঠে আসে মাতৃভূমি, প্রবীণ সেনাদের সম্মান এবং সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন সমস্যা।

পুতিন পশ্চিমাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে বলেন, তারা ইউক্রেনের মাধ্যমে রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালাচ্ছে। তবে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ইউরোপের সঙ্গে ‘সমান মর্যাদা ও পারস্পরিক সম্মানের ভিত্তিতে’ কাজ করতে তিনি আগ্রহ প্রকাশ করেন। রাশিয়া ভবিষ্যতে ন্যাটোর ওপর হামলা চালাতে পারে—পশ্চিমা গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর এমন আশঙ্কার কথা আবারও তা নাকচ করে দেন তিনি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

জানুয়ারিতে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে রোহিঙ্গা গণহত্যার শুনানি

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২০ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৯: ০৬
২০১৭ সালে প্রায় সাড়ে সাত লাখ রোহিঙ্গা প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। ছবি: এপির সৌজন্যে
২০১৭ সালে প্রায় সাড়ে সাত লাখ রোহিঙ্গা প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। ছবি: এপির সৌজন্যে

মিয়ানমারের বিরুদ্ধে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর গণহত্যার অভিযোগে করা মামলার মূল শুনানি আগামী জানুয়ারিতে শুরু হচ্ছে। জাতিসংঘের সর্বোচ্চ বিচারিক সংস্থা আন্তর্জাতিক বিচার আদালত (আইসিজে) জানিয়েছে, এ মামলার শুনানি চলবে আগামী ১২ থেকে ২৯ জানুয়ারি পর্যন্ত।

এই শুনানি আন্তর্জাতিক আইনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। কারণ, এক দশকের বেশি সময় পর এটি হবে আইসিজেতে কোনো গণহত্যা মামলার মূল বিষয়ের ওপর শুনানি। একই সঙ্গে গাজা যুদ্ধ নিয়ে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে দক্ষিণ আফ্রিকার দায়ের করা মামলাতেও এর প্রভাব পড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শুনানির প্রথম সপ্তাহে (১২ থেকে ১৫ জানুয়ারি) মামলার বাদী দেশ গাম্বিয়া আদালতে তাদের অভিযোগ উপস্থাপন করবে। পশ্চিম আফ্রিকার মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ গাম্বিয়া ২০১৯ সালে ইসলামি সহযোগিতা সংস্থার (ওআইসি) সমর্থনে এ মামলা দায়ের করে। মামলায় মিয়ানমারের বিরুদ্ধে রোহিঙ্গাদের ওপর গণহত্যা চালানোর অভিযোগ আনা হয়।

এরপর ১৬ থেকে ২০ জানুয়ারি পর্যন্ত মিয়ানমার তাদের অবস্থান তুলে ধরার সুযোগ পাবে। মিয়ানমার সরকার বরাবরই গণহত্যার অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে।

আইসিজে জানিয়েছে, এ মামলায় তিন দিন সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে। তবে এসব শুনানি জনসাধারণ ও গণমাধ্যমের জন্য বন্ধ থাকবে।

জাতিসংঘের একটি তদন্ত মিশন ২০১৭ সালে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর অভিযানে ‘গণহত্যামূলক কর্মকাণ্ড’ সংঘটিত হয়েছিল বলে প্রতিবেদন দেয়। ওই অভিযানে প্রায় সাড়ে সাত লাখ রোহিঙ্গা প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়।

মিয়ানমার অবশ্য জাতিসংঘের ওই প্রতিবেদনকে ‘পক্ষপাতদুষ্ট ও ত্রুটিপূর্ণ’ বলে দাবি করেছে। দেশটির বক্তব্য, সে সময়কার অভিযান ছিল রোহিঙ্গা বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে, যারা নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর হামলা চালিয়েছিল।

মামলাটি ১৯৪৮ সালের জাতিসংঘের গণহত্যা সনদ অনুযায়ী দায়ের করা হয়েছে। নাৎসি জার্মানির হাতে ইহুদিদের গণহত্যার পর এ সনদ প্রণয়ন করা হয়। এতে গণহত্যা বলতে কোনো জাতিগত, ধর্মীয় বা নৃগোষ্ঠীকে পুরোপুরি বা আংশিকভাবে ধ্বংস করার উদ্দেশ্যে সংঘটিত হত্যাকাণ্ড, গুরুতর শারীরিক বা মানসিক ক্ষতি, কিংবা পুরোপুরি ধ্বংসের উদ্দেশ্যে সৃষ্ট পরিস্থিতিকে বোঝানো হয়েছে।

গাম্বিয়া ও মিয়ানমার—দুই দেশই এ সনদের স্বাক্ষরকারী হওয়ায় আইসিজের এ মামলার বিচারিক এখতিয়ার রয়েছে।

১৯৪৮ সালের গণহত্যা সনদের পর আইসিজে এখন পর্যন্ত মাত্র একবার গণহত্যার ঘটনা নিশ্চিত করেছে। এটি ছিল ১৯৯৫ সালে বসনিয়ার স্রেব্রেনিৎসায় প্রায় ৮ হাজার মুসলিম পুরুষ ও কিশোর হত্যাকাণ্ড।

গাম্বিয়া ও মামলায় হস্তক্ষেপকারী অন্য দেশগুলো হলো কানাডা, ফ্রান্স, জার্মানি ও যুক্তরাজ্য। এই পাঁচ দেশ আদালতে যুক্তি দিয়েছে, গণহত্যা শুধু ব্যাপক হত্যাকাণ্ডের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। তাদের মতে, জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুতি, শিশুদের বিরুদ্ধে অপরাধ এবং যৌন ও লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতাও গণহত্যার উদ্দেশ্য হিসেবে বিবেচনায় নেওয়া উচিত।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বাংলাদেশ প্রসঙ্গে বাজপেয়ির ‘সেই বক্তব্য’ সামনে আনলেন শশী থারুর

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২০ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২: ১৬
কংগ্রেস সাংসদ ও ভারতের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির (পররাষ্ট্রবিষয়ক) প্রধান শশী থারুর। ছবি: পিটিআই
কংগ্রেস সাংসদ ও ভারতের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির (পররাষ্ট্রবিষয়ক) প্রধান শশী থারুর। ছবি: পিটিআই

ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ও জুলাই অভ্যুত্থানের অন্যতম যোদ্ধা শরিফ ওসমান বিন হাদির মৃত্যুকে কেন্দ্র করে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে বাংলাদেশ। গতকাল বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ, সংবাদমাধ্যমের ভবনে অগ্নিসংযোগ এবং ভারতীয় আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে স্লোগান দেওয়ার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন কংগ্রেস সাংসদ ও ভারতের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির (পররাষ্ট্রবিষয়ক) প্রধান শশী থারুর।

শশী থারুর সতর্ক করে বলেছেন, বাংলাদেশে চলমান এই সহিংসতা সাধারণ বাংলাদেশিদের সহায়তা করার ক্ষেত্রে ভারতের সক্ষমতাকে সংকুচিত করে দিচ্ছে। তিনি ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারি বাজপেয়ির সেই বিখ্যাত উক্তি স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেন, ‘ভূগোল পরিবর্তন করা যায় না। আমরা যেখানে আছি সেখানেই থাকব, তারাও সেখানেই থাকবে। তাদের উচিত আমাদের সঙ্গে মিলেমিশে কাজ করতে শেখা।’

বাংলাদেশে সংবাদমাধ্যমের ওপর হামলা এবং ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে থারুর বলেছেন, ‘সহিংসতার কারণে আমাদের দুটি ভিসা সেন্টার বন্ধ করে দিতে হয়েছে। এটি অত্যন্ত হতাশাজনক। কারণ, যেসব বাংলাদেশি ভারতে আসতে চান, তাঁরাই এখন অভিযোগ করছেন যে আগে যেভাবে সহজে ভিসা পাওয়া যেত, এখন তা পাওয়া যাচ্ছে না।’

থারুর উল্লেখ করেন, বর্তমান পরিস্থিতি ভারত সরকারের পক্ষে সাধারণ বাংলাদেশিদের সাহায্য করা কঠিন করে তুলছে।

বাংলাদেশ সরকারকে ভারতের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখার ওপর গুরুত্বারোপ করে থারুর বলেন, ‘আমি আশা করি পরিস্থিতি দ্রুত স্বাভাবিক হবে। আমি বাংলাদেশের জনগণ ও সরকারকে বলব যেন তারা প্রতিবেশীর সঙ্গে এই ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের গুরুত্ব বোঝে। বাজপেয়ি সাহেব পাকিস্তানের ক্ষেত্রে যেমনটি বলেছিলেন—আমরা আমাদের ভূগোল পরিবর্তন করতে পারি না। আমরা যেখানে আছি সেখানেই থাকব, তারাও সেখানেই থাকবে। তাদের উচিত আমাদের সঙ্গে মিলেমিশে কাজ করতে শেখা।’

শশী থারুর জানান, নয়াদিল্লি পুরো পরিস্থিতি খুব নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে এবং ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় কর্মকর্তারা সরাসরি বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করবেন। তিনি বলেন, ‘ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশন সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করবে এবং পরিস্থিতি শান্ত করার জন্য যা যা করা প্রয়োজন তা করতে অনুরোধ জানাবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত