‘ফেসবুক বন্ধুর’ ফাঁদে পড়ে ভারতের যৌনপল্লিতে বাংলাদেশি তরুণী

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ : ১৩ অক্টোবর ২০২৩, ১৭: ৪৩
আপডেট : ১৩ অক্টোবর ২০২৩, ১৮: ৩৯

চিকিৎসার আশ্বাস দিয়ে বাংলাদেশি তরুণীকে (১৯) ভারতে নিয়ে যৌনপল্লিতে বিক্রির অভিযোগ উঠেছে ভুক্তভোগীর ‘ফেসবুক বন্ধুর’ বিরুদ্ধে। ৯ অক্টোবর ভারতের পুনে শহরের পুলিশ তাঁকে যৌনপল্লি থেকে উদ্ধার করে। 

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ভুক্তভোগীকে পুনের বুধবার পেঠ এলাকার একটি যৌনপল্লিতে বিক্রি করা হয়েছিল।   

পুনে পুলিশের ক্রাইম ব্রাঞ্চের সামাজিক নিরাপত্তা সেলের পুলিশ হাবিলদার রেশমা কংক এই ঘটনায় ফরাসখানা থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন।  

পুলিশ সে যৌনপল্লির রক্ষক লাখি ওরফে সুইটি আকবর শেখকে (৩৪) ভারতীয় দণ্ডবিধির ধারা ৩৭০, ৩৪ এবং অনৈতিক পাচার প্রতিরোধ আইনের অধীনে গ্রেপ্তার করে। এ ছাড়া পুলিশ ভুক্তভোগীর ‘ফেসবুক বন্ধু’ মিনা ওরফে সীমার বিরুদ্ধেও অভিযোগ দায়ের করেছে। সীমা একজন দেহ ব্যবসায়ীর এজেন্ট হিসেবে কাজ করেন এবং বর্তমানে পলাতক রয়েছেন।    

বিশ্বস্ত সোর্স থেকে তথ্য পেয়ে ৯ অক্টোবর রাতে জ্যেষ্ঠ পুলিশ পরিদর্শক ভারত যাদব এবং সহকারী পরিদর্শক অনিকেত পোতে, অশ্বিনী পাটিল, রাজেশ মালগাভের নেতৃত্বে পুলিশের সামাজিক নিরাপত্তা সেল বুধবার পেঠের ‘বেগম বিল্ডিংয়ে’ অভিযান চালায়।    

অভিযানে পুলিশ একজন ১৯ বছর বয়সী বাংলাদেশি তরুণীকে উদ্ধার করে। তাঁকে ওই যৌনপল্লিতে জোরপূর্বক দেহ ব্যবসায় বাধ্য করা হচ্ছিল। পুলিশ জানায়, ভুক্তভোগী কয়েক মাস আগে ফেসবুকের মাধ্যমে মিনা ওরফে সীমার সঙ্গে পরিচিত হন।   

পুলিশ বলে, ভুক্তভোগী চর্মরোগের জন্য চিকিৎসা নিতে চাচ্ছিলেন। 

সহকারী পুলিশ পরিদর্শক অনিকেত পোতে বলেন, ‘মানব পাচারকারী সীমা বন্ধুর বেশ ধরে দাবি করেন, তিনি ভারতে একজন ভালো চিকিৎসককে চেনেন যিনি তাঁর চর্মরোগ সারাতে পারবেন। ভুক্তভোগী তাঁর সঙ্গে ভারতে আসতে রাজি হয়। প্রায় দুই মাস আগে ভুক্তভোগী পাচারকারীর সঙ্গে ট্যুরিস্ট ভিসায় বাংলাদেশ থেকে কলকাতায় আসেন। এরপর তাঁরা কলকাতা থেকে আরেক ফ্লাইটে পুনে আসেন। পাচারকারী বুধবার পেঠে নিয়ে ভুক্তভোগীকে দেহ ব্যবসায় বাধ্য করে।’ 

পোতে বলেন, ‘উদ্ধারকৃত তরুণীকে আইন প্রক্রিয়া মোতাবেক বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হবে। আমরা তাঁর পাসপোর্ট এবং অন্যান্য কাগজপত্র খুঁজে পেয়েছি।’

ওই অভিযানে পুলিশ বাংলাদেশ থেকে পাচার হওয়া আরও সাত নারীকে উদ্ধার করেছে। পুলিশ বলছে, এ নারীরা পশ্চিম বঙ্গের আন্তর্জাতিক সীমানা দিয়ে অবৈধভাবে ভারতে প্রবেশ করেন এবং পরবর্তী সময় তাঁদের বুধবার পেঠের বেগম বিল্ডিংয়ে দেহ ব্যবসায় বাধ্য করা হয়।    

এ সাত নারীর বিরুদ্ধে পাসপোর্ট আইন এবং বিদেশি আইনের অধীনে পৃথক মামলা দায়ের করা হয়েছিল। মামলার এজাহার অনুসারে, অভিযুক্ত নারীরা প্রয়োজনীয় কাগজপত্র এবং অনুমতি ছাড়াই গত চার বছরে আলাদা আলাদাভাবে ভারতে প্রবেশ করেছেন। তাঁরা কীভাবে এবং কার সাহায্যে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত পার হয়ে পুনে পৌঁছেছে, তা জানার জন্য তদন্ত তৎপরতা চলছে।    

গত ১২ সেপ্টেম্বর এমনই এক অভিযানে পুনে পুলিশ আরও সাত বাংলাদেশিকে উদ্ধার করে। এ ছাড়া বুধবার পেঠের যৌনপল্লি থেকে একটি অপ্রাপ্ত বয়স্ক বাংলাদেশি মেয়েকেও উদ্ধার করেছে পুলিশ। পুলিশ বলে, বাংলাদেশের এক মানব পাচারকারী বিউটি পার্লারে চাকরি দেওয়ার আশ্বাসে অপ্রাপ্ত বয়স্ক মেয়েটিকে ভারতে নিয়ে আসে।   

জ্যেষ্ঠ পরিদর্শক ভারত যাদব বলেন, ‘এজেন্টটি ভারত-বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক নদী সীমানা ব্যবহার করে গত ২ সেপ্টেম্বর মেয়েটিকে কলকাতায় নিয়ে আসে। এরপর এজেন্টটি মেয়েটিকে কলকাতায় অন্য এক নারী পাচারকারীর কাছে দুই লাখ রুপির বিনিময়ে বিক্রি করে দেয়। ওই পাচারকারী মেয়েটিকে পুনের অন্য এক যৌনপল্লিতে দেহ ব্যবসায় বাধ্য করে।’ 

এ ছাড়া গত ১ সেপ্টেম্বর বুধবার পেঠের এক যৌনপল্লির ৯ নারীসহ অন্তত ১৯ বাংলাদেশি নারীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পুলিশ বলছে, গ্রেপ্তারকৃত ১৯ নারীই পূর্বপরিচিত ছিল। গ্রেপ্তারের এক মাস আগে তাঁরা অবৈধভাবে প্রবেশ করে পৃথকভাবে পুনে এসেছিলেন। নারীদের বিরুদ্ধে বুধবার পেঠের যৌনপল্লিতে দেহ ব্যবসার অভিযোগ থাকলেও পুরুষদের একই এলাকায় হকার হিসেবে কাজ করতে দেখা যায়।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত