জাতিসংঘে যুক্তরাষ্ট্র-ইরান ধমকাধমকি, নিষেধাজ্ঞা চায় ইসরায়েল

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : ১৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৬: ৪০
Thumbnail image

মধ্যপ্রাচ্যের উত্তেজনাময় পরিস্থিতি শান্ত করতে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে বৈঠকে বসেছিল সদস্য দেশগুলো। সেই বৈঠকে ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় হয়েছে। বলা যায়, একপ্রকার ধমকাধমকিই করেছে দুই দেশ। একই বৈঠকে ইরানের ওপর আরও নিষেধাজ্ঞা আরোপের দাবি করেছে ইসরায়েল।

সৌদি আরবের সংবাদমাধ্যম আরব নিউজের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইরান বলেছে, মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সামরিক সংঘাতে জড়ানোর কোনো ইচ্ছাই তেহরানের নেই। তবে ওয়াশিংটন যদি ইরানের জনগণ ও এর স্বার্থের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান চালায়, তবে ইরানের আত্মরক্ষার যে স্বতঃসিদ্ধ অধিকার আছে—তার প্রয়োগ করবে এবং উপযুক্ত জবাব দেবে।

জাতিসংঘে নিযুক্ত ইরানের স্থায়ী প্রতিনিধি আমির সাইয়িদ ইরাভানি স্থানীয় সময় গতকাল রোববার অনুষ্ঠিত বৈঠকে বলেন, ইসরায়েলের ওপর তাঁর দেশের আক্রমণ ছিল ‘সুনির্দিষ্ট এবং এই হামলা কেবল সামরিক লক্ষ্যবস্তুকে লক্ষ্য করে ও সতর্কতার সঙ্গে চালানো হয়েছিল। যাতে এই অঞ্চলে উত্তেজনা বৃদ্ধির আশঙ্কা কমানো যায় ও বেসামরিক ক্ষতি রোধ করা যায়।’

১ এপ্রিল সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কে ইরানি কনস্যুলেটে বিমান হামলা হয়। এতে ইরানের বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর (আইআরজিসি) আল-কুদস ফোর্সের দুই শীর্ষ জেনারেলসহ সব মিলিয়ে ১১ জন নিহত হন। ইসরায়েল আনুষ্ঠানিকভাবে এই হামলার দায় স্বীকার না করলেও ইরান ইসরায়েলকেই এর জন্য দায়ী করে আসছে।

জবাবে গত শনিবার ইসরায়েলকে লক্ষ্য করে একসঙ্গে বেশ কয়েকটি ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ইরান। শনিবার রাতে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) জানায়, ইরান ইসরায়েলকে লক্ষ্য করে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ করে। সেই হামলায় ইসরায়েলের একটি গোয়েন্দা কেন্দ্র ও একটি বিমানঘাঁটি ধ্বংস করার দাবি করেছে ইরান।

ইরান দাবি করেছে, তারা শনিবার যে হামলা চালিয়েছে, তা জাতিসংঘ সনদের ৫১ অনুচ্ছেদের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ। এই অনুচ্ছেদ অনুসারে, জাতিসংঘের সদস্য কোনো দেশের বিরুদ্ধে সশস্ত্র হামলা হলে নিরাপত্তা পরিষদ আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা বজায় রাখতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না নেওয়া পর্যন্ত ব্যক্তিগত বা সম্মিলিত আত্মরক্ষার অন্তর্নিহিত অধিকার সংশ্লিষ্ট দেশের আছে।

এদিকে জাতিসংঘে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত রবার্ট উড হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, ‘ইরান বা তাঁর মিত্ররা (প্রক্সি গোষ্ঠীগুলো) যদি যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ নেয় বা ইসরায়েলের বিরুদ্ধে আরও পদক্ষেপ নেয়, তাহলে ছাড় দেওয়া হবে না।’ তিনি বলেন, ‘ইরানের বেপরোয়া পদক্ষেপ কেবল ইসরায়েলিদের জন্যই হুমকি সৃষ্টি করেনি, একই সঙ্গে জর্ডান, ইরাকসহ এ অঞ্চলের অন্য রাষ্ট্রগুলোর জন্যও হুমকি সৃষ্টি করেছে।’

মার্কিন এই কূটনীতিক দাবি করেন, ইরানের এই হামলার বিষয়টি যেন বিনা প্রশ্নে ছেড়ে দেওয়া না হয়, তা নিশ্চিত করতে জাতিসংঘের নিরাপত্তা কাউন্সিলের বাধ্যবাধকতা আছে। তিনি দাবি করেন, বহুদিন ধরে ইরানের বিপ্লবী গার্ড বাহিনী বা আইআরজিসি হিজবুল্লাহকে অস্ত্র দিয়ে, সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের ওপর হুথি গোষ্ঠীকে সশস্ত্র সহায়তা দিয়ে স্পষ্টভাবে আন্তর্জাতিক আইনি বাধ্যবাধকতা লঙ্ঘন করেছে।

উল্লেখ্য, গতকাল জাতিসংঘে নিযুক্ত ইসরায়েলি স্থায়ী প্রতিনিধি গিলাদ এরদানের আহ্বানে নিরাপত্তা পরিষদের এই জরুরি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে এরদান, অনতিবিলম্বে দ্ব্যর্থহীনভাবে ইরানের নিন্দা করার ও আইআরজিসিকে সন্ত্রাসী গোষ্ঠীভুক্ত করার দাবি জানান।

ইসরায়েলি কূটনীতিবিদ ইরানের সুপ্রিম লিডার আয়াতুল্লাহ আলি খামেনিকে হিটলারের সঙ্গে তুলনা করেন। তিনি বলেন, ‘একমাত্র বিকল্প হলো ইরানের নিন্দা করা ও তাদের ভয়ংকর অপরাধের জন্য চড়া মূল্য দিতে বাধ্য করতে প্রয়োজনীয় সব উপায় ব্যবহার করা।’

এ সময় গিলাদ এরদান সতর্ক করে বলেন, তেহরান পারমাণবিক সক্ষমতা অর্জনের দিকে দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে এবং এরই মধ্যে ইউরেনিয়ামকে ৬০ শতাংশ পর্যন্ত সমৃদ্ধ করে ফেলেছে। দেশটির পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির বিষয়টি আর মাত্র কয়েক সপ্তাহ দূরে। তিনি বলেন, ‘দেরি হয়ে যাওয়ার আগেই ইরানের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন।’

এরদান আরও বলেন, ‘আমাদের ওপর সব ফ্রন্ট, প্রতিটি সীমান্ত থেকে গুলি চালানো হয়েছে। ইরানের সন্ত্রাসী প্রক্সি গোষ্ঠীগুলো আমাদের ঘিরে রেখেছে। গাজার যুদ্ধ ইসরায়েল ও হামাসের চেয়ে অনেক বেশি বিস্তৃত। ইসরায়েলে হামলাকারী সব সন্ত্রাসী গোষ্ঠী একই শিয়া অক্টোপাস। এগুলো সবই ইরানি থলে থেকে বের হয়ে আসছে।’

আরও পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত