গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে চীনে সাংবাদিকের ৭ বছরের কারাদণ্ড

অনলাইন ডেস্ক
Thumbnail image
চীনা সাংবাদিক ডং ইউইউ। ছবি: সংগৃহীত

গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে সাবেক সাংবাদিককে সাত বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে চীন। শুক্রবার বিবিসিকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন অভিযুক্ত সাংবাদিকের পরিবারের সদস্যরা।

৬২ বছর বয়সী ডং ইউইউ ২০২২ সাল থেকে আটক ছিলেন। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, তিনি যুক্তরাষ্ট্র-জাপানের একাডেমিক ও সাংবাদিক মহলে যোগাযোগ রাখতেন এবং নিয়মিত বিদেশি কূটনীতিকদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতেন।

যখন ডং ইউইউকে গ্রেপ্তার করা হয়, তখন তিনি ‘গুয়াংমিং ডেইলি’ নামের একটি চীনা কমিউনিস্ট পত্রিকার সিনিয়র স্টাফ ছিলেন। এই পত্রিকা চীনা কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গে যুক্ত প্রধান পাঁচটি পত্রিকার অন্যতম।

২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে, বেইজিংয়ে শীতকালীন অলিম্পিক শেষ হওয়ার পরদিন এক জাপানি কূটনীতিকের সঙ্গে একটি রেস্তোরাঁয় মধ্যাহ্নভোজ করার সময় পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হন ডং ইউইউ। এসময় ওই জাপানি কূটনীতিককেও গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। তবে কয়েক ঘণ্টা পর জাপানি সরকারের প্রতিবাদের মুখে তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়।

ডংয়ের পরিবারের সদস্যরা জানান, তিনি কাজের অংশ হিসেবে নিয়মিত বিদেশি বন্ধু, সাংবাদিক ও বিদেশি কূটনীতিকদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতেন।

এক বিবৃতিতে ডংয়ের পরিবার জানিয়েছে, আদালতের রায়ে বলা হয় ডং যে দুজন জাপানি কূটনীতিকের সঙ্গে দেখা করেছিলেন তাঁরা একটি ‘গুপ্তচর সংস্থার এজেন্ট’। এই দুই কূটনীতিক জাপানি দূতাবাসের কর্মকর্তা ছিলেন।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, চীনা কর্তৃপক্ষ একটি বিদেশি দূতাবাসকে ‘গুপ্তচর সংস্থা’ হিসেবে বিবেচনা করে এবং এর কর্মকর্তাদের ‘গুপ্তচর সংস্থার’ এজেন্ট মনে করে। যা আমাদের হতবাক করেছে।

বিবৃতিতে ডংয়ের পরিবার দাবি করে, ‘আজকের এই রায় শুধু ডং ইউইউ ও তাঁর পরিবারের জন্য নয়, বরং প্রতিটি চীনা সাংবাদিক এবং বিশ্বব্যাপী সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখতে আগ্রহী প্রতিটি সাধারণ চীনা নাগরিকের জন্য একটি গুরুতর অন্যায়।’

রয়টার্স জানিয়েছে, আজ শুক্রবার বেইজিং-এর যে আদালতে ডংয়ের রায় দেওয়া হয় তার বাইরে কঠোর নিরাপত্তা ছিল। সাংবাদিকদের সেখান থেকে চলে যেতে বলা হয়। এক কূটনীতিক জানিয়েছেন, শুনানিতেও তাঁদের উপস্থিত হতে দেওয়া হয়নি।

মার্কিন জাতীয় প্রেস ক্লাব মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে জানিয়েছিল, ‘অতীতে, চীনা আদালত প্রায়ই পশ্চিমা ছুটির দিনগুলোতে তাদের গুরুত্বপূর্ণ খবর প্রকাশ করেছে। এর কারণ, মানুষ তখন অন্য বিষয়ে মশগুল থাকে।’ ডংয়ের রায়ও এমন একটি দিনে দেওয়া হয়। গতকাল বৃহস্পতিবার (২৮ নভেম্বর) পশ্চিমা দেশগুলোতে থ্যাঙ্কসগিভিং ডে ছিল।

মার্কিন সংস্থা ‘কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টে’র এশিয়া প্রোগ্রাম ম্যানেজার বেহ লিহ ইয়ি রয়টার্সকে বলেছেন, ‘চীনা কর্তৃপক্ষকে এই অন্যায্য রায় বাতিল করতে হবে এবং চীনে সাংবাদিকদের মুক্ত ও নিরাপদে কাজ করার অধিকার দিতে হবে। ডং ইউইউকে অবিলম্বে মুক্তি দিয়ে তাঁর পরিবারের সঙ্গে দেখা করার সুযোগ দেওয়া উচিত।’

ডংয়ের পরিবারের দেওয়া বিবৃতি থেকে জানা যায়, তিনি ১৯৮৭ সালে পেকিং বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগ থেকে স্নাতক শেষ করে গুয়াংমিং ডেইলিতে যোগ দেন। ১৯৮৯ সালে তিয়েনআনমেন স্কয়ার বিক্ষোভে অংশ নেওয়া হাজার হাজার শিক্ষার্থীদের মধ্যে একজন ছিলেন ডং ইউইউ। এই অপরাধে তাঁকে কঠোর পরিশ্রমের শাস্তি দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু এ শাস্তির মধ্যেও ডং পত্রিকায় কাজ করা অব্যাহত রাখেন।

২০০৭ সালে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে নিম্যান ফেলোশিপ পান ডং। সেসময় তিনি নিউইয়র্ক টাইমসের জন্য বেশ কয়েকটি নিবন্ধ লিখেছিলেন। এছাড়া জাপানের বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে অতিথি ফেলো ও অধ্যাপক হিসেবেও কাজ করেন ডং ইউইউ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত