স্তন ক্যানসারের বিরুদ্ধে লড়তে গড়েছিলেন দাতব্য সংস্থা, ৩৮–এ হেরে গেলেন সেই রোগেই

অনলাইন ডেস্ক
Thumbnail image

স্তন ক্যানসারের প্রাথমিক লক্ষণগুলোর ব্যাপারে সচেতনতা বাড়ানোর উদ্দেশ্যে দাতব্য সংস্থা কোপাফিল প্রতিষ্ঠা করেন ক্রিস হ্যালেঙ্গা। সেই রোগের সঙ্গে লড়ে মাত্র ৩৮ বছর বয়সে মারা গেলেন তিনি। ১৫ বছর আগে স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত হন হ্যালেঙ্গা। তাঁর মৃত্যুর খবরটি দিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান। 

 ২৩ বছর বয়সে হ্যালেঙ্গা প্রথম জানতে পারেন যে, দ্বিতীয় পর্যায়ের ক্যানসার তাঁর মেরুদণ্ডে ছড়িয়ে পড়েছে। এরপর তিনি দাতব্য সংস্থা কোপাফিল প্রতিষ্ঠা করেন। ধীরে ধীরে এটি পরিণত হয় শীর্ষস্থানীয় ক্যানসার সচেতনতামূলক দাতব্য প্রতিষ্ঠানে। কোপাফিল লাখ লাখ অল্পবয়সী তরুণীকে স্তন পরীক্ষা করতে এবং পরীক্ষার যন্ত্র তৈরি করতে উৎসাহিত করেছে।

কোপাফিলের সচেতনতামূলক বার্তা যুক্তরাজ্যের সংসদেও দেখানো হয়েছে। একটি বিজ্ঞাপনের বিলবোর্ডে প্রথমবার স্তনবৃন্ত দেখানোও সংস্থাটির কাজের অন্তর্ভুক্ত ছিল।

 ২০২১ সালে দ্য গার্ডিয়ানকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে হ্যালেঙ্গা বলেছিলেন, তাঁর শরীরে রোগটি ধরার পড়ার পর কী করবেন বুঝে উঠতে পারছিলেন না হ্যালেঙ্গা। এই পরিস্থিতিই তাঁকে স্তন ক্যানসার সম্পর্কে সচেতনতা তৈরিতে কাজ করার জন্য অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে।

সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, ‘আমি ভাবতে থাকলাম যে, কেউ কেন আমাকে স্তন পরীক্ষার ব্যাপারে বলেনি। আমি কেন জানলাম না যে,২৩ বছর বয়সে আমার স্তন ক্যানসার হতে পারে? আমি নিশ্চিত যে, আমার বন্ধুরাও এটা জানে না। যদি আমরা কেউই এটা না জানাই, তবে আক্ষরিক অর্থে এই দেশের অল্পবয়সী কেউই এই গোপন বিষয়টি জানবে না। এটি পরিবর্তন করা দরকার। সেখান থেকেই আমি কাজ করার উৎসাহ পাই।’ 

যমজ বোন মারেনের সঙ্গে হ্যালেঙ্গা চোখের সামনে তাঁর দাতব্য সংস্থাটিকে যুক্তরাজ্যের তৃতীয় সর্বাধিক স্বীকৃত ক্যানসার দাতব্য প্রতিষ্ঠানে পরিণত হতে দেখেছেন। এক সাক্ষাৎকারে হ্যালেঙ্গা বলেন, ‘এটি (কোপাফিল) আসলেই জীবন বাঁচায়, আর এই ভাবনাটিই আমার মনকে পূর্ণ করে রাখে।’ 

ক্যানসার রিসার্চ ইউকে দ্বারা মনোনীত হওয়ার পর হ্যালেঙ্গা তাঁর প্রচারণামূলক কাজের স্বীকৃতস্বরূপ ‘প্রাইড অব ব্রিটেন’ পুরস্কার পেয়েছেন। ২০১৭ সালে তিনি কোপাফিলের প্রধান নির্বাহীর পদ থেকে সরে দাঁড়ান। বোনের সঙ্গে আরও বেশি সময় কাটাতে এবং স্মৃতিকথা লিখতে তিনি কর্নওয়াল চলে যান। সেখানেই নিজের জীবনের স্মৃতিকথা ‘গ্লিটারিং অ্যা টার্ড’ লেখেন। 

এক বিবৃতিতে কোপাফিল বলেছে, আমরা দুঃখজনক সংবাদটি জানাতে চাই যে, আমাদের প্রতিষ্ঠাতা, স্তন ক্যানসার বিষয়ক সচেতনতার প্রধান, সহকর্মী এবং বন্ধু ক্রিস মারা গেছেন। ক্রিস ছিলেন কাজ করার জন্য বেঁচে থাকার সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা ও প্রবর্তক। দারুণ সৃজনশীল, আনন্দদায়ক এবং নির্ভীকভাবে জীবনকে আলিঙ্গন করেছিলেন তিনি এবং আমাদের দেখিয়েছিলেন যে, ক্যানসারের সঙ্গে পূর্ণ জীবনযাপন করা সম্ভব।

 ২০০৯ সালে ক্রিস ২৩ বছর বয়সে দ্বিতীয় পর্যায়ের স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত হন। ক্রিস চেয়েছিলেন, অন্য কারও যেন তার মতো অবস্থা না হয়। তাই স্তন ক্যানসার প্রাথমিক এবং সঠিকভাবে নির্ণয় করা নিশ্চিত করার জন্য কোপাফিলের সৃষ্টি হয়েছিল। স্বাস্থ্য এবং ক্ষমতায়নের বার্তা দিয়ে তিনি পৌঁছেছিলেন লাখ লাখ মানুষের কাছে। স্কুলের পাঠ্যসূচিতে ক্যানসার শিক্ষাকে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য সফলভাবে প্রচারণা চালিয়েছেন, বছরের সেরা তরুণ প্রচারকের পুরস্কার জিতেছেন, নটিংহাম ট্রেন্ট থেকে জনপ্রশাসনে সম্মানসূচক ডক্টরেট পেয়েছেন এবং টাইমস বেস্ট সেলিং বই লিখেছেন ‘গ্লিটারিং অ্যা টার্ড’।

 ১৫ বছর ধরে ক্রিস দ্বিতীয় পর্যায়ের স্তন ক্যানসারের সঙ্গে বাস করেছেন। তিনি কোনো যুদ্ধে হেরে যাননি, তিনি কোনো লড়াইয়ে ছিলেন না এবং তিনি অবশ্যই চাইবেন না যে, আপনারা তাঁর মৃত্যুকে দুঃখজনক হিসেবে দেখবেন। তিনি সহজভাবেই বেঁচে ছিলেন। ৩৮ বছর বয়সে পরিপূর্ণতা এবং ভালোবাসায় পূর্ণ হৃদয় নিয়ে তিনি মারা গেছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত