Ajker Patrika

ওয়ালস্ট্রিট জার্নালের প্রতিবেদন

টেকসই শান্তির পথে হাঁটছে ইউক্রেন-রাশিয়া, আলোচনা অচিরেই

ট্রাম্পের নতুন মেয়াদের শুরুতেই ইউক্রেনে যুদ্ধবিরতি আসতে পারে। ছবি: সংগৃহীত
ট্রাম্পের নতুন মেয়াদের শুরুতেই ইউক্রেনে যুদ্ধবিরতি আসতে পারে। ছবি: সংগৃহীত

ইউক্রেনের কর্মকর্তারা যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন প্রশাসনের জন্য মনোনীত শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে উচ্চ পর্যায়ের আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন। ট্রাম্প দায়িত্ব গ্রহণের আগেই কিয়েভের সঙ্গে রাশিয়ার যুদ্ধের মীমাংসার উপায় নিয়ে দ্বিমত কমানোর চেষ্টা করছেন তারা। যাতে, সাময়িক নয়, একটি স্থায়ী ও টেকসই শান্তি অর্জন করা সম্ভব হয়।

ট্রাম্প প্রশাসনের কর্মকর্তারা এবং আলোচনার সঙ্গে সম্পৃক্ত একাধিক ব্যক্তির মতে, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির এক শীর্ষ সহযোগী গত বুধবার ট্রাম্পের রাশিয়া ও ইউক্রেন বিষয়ক বিশেষ দূত কিথ কেলোগ এবং নবনির্বাচিত জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মাইক ওয়াল্টজের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। আলোচনায় যোগ দেন নবনির্বাচিত ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্সও।

কেলোগ ইঙ্গিত দিয়েছেন, ট্রাম্পের নতুন প্রশাসন বাইডেন প্রশাসনের ইউক্রেনে দ্রুত অস্ত্র সরবরাহের প্রচেষ্টাকে সমর্থন করবে, যা মস্কোর সঙ্গে সমঝোতার আলোচনায় ট্রাম্পের জন্য সুবিধা তৈরি করবে। তবে ট্রাম্পের দল ইউক্রেনকে ন্যাটোতে সদস্যপদ দেওয়ার বিষয়ে খুব একটা আগ্রহ দেখাচ্ছে না। তবে জেলেনস্কি ইউক্রেনের ভবিষ্যৎ নিরাপত্তার জন্য এটিকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন।

পরিকল্পনার বিষয়ে অবগত কয়েকটি সূত্রের মতে, জেলেনস্কির ঘনিষ্ঠ উপদেষ্টা আন্দ্রে ইয়ারমাক ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনের জন্য ওয়াশিংটন সফরে আছেন। তিনি বুধবার ফ্লোরিডায় নবনির্বাচিত হোয়াইট হাউসের চিফ অব স্টাফ সুজি ওয়াইলসের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। প্রায় তিন বছর ধরে রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধ করে ক্লান্ত হয়ে পড়া ইউক্রেন এখন শান্তি প্রতিষ্ঠার প্রস্তুতি জানাতে চায়। বিষয়টি সম্পর্কে অবগত নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বলেছেন, ‘কিন্তু তা অবশ্যই টেকসই শান্তি হতে হবে। অস্থিতিশীল বা অস্থায়ী শান্তি যুক্তরাষ্ট্র বা ইউক্রেনের কোনো স্বার্থ রক্ষা করবে না।’

জেলেনস্কি সম্প্রতি ইঙ্গিত দিয়েছেন যে, ইউক্রেন ন্যাটোতে যোগ দেওয়ার অনুমতি পেলে যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হতে পারে। তিনি বলেছেন, কূটনৈতিক চাপের মাধ্যমে রাশিয়া দখলকৃত ইউক্রেনের অঞ্চল পুনরুদ্ধার করতে চায় কিয়েভ, সামরিক শক্তির মাধ্যমে নয়। জেলেনস্কি স্কাই নিউজকে দেওয়া সাম্প্রতিক এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, যুদ্ধের ‘উত্তপ্ত পর্যায়’ শেষ করতে হলে ন্যাটো সদস্যপদ অবশ্যই ইউক্রেনকে দেওয়া উচিত এবং ইউক্রেন পুরো ভূখণ্ডের দাবি অব্যাহত রাখবে। কিয়েভ কূটনৈতিক উপায়ে সেগুলো ফিরে পেতে চাইবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্দ্রে সিবিহা গত মঙ্গলবার বলেছেন, ‘ন্যাটো সদস্যপদ ছাড়া অন্য কোনো নিরাপত্তা গ্যারান্টি ইউক্রেন গ্রহণ করবে না। আমরা কোনো বিকল্প বা প্রতিস্থাপন গ্রহণ করব না।’

ট্রাম্পের উপদেষ্টারা এমন শান্তি পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা করেছেন, যা রাশিয়ার দখল করা প্রায় ২০ শতাংশ ইউক্রেনীয় ভূখণ্ডকে মস্কোর বলে স্বীকৃতি দেবে এবং আপাতত কিয়েভের ন্যাটোতে যোগদানের প্রচেষ্টা বন্ধ করবে।

থিংক ট্যাংক ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের ইউক্রেন বিশ্লেষক লুসিয়ান কিম বলেন, ‘ইউক্রেনীয়রা সম্ভাব্য আলোচনা শুরুর আগে তাদের সর্বোচ্চ দাবি পেশ করছে। তারা হয়তো বুঝতে পেরেছে যে, ন্যাটো সদস্যপদ খুব শিগগিরই পাওয়া সম্ভব নয়। কিন্তু আলোচনা শুরুর আগেই কেন তারা সেটা মেনে নেবে?’

কেলোগের নিজের অবস্থানও যুদ্ধ বন্ধে আলোচনার পথ তৈরির ক্ষেত্রে কিছুটা জটিল। তিনি এবং ট্রাম্প প্রশাসনের প্রথম মেয়াদের আরেকজন কর্মকর্তা এ বছরের শুরুর দিকে প্রস্তাব করেছিলেন যে, যুক্তরাষ্ট্র যেন ইউক্রেনে অস্ত্র সরবরাহ সাময়িকভাবে স্থগিত করে, যাতে কিয়েভ শান্তি আলোচনায় বসতে রাজি হয়। আবার এ সপ্তাহে তিনি বলেছেন, ‘প্রেসিডেন্ট বাইডেনের অস্ত্র সরবরাহ দ্রুততর করা ট্রাম্পের মস্কোর সঙ্গে আলোচনা করার অবস্থানকে শক্তিশালী করছে।’

কেলোগ ফক্স নিউজকে এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘বাইডেন প্রশাসন যত বেশি এটা করবে, তত বেশি সুযোগ তৈরি হবে নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্টের জন্য তাঁর ইচ্ছামতো কাজ করার। সবকিছুই নির্ভর করে প্রভাবশালী অবস্থানের ওপর। প্রেসিডেন্ট এটা বোঝেন এবং তিনি এটি তার সুবিধার জন্য ব্যবহার করবেন।’

ট্রাম্প দায়িত্ব নেওয়ার পর তাঁকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে, যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনকে সহায়তা চালিয়ে যাবে কি না। বাইডেন প্রশাসনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তারা ইউক্রেনে অস্ত্র সরবরাহের গতি বাড়িয়েছে, কিন্তু বাইডেনের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের অনুমোদিত বাকি ৬৫০ কোটি ডলার সম্পূর্ণভাবে ব্যয় করার জন্য যথেষ্ট সময় নেই।

এদিকে, রাশিয়া ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে চাপের মুখে ফেলে আক্রমণ জোরদার করেছে। প্রায় ১০ হাজার উত্তর কোরীয় সেনার সহায়তায় রুশ বাহিনী ইউক্রেনের দখলকৃত কুরস্ক অঞ্চলের প্রায় অর্ধেক এলাকা পুনরুদ্ধার করেছে। তবে রাশিয়া এখনো কিয়েভের সামরিক বাহিনীর দখলে থাকা পূর্ব ইউক্রেনে খুব সামান্যই অগ্রগতি অর্জন করে পেরেছে।

রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন কিছুদিন আগে ঘোষণা করেছেন যে, ইউক্রেন তাঁর দাবিগুলো মেনে না নিলে তিনি শান্তি আলোচনায় অংশ নেবেন না। রাশিয়ার সঙ্গে ইউক্রেনের যুদ্ধ প্রায় তিন বছর ধরে চলছে। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির ডানহাত হিসেবে কাজ করছেন ইয়ারমাক। আলোচনা নিয়ে সংশ্লিষ্ট আলোচনা সম্পর্কে অবগত ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, ইয়ারমাক ইউক্রেনকে শান্তির জন্য বাধা নয় বরং গঠনমূলক অংশীদার হিসেবে উপস্থাপন করবেন।

এটি আংশিকভাবে কিয়েভের হতাশার প্রতিফলন, কারণ বাইডেন প্রশাসন সামরিক সহায়তার ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। এ বিষয়ে লুসিয়ান কিম বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের বিদায়ী প্রশাসন নিয়ে কিয়েভের মধ্যে গভীর হতাশা রয়েছে। আগামী ট্রাম্প প্রশাসন কিয়েভে একটি অগ্রগতির আশা জাগিয়েছে। তবে সেটা কী রকম হবে, সেটাই এখন প্রশ্ন। তবে এটা স্পষ্ট যে, স্থিতাবস্থা আর থাকবে না।’

ওয়ালস্ট্রিট জার্নাল থেকে অনূদিত

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

আসাদের খালি হয়ে যাওয়া কুখ্যাত কারাগারগুলো ভরে উঠছে আবার

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
বাশার আল-আসাদের পতনের পর খালি হয়ে গিয়েছিল হোমসের এই কারাগারটি। ছবি: রয়টার্স
বাশার আল-আসাদের পতনের পর খালি হয়ে গিয়েছিল হোমসের এই কারাগারটি। ছবি: রয়টার্স

বাশার আল-আসাদের পতনের পর সিরিয়ার মানুষ ভেবেছিল—দেশটির কুখ্যাত কারাগার অধ্যায়ের অবসান ঘটেছে। বিদ্রোহীরা জেলখানার দরজা ভেঙে বন্দীদের মুক্ত করেছিল, পরিবারের লোকেরা ছুটে গিয়েছিল নিখোঁজ স্বজনদের খোঁজে। কিন্তু এক বছর না পেরোতেই সেই কারাগারগুলো আবার ভরে উঠছে। এবার নতুন সরকারের অধীনেই সিরিয়ায় আবারও ফিরে এসেছে গ্রেপ্তার, নির্যাতন ও চাঁদাবাজির অভিযোগ।

রয়টার্সের এক অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, সিরিয়ার বর্তমান প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারার নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে গত এক বছরে অন্তত ৮২৯ জন নিরাপত্তাজনিত কারণে আটক হয়েছেন। প্রকৃত সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। আটক ব্যক্তিদের বড় অংশই কোনো আনুষ্ঠানিক অভিযোগ বা আদালতের আদেশ ছাড়াই বন্দী রয়েছেন।

সোমবার (২২ ডিসেম্বর) প্রকাশিত রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আসাদ-পরবর্তী সিরিয়ায় প্রথম দফার গ্রেপ্তার শুরু হয়েছিল বিদ্রোহীদের বিজয়ের পরপরই। সে সময় মূলত আসাদের আমলের সেনা সদস্য ও কর্মকর্তাদের আটক করা হয়েছিল। পরে শীতের শেষ দিকে উপকূলীয় অঞ্চলে সহিংসতার জের ধরে আলাউইত সম্প্রদায়ের শত শত মানুষ গ্রেপ্তার হন। বসন্ত ও গ্রীষ্মে দ্রুজ অধ্যুষিত দক্ষিণাঞ্চলেও ব্যাপক ধরপাকড় চলে। একই সঙ্গে সুন্নি, খ্রিষ্টান ও শিয়া সম্প্রদায়ের লোকজনও ‘নিরাপত্তা ঝুঁকি’ বা আসাদের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অস্পষ্ট অভিযোগে আটক হন।

রয়টার্স জানিয়েছে, আসাদ আমলের অন্তত ২৮টি কারাগার ও আটক কেন্দ্র আবার সক্রিয় হয়েছে। এগুলোর অনেকগুলোই অতীতে নির্যাতনের জন্য কুখ্যাত ছিল। যদিও বর্তমান সরকার বলছে, অপরাধীদের বিচারের প্রয়োজনে এসব কেন্দ্র ব্যবহার করা হচ্ছে এবং অনেক বন্দীকে ইতিমধ্যে মুক্তি দেওয়া হয়েছে, তবে কোনো নির্দিষ্ট পরিসংখ্যান তারা প্রকাশ করেনি।

সাক্ষাৎকারে সাবেক বন্দী ও স্বজনেরা জানিয়েছেন, আটক কেন্দ্রগুলোতে ভয়াবহ মানবেতর পরিস্থিতি বিরাজ করছে। গাদাগাদি করে বন্দী রাখা, খাবার ও চিকিৎসার অভাব, ত্বকের রোগ এবং নিয়মিত মারধরের অভিযোগ রয়েছে। অন্তত ১১ জন বন্দী কারা হেফাজতে মারা গেছেন বলে নথিভুক্ত করেছে রয়টার্স। এদের মধ্যে কয়েকজনের মৃত্যুর খবর পরিবার জানতই না—দাফন সম্পন্ন হওয়ার পর তারা বিষয়টি জানতে পারে।

চাঁদাবাজিও নতুন করে মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। ১৪টি পরিবার জানিয়েছে, স্বজনকে মুক্তির বিনিময়ে ৫০০ থেকে ১৫ হাজার ডলার পর্যন্ত দাবি করা হয়েছে। কিছু ক্ষেত্রে এই অঙ্ক ৯০ হাজার ডলার ছাড়িয়েছে। অর্থ পরিশোধের পরও অনেকেই মুক্তি পাননি।

এদিকে সরকার স্বীকার করেছে, প্রতিষ্ঠানগুলোর পুনর্গঠনের সময় কিছু ‘ফাঁকফোকর’ তৈরি হয়েছে এবং কিছু নিরাপত্তা সদস্য নীতিমালা লঙ্ঘন করেছে। তাদের দাবি, চাঁদাবাজি ও সহিংসতার ঘটনায় অন্তত ১৫৯ জন নিরাপত্তা সদস্যকে শাস্তি দেওয়া হয়েছে।

তবে মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলছে, ব্যাপক আটক ও গুমের অভিযোগ নতুন সরকারের বিশ্বাসযোগ্যতাকে প্রশ্নের মুখে ফেলছে। জাতিসংঘের মানবাধিকার দপ্তরও আসাদের পতনের পর ‘বিচারবহির্ভূত হত্যা ও নির্বিচার আটক’-এর তথ্য পাওয়ার কথা জানিয়েছে।

আসাদের শাসনামলের মতো নির্মম নির্যাতন না হলেও, পুরোনো কারাগার ব্যবস্থার পুনরুজ্জীবন সিরিয়ার নতুন ভবিষ্যৎ নিয়ে গভীর উদ্বেগ তৈরি করছে। মানবাধিকারকর্মীদের ভাষায়, ‘শাসক বদলেছে, কিন্তু কারাগারের ছায়া এখনো কাটেনি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

মস্কোতে গাড়িবোমা হামলায় রুশ জেনারেল সারভারভ নিহত

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
জেনারেল সারভারভের গাড়ির নিচে একটি শক্তিশালী বিস্ফোরক ডিভাইস পেতে রাখা হয়েছিল। ছবি: রয়টার্সের সৌজন্যে
জেনারেল সারভারভের গাড়ির নিচে একটি শক্তিশালী বিস্ফোরক ডিভাইস পেতে রাখা হয়েছিল। ছবি: রয়টার্সের সৌজন্যে

রাশিয়ার রাজধানী মস্কোতে এক ভয়াবহ গাড়িবোমা হামলায় দেশটির শীর্ষস্থানীয় এক জেনারেল নিহত হয়েছেন। আজ সোমবার (২২ ডিসেম্বর) সকালে এ ঘটনা ঘটে বলে রুশ কর্মকর্তারা নিশ্চিত করেছেন।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি রাশিয়ার ইনভেস্টিগেটিভ কমিটির বরাতে জানিয়েছে, নিহত ব্যক্তির নাম লেফটেন্যান্ট জেনারেল ফানিল সারভারভ (৫৬)। তিনি রাশিয়ার সশস্ত্র বাহিনীর অপারেশনাল ট্রেনিং বিভাগের প্রধান ছিলেন।

তদন্ত কর্মকর্তাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, আজ স্থানীয় সময় সকালে মস্কোর দক্ষিণাঞ্চলের একটি অ্যাপার্টমেন্ট ব্লকের পার্কিং লটে এই বিস্ফোরণ ঘটে। জেনারেল সারভারভের গাড়ির নিচে একটি শক্তিশালী বিস্ফোরক ডিভাইস পেতে রাখা হয়েছিল। গাড়িটি চালু করার পরপরই সেটির বিস্ফোরণ ঘটে। বিস্ফোরণে গুরুতর আহত অবস্থায় সারভারভকে হাসপাতালে নেওয়া হলে সেখানে তাঁর মৃত্যু হয়।

ঘটনাস্থল থেকে পাওয়া ছবিতে দেখা গেছে, একটি সাদা রঙের গাড়ি বিস্ফোরণে দুমড়েমুচড়ে গেছে এবং সেটির যন্ত্রাংশ উড়ে গিয়ে পাশে থাকা অন্য যানবাহনের ওপর পড়েছে।

রুশ ইনভেস্টিগেটিভ কমিটি এ ঘটনাকে ‘পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড’ হিসেবে অভিহিত করে তদন্ত শুরু করেছে। প্রাথমিক তদন্তে রুশ কর্মকর্তাদের ধারণা, এই হামলার নেপথ্যে ইউক্রেনীয় গোয়েন্দা সংস্থার হাত থাকতে পারে। তবে ইউক্রেন এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক মন্তব্য করেনি।

ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ জানিয়েছেন, জেনারেল সারভারভের মৃত্যুর খবর পাওয়ার পরপরই প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে তা জানানো হয়েছে।

৫৬ বছর বয়সী ফানিল সারভারভ রুশ সামরিক বাহিনীর অত্যন্ত অভিজ্ঞ কর্মকর্তা ছিলেন। রুশ গণমাধ্যমের তথ্যমতে, ফানিল সারভারভ নব্বইয়ের দশক এবং ২০০০ সালের শুরুতে তিনি ওসেটিয়ান-ইঙ্গুশ সংঘাত ও চেচেন যুদ্ধে সরাসরি অংশ নিয়েছিলেন। ২০১৫-১৬ সালে সিরিয়ায় রুশ সামরিক অভিযানেও তিনি নেতৃত্ব দেন।

২০২২ সালে ইউক্রেনে পূর্ণমাত্রার সামরিক অভিযান শুরু করার পর থেকে মস্কোতে হাইপ্রোফাইল ব্যক্তিদের ওপর বেশ কয়েকটি বড় হামলার ঘটনা ঘটেছে। ২০২২ সালে পুতিনের ঘনিষ্ঠ মিত্র আলেকজান্ডার দুগিনের কন্যা দারিয়া দুগিনা গাড়িবোমা হামলায় নিহত হন।

চলতি বছরের এপ্রিলে জেনারেল ইয়ারোস্লাভ মোসকালিক ও ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে জেনারেল ইগর কিরিলভও একই ধরনের হামলায় প্রাণ হারান।

নীতিগত কারণে ইউক্রেন সাধারণত এ ধরনের হামলার দায় স্বীকার করে না। তবে গত বছর জেনারেল কিরিলভ নিহতের ঘটনায় ইউক্রেনীয় নিরাপত্তা সংস্থার জড়িত থাকার ইঙ্গিত দিয়েছিল বিবিসির একটি সূত্র।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

‘হিন্দু রাষ্ট্র’ সংবিধানে থাকতে হবে না, এটি সূর্যোদয়ের মতোই সত্য: আরএসএস প্রধান

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
কলকাতায় আরএসএসের শতবর্ষ উদ্‌যাপন উপলক্ষে আয়োজিত ‘১০০ ব্যাখ্যান মালা’ অনুষ্ঠানে মোহন ভাগবত। ছবি: সংগৃহীত
কলকাতায় আরএসএসের শতবর্ষ উদ্‌যাপন উপলক্ষে আয়োজিত ‘১০০ ব্যাখ্যান মালা’ অনুষ্ঠানে মোহন ভাগবত। ছবি: সংগৃহীত

ভারত একটি ‘হিন্দু রাষ্ট্র’ এবং এর জন্য কোনো সাংবিধানিক অনুমোদনের প্রয়োজন নেই বলে মন্তব্য করেছেন রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের (আরএসএস) প্রধান মোহন ভাগবত। তাঁর মতে, এটি একটি ঐতিহাসিক সত্য এবং সূর্য পূর্বদিকে ওঠার মতোই ধ্রুব।

গতকাল রোববার (২১ ডিসেম্বর) কলকাতায় আরএসএসের শতবর্ষ উদ্‌যাপন উপলক্ষে আয়োজিত ‘১০০ ব্যাখ্যান মালা’ অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।

সংবিধানে ‘হিন্দু রাষ্ট্র’ শব্দ জোড়ানোর কোনো পরিকল্পনা বা দাবি সংঘের আছে কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে মোহন ভাগবত বলেন, ‘সূর্য পূর্বদিকে ওঠে; আমরা জানি না কত দিন ধরে এটি ঘটছে। এর জন্য কি আমাদের সাংবিধানিক অনুমোদনের প্রয়োজন আছে? হিন্দুস্তান একটি হিন্দু রাষ্ট্র। যারা এই দেশকে মাতৃভূমি মনে করে এবং ভারতীয় সংস্কৃতিকে শ্রদ্ধা করে, তারা সবাই এই দর্শনের অংশ।’

তিনি আরও বলেন, ‘সংসদ যদি কখনো সংবিধান সংশোধন করে এই শব্দটি যুক্ত করার সিদ্ধান্ত নেয়, তবে তা ভালো। কিন্তু তারা তা করুক বা না করুক—তাতে আমাদের কিছু যায়-আসে না। কারণ, সত্য এটাই যে আমাদের দেশ একটি হিন্দু রাষ্ট্র।’

জাতপাত নিয়ে প্রশ্নের উত্তরে আরএসএস প্রধান স্পষ্ট করে বলেন, ‘জন্মভিত্তিক বর্ণপ্রথা বা জাতপাত হিন্দুত্বের বৈশিষ্ট্য নয়।’

আরএসএসকে প্রায়ই মুসলিমবিরোধী হিসেবে গণ্য করা হয়। এই প্রসঙ্গে মোহন ভাগবত মানুষকে সরাসরি সংঘের শাখা বা অফিসগুলো ঘুরে দেখার আমন্ত্রণ জানান। তিনি বলেন, ‘আমাদের কাজ অত্যন্ত স্বচ্ছ। আপনারা যেকোনো সময় এসে দেখে যান। যদি আমাদের কার্যক্রমে মুসলিমবিরোধী কিছু খুঁজে পান, তবে আপনাদের ধারণা বজায় রাখুন। কিন্তু যদি তা না দেখেন, তবে দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করুন।’

তিনি দাবি করেন, মানুষ এখন বুঝতে পারছে যে আরএসএস হিন্দুদের সুরক্ষার কথা বলে এবং তারা কট্টর জাতীয়তাবাদী, কিন্তু তারা ‘মুসলিমবিরোধী’ নয়।

উল্লেখ্য, ভারতের সংবিধানের মূল প্রস্তাবনায় ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ (Secular) শব্দটি ছিল না। ১৯৭৬ সালে জরুরি অবস্থার সময় ইন্দিরা গান্ধী সরকারের আনা ৪২তম সংশোধনীর মাধ্যমে এটি যুক্ত করা হয়। অন্যদিকে, আরএসএস দীর্ঘদিন ধরেই দাবি করে আসছে, ভারতের সংস্কৃতি এবং জনতাত্ত্বিক কাঠামোর কারণেই এটি প্রাকৃতিকভাবে একটি হিন্দু রাষ্ট্র।

তথ্যসূত্র: এনডিটিভি

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

নাইজেরিয়ায় ক্যাথলিক স্কুলের অপহৃত আরও ১৩০ শিক্ষার্থী মুক্ত

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
নাইজার রাজ্যের একটি ক্যাথলিক বোর্ডিং স্কুল ৩শর বেশি শিক্ষার্থী অপহরণ হয়। ছবি: এএফপি
নাইজার রাজ্যের একটি ক্যাথলিক বোর্ডিং স্কুল ৩শর বেশি শিক্ষার্থী অপহরণ হয়। ছবি: এএফপি

নাইজেরিয়ার মধ্যাঞ্চলীয় রাজ্য নাইজারে একটি ক্যাথলিক বোর্ডিং স্কুল থেকে অপহৃত ১৩০ জন শিক্ষার্থীকে মুক্ত করা সম্ভব হয়েছে বলে জানিয়েছে দেশটির কর্তৃপক্ষ।

এই ঘটনাকে দেশের অন্যতম ভয়াবহ এক গণ-অপহরণের ঘটনা হিসেবে অভিহিত করে সবার মুক্তির পর একে ‘বিজয় এবং স্বস্তির মুহূর্ত’ হিসেবে বর্ণনা করেছে নাইজেরিয়ার সরকার।

গত ২১ নভেম্বর পাপিরির সেন্ট মেরি’স ক্যাথলিক স্কুল থেকে ২৫০ জনেরও বেশি শিশু এবং কর্মী অপহৃত হয়। তাদের মধ্যে প্রায় ১০০ জন শিশুকে চলতি মাসের শুরুর দিকে মুক্তি দেওয়া হয়েছিল।

অবশিষ্ট ১৩০ জন শিশু ও কর্মীকে উদ্ধারের’ বিষয়টি নিশ্চিত করে এক বিবৃতিতে কর্তৃপক্ষ জানায়, ‘একজন শিক্ষার্থীও আর বন্দিদশায় নেই।’

গতকাল রোববার রাষ্ট্রপতির মুখপাত্র বায়ো ওনানুগা জানান, মুক্ত শিক্ষার্থীর মোট সংখ্যা এখন ২৩০ জন। অপহরণের পর থেকে ঠিক কতজনকে তুলে নেওয়া হয়েছিল এবং কতজন বন্দিদশায় ছিল, সে বিষয়টি অস্পষ্ট ছিল। সরকার কীভাবে সর্বশেষ এই মুক্তি নিশ্চিত করেছে বা কোনো মুক্তিপণ দেওয়া হয়েছে কি না তা আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয়নি।

ওনানুগা আরও জানান, আশা করা হচ্ছে, মুক্ত শিক্ষার্থীরা আজ সোমবার নাইজারের রাজধানী মিন্নায় পৌঁছাবে।

গত নভেম্বরে ঘটে যাওয়া এ অপহরণের ঘটনাটি উত্তর ও মধ্য নাইজেরিয়ার স্কুল এবং উপাসনালয়গুলোতে ক্রমবর্ধমান লক্ষ্যবস্তু হামলার সর্বশেষ ঘটনা। এ অপহরণের সময় ৫০ জন শিক্ষার্থী পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছিল বলে জানায় ক্রিশ্চিয়ান অ্যাসোসিয়েশন অব নাইজেরিয়া।

এর আগে ১৮ নভেম্বর সেন্ট মেরি’স-এ হামলার ঠিক কয়েক দিন আগে আরও কিছু গণ-অপহরণের ঘটনা ঘটেছিল। কোয়ারা রাজ্যের ক্রাইস্ট অ্যাপোস্টোলিক চার্চে এক হামলায় দুজন নিহত এবং ৩৮ জন অপহৃত হন। এর আগের দিন কেব্বি রাজ্যের গভর্নমেন্ট গার্লস সেকেন্ডারি স্কুল থেকে দুজন নিহত এবং ২৫ জন মুসলিম শিক্ষার্থী অপহৃত হয়েছিল। কোয়ারা এবং কেব্বি হামলার ঘটনায় যাদের তুলে নেওয়া হয়েছিল, তারা সবাই ইতিমধ্যে মুক্তি পেয়েছে।

এই অপহরণগুলোর পেছনে কারা রয়েছে তা স্পষ্ট নয়, তবে অধিকাংশ বিশ্লেষকের ধারণা, মুক্তিপণ আদায়ের লক্ষ্যে অপরাধী চক্রগুলো এই কাজ করছে।

গত ৯ ডিসেম্বর নাইজেরিয়ার প্রেসিডেন্ট বোলা আহমেদ তিনুবু বলেছিলেন, তাঁর সরকার আমাদের স্কুলগুলোকে নিরাপদ করতে এবং ছোটদের জন্য শিক্ষার পরিবেশকে আরও নিরাপদ ও অনুকূল করতে নাইজার এবং অন্যান্য রাজ্যগুলোর সঙ্গে কাজ চালিয়ে যাবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত