রুয়ান্ডা পাঠানোর খবরে আতঙ্কিত যুক্তরাজ্যের অভিবাসনপ্রত্যাশীরা

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ০০: ২৩
Thumbnail image

বিরোধী আইনপ্রণেতারা আপত্তি প্রত্যাহার করে নেওয়ায় যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টে প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাকের প্রস্তাবিত ‘রুয়ান্ডা বিল’ পাস হয়েছে। সোমবার রাতে পাস হওয়া এই বিলটিকে আইনে পরিণত করে এবার অভিবাসনপ্রত্যাশীদের রুয়ান্ডায় পাঠানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে যুক্তরাজ্য সরকার। আগামী ১০ থেকে ১২ সপ্তাহের মধ্যেই অভিবাসনপ্রত্যাশীদের নিয়ে প্রথম বিমানটি রুয়ান্ডার উদ্দেশে যাত্রা করবে বলে আশা করা হচ্ছে। বিলটি পাস হওয়ার খবরে যুক্তরাজ্যে অবস্থান করা অভিবাসনপ্রত্যাশীদের মধ্যে ইতিমধ্যেই আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।

এ বিষয়ে একাধিক গণমাধ্যম জানিয়েছে, রুয়ান্ডা বিল পাস হওয়ার পর যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন শহরে অবস্থানরত আশ্রয়প্রার্থীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। দেশটির ডার্বি শহরে অসংখ্য অভিবাসনপ্রত্যাশী বিলটি নিয়ে ভয় ও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। 

ব্রিটিশ স্কাই নিউজের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ডার্বিতে আশ্রয়প্রার্থীদের মধ্যে কেউ কেউ ইতিমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের স্বরাষ্ট্র দপ্তর থেকে চিঠি পেয়েছেন। এই চিঠিতে তাঁরা রুয়ান্ডায় অপসারণের ঝুঁকিতে আছেন বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

ইরান থেকে যুক্তরাজ্যে প্রবেশ করা অভিবাসনপ্রত্যাশী হামজা স্কাই নিউজকে বলেন, ‘আমি খুব চাপে আছি। কী করব বুঝতে পারছি না। এই চিঠি এবং রুয়ান্ডা মাথা থেকে যাচ্ছে না।’

অন্যান্য আশ্রয়প্রার্থীও বলছেন—যদি তাঁরা জানতেন যে, তাঁদের রুয়ান্ডায় নির্বাসিত করা হবে, তবে তাঁরা কখনোই যুক্তরাজ্যে আসতেন না। সুদানে এক সময় নির্যাতনের শিকার হয়ে যুক্তরাজ্যে আসা অভিবাসনপ্রত্যাশী ফাহেদ বলেন, ‘আপনি জানেন, এখানে আসার আগে যদি তারা রুয়ান্ডায় পাঠানোর কথা বলত, তবে আমি কখনোই আসতাম না।’ 

ইরান থেকে আসা আরেক আশ্রয়প্রার্থী মাসুদ জানিয়েছেন—তিনি রুয়ান্ডায় নির্বাসিত হওয়ার ঝুঁকির জন্য অন্যান্য আশ্রয়প্রার্থীকে যুক্তরাজ্যে না আসার পরামর্শ দেবেন। 

আফগানিস্তান থেকে পালিয়ে আসা ফাতিমা এখন যুক্তরাজ্যে শরণার্থী জীবন পাড়ি দিচ্ছেন। আফগানিস্তানে থাকা অবস্থায় তিনি আমেরিকানদের সঙ্গে কাজ করতেন। বর্তমানে যুক্তরাজ্যে শরণার্থী হয়ে থাকলেও তাঁর কোনো দুঃখ নেই। কারণ আফগানিস্তানে থাকলে তালেবানদের দ্বারা হত্যার ঝুঁকিতে ছিলেন তিনি। কিন্তু এর মধ্যেই রুয়ান্ডা বিল পাস হওয়ার খবরে অশ্রুসিক্ত হয়ে পড়েছেন ফাতিমা। তিনি বলেন, ‘এটি ন্যায্য নয়। বিশেষ করে, আফগানিস্তান থেকে এখানে আসা কারও জন্য।’

যুক্তরাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে প্রাথমিকভাবে বলা হয়েছে, ছোট ছোট নৌকায় ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দিয়ে যারা অবৈধভাবে যুক্তরাজ্যে প্রবেশ করছেন তাদের মধ্য থেকে কিছুসংখ্যক অভিবাসনপ্রত্যাশীকে রুয়ান্ডায় পাঠানো হবে। ২০২২ সালের এপ্রিলে এ বিষয়ে রুয়ান্ডার সঙ্গে যুক্তরাজ্য সরকারের পাঁচ বছর মেয়াদি একটি চুক্তি হয়েছিল। চুক্তির আওতায় পাঁচ বছরে যুক্তরাজ্যে আসা অভিবাসনপ্রত্যাশীদের জায়গা দেবে রুয়ান্ডা। বিনিময়ে রুয়ান্ডাকে অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য সহায়তা দেবে ব্রিটিশ সরকার। পাশাপাশি অভিবাসনপ্রত্যাশীদের পুনর্বাসনের জন্য বাড়তি অর্থ পরিশোধেরও প্রতিশ্রুতি দিয়েছে যুক্তরাজ্য। 

 ২০২২ সালের জুনে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের নিয়ে প্রথম ফ্লাইটটি রওনা করার কথা থাকলেও শেষ মুহূর্তে ইউরোপীয় মানবাধিকার আদালতের এক আদেশে তা বাতিল হয়ে যায়। পরের বছরের নভেম্বরে ওই পরিকল্পনাকে অবৈধ ঘোষণা করে যুক্তরাজ্যের সুপ্রিম কোর্টও। তবে প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক চেষ্টা অব্যাহত রাখেন। 

অবশেষে ব্রিটিশ পার্লামেন্টে আবারও রুয়ান্ডা বিল উত্থাপন করা হলে এটি বিরোধী দলগুলোর ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ে। পার্লামেন্টে এ নিয়ে অনেক দিন ধরে তর্ক-বিতর্কের পর সোমবার রাতে বিরোধী দলের আইনপ্রণেতারা তাঁদের আপত্তি প্রত্যাহার করে নেন। 

তবে বিলটি সংসদে অনুমোদন পেলেও এটির বিরুদ্ধে আদালতে চ্যালেঞ্জ জানাতে পারে বিভিন্ন পক্ষ। এর ফলে নির্বাসন ফ্লাইটগুলো বিলম্বিত হতে পারে। অভিবাসন বিষয়ক আইনজীবীরা ইতিমধ্যেই এই বিলের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার করেছেন। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন মানবিক সংস্থাও এই বিলের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছে। মঙ্গলবার জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা এবং ইউরোপ কাউন্সিল উভয়ই যুক্তরাজ্যকে তার পরিকল্পনা পুনর্বিবেচনা করার আহ্বান জানিয়েছে। কারণ এই আইনটি মানবাধিকার সুরক্ষাকে ক্ষুণ্ন করে এবং বিশ্বব্যাপী অভিবাসন সংকট মোকাবিলায় আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টাকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত