রানি কখনো স্কুলে যাননি এবং অজানা আরও ৬

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১২: ২১
Thumbnail image

প্রায় ১০০ বছরের দোরগোড়ায় এসে বহু বর্ণিল এক জীবনের ইতি টানলের ব্রিটিশ রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ। স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার ৯৬ বছর বয়সে মৃত্যু হয়েছে তাঁর। দীর্ঘ ৭০ বছর ব্রিটিশ রাজ-সিংহাসনের শোভা বর্ধন করেছেন তিনি। সেই ১৯৫২ সালে মাত্র ২৫ বছর বয়সে মাথায় উঠেছিল রাজমুকুট। তারপর বেশ সাফল্যের সঙ্গেই সামলেছেন রাজত্ব। তিনি ছিলেন বিশ্বের ১৪টি দেশ ও অঞ্চলের রানি। তাঁকে নিয়ে সারা পৃথিবীর মানুষের কৌতূহলের অন্ত নেই। কেমন ছিল রানির জীবন? সেই সব কৌতূহল মেটাতে বিশ্বের গণমাধ্যমগুলো তুলে ধরছে রানির জীবনের নানা অজানা গল্প।

রানি কখনো স্কুলে যাননি
তাঁর সময়ের এবং আগের আমলের অনেক রাজপরিবারের মতো এলিজাবেথ কখনোই কোনো পাবলিক স্কুলে যাননি। সাধারণ জনগণ যেসব স্কুলে পড়ালেখা করে, সেসব স্কুলে গিয়ে সবার সঙ্গে শিক্ষাগ্রহণ করা ছিল রাজপরিবারের রীতিবিরুদ্ধ। তিনি তাই তাঁর  ছোট বোন মার্গারেটের সঙ্গে বাড়িতেই লেখাপড়া শিখেছেন। যাঁরা এলিজাবেথকে পড়ালেখা শিখিয়েছেন, তাঁদের মধ্যে ছিলেন তাঁর বাবা, ইটন কলেজের এক শিক্ষক, বেশ কয়েকজন ফরাসি ও বেলজিয়ান গভর্নেস, যাঁরা তাঁকে ফরাসি ভাষা শিখিয়েছিলেন এবং তাঁকে ধর্ম বিষয়ে শিক্ষা দিয়েছিলেন ক্যান্টারবারির অর্চবিশপ। বাড়িতে তাঁর জন্য বাইক চালানো, সাঁতার কাটা, নাচ ও গান শেখানোর শিক্ষকও ছিলেন।

বিভিন্ন বয়সে রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথসবাইকে অনুকরণ করতে পারতেন রানি 
প্রায় সবার আচরণ অনুকরণ করতে পারতেন রানি এলিজাবেথ। এ ব্যাপারে তাঁর প্রতিভা ছিল ঈর্ষণীয়। রানির কাছের মানুষেরা তাঁকে দুষ্টু ও হাস্যরসাত্মক ব্যক্তি হিসেবে উল্লেখ করেছেন। ক্যান্টারবারির প্রাক্তন আর্চবিশপ রোয়ান উইলিয়ামস বলেছেন, ‘রানি ঘরোয়া পরিবেশে মজা করতে পছন্দ করতেন। সবাই তাঁর রসবোধের ব্যাপক প্রশংসা করতেন।’

রাজপরিবারে পারিবারিক ধর্মগুরু বিশপ মাইকেল মান একবার বলেছিলেন, ‘আমার দেখা সবচেয়ে মাজার মানুষ ছিলেন রানি। তিনি যেকোনো মানুষকে হুবহু অনুকরণ করতে পারতেন।’
উত্তর আয়ারল্যান্ডের পাদ্রী ও রাজনীতিবিদ ইয়ান পাইসলি বলেছেন, রানি তাঁকে হুবহু অনুকরণ করতে পারতেন। তিনি ছিলেন একজন দুর্দান্ত অনুকরণকারী।

তাঁর মৃত্যুর কিছুদিন আগে প্লাটিনাম জয়ন্তী উদ্‌যাপনের সময় তিনি তাঁর চরিত্রের দুষ্টু দিকটি দেখিয়েছিলেন। রানি একটি অ্যানিমেটেড কমিক ভিডিওতে অভিনয় করে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছিলেন।

একাধিক জন্মদিন
রানি এলিজাবেথ ১৯২৬ সালের ২১ এপ্রিল জন্মেছেন বলে প্রচলিত রয়েছে। তবে তাঁর জন্মদিন উদ্‌যাপন নিয়ে জনসাধারণের মধ্যে বিভ্রান্তি রয়েছে। কারণ তাঁর জন্য কোনো ‘অফিশিয়াল জন্মদিন’ নির্ধারিত ছিল না। ব্রিটিশ সরকার জুনের প্রথম, দ্বিতীয় বা তৃতীয় শনিবার তাঁর জন্মদিন পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। যেমন অস্ট্রেলিয়ায় জুনের দ্বিতীয় সোমবার তাঁর জন্মদিন পালন করা হয়েছিল। শুধু রানি ও তাঁর একান্তু ঘনিষ্ঠজনেরাই তাঁর প্রকৃত জন্মদিন উদ্‌যাপন করতেন।

রানির ড্রাইভিং লাইসেন্সের প্রয়োজন ছিল নাছিল না ড্রাইভিং লাইসেন্স কিংবা পাসপোর্ট
গাড়ি চালানোর ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য সবাইকে পরীক্ষা দিতে হয়। কিন্তু রানিকে এ ধরনের পরীক্ষার মধ্য দিয়ে যেতে হয়নি। তিনি ছিলেন যুক্তরাজ্যে একমাত্র ব্যক্তি, যাঁর গাড়ি চালানোর জন্য ড্রাইভিং লাইসেন্সের প্রয়োজন হয়নি। শুধু তাই নয়, পাসপোর্টও ছিল না রানি এলিজাবেথের। কারণ ব্রিটিশ সরকার তাঁকে ‘বিশেষ অধিকার’ দিয়ে বলেছিল, রানির পাসপোর্ট কিংবা ড্রাইভিং লাইসেন্সের প্রয়োজন নেই।

নিজস্ব এটিএম বুথ ছিল রানির
রানি এলিজাবেথের ক্যাশ অর্থের প্রয়োজন হতো না। তার পরও তাঁর জন্য বাকিংহাম প্যালেসের নিচতলায় একটি ব্যক্তিগত এটিএম বুথ ছিল। ব্রিটেনের কুউটস ব্যাংক শুধু রাজপরিবারের জন্য একটি এটিএম বুথ বসিয়ে দিয়েছিল। ব্রিটিশ সামিয়কী টেটলার বলেছে, যদি আপনার অ্যাকাউন্টে ১৩ লাখ পাউন্ড থাকে, তাহলে আপনি বিনা মূল্যে কুউটস ব্যাংকের সেবা পাবেন।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় স্বেচ্ছাসেবী ট্রাকড্রাইভার হিসেবে কাজ করেছেন রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথদ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ট্রাকড্রাইভার ছিলেন
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় তিনি ছিলেন রাজকুমারী। তাঁর বাবা জর্জ ছিলেন রাজা। সে সময় তিনি একজন স্বেচ্ছাসেবী ট্রাকড্রাইভার ও মেকানিক হিসেবে কাজ করেছেন। রাজপরিবারের প্রথম নারী হিসেবে তিনি সেনাবাহিনীতেই কাজ করেছেন। 

রানি নিজের থালাবাসন নিজে ধুতেন
আপনি জেনে অবাক হতে পারেন, রানি প্রায়ই নিজের থালাবাসন নিজে পরিষ্কার করতেন। রাজপরিবারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ একজন লেখক হ্যারি মাউন্ট দ্য টেলিগ্রাফকে বলেছেন, রাজপরিবারের একজন অতিথির কাছ থেকে তিনি জেনেছেন যে একবার মধ্যাহ্নভোজের পর তিনি নিজ চোখে রানিকে তাঁর থালা পরিষ্কার করতে দেখেছেন।

সূত্র: এপি, নিউ ইয়র্ক পোস্ট ও কসমোপলিটান

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত