এবার বাংলাদেশিদের গ্রহণ না করার ঘোষণা আসামের হোটেল মালিকদের

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ : ০৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৪: ২৮
আপডেট : ০৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৪: ৫৬
ভারতের একটি এলাকায় বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতন বন্ধে স্থানীয়দের প্রতিবাদ মিছিল। ছবি: দ্য হিন্দু

ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য আসামের বরাক উপত্যকার হোটেল মালিকেরা ঘোষণা করেছেন, যতক্ষণ প্রতিবেশী বাংলাদেশে হিন্দু এবং অন্যান্য সংখ্যালঘুর ওপর আক্রমণ না থামবে, ততক্ষণ তারা কোনো বাংলাদেশি নাগরিকের কাছে হোটেল ভাড়া দেবেন না। গতকাল শুক্রবার বরাক উপত্যকা হোটেল ও রেস্তোরাঁ মালিক সমিতি এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানিয়েছে দেশটির সংবাদমাধ্যম দ্য হিন্দু।

আসামের কাছাড়, শ্রীভূমি (পূর্বে করিমগঞ্জ) এবং হাইলাকান্দি জেলা নিয়ে গঠিত বরাক উপত্যকা। বাংলাভাষী এই অঞ্চলটির বাংলাদেশে সিলেট বিভাগের সঙ্গে প্রায় ১২৯ কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্ত আছে। একসময় এই তিন জেলার একটা বড় অংশ, বিশেষ করে কাছাড় ও করিমগঞ্জ ব্রিটিশ ভারতের অংশ হিসেবে বাংলাদেশ থেকে শাসিত হলেও ১৯৪৭ সালের দেশভাগের সময় গণভোটের মাধ্যমে তারা ভারতে তথা আসামের অংশ হওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।

বরাক উপত্যকা হোটেল ও রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির সভাপতি বাবুল রায় বলেন, ‘বাংলাদেশে হিন্দু এবং অন্যান্য সংখ্যালঘুর অবস্থা উদ্বেগজনক। আমরা এটি কোনোভাবেই মেনে নিতে পারি না। তাই আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, প্রতিবেশী দেশে হিন্দুদের ওপর অত্যাচার বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত বরাক উপত্যকার তিনটি জেলার সব হোটেল ও রেস্তোরাঁর পক্ষ থেকে কোনো বাংলাদেশি নাগরিককে আতিথ্য দেওয়া হবে না। এটি আমাদের প্রতিবাদ।’

বাবুল রায় আরও বলেন, ‘বাংলাদেশের জনগণকে অবশ্যই দেশটিতে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে হবে। যদি পরিস্থিতি উন্নত হয়, তবে আমরা আমাদের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করতে পারি।’

এদিকে, সাম্প্রতিক এক ঘটনায় ভারতীয় রাজনৈতিক দল বজরং আসামের শিলচরের একটি হোটেলে চলমান একটি আন্তর্জাতিক মেলায় বাংলাদেশের পণ্য বিক্রি করা দুটি স্টল বন্ধ করার অনুরোধ জানায় হোটেল কর্তৃপক্ষকে। বাংলাদেশে হিন্দুদের ওপর অত্যাচারের প্রতিবাদ হিসেবে এই দাবি জানানো হয়। পরে এই দাবি মেনে নেয় হোটেল কর্তৃপক্ষ।

বজরং দলের প্রতিবাদকারীরা শিলচরের বাংলাদেশ ভিসা কেন্দ্রে গিয়ে সেখানে ‘বাংলাদেশ’ নামটি সাইনবোর্ড থেকে সরানোর দাবি জানান। বরাক উপত্যকার তিনটি জেলায় বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর কথিত অত্যাচার এবং হিন্দু সন্ন্যাসী চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের গ্রেপ্তার নিয়ে ব্যাপক প্রতিবাদ ছড়িয়ে পড়েছে।

এর আগে, বাংলাদেশে ভারতের জাতীয় পতাকার অবমাননা এবং সংখ্যালঘু হিন্দুদের ওপর নির্যাতনের প্রতিবাদে ত্রিপুরা ও পশ্চিমবঙ্গ কয়েকটি জেলার হোটেল ব্যবসায়ীরাও একই ধরনের সিদ্ধান্ত নেন। ৯৩টি হোটেলের মালিকদের সমন্বয়ে গঠিত মালদহ হোটেলিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক কৃষ্ণেন্দু চৌধুরী বলেন, ‘আমাদের সদস্যরা বাংলাদেশে ভারতবিরোধী কার্যকলাপ ও জাতীয় পতাকার অবমাননার ঘটনায় গভীরভাবে ক্ষুব্ধ ও উদ্বিগ্ন। তাই আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, বাংলাদেশি অতিথিদের আমাদের হোটেলগুলোতে থাকার অনুমতি দেব না।’

তার আগে, অল ত্রিপুরা হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্ট ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বাংলাদেশে সম্প্রতি ভারতের জাতীয় পতাকার অবমাননা এবং সংখ্যালঘু হিন্দুদের প্রতি একশ্রেণির উগ্রবাদী জনগণ তীব্র অত্যাচার করছে। আগেও হতো, কিন্তু এখনকার মতো নয়। বর্তমান পরিস্থিতি ভীষণ উদ্বেগের। আমাদের রাজ্যে বিভিন্ন কারণে বাংলাদেশ থেকে আগত নাগরিকদের আমরা অতিথির সম্মান দিয়ে থাকি। সেখানে বাংলাদেশের একশ্রেণির নাগরিকদের সে দেশের সংখ্যালঘুদের প্রতি এমন আচরণ নিন্দনীয়। এই প্রেক্ষাপটে অল ত্রিপুরা হোটেল এবং রেস্টুরেন্ট ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন ২ ডিসেম্বর থেকে সাময়িকভাবে আমাদের রাজ্যে আগত বাংলাদেশি নাগরিকদের কোনো পরিষেবা না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

এর আগে ত্রিপুরার আগরতলায় বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশনে হামলা চালায় হিন্দু সংঘর্ষ সমিতি নামে একটি সংগঠনের সদস্যরা। সেখানে বাংলাদেশের পতাকা নামিয়ে তাতে আগুন দেয় তাঁরা। পরে এ ঘটনাকে ‘দুঃখজনক’ উল্লেখ করে বিবৃতি দেয় ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এদিকে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানায়, এ ঘটনায় বাংলাদেশ ‘গভীরভাবে ক্ষুব্ধ’।

এর আগে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ থেকে হাসপাতাল ও চেম্বারে বাংলাদেশি রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হবে না বলে ঘোষণা দেওয়া হয়। সর্বপ্রথম কলকাতার জে এন রায় হাসপাতাল এবং সর্বশেষ ত্রিপুরার আগরতলার আইএলএস হাসপাতাল এ ঘোষণা দেয়। এরপর পশ্চিমবঙ্গের শিলিগুড়ির এক চিকিৎসক বলেন, তিনি বাংলাদেশি রোগীদের চিকিৎসা দেবেন। কিন্তু এর আগে ভারতীয় পতাকায় প্রণাম করে তাঁর চেম্বারে প্রবেশ করতে হবে।

চন্দ্রনাথ অধিকারী নামের আরেক চিকিৎসক ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে বলেন, তিনি সরকারি হাসপাতালে কাজ করেন। সেখানে সবাইকে চিকিৎসা দেবেন। কিন্তু নিজের ব্যক্তিগত চেম্বারে কোনো বাংলাদেশি রোগীকে দেখবেন না। তবে পশ্চিমবঙ্গ মেডিকেল কাউন্সিল (ডব্লিউবিএমসি) বাংলাদেশি রোগীদের চিকিৎসাসেবা দেওয়া বন্ধের বিষয়টিকে সমর্থন করেনি। ডব্লিউবিএমসির সভাপতি ড. সুদীপ্ত রায় বলেছেন, তাঁরা রোগীদের মধ্যে কোনো বৈষম্য করেন না। সবার চিকিৎসা করবেন।

গত মাসের মাঝামাঝি ঢাকার বিমানবন্দরে সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের নেতা চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে গ্রেপ্তার এবং পরদিন তাঁকে আদালতে হাজির করার পর চট্টগ্রামে সহিংসতায় আইনজীবীর প্রাণহানির পর দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা তৈরি হয়। দুই দেশই পরস্পরের বিরুদ্ধে জাতীয় পতাকা অবমাননার অভিযোগ করেছে।

গত ৫ আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতন এবং তাঁর ভারতে চলে যাওয়ার পর থেকে দুই দেশের মধ্যকার সম্পর্কের জটিলতা বাড়তে থাকে। বাংলাদেশিদের ভিসা দেওয়া সাময়িক বন্ধ রাখে ভারত। এর পর থেকে দেশটিতে বাংলাদেশি রোগী ও পর্যটকের সংখ্যা কমতে থাকে।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ইসরায়েলের ‘হৃৎপিণ্ড’ তেল আবিবে হুতিদের ক্ষেপণাস্ত্র হামলা

সাগরে নিম্নচাপ, কত দিন বৃষ্টি হতে পারে জানাল আবহাওয়া দপ্তর

শেখ মুজিব ও জিয়াউর রহমান যার যার স্থানে শ্রেষ্ঠ: গয়েশ্বর

র‌্যাব বাতিলের সরকারি সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছি: নূর খান লিটন

হাসিনার আমলে রাশিয়ার সঙ্গে ১০০ কোটি ডলারের অস্ত্র চুক্তি, জড়াল টিউলিপের নামও

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত