কমলা হ্যারিসকে নিজের বলে দাবি করে ভারতের যে গ্রাম 

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ : ২৪ জুলাই ২০২৪, ১৩: ১০
আপডেট : ২৪ জুলাই ২০২৪, ১৪: ১৭

দক্ষিণ ভারতের বিখ্যাত শহর চেন্নাই থেকে ৩০০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত ছোট্ট এক গ্রাম থুলাসেনধ্রাপুরাম। যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসি থেকে এর দূরত্ব ১৪ হাজার কিলোমিটার। কিন্তু তার পরও যুক্তরাষ্ট্রের ডেমোক্র্যাটদের সম্ভাব্য প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী কমলা হ্যারিসের সঙ্গে জড়িয়ে আছে এই গ্রামটির নাম। এখানেই ছিল কমলা হ্যারিসের নানাবাড়ি। 

গ্রামটির কেন্দ্রে এখন সগৌরবে শোভা পাচ্ছে ৫৯ বছর বয়স্ক কমলা হ্যারিসের ব্যানার। তাঁর জন্য বিশেষ প্রার্থনা করেছে গ্রামের মানুষ। গ্রামটির মন্দিরে দান করাদের তালিকায় আছে সম্ভাব্য এই ডেমোক্র্যাট প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থীর নানার নামও। সেখানে বিতরণ করা হয়েছে মিষ্টি।

জো বাইডেনের নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানো এবং সম্ভাব্য প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হিসেবে কমলা হ্যারিস আবির্ভূত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এই গ্রামের বাসিন্দাদের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে চলে এসেছে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন।

এসব তথ্য জানা যায় ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির এক প্রতিবেদনে।

‘বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর দেশটির এমন একটি অবস্থানে পৌঁছা মোটেই চাট্টিখানি কথা নয়।’ বলেন অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংক কর্মকর্তা কৃষ্ণমূর্তি। তিনি আরও বলেন, ‘তাঁর জন্য আমরা গর্বিত। একসময় ভারতীয়দের শাসন করেছে বিদেশিরা। এখন ভারতীয়রা ক্ষমতাধর দেশগুলোর নেতৃত্ব দিচ্ছে।’

গ্রামবাসীর মধ্যে বিষয়টি নিয়ে একধরনের গর্বও কাজ করছে। বিশেষ করে নারীদের মধ্যে এটি বেশি। তাঁরা কমলা হ্যারিসকে নিজেদের একজন ভাবছেন। নারীদের দ্বারা কী  সম্ভব তার একটি উদাহরণ হিসেবেও দেখছেন তাঁকে।

‘সবাই তাঁকে চেনে। এমনকি শিশুরাও। “আমার বোন, আমার মা”—এই বলে পরিচয় দিচ্ছেন তাঁর।’ বলেন স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য অরুলমোঝি সুধাকর। ‘আমরা খুশি যে তিনি তাঁর শিকড়কে ভোলেননি। আমরা আমাদের আনন্দ প্রকাশ করছি।’

গ্রামবাসীরা মনে করেন তাঁদের প্রার্থনা কমলা হ্যারিসকে জিততে সাহায্য করবেগ্রামবাসীর এই উত্তেজনা মনে করিয়ে দিচ্ছে, কমলা হ্যারিস ভাইস প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর কীভাবে গ্রামবাসী রাস্তায় নেমে আসে তাঁর পোস্টার নিয়ে এবং আতশবাজি ফোটায়।

একটি ভোজেরও আয়োজন করা হয়। সেখানে শত শত মানুষ ঐতিহ্যবাহী দক্ষিণ ভারতীয় খাবার সম্বর ও ইদলি খায়। কমলা হ্যারিসের এক আত্মীয়ের দেওয়া তথ্য বলছে, এগুলো বর্তমান ভাইস প্রেসিডেন্টের প্রিয় খাবারগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য।

শ্যামলা গোপালান নামের এক স্তন ক্যানসার বিশেষজ্ঞের মেয়ে কমলা হ্যারিস। ১৯৫৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমানোর আগে ভারতের দক্ষিণের রাজ্য তামিলনাড়ুতে বেড়ে ওঠেন শ্যামলা। তাঁর মা-বাবার বাড়ি ছিল থুলাসেনধ্রাপুরাম গ্রামে।

‘আমার মা ১৯ বছর বয়সে একা ভারত থেকে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান। তিনি ছিলেন একাধারে একজন বিজ্ঞানী, গণ-অধিকার কর্মী এবং এমন একজন মা, যিনি দুই মেয়ের মধ্যে তাঁর জন্য গর্বের জন্ম দিতে পেরেছেন।’ গত বছর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক পোস্টে জানান হ্যারিস।

মা মারা যাওয়ার পর বোন মায়াসহ চেন্নাই ভ্রমণ করেন কমলা হ্যারিস। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য হিন্দুর দেওয়া তথ্য অনুসারে হিন্দু ধর্মীয় রীতিতে এ সময় মায়ের ছাইভস্ম সাগরে ফেলেন তাঁরা।

চেন্নাই থেকে ৩০০ কিলোমিটার দূরে থুলাসেনধ্রাপুরাম নামের গ্রামটির অবস্থানকমলা হ্যারিসের বংশে ভালো অবস্থানে পৌঁছা মানুষের সংখ্যা কম নয়। তাঁর মামা গোপালান বালাচন্দ্রন ছিলেন একজন শিক্ষাবিদ। তাঁর নানা পিভি গোপালান ছিলেন একজন ভারতীয় আমলা, যিনি শরণার্থী পুনর্বাসনে বিশেষজ্ঞ ছিলেন। ১৯৬০-এর দশকে জাম্বিয়ার প্রথম প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন।

দিল্লির জওহরলাল নেহরু ইউনিভার্সিটির ইমেরিটাস অধ্যাপক আর রাজারমন কমলা হ্যারিসের মায়ের সহপাঠী ছিলেন। তিনি জানান, শ্যামলার সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। তাঁর সঙ্গে পুনরায় দেখা হয় ১৯৭০-এর দশকে যুক্তরাষ্ট্রে ভ্রমণের সময়। এ সময় বার্কলেতে শ্যামলার বাড়িতে তাঁদের দেখা হয়।
‘শ্যামলা সেখানে ছিল। আমাকে চা দিয়ে আপ্যায়ন করে। তার দুই মেয়ে কমলা ও মায়া সেখানে ছিল।’ স্মৃতিচারণা করেন তিনি, ‘তারা দুজনেই ছিল খুব উদ্যমী। তাদের মায়ের মধ্যে আত্মবিশ্বাস ছিল। কমলার মধ্যেও এটা দেখতে পেয়েছি।’

আবার ফিরে আসা যাক থুলাসেনধ্রাপুরাম গ্রামে। গ্রামবাসী এখন ডেমোক্র্যাট প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে কমলা হ্যারিসের নাম ঘোষণার প্রতীক্ষা করছেন।

‘কমলার মায়ের ছোট বোন সরলা এই মন্দিরে নিয়মিত আসতেন। ২০১৪ সালে কমলা হ্যারিসের পক্ষ থেকে মন্দিরে ৫ হাজার রুপি দান করেন তিনি।’ বলেন মন্দিরের পুরোহিত নটরাজন। পুরোহিতের বিশ্বাস, তাঁদের প্রার্থনা কমলা হ্যারিসকে নির্বাচনে জিততে সাহায্য করবে।

গ্রামবাসী বলেন, তাঁরা যুক্তরাষ্ট্র থেকে হাজার হাজার মাইল দূরে থেকেও কমলার এই ভ্রমণে নিজেরাও আছেন বলে ভাবছেন। তাঁরা আশা করছেন কমলা হ্যারিস কোনো একদিন তাঁদের দেখতে আসবেন কিংবা তাঁর কোনো বক্তব্যে গ্রামটির নাম উচ্চারণ করবেন।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত