অবৈধ বাংলাদেশি অভিবাসীদের তথ্য জানতে চেয়েছে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট 

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ : ০৯ ডিসেম্বর ২০২৩, ১১: ৫৮
আপডেট : ০৯ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২: ২১

বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ভারতে কী পরিমাণ অনিবন্ধিত অভিবাসী প্রবেশ করেছে এবং বাংলাদেশসংলগ্ন ভারতীয় রাজ্যগুলোতে এই সমস্যা মোকাবিলায় সরকার কী উদ্যোগ নিয়েছে, সে বিষয়ে জানতে চেয়েছেন দেশটির সুপ্রিম কোর্ট। গতকাল শুক্রবার সুপ্রিম কোর্ট এ বিষয়ে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারে প্রতি এক নির্দেশ জারি করেছে। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমসের এক প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনায় বলা হয়েছে, অনথিভুক্ত অভিবাসন নাগরিকত্ব আইনের ধারা ৬ এ-এর বৈধতা থেকে আলাদা একটি ‘গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা’ সামনে হাজির করেছে এবং এটি কেবল আসামের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, সমগ্র দেশকে উদ্বিগ্ন করেছে। কারণ এটি দেশের ওপর চাপ তৈরি করেছে। 

ভারতের ১৯৫৫-এর নাগরিকত্ব আইনে ১৯৮৫-এর পর সংযোজিত ৬ এ ধারা নিয়ে শুনানি চলছে ভারতের সুপ্রিম কোর্টের সাংবিধানিক এই বেঞ্চে। গত বৃহস্পতিবার শুনানিতে ভারতে রাজনৈতিক ইস্যুতে পরিণত হওয়া বাংলাদেশি অভিবাসীদের সম্পর্কে আসাম রাজ্য ও কেন্দ্র সরকারের প্রতি কিছু প্রশ্ন রাখে সুপ্রিম কোর্ট। 

সুপ্রিম কোর্ট ১৯৬৬ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ পর্যন্ত তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান তথা এখনকার বাংলাদেশ থেকে ঠিক কী পরিমাণ অভিবাসী আসামে গেছে, তাদের কতজনকে ভারতীয় নাগরিকত্ব দেওয়া হয়েছে, যারা বাদ পড়েছে তাদেরই বা কী হয়েছে, আসামে বাংলাদেশিদের নিয়ে এত আপত্তি অথচ পশ্চিমবঙ্গে তা কেন হয়নি—এই প্রশ্নগুলোর জবাব খুঁজছে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট। 

আসামের রাজ্য ও কেন্দ্র সরকারের কাছে বাংলাদেশি অভিবাসীদের ব্যাপারে সুস্পষ্ট ও বিস্তারিত তথ্য চেয়েছেন ভারতের প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বাধীন পাঁচজন বিচারপতির একটি সাংবিধানিক বেঞ্চ। এ ছাড়া ভারত সরকার অবৈধ প্রবেশ ঠেকাতে কী পদক্ষেপ নিয়েছে, তাও জানতে চেয়েছে। প্রধান বিচারপতি ছাড়াও সুপ্রিম কোর্টের সাংবিধানিক বেঞ্চে বিচারপতি এ এস বোপান্না, এম এম সুন্দ্রেশ, জেবি পারদিওয়ালা, মনোজ মিশ্রও রয়েছেন। 

সুপ্রিম কোর্ট এ সময় বিদেশি অভিবাসীদের বিষয়টি দেখভাল করতে কতটি বিদেশি ট্রাইব্যুনাল স্থাপন করা হয়েছে, তাদের নিষ্পত্তি করা ও বিচারাধীন মামলা, মামলা নিষ্পত্তির গড় সময় এবং গুয়াহাটি উচ্চ আদালতে মুলতবি থাকা এসংক্রান্ত আপিলের তথ্য চান। এ ছাড়া আদালত কেন্দ্রীয় সরকার ও আসামসহ উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলোর কাছে অবৈধ অভিবাসন মোকাবিলায় প্রশাসনিক স্তরে নেওয়া পদক্ষেপের তথ্যও জানতে চায়। 

শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষের হয়ে অংশগ্রহণ করেন আইনজীবী তুষার মেহতা। তিনি বলেন, এই আইনের বাস্তবতার পাটাতন চ্যালেঞ্জ করে আবেদনকারীরা একটি ‘সত্যিকারের গুরুতর সমস্যা’ উত্থাপন করেছেন। এ সময় তিনি আদালতকে বলেন, ‘সরকার সীমান্ত দিয়ে অবৈধ অনুপ্রবেশ ঠেকাতে যথাসাধ্য চেষ্টা করছে।’ 

জবাবে আদালত বলেন, ‘আদালত পর্যবেক্ষণ করেছে যে, সরকার বিষয়টির গুরুত্ব অস্বীকার করছে না। কিন্তু আমরা জানতে চাই, এই সমস্যা মোকাবিলায় ভারত সরকার কী করছে। অনথিভুক্ত অভিবাসন কেবল আসামের জনমিতিই পরিবর্তন করে না বরং সম্পদের ওপরও চাপ সৃষ্টি করছে।’ এ সময় আদালত আরও বলেন, ‘১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের পর কী ঘটেছে—এ ক্ষেত্রে তা নিয়েও সরকারকে যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়ে বিষয়টি দেখতে হবে।’ 

আসামে অবৈধ অভিবাসীদের শনাক্ত করতে ২০১৮ সালে শুরু এনআরসি বা ন্যাশনাল রেজিস্ট্রার অব ইন্ডিয়ান সিটিজেনস। সে সময় সেই তালিকা থেকে প্রায় ২০ লাখ নাগরিক এই তালিকার বাইরে পড়ে যায়। পরে বিষয়টি সামাল দিতে পাশ হয় নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন বা সিএএ, যার ফলে শর্ত সাপেক্ষে যারা ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বরের আগে ভারতে প্রবেশ করেছে, তাদের ভারতের নাগরিকত্ব দেওয়ার কথা বলা হয়।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত