মহারাষ্ট্র বিধানসভায় যেভাবে বিজেপিকে সহজ জয় এনে দিয়েছে মুসলিমরা

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১৫: ২৭
Thumbnail image
মহারাষ্ট্র বিধাসভা নির্বাচনে বিজেপি সহজ জয়ে ভূমিকা পালন করেছে মুসলিম ভোটারদের বিভাজন। ছবি: সংগৃহীত

মহারাষ্ট্র বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির নেতৃত্বে ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স (এনডিএ) জয়ী হয়েছে। এই জয়ের পেছনের কারণ হিসেবে ব্যাপকভাবে একনাথ সিন্ধের সরকারের জনকল্যাণমূলক কাজকে তুলে ধরা হলেও এই নির্বাচনে বিজেপি জোটের জয়ের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কারণ ছিল মুসলিম ভোটের বিভাজন। ফলে, রাজ্য বিধানসভার মুসলিম অধ্যুষিত ৩৮টি আসনের একটি বড় অংশকেই শাসক জোটকে পকেটে পুরতে সহায়তা করেছে।

এই ৩৮টি বিধানসভা আসনে মুসলিম জনসংখ্যা ২০ শতাংশের বেশি, যা নির্বাচনের ফলাফলে গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্য তৈরি করেছে। সামগ্রিকভাবে শাসক জোট এই ৩৮টি আসনের মধ্যে ২২টি জিতেছে। অর্থাৎ, কংগ্রেসের নেতৃত্বে বিরোধী জোট মহা বিকাশ আঘাদির (এমভিএ) পাওয়া ১৩টি আসনের তুলনায় অনেক বেশি।

মুসলিম ভোট বিভাজনের কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কংগ্রেস। এবারের বিধানসভা নির্বাচনে দলটি মাত্র পাঁচটি আসন পেয়েছে। অথচ, ২০১৯ সালে এই রাজ্যে কংগ্রেসের আসনসংখ্যা ছিল ১১। উদ্ধব ঠাকরের শিব সেনা পেয়েছে মাত্র পাঁচটি আসন এবং শারদ পওয়ারের ন্যাশনালিস্ট কংগ্রেস পার্টি মাত্র দুটি আসনে জয় পেয়েছে।

মুসলিম অধ্যুষিত এই ৩৮টি আসনের মধ্যে বিজেপি যেখানে ২০১৯ সালে ১১টি পেয়েছিল, সেখানে এবারে তারা ১৪টি আসন পেয়েছে। একনাথ সিন্ধের শিব সেনা জিতেছে ছয়টি আসন এবং অজিত পওয়ারের ন্যাশনালিস্ট কংগ্রেস পার্টি (এনসিপি) জিতেছে দুটি আসন। বাকি তিনটি আসনের মধ্যে সমাজবাদী পার্টি দুটি এবং আসাদুদ্দিন ওয়াইসির এআইএমআইএম মাত্র একটি আসন পেয়েছে।

এই ফলাফল ইঙ্গিত দেয় যে, মুসলিম সম্প্রদায়ের সম্মিলিত সিদ্ধান্তের ওপর ধর্মীয় নেতাদের প্রভাব ছিল খুবই দুর্বল। বিষয়টি বিজেপিকে তাদের ‘ভোট জিহাদ’ বা মুসলিম ভোটের সংহতির অভাবের অভিযোগকে জোরালো করতে সহায়তা করেছে।

তবে বিরোধীদের মধ্যকার মেরুকরণের অভিযোগ অস্বীকার করে বিজেপির জ্যেষ্ঠ নেতা বিনয় সহস্রবুদ্ধি বলেন, সব সম্প্রদায় ‘এক হ্যায় তো সেফ হ্যায়’ স্লোগানের অন্তর্ভুক্ত। তিনি বলেন, ‘মানুষ এমভিএর তোষণ ও মেরুকরণের রাজনীতির ফাঁদে পা দেয়নি এবং উন্নয়নের জন্য এক ছাদের নিচে সমবেত হয়েছে। আমাদের এক হ্যায় তো সেফ হ্যায় মন্ত্রে সব সম্প্রদায় অন্তর্ভুক্ত।’

মুসলিম ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সালিম সরাং বলেন, ‘এখানে তোষণের কোনো জায়গা নেই, মানুষ উন্নয়ন ও সুবিধা দেখেই ভোট দিয়েছে।’ বড় মুসলিম নেতাদের মধ্যে যারা এবারের বিধানসভা নির্বাচনের ভোটে হেরেছেন, তাদের মধ্যে আছেন এনসিপির নওয়াব মালিক ও জিশান সিদ্দিকি এবং কংগ্রেসের আরিফ নাসিম খান।

মুসলিম সম্প্রদায়ের সমর্থন গত মে মাসে অনুষ্ঠিত লোকসভা নির্বাচনে মহাবিকাশ আঘাদি জোটকে বড় জয় এনে দিলেও, বিধানসভা নির্বাচনে তা হয়নি। এবারে এমভিএ জোট মানুষের কম উৎসাহ, ভোটের বিভাজন এবং কিছু আসনে সাম্প্রদায়িক মেরুকরণের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কিছু আসনে একাধিক মুসলিম প্রার্থীর উপস্থিতি ভোট বিভাজন আরও বাড়িয়েছে।

উদাহরণস্বরূপ, ঔরঙ্গাবাদ পূর্ব আসনে এআইএমআইএম রাজ্য সভাপতি ও সাবেক লোকসভা সদস্য ইমতিয়াজ জলিল বিজেপির অতুল সাভের কাছে ২ হাজার ১৬১ ভোটে হেরেছেন। এই আসনে বঞ্চিত বহুজন আঘাদি বা ভিবিএর আফসার খান (যিনি ৬ হাজার ৫০৭ ভোট পেয়েছেন) এবং সমাজবাদী পার্টি বা এসপির আবদুল গাফফার সৈয়দ (৫ হাজার ৯৪৩ ভোট পেয়ে) মুসলিম ভোট বিভাজন করে জলিলের পরাজয় নিশ্চিত করেছেন।

এআইএমআইএম কেবল একটি আসন জিতেছে। সেটি হলো—মুসলিমপ্রধান মালেগাঁও সেন্ট্রাল আসন। এই আসনে দলটির প্রার্থী মুফতি ইসমাইল মাত্র ১৬২ ভোটের ব্যবধানে জয় পেয়েছেন, যা এবারের নির্বাচনে সর্বনিম্ন ব্যবধান।

অন্যদিকে, ভিওয়ান্দি পশ্চিম আসনে বিজেপির মহেশ চাউগুলে এসপির রিয়াজ আজমিকে ৩১ হাজার ২৯৩ ভোটে পরাজিত করেছেন। কারণ মুসলিম ভোট এআইএমআইএমের ওয়ারিস পাঠান (১৫ হাজার ৮০০ ভোট) এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী বিলাস পাতিলের (৩১ হাজার ৫৭৯ ভোট) বিভক্ত হয়ে গেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

কারা পরিদর্শক হলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক

ট্রাম্পের অভিষেক: সি আমন্ত্রণ পেলেও পাননি মোদি, থাকছেন আরও যাঁরা

ট্রাম্পের শপথের আগেই বার্নিকাটসহ তিন কূটনীতিককে পদত্যাগের নির্দেশ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতিকে বিচারের মুখোমুখি করতে হবে: সলিমুল্লাহ খান

সংস্কারের কিছু প্রস্তাবে মনঃক্ষুণ্ন বিএনপি

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত