বাংলাদেশিদের ‘অনুপ্রবেশে’ কমেছে ঝাড়খন্ডের আদিবাসী জনসংখ্যা: ভারত

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ : ০৪ নভেম্বর ২০২৪, ১৫: ৫৯
আদিবাসী জনসংখ্যা কমছে এই বিষয়ে ঝাড়খণ্ডের জামতারার যজ্ঞ গ্রাউন্ডে সাঁওতাল পরগণার উপজাতিদের সমাবেশ। ছবি: এএনআই

ভারতের ঝাড়খন্ড রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে ক্ষমতাসীন ঝাড়খন্ড জনমুক্তি মোর্চা (জেএমএম) ও বিরোধী দল বিজেপির মধ্যে বাগ্যুদ্ধ ততই তীব্র হচ্ছে। সর্বশেষ, বিজেপি নেতা ও ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বলেছেন, ভোটব্যাংকের রাজনীতির কারণে ঝাড়খন্ডের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সরেন বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের আশ্রয় দিচ্ছেন। বিজেপি রাজ্যে ক্ষমতায় এলে বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের ঝেঁটিয়ে বিদায় করবে।

ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরও দাবি করেছেন, ঝাড়খন্ডের আদিবাসী জনগোষ্ঠীর জনসংখ্যা বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের কারণে কমে যাচ্ছে। মূলত, তিনি সাঁওতাল পরগনা ও কোলহান অঞ্চলকে ইঙ্গিত করে এ কথা বলেছেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের মাটি, বেটি ও রুটি জেএমএম শাসনের কারণে হুমকির মুখে।’

বিজেপির তরফ থেকে এর আগেও একাধিকবার অভিযোগ করা হয়েছে, ঝাড়খন্ড সরকার রাজ্যটিতে বাংলাদেশি ও রোহিঙ্গাদের অবাধে ঘোরাফেরা করতে দিচ্ছে। অমিত শাহ ও নরেন্দ্র মোদি উভয়ই এই অভিযোগ তুলেছেন।

সম্প্রতি এক ব্যক্তি ঝাড়খন্ড হাইকোর্টে একটি আবেদন করেন। যেখানে সাঁওতাল পরগনা অঞ্চলে অবৈধ বাংলাদেশি অনুপ্রবেশের কারণে উপজাতীয় জনসংখ্যা হ্রাস ও জনমিতিক পরিবর্তনের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। হাইকোর্ট এরপর সাঁওতাল পরগনায় অনুপ্রবেশের দাবি তদন্তের জন্য একটি স্বাধীন অনুসন্ধান কমিটি গঠনের নির্দেশ দেন।

ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের দাবি, সাঁওতাল পরগনা অঞ্চলে আদিবাসী জনসংখ্যা ১৬ শতাংশ কমেছে। হাইকোর্টে জমা দেওয়া এক হলফনামায় কেন্দ্র জানিয়েছে, সাঁওতাল পরগনার ছয়টি ভিন্ন জেলায় মুসলিম জনসংখ্যা ২০ থেকে ৪০ শতাংশ বেড়েছে। একই সময়ে এই অঞ্চলে খ্রিষ্টানদের সংখ্যা ৬ হাজার গুণ বেড়েছে।

কেন্দ্র সরকারের দাবি, ১৯৫১ সালের আদমশুমারিতে সাঁওতাল পরগনার মোট জনসংখ্যা ছিল ২৩ লাখ ২২ হাজার ৯২ জন। যার মধ্যে হিন্দু ছিল ৯০ দশমিক ৩৭ শতাংশ, মুসলিম ৯ দশমিক ৪৩ শতাংশ এবং খ্রিষ্টান দশমিক ১৮ শতাংশ। আর ২০১১ সালের আদমশুমারিতে সাঁওতাল পরগনার মোট জনসংখ্যা ছিল ৬৯ লাখ ৬৯ হাজার ৯৭ জন। যার মধ্যে হিন্দু ছিল ৬৭ দশমিক ৯৫ শতাংশ, মুসলমান ২২ দশমিক ৭৩ শতাংশ এবং খ্রিষ্টান ৪ দশমিক ২১ শতাংশ। ২০১১ সালে সাঁওতাল পরগনার মোট জনসংখ্যার মধ্যে উপজাতীয় ছিল ২৮ দশমিক ১১ শতাংশ।

কেন্দ্র সরকারের দাবি, ঝাড়খন্ডে (বাংলাদেশিদের) অনুপ্রবেশ ঘটছে সাহিবগঞ্জ ও পাকুর জেলা হয়ে। এই দুটি জেলাই ভারতের অপর রাজ্য ও বাংলাদেশ-সংলগ্ন পশ্চিমবঙ্গ লাগোয়া। সরকার আরও দাবি করেছে, অনুপ্রবেশকারী এবং সাঁওতাল পরগনার লোকদের মধ্যে একটি সাধারণ উপভাষা থাকায় এই অঞ্চলগুলো অনুপ্রবেশকারীদের পছন্দের শীর্ষে।

তবে ঝাড়খন্ড সরকার কেন্দ্র সরকারের এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছে। অমিত শাহের বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় ঝাড়খন্ডের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সরেন বলেছেন, বাংলাদেশ থেকে অনুপ্রবেশ বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলোর মাধ্যমে ঘটে। সেই সঙ্গে ভারতে আশ্রিত বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রসঙ্গও টানেন সরেন। তিনি কেন্দ্রের প্রতি প্রশ্ন ছোড়েন, কিসের ভিত্তিতে বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আশ্রয় দিয়েছে কেন্দ্র সরকার।

গতকাল রোববার গড়ওয়াড়া আসনের রাঙ্কায় এক নির্বাচনী সমাবেশে বক্তব্য দেওয়ার সময় মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমি জানতে চাই, বিজেপির কি বাংলাদেশের সঙ্গে কোনো অভ্যন্তরীণ সমঝোতা আছে?’ হেমন্ত বলেন, ‘আমাদের জানান, কিসের ভিত্তিতে আপনারা বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে ভারতে অবতরণ এবং আশ্রয় নেওয়ার অনুমতি দিয়েছেন। অনুপ্রবেশকারীরা বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলোর মাধ্যমে ভারতে প্রবেশ করে। তারাই এটি বলছে।’

অনেকে মনে করেন, বিজেপির এসব দাবি মূলত আদিবাসীদের ভোট টানার লক্ষ্যেই করা হচ্ছে। রাজ্যের বিধানসভা আসনের মধ্যে ২৮টি আসন সংরক্ষিত আদিবাসীদের জন্য। কারণ, তারা রাজ্যের মোট জনসংখ্যার ২৮ শতাংশ। বিজেপি এই আসনগুলোতে ভালো ফলাফল করতে পারেনি বিগত নির্বাচনগুলোতে এবং এখন তারা আদিবাসী সম্প্রদায়ের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপনারে চেষ্টা করছে। গত বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি এই সংরক্ষিত আসনগুলোর মাত্র দুটিতে জিতেছে।

তথ্যসূত্র: দ্য উইক

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত