Ajker Patrika

ভারতে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা ঠেকাতে এককাট্টা বিরোধীরা

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : ২৯ জুন ২০২২, ১৯: ৫৮
ভারতে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা ঠেকাতে এককাট্টা বিরোধীরা

ভারতের রাজস্থান রাজ্যের উদয়পুরে কানাইয়া লাল নামের এক দরজি গত মঙ্গলবার নিজ দোকানে খুন হন। দুই খুনি—মোহাম্মদ রিয়াজ আত্তারি ও গাউস মোহাম্মদকে গত মঙ্গলবার রাতেই গ্রেপ্তার করেছে রাজস্থান পুলিশ। ঘটনার এক দিন পর গতকাল বুধবার উদয়পুরে ইন্টারনেট সেবা ছিল শ্লথ, তবে কঠোর ছিল আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির অবনতি ঠেকাতে এসব পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

এনডিটিভিসহ একাধিক ভারতীয় ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম পুলিশের বরাত দিয়ে জানিয়েছে, গ্রেপ্তার দুই খুনি মঙ্গলবার কাপড় তৈরির জন্য কানাইয়া লালের দোকানে যায়। একজনের মাপ নিতে যখন কানাইয়া ব্যস্ত ছিলেন তখন অপর ব্যক্তি ছুরি বের করে কানাইয়াকে এলোপাতাড়ি আঘাত করতে থাকে। একপর্যায়ে কানাইয়ার গলায় ছুরি চালিয়ে তাঁর মুণ্ডু বিচ্ছিন্ন করা হয়। পুরো ঘটনাটি ভিডিও করে অপরজন। এরপর খুনিরা মোটরসাইকেলযোগে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে।

পরে কানাইয়ার খুনিরা ওই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও শেয়ার করে। তারা হত্যার দায় স্বীকার করে দ্বিতীয় আরেকটি ভিডিও আপলোড করে। সেখানে বিজেপির বরখাস্ত হওয়া মুখপাত্র নূপুর শর্মা কর্তৃক মহানবী (সা.)-কে নিয়ে কটূক্তির সমর্থনে পোস্ট দেওয়ার অভিযোগে কানাইয়া লালকে হত্যা করা হয়েছে বলে দাবি করা হয়। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকেও একইভাবে হত্যার হুমকি দেওয়া হয়। 

এ ঘটনা ভারতে ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার জন্ম দিয়েছে। মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে অল ইন্ডিয়া মুসলিম পারসোনাল ল বোর্ড জানিয়েছে, নূপুর শর্মার সমর্থনে পোস্ট দেওয়ার অভিযোগে উদয়পুরে যে ব্যক্তিকে হত্যা করা হয়েছে, তা ইসলামবিরোধী। এটা চরম সমালোচনা ও অনুতাপযোগ্য, সর্বোপরি ইসলামের দৃষ্টিতে অসমর্থনযোগ্য। 

রাজস্থানের আজমির শরিফ কর্তৃপক্ষের প্রধান জয়নুল আবেদিন আলী খান বলেন, ‘তালেবানি মানসিকতার বিস্তার ভারতের মুসলমানেরা কোনোভাবেই সহ্য করবে না। মানবতাবিরোধী সহিংসতা কোনো ধর্মই সহ্য করে না।’ 

অল ইন্ডিয়া মজলিশ-ই-ইত্তেহাদুল মুসলেমিনের প্রধান ও ভারতের লোকসভার সদস্য আসাদউদ্দিন ওয়াইসি বলেন, ‘আমাদের দল এ ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের ঘোর বিরোধী। আইন নিজ হাতে তুলে নেওয়ার অধিকার কারও নেই। আশা করি, কেন্দ্রীয় সরকার এর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেবে। আমরা আইনের শাসন চাই।’ 

খুনিদের ইতিমধ্যে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং শিগগির দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হবে বলে জানিয়েছ রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী ও কংগ্রেস নেতা অশোক গেহলট। তিনি বলেছেন, ‘পরিস্থিতি অত্যন্ত শোচনীয়। দেশের যে স্থানে যারাই সংখ্যালঘিষ্ঠ, তারাই নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। তাই, উদয়পুরের ঘটনাকে যথাযথ আমলে নিয়ে দেশবাসীর উদ্দেশে বক্তৃতা দিতে আমি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে বারবার অনুরোধ করছি। প্রধানমন্ত্রীকে এটা স্পষ্ট করে বলতে হবে যে, কোনো ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড কোনোভাবেই সহ্য করা হবে না। এই দেশে সব ধর্ম-বর্ণের মানুষ সুখে-শান্তিতে বাস করবে।’ 

কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী বলেছেন, ‘ঘৃণাকে ঐক্যবদ্ধভাবে পরাজিত করতে হবে। শান্তি-শৃঙ্খলা ও ভ্রাতৃত্ব বজায় রাখতে অনুরোধ করছি সবাইকে।’ আম আদমি পার্টি, কেরালার মুখ্যমন্ত্রী, সমাজবাদী পার্টি, বহুজন সমাজ পার্টিসহ আরও বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সামাজিক সংগঠন এই ঘটনার নিন্দা জানিয়েছে।

কংগ্রেসের মুখপাত্র পবন খেরা বলেছেন, ‘কানাইয়া লালের হত্যাকাণ্ডের শোক ভাষায় প্রকাশের মতো নয়। মনে রাখতে হবে কানাইয়া লাল, গণপিটুনিতে নিহত মুহাম্মদ আখলাক ও পেহলু খান এঁরা সবাই ঘৃণার রাজনীতির শিকার।’ তিনি প্রশ্ন করেন, দেশে যে আজ চরম পরিস্থিতি বিরাজ করছে, এই পরিস্থিতি কে সৃষ্টি করেছে? সমাজকে কে বিভক্ত করেছে? ঘৃণা ছড়িয়ে লাভবান হচ্ছে কে? স্বগতোক্তির সুরে তিনিই আবার বলেন, ‘সবাই জানে, কে এসব করছে। যিনি এসবের হোতা তিনি আজ মহা নীরব।’ 

গত মে মাসে ভারতের একটি বেসরকারি টেলিভিশন বিতর্কে হজরত মুহাম্মদ (সা.)-কে নিয়ে কটূক্তি করেন বিজেপির মুখপাত্র নূপুর শর্মা। এরপর একই ইস্যুতে টুইট করেন দলটির দিল্লি শাখার গণমাধ্যমবিষয়ক প্রধান নবীন কুমার জিন্দাল। এই ইস্যুতে নিন্দার ঝড় ওঠে ভারতজুড়ে। প্রতিবাদ জানায় মধ্যপ্রাচ্যের সব দেশ। পরিস্থিতি সামাল দিতে জিন্দালকে দল থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার ও নূপুরকে বরখাস্ত করে বিজেপি। 

এনডিটিভির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নূপুরকে সমর্থন করে প্রায় তিন সপ্তাহ আগে একটি পোস্ট দেন নিহত কানাইয়া লাল। ১০ জুন কানাইয়ার বিরুদ্ধে স্থানীয় থানায় একটি অভিযোগ করা হয়। ১৫ জুন নিজের মৃত্যুর হুমকির কথা জানিয়ে থানায় পাল্টা অভিযোগ করেন কানাইয়া লাল। এ অবস্থায় উভয় পক্ষকে নিয়ে বিষয়টি মিটমাট করে পুলিশ। কিছুদিন পলাতক থাকার পর কয়েক দিন ধরে আবার নিয়মিত কাজ শুরু করেন কানাইয়া লাল। 

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সমাজকে তিলে তিলে বিষাক্ত করে তুলছে বিজেপি। রাজনৈতিক ফায়দা তুলতেই ধর্মকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে হিন্দুত্ববাদী দলটি। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত