Ajker Patrika

ডলারের বিপরীতে সর্বোচ্চ পতনের পর আরও কমল ভারতীয় রুপির মান

প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

আন্তর্জাতিক লেনদেনের মুদ্রা মার্কিন ডলারের বিপরীতে ভারতীয় রুপির ব্যাপক দরপতন হয়েছে। আজ সোমবার সকাল নাগাদ ডলারের বিপরীতে ভারতীয় রুপির মান ৬৭ পয়সা কমেছে। এর অর্থ হলো, এখন এক ডলার কিনতে ভারতীয় মুদ্রায় ৮৭ দশমিক ২৯ রুপি ব্যয় করতে হবে। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম টেলিগ্রাফ ইন্ডিয়ার প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আজ সোমবার ভারতীয় রুপি প্রাথমিক লেনদেনে ৬৭ পয়সা অবমূল্যায়িত হয়ে ডলারের বিপরীতে ৮৭ দশমিক ২৯ রুপিতে পৌঁছেছে। এই অবস্থান মার্কিন ডলারের বিপরীতে রেকর্ড সর্বনিম্ন মান। মূলত, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পক্ষ থেকে কানাডা, মেক্সিকো এবং চীনের ওপর শুল্ক আরোপের ঘোষণার পর বিশ্বব্যাপী বাণিজ্য যুদ্ধ শুরুর শঙ্কার কারণে এমনটা হয়েছে বলে ধারণা করা হয়েছে।

বৈদেশিক মুদ্রা দেশের বাইরে চলে যাওয়া এবং আন্তর্জাতিক বাজারে মার্কিন মুদ্রার শক্তিশালী অবস্থানের কারণে চাপের মধ্যে রয়েছে ভারতীয় রুপি। ডলারের অপরিবর্তিত চাহিদা এবং রুপির ঝুঁকি গ্রহণের দুর্বল মনোভাবের কারণে মূল্য আরও কমেছে। আজ সোমবার সকালে আন্তঃব্যাংক লেনদেনের ক্ষেত্রে রুপির বাজার শুরু হয় ডলারের বিপরীতে ৮৭ রুপি নিয়ে। পরে তা কমে, ৮৭ দশমিক ২৯ রুপিতে নেমে যায়। গত শুক্রবার ডলারের রুপির দর ছিল ৮৬ দশমিক ৬২। অর্থাৎ, আজ তা ৬৭ পয়সা কমেছে।

সিআর ফরেক্স অ্যাডভাইজার্সের এমডি অমিত পাবারি বলেন, ‘সপ্তাহের শুরুতে আর্থিক বাজারগুলো চাপের মধ্যে ছিল। কারণ, ইউএস প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁর শুল্ক হুমকি বাস্তবায়ন করেছেন, মেক্সিকো, কানাডা এবং চীনের থেকে আমদানির ওপর শুল্ক আরোপ করে।’

এর আগে, ভারতীয় বাণিজ্যকেন্দ্রিক সংবাদমাধ্যম মানি কন্ট্রোলের বিশ্লেষণমূলক প্রতিবেদনে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছিল, আগামী ৬ থেকে ১০ মাসের মধ্যে ভারতীয় রুপির দাম আরও পড়তে পারে। এমনকি প্রতি ডলারের দাম হতে পারে ৯০-৯২ রুপি। খবরে বলা হয়, ২০২৪ সালের ৫ জানুয়ারি থেকে ২০২৫ সালের ৫ জানুয়ারি পর্যন্ত ভারতের শেয়ারবাজারের সূচক নিফটি এবং সেনসেক্স এক বছরে ৮ দশমিক ৩ শতাংশ পয়েন্ট পর্যন্ত বেড়েছে।

কিন্তু এই সময়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এসঅ্যান্ডপি-৫০০ সূচক ২৬ শতাংশ পয়েন্ট পর্যন্ত বেড়েছে। অর্থাৎ, মার্কিন সূচকের তুলনায় ভারতের সূচকের বৃদ্ধি অনেক কম। এ ছাড়া, এক বছরে ডলারের বিপরীতে ভারতীয় রুপির ৩ শতাংশ পর্যন্ত অবমূল্যায়নের ফলে এই পার্থক্য আরও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। এ অবস্থায় ভারতীয় সূচক দুটি যদি কাঙ্ক্ষিত গতি লাভ করতে না পারে তবে রুপির তীব্র অবমূল্যায়নের সম্ভাবনা আরও বেড়ে যাবে।

মার্কিন অর্থনীতি প্রত্যাশার চেয়েও বেশি শক্তিশালী হয়ে উঠেছে। ফলে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ২০২৫ সালে নির্দেশিত সুদহার কমানোর সংখ্যা চার থেকে কমিয়ে দুটিতে আনাতে বাধ্য হয়েছে। ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদের ক্ষেত্রে তার সম্প্রসারণমূলক করসংস্থান ও শুল্ক বৃদ্ধির প্রভাব উচ্চতর মুদ্রাস্ফীতির সম্ভাবনা সৃষ্টি করেছে। এই বিষয়টিও যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভকে শক্তিশালী নীতিমালা গ্রহণের দিকে ঠেলে দিচ্ছে।

মার্কিন নীতির কারণে মুদ্রাবাজারে ইউরোজোনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের প্রবৃদ্ধির পার্থক্য বাড়ছে এবং এটি ডলারকে ক্রমবর্ধমান অর্থনীতির সূচকে শক্তিশালী অবস্থানে রাখছে। আবার চীন ডলারের রিজার্ভ কমানোর পাশাপাশি মন্দা মোকাবিলায় আরও বেশি মুদ্রায় লেনদেনের মতো নমনীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করছে। এর ফলে ডলারের বাজারে সূচকের ক্ষেত্রে কিছুটা প্রভাব পড়বে। তবে আবার যুক্তরাষ্ট্র জিডিপি-ঋণ অনুপাত কমানোর উদ্যোগ গ্রহণের পর ডলারকে স্থিতিশীল রাখার প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। এ ছাড়া, ডলারের সূচক বৃদ্ধির আরেকটি সহায়ক কারণ হলো বাড়তি ভূরাজনৈতিক ঝুঁকি, যা বিশ্বজুড়ে নীতিগত অনিশ্চয়তা বাড়াচ্ছে।

ডলারের বিপরীতে ভারতীয় রুপি বিগত দুই বছরে চমৎকার অনমনীয়তা প্রদর্শন করেছে। এটি সম্ভব হয়েছে ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাংকের (আরবিআই) আগ্রাসী ফরেক্স রিজার্ভ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে। মুদ্রা অনমনীয়তা পরিমাপের হার অনুসারে ভারতীয় রুপির নমনীয়তার হার ১। যেখানে ‘০-শূণ্য’ নির্দেশ করে পূর্ণ নমনীয় মুদ্রার এবং ১ প্রতিনিধিত্ব করে সর্বোচ্চ অনমনীয়তার।

কিন্তু ২০২৪ সালের অক্টোবরের পর থেকে এখন পর্যন্ত ভারতের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৪৭ বিলিয়ন ডলার কমে গেছে। ফলে ৪ ট্রিলিয়ন রুপির সমপরিমাণ অর্থের তারল্য সৃষ্টি হয়েছে। ডলারের দ্রুত শক্তিশালী হয়ে ওঠার বিষয়টি এই অবস্থাকে আরও নাজুক করেছে। এদিকে, রিজার্ভের ঘাটতির কারণে ভারতের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুদ্রাবাজার নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা কমিয়ে দিতে পারে। কারণ, বাড়তি বাণিজ্যিক লেনদেন রুপি দুর্বল হওয়ার পক্ষেই কাজ করতে পারে।

২০০৮ সাল থেকে ডলারের বিপরীতে ভারতীয় রুপির অবমূল্যায়ন (৯০ শতাংশ) অন্যান্য মুদ্রার তুলনায় বেশি হয়েছে। কারণ বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধির পার্থক্য সংকুচিত হয়েছে। ফলে, প্রবৃদ্ধির পারফরম্যান্সে কোনো নেতিবাচক চমক রুপি দুর্বল করার ঝুঁকি বাড়াতে পারে।

সাম্প্রতিক প্রান্তিকে, ভারতীয় কোম্পানিগুলোর মুনাফা মহামারির সময়ে অস্বাভাবিক বৃদ্ধির পর সংকুচিত হয়েছে। চাহিদার দুর্বলতা এবং মুনাফার চাপে আগামী বছরগুলোতেও আরও মন্দার পূর্বাভাস আছে। ২০২৫-২৭ অর্থবছরের জন্য নিফটির বার্ষিক গড় প্রবৃদ্ধি ১১ শতাংশ ধরা হয়েছে। এটি ২০২৫ সালের জন্য মার্কিন সূচকের (১৬ শতাংশ) তুলনায় বেশ কম।

বৈশ্বিক মডেলের অনুমান, ২০২৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রবৃদ্ধি ৪ দশমিক ৬ শতাংশ হবে। এর ফলে, মার্কিন সুদহার বর্তমান ৪ দশমিক ৬ থেকে ৪ শতাংশে নামাতে পারে। এর বাইরে স্বল্প মেয়াদে মূল্যস্ফীতি কমার কারণে ডলার আরও শক্তিশালী হবে। এ ক্ষেত্রে ভারতীয় রুপির মূল্য ৭-১০ শতাংশ পর্যন্ত অবমূল্যায়িত হতে পারে।

এ ছাড়া, ভারতীয় অর্থনীতির দুর্বল প্রবৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে ধারাবাহিক অবমূল্যায়নের হার ৪ শতাংশ অনুমান করা হয়েছে, যেখানে শীর্ষ পর্যায়ে অবমূল্যায়ন হতে পারে ৯ শতাংশ পর্যন্ত। ভারত-যুক্তরাষ্ট্রের নেতিবাচক বাস্তব নীতি হার এবং বিস্তৃত বাস্তব কার্যকর বিনিময় হারের অতিমূল্যায়ন বিনিময় হারে প্রভাব ফেলবে।

সব দিক বিবেচনায়, আমাদের অনুমান বলে যে, সাম্প্রতিক ৮৪-এর (ডলারের বিপরীতে রুপির অবস্থা) স্তর থেকে ৭-১০ শতাংশ অবমূল্যায়িত হয়ে ৯০-৯২ রুপি/প্রতি ডলারের স্তরে পৌঁছাতে পারে আগামী ৬-১০ মাসে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ভারতে নিকাব বিতর্ক: কাজে যোগ দেননি সেই নারী চিকিৎসক

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ছবি: ভিডিও থেকে নেওয়া
ছবি: ভিডিও থেকে নেওয়া

সরকারি অনুষ্ঠানে সার্টিফিকেট নিতে আসা এক মুসলিম নারীর মুখ দেখতে নিকাব টান দিয়ে সরিয়ে দিয়েছিলেন ভারতের বিহার রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার। ঘটনাটি নিয়ে ইতিমধ্যে বেশ সমালোচনা হচ্ছে। এর মধ্যে আজ আরেকটি বিষয় নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। জানা গেছে, নিকাব বিতর্কের কেন্দ্রে থাকা সেই নারী চিকিৎসক নুসরাত পারভীন নির্ধারিত সময়ে কর্মস্থলে যোগ দেননি।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়ার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আজ শনিবার (২০ ডিসেম্বর) সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত তিনি কাজে যোগদান করেননি। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন পাটনার সিভিল সার্জন অবিনাশ কুমার সিং। এমনকি তাঁর বা তাঁর পরিবারের সদস্যদের সঙ্গেও কোনো যোগাযোগ করা সম্ভব হচ্ছে না বলে জানিয়েছে প্রশাসন।

পাটনার সিভিল সার্জন জানান, নুসরাত পারভীনের কাজে যোগদানের শেষ সময় ২০ ডিসেম্বরের পর আরও বাড়ানো হয়েছে। তবে নতুন সময়সীমা কত দিন, তা স্পষ্ট করেননি তিনি। সিভিল সার্জন বলেন, ‘তিনি সোমবার যোগ দেন কি না, সেটিই এখন দেখার বিষয়।’

নুসরাত পারভীনের পাটনা সদরের সাবলপুর প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যোগ দেওয়ার কথা ছিল। সেখানকার সার্জন বিজয় কুমার জানিয়েছেন, আজ ৫-৬ জন নতুন চিকিৎসক যোগ দিলেও নুসরাতের কোনো খোঁজ নেই। এমনকি সিভিল সার্জন অফিস থেকেও তাঁর নিয়োগপত্র এখনো সেখানে পৌঁছায়নি।

নুসরাত পারভীন পাটনার সরকারি তিব্বি কলেজ ও হাসপাতালের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। কলেজের প্রিন্সিপাল মাহফুজুর রহমান জানিয়েছেন, নুসরাত সর্বশেষ ১৭ বা ১৮ ডিসেম্বর কলেজে এসেছিলেন।

নুসরাতের পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন, তাঁরা অতিরিক্ত মিডিয়া কাভারেজ এড়াতে চাইছেন। এই বিতর্কের কারণে নুসরাত আদৌ চাকরিতে যোগ দেবেন কি না, তা নিয়ে নতুন করে ভাবছেন।

এদিকে নুসরাতের পরিবার কলকাতায় চলে গেছে বলে যে গুঞ্জন উঠেছিল, তা নাকচ করে দিয়েছেন তাঁর স্বামী। তিনি জানিয়েছেন, তাঁরা সরকারের ওপর নয়, বরং সংবাদমাধ্যমের সৃষ্টি করা বিতর্কে বিরক্ত।

চলতি সপ্তাহের শুরুতে পাটনায় আয়ুশ চিকিৎসকদের নিয়োগপত্র বিতরণ অনুষ্ঠানে এই অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে। ভিডিওতে দেখা যায়, নুসরাত পারভীন নিয়োগপত্র নিতে মঞ্চে এলে মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার তাঁর মুখের নিকাব নিয়ে প্রশ্ন তোলেন এবং একপর্যায়ে তা টেনে সরিয়ে দেন। এই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে দেশজুড়ে তীব্র সমালোচনা শুরু হয়।

বিষয়টি নিয়ে মুখ খুলেছেন বিহারের রাজ্যপাল আরিফ মোহাম্মদ খান। তবে তিনি এই ঘটনাকে ‘বিতর্ক’ বলতে নারাজ। সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘বাবা ও মেয়ের মধ্যে কি কোনো বিতর্ক হতে পারে? নীতীশ কুমার নারী শিক্ষার্থীদের নিজের মেয়ের মতো মনে করেন। আপনারা বিষয়টিকে কোথায় নিয়ে গেছেন?’

তবে এর আগেও বিতর্কে জড়িয়েছিলেন নীতীশ কুমার। গত নভেম্বরের বিহার বিধানসভা নির্বাচনের কয়েক সপ্তাহ আগে এক জনসভায় এক নারীকে মালা পরানোর ভিডিও ভাইরাল হলে সমালোচনার মুখে পড়েন তিনি। সে সময় এক জেডিইউ সংসদ সদস্য থামানোর চেষ্টা করলে মুখ্যমন্ত্রী তাঁকে ধমক দেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বন্ধু ট্রাম্পকে খুশি করতে মোদির ‘শান্তি’ বিল পাস, বিরোধীদের সমালোচনা

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ভারতের প্রধানমন্ত্রী ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: সংগৃহীত
ভারতের প্রধানমন্ত্রী ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: সংগৃহীত

ভারতের মোদি সরকারের সদ্য পাস হওয়া ‘শান্তি’ বিল নিয়ে বিস্ফোরক অভিযোগ তুলেছে প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেস। দলের প্রবীণ নেতা ও রাজ্যসভার সংসদ সদস্য জয়রাম রমেশ অভিযোগ করেছেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে সম্পর্ক পুনরুদ্ধার করতে এবং তাদের স্বার্থ রক্ষা করতেই এই বিতর্কিত বিলটি সংসদে জোরপূর্বক পাস করা হয়েছে।

জয়রাম রমেশের দাবি, এই বিলের মাধ্যমে ভারতের পরমাণু খাতে বিদেশি সরবরাহকারীদের দায়বদ্ধতা কমিয়ে দেওয়া হয়েছে, যা দীর্ঘদিনের জাতীয় ঐকমত্যের পরিপন্থী। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে জয়রাম রমেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ‘ন্যাশনাল ডিফেন্স অথরাইজেশন অ্যাক্ট (এনডিএএ) ২০২৬’-এর প্রসঙ্গ টেনে আনেন।

তিনি বলেন, ট্রাম্প স্বাক্ষরিত ৩ হাজার ১০০ পৃষ্ঠার ওই মার্কিন আইনের ১৯১২ নম্বর পৃষ্ঠায় ভারতের ‘পরমাণু দায়বদ্ধতা আইন’ নিয়ে দ্বিপক্ষীয় পর্যালোচনার স্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে। কিন্তু আমাদের নতুন বিলে সেটা নেই।

জয়রাম রমেশ বলেন, ‘এখন আমরা নিশ্চিত যে প্রধানমন্ত্রী কেন চলতি সপ্তাহেই “শান্তি” বিলটি পাস করার জন্য এত তাড়াহুড়ো করলেন। এটি তাঁর একসময়ের ঘনিষ্ঠ বন্ধুর (ট্রাম্প) সঙ্গে সুসম্পর্ক বা শান্তি ফিরিয়ে আনার একটি প্রচেষ্টা মাত্র।’

কটাক্ষ করে তিনি বলেন, শান্তি বিলটিকে আসলে ‘ট্রাম্প অ্যাক্ট’ বলা উচিত। এর পূর্ণরূপ হিসেবে তিনি উল্লেখ করেন—‘দ্য রিঅ্যাক্টর ইউস অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট প্রমিজ অ্যাক্ট’।

কী আছে এই ‘শান্তি’ বিলে

মোদি সরকারের দাবি, ‘সাস্টেইনেবল হার্নেসিং অ্যান্ড অ্যাডভান্সমেন্ট অব নিউক্লিয়ার এনার্জি ফর ট্রান্সফর্মিং ইন্ডিয়া (শান্তি বা এসএইচএএনটিআই) বিল-২০২৫’ ভারতের পরমাণু খাতে আমূল পরিবর্তনের পথ প্রশস্ত করবে। এই বিলের মাধ্যমে ভারতের পারমাণবিক বিদ্যুৎ খাতে এই প্রথম বেসরকারি কোম্পানিগুলোর প্রবেশের সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে।

গত বুধবার ভারতের পরমাণু শক্তি দপ্তরের প্রতিমন্ত্রী জিতেন্দ্র সিং বিলটি সংসদে উত্থাপন করেন। তাঁর মতে, এই বিলের লক্ষ্য হলো—১৯৬২ সালের পারমাণবিক শক্তি আইনের ভিত্তিতে আধুনিক প্রযুক্তি, অর্থনীতি ও জ্বালানি বাস্তবতার সঙ্গে ভারতের পারমাণবিক কাঠামোকে আধুনিক করা।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এই বিল পাস হওয়াকে একটি ‘রূপান্তরমূলক মুহূর্ত’ বলে উল্লেখ করেন।

বিলটির মূল লক্ষ্য হলো—ভারতের পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদন দ্রুত বাড়ানো। বর্তমানে ভারতের পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদন উৎপাদন সক্ষমতা ৮ দশমিক ২ গিগাওয়াট। মোদি সরকার ২০৪৭ সালের মধ্যে তা ১০০ গিগাওয়াটে নিতে চায়। এ ছাড়া ভারতের ২০৭০ সালের মধ্য নেট জিরো লক্ষ্যমাত্রা অর্জন এবং পাশাপাশি ৫ ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনীতি গড়ার সঙ্গেও এটি সম্পর্কযুক্ত।

তবে বিরোধীরা বলছেন, নতুন এই বিলের মাধ্যম ১৯৬২ সালের পরমাণু শক্তি আইন ও ২০১০ সালের পরমাণু ক্ষয়ক্ষতি বিষয়ক বেসামরিক দায়বদ্ধতা আইন (সিভিল লাইয়াবিলিটি ফর নিউক্লিয়ার ড্যামেজ আইন) বাতিল হয়ে গেছে।

বিরোধীদের প্রধান অভিযোগ, নতুন আইনে পারমাণবিক দুর্ঘটনায় সরঞ্জাম সরবরাহকারীর দায়বদ্ধতা-সংক্রান্ত কঠোর ধারাগুলো শিথিল করা হয়েছে। এখন কোনো দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে দায় মূলত অপারেটরের ওপরই বর্তাবে।

সংসদে বিলটি পাসের সময় কংগ্রেসসহ অন্য বিরোধী দলগুলো দাবি করেছিল, বিলটি সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হোক। কিন্তু সরকার সেই দাবি প্রত্যাখ্যান করে এবং বিরোধীদের ওয়াকআউটের মধ্যেই বিলটি পাস হয়ে যায়।

বিরোধীদের মতে, ২০১০ সালে যখন ইউপিএ সরকার পরমাণু দায়বদ্ধতা আইন এনেছিল, তখন বিজেপিই সরবরাহকারীর দায়বদ্ধতার দাবিতে অনড় ছিল। এখন সেই বিজেপিই ক্ষমতায় এসে বিদেশি সংস্থাগুলোকে ছাড় দিতে আইন শিথিল করছে, যা জনস্বার্থের পরিপন্থী।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

গ্রিস উপকূলে মাছধরা নৌকা থেকে বাংলাদেশিসহ ৫৪০ অভিবাসী উদ্ধার

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
উদ্ধারকৃতদের মধ্যে বাংলাদেশ, মিশর ও পাকিস্তানের নাগরিক রয়েছেন। ছবি: রয়টার্সের সৌজন্যে
উদ্ধারকৃতদের মধ্যে বাংলাদেশ, মিশর ও পাকিস্তানের নাগরিক রয়েছেন। ছবি: রয়টার্সের সৌজন্যে

গ্রিসের দক্ষিণাঞ্চলীয় দ্বীপ গাভদোসের কাছে একটি মাছধরা নৌকা থেকে বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের প্রায় ৫৪০ জন অভিবাসীকে উদ্ধার করেছে দেশটির কোস্ট গার্ড। গ্রিক কোস্ট গার্ডের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, গতকাল শুক্রবার (১৯ ডিসেম্বর) গাভদোস দ্বীপ থেকে প্রায় ১৬ নটিক্যাল মাইল (২৯.৬ কিমি) দূরে লিবীয় সাগরে নৌকাটি শনাক্ত করা হয়।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইউরোপীয় ইউনিয়নের সীমান্ত সংস্থা ফ্রন্টেক্সের টহল জাহাজ প্রথমে নৌকাটি দেখতে পায়। এরপর কোস্ট গার্ডের তিনটি জাহাজ, ফ্রন্টেক্সের তিনটি জাহাজ ও তিনটি বাণিজ্যিক জাহাজের সমন্বয়ে উদ্ধার অভিযান পরিচালিত হয়।

জানা গেছে, উদ্ধার হওয়া ৫৪০ জন অভিবাসীর সবাই বর্তমানে সুস্থ আছেন। তাঁদের উদ্ধার করে নিকটবর্তী ক্রিট দ্বীপের আগিয়া গালিনি বন্দরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

গ্রিক কোস্ট গার্ডের একজন মুখপাত্র বার্তা সংস্থা এএফপিকে জানিয়েছেন, উদ্ধারকৃতদের মধ্যে বাংলাদেশ, মিশর ও পাকিস্তানের নাগরিক রয়েছেন। এ ছাড়া ইরিত্রিয়া, সোমালিয়া, সুদান ও ফিলিস্তিনি নাগরিকেরাও এই দলে ছিলেন।

তাঁদের আপাতত ক্রিট দ্বীপের রেথিমনো শহরের একটি অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্রে রাখা হয়েছে। সেখানে প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরীক্ষা শেষে তাঁদের রাজনৈতিক আশ্রয়ের (Asylum) আবেদন প্রক্রিয়া শুরু করা হবে।

লিবিয়ার পূর্বাঞ্চলীয় শহর তোব্রুক থেকে পরিচালিত পাচারকারী চক্রগুলো এখন ইউরোপে প্রবেশের জন্য গাভদোস রুটটিকে বেশি ব্যবহার করছে। ২০২৫ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসেই ক্রিট ও গাভদোসে ৭ হাজার ৩০০-এর বেশি অভিবাসী পৌঁছেছেন, যা ২০২৪ সালের পুরো বছরের মোট সংখ্যাকেও ছাড়িয়ে গেছে।

গ্রিসের প্রধানমন্ত্রী কিরিয়াকোস মিতসোটাকিস জানিয়েছেন, ২০২৬ সালের মাঝামাঝি থেকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের নতুন অভিবাসন চুক্তি কার্যকর হবে। এর আওতায় যাঁদের আশ্রয়ের আবেদন বাতিল হবে, তাঁদের দ্রুত নিজ দেশে ফেরত পাঠানোকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।

উদ্ধারকৃতদের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশ, মিসর ও সুদানের নাগরিকেরা এই মরণযাত্রার জন্য পাচারকারী চক্রকে জনপ্রতি দুই থেকে পাঁচ হাজার ইউরো (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ২.৫ থেকে ৬ লাখ টাকা) পরিশোধ করেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ধ্বংসস্তূপের মধ্যেই গাজার ইসলামিক ইউনিভার্সিটিতে পাঠদান শুরু

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২০ ডিসেম্বর ২০২৫, ২১: ০৬
২০২৩ সালের অক্টোবরের আগে গাজার বিখ্যাত ইসলামিক ইউনিভার্সিটি। ছবি: সংগৃহীত
২০২৩ সালের অক্টোবরের আগে গাজার বিখ্যাত ইসলামিক ইউনিভার্সিটি। ছবি: সংগৃহীত

ইসরায়েলি হামলায় ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে গাজা উপত্যকা। দীর্ঘ দুই বছর পর এই ধ্বংসস্তূপের মধ্যেই গাজার বিখ্যাত ইসলামিক ইউনিভার্সিটিতে সশরীরে পাঠদান শুরু হয়েছে। গত অক্টোবরে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর অবরুদ্ধ এই ভূখণ্ডের অন্যতম প্রধান বিদ্যাপীঠটি পুনরায় চালু হলো। তবে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান রূপ আর দশটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মতো নয়। দেখলে মনে হবে যেন একটি বিশাল উদ্বাস্তু শিবির।

কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের কক্ষগুলো শুধু পড়াশোনার জন্যই নয়, ইসরায়েলি হামলায় ঘরবাড়ি হারানো প্রায় ৫০০ বাস্তুচ্যুত পরিবারের আশ্রয়স্থল হিসেবেও ব্যবহৃত হচ্ছে। একসময়ের বিশাল লেকচার হলের জায়গায় এখন সারি সারি তাঁবু টাঙানো।

২০২৩ সালের অক্টোবরের আগে গাজার বিখ্যাত ইসলামিক ইউনিভার্সিটি। ছবি: সংগৃহীত
২০২৩ সালের অক্টোবরের আগে গাজার বিখ্যাত ইসলামিক ইউনিভার্সিটি। ছবি: সংগৃহীত

সেখানে আশ্রয় নেওয়া একজন বলেন, ‘আমাদের যাওয়ার কোনো জায়গা নেই বলে এখানে এসেছি। কিন্তু এটি শিক্ষার জায়গা, আশ্রয়কেন্দ্র নয়। আমাদের সন্তানদের পড়াশোনার জন্য এই বিদ্যাপীঠের পরিবেশ ফিরিয়ে আনা জরুরি।’

ইউনেসকোর তথ্যমতে, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া যুদ্ধের ফলে গাজার ৯৫ শতাংশেরও বেশি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত বা সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গেছে। মানবাধিকার সংস্থাগুলো ও জাতিসংঘ একে ‘স্কলাস্টিসাইড’ বা পদ্ধতিগতভাবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করার একটি প্রক্রিয়া হিসেবে অভিহিত করেছে।

সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ইসরায়েলের হামলায় গাজার ৪৯৪টি স্কুল ও বিশ্ববিদ্যালয় আংশিক বা সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হয়ে গেছে। সর্বশেষ চলতি বছরের জানুয়ারিতে গাজাভিত্তিক আল-মেজান সেন্টারের তথ্য অনুযায়ী, গাজার ১৩৭টি স্কুল ও বিশ্ববিদ্যালয় সম্পূর্ণ মাটির সঙ্গে মিশে গেছে। যুদ্ধে এখন পর্যন্ত ১২ হাজার ৮০০ শিক্ষার্থী, ৭৬০ জন শিক্ষক এবং ১৫০ জন শিক্ষাবিদ ও গবেষক নিহত হয়েছেন।

গাজার সর্বশেষ সচল বিদ্যাপীঠ ইসরা ইউনিভার্সিটিকেও ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে ধ্বংস করে দেয় ইসরায়েলি বাহিনী।

ইসলামিক ইউনিভার্সিটিতে মাত্র চারটি সচল শ্রেণিকক্ষে বর্তমানে হাজার হাজার শিক্ষার্থীর পাঠদান চলছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. আদেল আওয়াদুল্লাহ জানান, ভাঙা দেয়ালগুলো প্লাস্টিকের শিট দিয়ে ঢেকে ক্লাস নেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘বিদ্যুৎ নেই, তাই আমরা ধার করা জেনারেটর চালিয়ে প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম সচল রাখার চেষ্টা করছি।’

মেডিকেল কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্রী ইউমনা আলবাবা বলেন, ‘আমি যেমন বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বপ্ন দেখেছিলাম, এটি তেমন নয়। মনোযোগ দেওয়ার মতো পরিবেশ বা পর্যাপ্ত সরঞ্জাম—কোনোটিই এখানে নেই। তবুও আমি খুশি যে সশরীরে ক্লাস করতে পারছি। আমরা শূন্য থেকে সবকিছু গড়ার স্বপ্ন দেখছি।’

জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন, গাজার শিক্ষাব্যবস্থাকে ধ্বংস করা মূলত ফিলিস্তিনি সমাজের ভিত্তি উপড়ে ফেলার একটি সুপরিকল্পিত প্রচেষ্টা। বিদ্যুৎ ও ইন্টারনেটের অভাবে অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রমও মুখ থুবড়ে পড়েছে। তবুও গাজার শিক্ষার্থীরা শ্রেণিকক্ষে ফিরে আসার মাধ্যমে নিজেদের ভবিষ্যৎ পুনরুদ্ধারের যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত