পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে ইস্যু বাংলাদেশ, বিজেপির ‘হিন্দুত্বকে’ ম্লান করতে কৌশলী মমতা

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ : ০৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৬: ৫৯
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: সংগৃহীত

ভারতের রাজনীতিতে বাংলাদেশ এক জ্বলন্ত ইস্যু হয়ে উঠেছে। ঝাড়খণ্ড থেকে শুরু করে পশ্চিমবঙ্গ হয়ে বিহার, আসাম থেকে শুরু করে ত্রিপুরা—সর্বত্রই বাংলাদেশ ইস্যুকে পুঁজি করে রাজনৈতিক ফায়দা তোলার চেষ্টা করছে রাজ্যগুলোর স্থানীয় ও ভারতের জাতীয় পর্যায়ের রাজনৈতিক দলগুলো।

কিছুদিন আগেই ঝাড়খণ্ড বিধানসভা নির্বাচনের আগে কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন বিজেপি সেখানে রাজনৈতিক ফায়দা তুলতে বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী ইস্যু ব্যাপকভাবে প্রচার করেছে। তবে কোনো ফায়দা হয়নি। সেই রেশ কাটতে না কাটতেই এবার বিহারে বিজেপির এক মন্ত্রী বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী ইস্যু তুলেছেন।

২০২৬ সালে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে প্রতিবেশী বাংলাদেশের সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহকে রাজনৈতিক পুঁজি করার চেষ্টা করছে বিজেপি। দলটির স্থানীয় শীর্ষ নেতারা একের পর এক বাংলাদেশ নিয়ে কূটনৈতিক ভব্যতার সীমা পেরিয়ে উসকানিমূলক বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছেন। বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গ বিজেপির সাবেক সভাপতি ও রাজ্য বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর মুখ যেন লাগামছাড়া। একের পর এক বেফাঁস মন্তব্য করে যাচ্ছেন তিনি।

তবে পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতাসীন তৃণমূল কংগ্রেস বিজেপির বিরুদ্ধে বাংলাদেশ ইস্যুকে রাজনৈতিক পুঁজি করার অভিযোগ এনেছে। দলের জাতীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় সরাসরি এই অভিযোগ করেছেন।

সর্বশেষ, পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার অধিবেশনে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাষণে ফের উঠে আসে বাংলাদেশ প্রসঙ্গ। আজ সোমবার মুখ্যমন্ত্রী আরও এক বার স্পষ্ট করে বলেন, প্রতিবেশী দেশে সংখ্যালঘুদের ওপর অত্যাচারের ঘটনায় তিনি উদ্বিগ্ন। একই সঙ্গে সম্প্রীতির বার্তা দিয়ে তিনি বলেছেন, ‘দাঙ্গা হিন্দু করে না, দাঙ্গা মুসলমান করে না। দাঙ্গা করে কিছু সমাজবিরোধী।’

অনেকের মতে, বাংলাদেশের পরিস্থিতিকে সামনে রেখে রাজ্য বিজেপি হিন্দুত্বের রাজনীতিতে ফায়দা লোটার চেষ্টা করছে। রাজ্য বিজেপির সেই কৌশলকে ভোঁতা করে দিতেই বাংলাদেশ নিয়ে ‘কৌশলী’ অবস্থান নিচ্ছেন মমতা। সম্প্রতি বিধানসভায় দাঁড়িয়ে মুখ্যমন্ত্রী বাংলাদেশে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী পাঠানোর জন্য কেন্দ্রকে প্রস্তাব দিয়েছিলেন। তাঁর সেই প্রস্তাব ঘিরে রাজনৈতিক মহলে শোরগোল পড়ে যায়। বিষয়টি নিয়ে মুখ খোলে ‘অসন্তুষ্ট’ বাংলাদেশও।

সোমবার দুপুর বিধানসভার শীতকালীন অধিবেশনে যোগ দেন মুখ্যমন্ত্রী। স্বাস্থ্য সংক্রান্ত একটি প্রশ্নের উত্তর দিতে উঠে মমতা বলেন, “বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর যে হামলা হচ্ছে, তা দুঃখজনক।’ পরে তিনিই আবার সব বিধায়কের উদ্দেশে বলেন, ‘কেউ উসকানিমূলক বক্তৃতা দেবেন না।’

বিধানসভায় পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যে উঠে আসে ‘একটি রাজনৈতিক দলের’ কথা। মমতার অভিযোগ, ‘একটি রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে ফেক (ভুয়া) ভিডিও ছড়ানো হচ্ছে।’ তিনি বলেন ‘যাঁরা ভাবছেন, এই সুযোগে রাজনৈতিক লাভ আছে, তাঁরা জানবেন—আপনাদের ক্ষতি হবে।’ তবে মমতা তাঁর ভাষণে নির্দিষ্ট কোনো রাজনৈতিক দল, ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর নাম করেননি।

কিন্তু বিজেপির নেতাদের বাংলাদেশ ইস্যুতে দেওয়া বক্তব্য এবং ভারত থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বাংলাদেশের সংখ্যালঘু নির্যাতনের বিষয়টিকে অতিরঞ্জিত করে দেখানোর বিষয়টির সঙ্গে মিলিয়ে পাঠ করলে, বুঝতে অসুবিধা হয় না যে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মূলত বিজেপিকেই লক্ষ্য করে এই কথা বলেছেন। এ ছাড়া, পশ্চিমবঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দলের প্রধান প্রতিপক্ষই বিজেপি।

বাংলাদেশ নিয়ে তাঁর দল তৃণমূল কংগ্রেস এবং সরকারের পুরোনো অবস্থানের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে মমতা বলেন, ‘বাংলাদেশের ব্যাপারটা কেন্দ্রীয় সরকার দেখবে। আমরা কোনো পক্ষে নেই। আমরা সব পক্ষে। আজ বিদেশসচিব (পররাষ্ট্রসচিব বাংলাদেশে) যাচ্ছেন। দেখা যাক কী হয়। আমাদের নীতি হলো—আমরা (কেন্দ্রীয় সরকারের) বিদেশনীতি (পররাষ্ট্রনীতি) মেনে চলব।’

সোমবার মুখ্যমন্ত্রী যখন বিধানসভায় ঢুকছেন, তখন সেখানে ছিলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীও। যদিও মুখ্যমন্ত্রীর বাংলাদেশ প্রসঙ্গে বক্তব্যের সময় বিধানসভায় ছিলেন না তিনি।

এর আগে গত সপ্তাহের সোমবার মমতা বিধানসভায় বলেছিলেন, ‘যদি বাংলাদেশে ভারতীয়রা আক্রান্ত হন, তবে আমরা তা সহ্য করব না। আমরা তাঁদের সেখান থেকে ফিরিয়ে আনতে পারি।’ একই সঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমাদের পরিবার, সম্পত্তি এবং প্রিয় মানুষেরা বাংলাদেশে আছেন। ভারত সরকার এই বিষয়ে (বাংলাদেশ) যে অবস্থান নেবে, আমরা তা গ্রহণ করব। কিন্তু বিশ্বের যে কোনো প্রান্তে ধর্মীয় কারণে কেউ অত্যাচারিত হলে আমরা তার নিন্দা জানাই। আমরা এই বিষয়ে ভারত সরকার এবং প্রধানমন্ত্রীকে হস্তক্ষেপ করার আরজি জানাচ্ছি।’

তথ্যসূত্র: আনন্দবাজার, টাইমস অব ইন্ডিয়া ও ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত