Ajker Patrika

বোমায় ছিন্নভিন্ন মায়ের পাশে কাঁদছিল শিশুটি, এক বছর পর মিলিয়ে দিল দুই পরিবারকে

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
মরিয়মের কোলে মোহাম্মদ। ছবি: আল–জাজিরা
মরিয়মের কোলে মোহাম্মদ। ছবি: আল–জাজিরা

বাবার কোলে হাসছে ছোট্ট মোহাম্মদ। প্রায় ১৬ মাস আগে, ইসরায়েলি বোমা হামলায় নিহত মায়ের নিথর দেহের পাশে বসে কাঁদছিল ১৩ মাস বয়সী এই শিশু। আশ্রয় নেওয়া স্কুলের ধ্বংসস্তূপের মধ্যে সেদিন আরও কত মানুষ যে প্রাণ হারিয়েছিল, আহত হয়েছিল তার ইয়ত্তা নেই। সেই ভয়াবহ দিনের বিশৃঙ্খলার মধ্যে, মানুষ দিগ্‌বিদিক পালাচ্ছিল, সেই থেকে হারিয়ে যায় ছোট্ট মোহাম্মদ।

তার বাবা, তারেক আবু জাবাল, এক বছরেরও বেশি সময় ধরে তন্ন তন্ন করে খুঁজেছেন ছেলেকে। অথচ তিনি জানতেনই না, অন্য একজন মানুষ, যিনি একই স্কুলে আশ্রয় নিয়েছিলেন, তিনিও তারেকের খোঁজ করছিলেন!

ছোট্ট অতিথি

রাসেম নাবহান এবং তাঁর পরিবারও বাস্তুচ্যুত হয়ে উত্তর গাজার জাবালিয়া এলাকার আল-রাফেই স্কুলে আশ্রয় নিয়েছিলেন। ২০২৩ সালের ডিসেম্বরের শেষের দিকে ইসরায়েলি বোমার আঘাতে কেঁপে ওঠে স্কুলটি। ৪১ বছর বয়সী রাসেম বলেন, ‘আমরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিলাম, শিশুরা চিৎকার করছিল। কিছুক্ষণ পরই কোয়াডকপ্টার উড়তে শুরু করে এবং সবাইকে অবিলম্বে সরে যাওয়ার নির্দেশ দেয়। চারপাশে তখন মুহুর্মুহু গুলির শব্দ।’

রাসেম তখন তাঁর স্ত্রী ও সাত সন্তানকে নিয়ে অন্য নারী ও শিশুদের সঙ্গে স্কুল থেকে বের হওয়ার প্রস্তুতি নেন। এরপর তিনি বোমা হামলায় বিধ্বস্ত শ্রেণিকক্ষে জ্বলতে থাকা আগুন নেভাতে ছুটে যান। কেউ জীবিত আছে কিনা খোঁজার চেষ্টা করেন।

রাসেম বলেন, ‘দেয়ালগুলোতে রক্তের দাগ। আহত ও নিহতদের মাঝে ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল শরীরের বিভিন্ন অংশ। ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়!’

তিনি বলেন, ‘সেই ভয়াবহ দৃশ্যের মধ্যে আমি একটি শিশুকে চিৎকার করে কাঁদতে দেখলাম। তার পাশে পড়ে ছিল এক নারীর দেহ–মাথা ও পেট ছিন্নভিন্ন, সারা শরীর রক্তে ভেজা। আমার মনে হয় তিনিই ছিলেন শিশুটির মা।’

কোনো কিছু না ভেবে রাসেম শিশুটিকে কোলে তুলে নিয়ে দৌড়াতে শুরু করলেন। ‘শিশুর মুখ লাল হয়ে গিয়েছিল, কান্নায় তার দম প্রায় বন্ধ হয়ে আসছিল।’ বলেন রাসেম।

রাসেম বলেন, ‘আমি আশপাশে থাকা লোকজনকে জিজ্ঞাসা করতে লাগলাম: আপনারা কি এই শিশুকে চেনেন? তার মা মারা গেছে। কিন্তু কেউ চিনতে পারলেন না। এটা অবিশ্বাস্য ছিল... মনে হচ্ছিল যেন কেয়ামতের দিন, সবাই সন্তানদের আঁকড়ে ধরে পালাচ্ছে।’

মোহাম্মদের এখন দুটি পরিবার। ছবি: আল–জাজিরা
মোহাম্মদের এখন দুটি পরিবার। ছবি: আল–জাজিরা

ততক্ষণে ইসরায়েলি ট্যাংক স্কুলটি ঘিরে ফেলেছে, সবাইকে হেঁটে দক্ষিণে যেতে বাধ্য করে তারা। রাসেম শিশুটিকে কোলে নিয়ে হাঁটতে থাকেন। তাঁর স্ত্রী রাস্তার পাশে সন্তানদের নিয়ে অপেক্ষা করছিলেন।

তিনি বলেন, ‘আমি আমার স্ত্রীকে শিশুটি দিলাম এবং বললাম, আমি তাকে স্কুলে তার মৃত মায়ের পাশে পেয়েছি।’

৩৪ বছর বয়সী রাসেমের স্ত্রী ফাওয়াহ নাবহান শিশুটিকে কোলে নিলেন। তাঁদের বড় মেয়েরা তাকে কোলে নেওয়ার জন্য ব্যাকুল হয়ে ওঠে।

ফাওয়াহ বলেন, ‘যখন আমরা এই ছোট্ট অতিথিকে স্বাগত জানালাম, এক মুহূর্তের জন্য ভয় উধাও হয়ে গেল! তার মুখটা ছিল খুবই সুন্দর। আমি দেখার সঙ্গে সঙ্গে ওর প্রতি গভীর টান অনুভব করলাম।’

তাঁরা শিশুটির নাম রাখেন হামুদ, যা মোহাম্মদ ও আহমেদ নামের ছোট রূপ। ফিলিস্তিনে দুটি নামই বেশ জনপ্রিয়। তাঁরা শিশুটিকে নিয়ে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর নেৎসারিম চেকপয়েন্ট পার হয়ে রশিদ স্ট্রিটের দিকে হেঁটে যান।

রাসেম, ফাওয়াহ এবং তাঁদের দুই বড় মেয়ে, ১৯ বছর বয়সী ইসলাম ও ১৮ বছর বয়সী আমিনা পালা করে শিশুটিকে কোলে নেন।

ফাওয়াহ বলেন, ‘সে আমাদের কোলে ঘুমিয়ে পড়ত আবার জেগে উঠত। অন্য শিশুদের মতোই চারপাশে কী ঘটছে সে সম্পর্কে সে সম্পূর্ণ বেখেয়াল।’

পরিবারটি জানত না শিশুটির বয়স কত, তবে তার আকার ও ওজন দেখে তারা অনুমান করেছিলেন, তার বয়স সাত থেকে নয় মাস হবে।

ফাওয়াহ আরও বলেন, ‘আমরা তাকে আগে স্কুলে দেখিনি। তার আসল বয়স বা কখন তার জন্ম হয়েছিল সে সম্পর্কে আমাদের কোনো ধারণা ছিল না।’

পরিবারটি হেঁটে মধ্য গাজার দেইর আল-বালাহে পৌঁছায়, সেখানে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নেয় এবং পরে খান ইউনিসের দক্ষিণে যায়। সেখানে আশ্রয় শিবির বানানো আরেকটি স্কুল খালি আছে বলে তাঁরা শুনেছিলেন।

ফাওয়াহ বলেন, ‘ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও, আমার মনে হয়েছিল তাঁবুর চেয়ে স্কুল ভালো। অন্তত আমাদের মাথার ওপর একটি কংক্রিটের ছাদ তো থাকবে!’

এই পরিবারের বাস্তুচ্যুতির গল্প দীর্ঘ এবং জটিল। তাঁরা স্কুল থেকে উদ্বাস্তু শিবির, খোলা আকাশের নিচে ঘুমানো থেকে শুরু করে মাসের পর মাস তাঁবুতে কাটিয়েছেন। এসব কিছুর মধ্যে, রাসেম ও ফাওয়াহ শিশুটিকে উষ্ণতা ও আনন্দের উৎস হিসেবে দেখেছিলেন।

রাসেম স্মরণ করেন, ‘প্রথমদিকে সে চুপচাপ থাকত, কখনোই হাসত না, আমরা যতই চেষ্টা করি না কেন। প্রায় ৫০ দিন সে এমনই ছিল–যেন সে মাকে খুঁজছে এবং ভাবছে আমরা কারা। কিন্তু ধীরে ধীরে সে স্বাভাবিক হতে শুরু করে। সে আমাদের প্রতি আকৃষ্ট হয়। আমরাও তাকে ভালোবেসে ফেলি।’

রাসেম পরিবারের বাস্তুচ্যুতির পুরো সময় জুড়ে, ফাওয়াহ, ইসলাম ও আমিনা শিশুটির যত্ন নেন। কিন্তু যখন তাকে খাওয়ানোর সময় আসত, তখন ফাওয়াহ নিজেই তা করতেন।

তবে ইসরায়েলের গাজায় চালানো নির্বিচার হামলার মধ্যে একটি শিশুর যত্ন নেওয়া অনেক বড় আর্থিক চাপ। কারণ ফর্মুলা দুধ, ডায়াপার এবং পুষ্টিকর খাবার পাওয়াই কঠিন। পাওয়া গেলেও দাম আকাশছোঁয়া।

ফাওয়াহ বলেন, ‘আমরা যখন দক্ষিণে পৌঁছালাম, তখন ফর্মুলা ও একটি প্যাসিফায়ার কিনেছিলাম, কিন্তু সে মুখে নেয়নি। আমার মনে হয় তার মা তাকে বুকের দুধ খাওয়াতেন। একদিক থেকে, এটা স্বস্তির ছিল কারণ ফর্মুলা খুব দামি ছিল। পরিবর্তে, আমি তাকে ডাল, মটরশুঁটি, ভাত দিতাম। আমরা যা খেতাম, সেও তাই খেত।;

‘সে কলা খুব ভালোবাসত। আমরা মাত্র দুটি কিনতে পারতাম–একটি তার জন্য এবং একটি আমার চার বছর বয়সী ছেলে আবদুল্লাহর জন্য।’ যোগ করেন ফাওয়াহ।

ডায়াপার রেশনিং করতে হতো কারণ দাম আকাশছোঁয়া। প্রতিটি ডায়াপার ১০ শেকেল (প্রায় ২.৭০ ডলার) পর্যন্ত পৌঁছেছিল। ফাওয়াহ ব্যাখ্যা করেন, ‘আমি রাতে তাকে একটি ডায়াপার পরিয়ে দিতাম। দিনের বেলা সুতির কাপড় ব্যবহার করতাম। সেটি ঘন ঘন পরিবর্তন করতাম।’

আপন ছোট ভাইয়ের মতো কোলেপিঠে করে রেখেছেন ইসলাম। ছবি: আল–জাজিরা
আপন ছোট ভাইয়ের মতো কোলেপিঠে করে রেখেছেন ইসলাম। ছবি: আল–জাজিরা

আশীর্বাদ

পরিবারটি যখন এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যাচ্ছিল, তখন শিশুটি সবার কাছে সুপরিচিত ও আদরের পাত্র হয়ে ওঠে। রাসেম বলেন, শিশুটি তাঁর পরিবারের জন্য আশীর্বাদ বয়ে আনে।

হামুদ নাবহানদের মতো দেখতে ছিল না। লোকেরা রাসেম ও ফাওয়াহকে শিশুটি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করত। যখন তাঁরা তার গল্প শুনতেন, তাঁদের খুব বিগলিত ও আপ্লুত হতেন। শিশুটিকে সবাই সাধ্যমতো ছোটখাটো উপহার দিতেন।

ফাওয়াহ হাসতে হাসতে বলেন, ‘আমাদের ক্যাম্পের প্রতিবেশীরা শুধু তার জন্য খাবারের থালা পাঠাত। তারা বলত, দেখবেন, সে যেন অবশ্যই এটা খায়।’

ফাওয়াহ শিশুটির দিকে তাকিয়ে নিচু স্বরে বলেন, ‘সে আমার স্বামীকে বাবা এবং আমাকে মা ডাকে। সে আমার কোলে ঘুমায়, যখনই আরামের প্রয়োজন হয় তখনই সরাসরি আমার কাছে ছুটে আসে।’

তিনি বলেন, ‘আমার চার বছর বয়সী আবদুল্লাহ যখনই দেখত আমি বাচ্চাটির দিকে বেশি মনোযোগ দিচ্ছি, তখনই সে খুব ঈর্ষান্বিত হয়ে কাঁদত!’

সব মিলিয়ে, দম্পতির অন্য সন্তানেরা–মোহাম্মদ (২০), ইসলাম (১৯), আমিনা (১৮), মারিয়াম (১২), নূর আল-হুদা (১০), মুস্তাফা (৯) এবং আবদুল্লাহ (৪) –শিশুটিকে তাদের নিজেদের একজন হিসেবে গ্রহণ করেছিল।

বিভিন্ন সংস্থা, এতিম স্পনসরশিপ প্রোগ্রাম এবং এমনকি দত্তক নিতে ইচ্ছুক অন্যান্য পরিবারের কাছ থেকে অসংখ্য প্রস্তাব আসা সত্ত্বেও, রাসেম সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেছিলেন।

রাসেম বলেন, ‘সে আমার আট নম্বর সন্তান। আমি তাকে গভীরভাবে ভালোবাসি। আমি তাকে আমার কাছ থেকে কেউ কেড়ে নেবে এটা ভাবতেই পারি না। আমি সব সময় সরাসরি বলেছি, একমাত্র তখনই আমি তাকে যেতে দেব যদি আমি তার আসল পরিবারকে খুঁজে পাই।’

এরপর, চাপা স্বরে রাসেম বলেন, ‘কিন্তু আমার অন্তরে, আমি সব দোয়া করতাম যেন আমি তাদের খুঁজে না পাই! আমি তার পরিবারের খোঁজ করা বন্ধ করে দিয়েছিলাম। আমরা তার প্রতি খুব বেশি অনুরক্ত হয়ে পড়েছিলাম।’

এক পিতার জন্য অনুসন্ধান

যখন রাসেম কথা বলছিলেন, তখন ৩৫ বছর বয়সী মোহাম্মদের বাবা তারেক পাশে বসে তাঁর ছোট ছেলের দিকে তাকিয়ে হাসছিলেন। তাঁর তিন সন্তান–ওমর (১৪), তোলায় (৯) এবং মোহাম্মদ (বর্তমানে ২৬ মাস)। নিখোঁজ সন্তানের জন্য হন্যে হয়ে ঘুরেছেন তারেক।

তারেক স্মরণ করেন, ‘যেদিন আল-রাফেই স্কুলে বোমা হামলা হয়, সেদিন আমার স্ত্রী ও তিন সন্তান একটি শ্রেণিকক্ষে ছিল। বিমান হামলার সময় আমি স্কুলের মাঠে ছিলাম। আমি চিৎকার করতে করতে তাদের দিকে ছুটে যাই।’

ইসরায়েলি সেনাবাহিনী আল-রাফেই ও পাশের স্কুলটিতে বোমা বর্ষণ করেছিল। ‘সেই হামলায় আমার স্ত্রী, আমার ভাগনে এবং আরও ছয়জন নিহত হয়–চোখের পলকে আটটি প্রাণ ঝরে যায়, বলেন তারেক।

তিনি বলেন, ‘যখন আমি আমাদের শ্রেণিকক্ষটিতে পৌঁছালাম, তখন আমি ওমর ও তোলায়কে আহত অবস্থায় দেখলাম। ওমরের পিঠে স্প্লিন্টার লেগেছিল এবং আমার মেয়ের পেটে আঘাত লেগেছিল। তারপর আমি আমার স্ত্রীকে দেখলাম... তার শরীর ছিন্নভিন্ন হয়ে গিয়েছিল।’

বলতে বলতে তারেকের কণ্ঠ ধরে আসে। কোনো রকম বলেন, ‘আমি ভেঙে পড়ি। কিন্তু কোনোমতে নিজেকে সামলে নিয়ে অন্যদের সঙ্গে তার দেহ সরিয়ে নিতে সাহায্য করি।’

তারেকের স্ত্রী, ইমান আবু জাবালের বয়স ছিল ৩৩ বছর। আর তোলায় তিন মাস ধরে পেটে স্প্লিন্টার বহন করেছিল।

তারেক বলেন, ‘শোক, আহত সন্তানদের জন্য ভয়, চিৎকার, তাড়াহুড়ো করে সরিয়ে নেওয়া, মাথার ওপর চক্কর দেওয়া সেনাবাহিনীর ড্রোন... আতঙ্কিত হয়ে, আমি যখন আমার ভাইবোনদের বের করছিলাম তখন মোহাম্মদকে সঙ্গে নিতে ভুলে গিয়েছিলাম।’

যখন তিনি মোহাম্মদের জন্য ফিরে যান, তখন আর তাকে খুঁজে পাননি। তিনি বলেন, ‘আমি সবাইকে জিজ্ঞাসা করতে শুরু করলাম। কেউ কেউ আমাকে বলেছিল সে মারা গেছে। অন্যরা বলেছিল কেউ তাকে নিয়ে গেছে। গল্পগুলো পাল্টাতে থাকে। আমি বিধ্বস্ত হয়ে পড়েছিলাম। আমি ভিড়ের মধ্যে খুঁজেছিলাম, কিন্তু সবাই দৌড়াচ্ছিল, চিৎকার করছিল, তাদের সন্তানদের ধরে পালাচ্ছিল।’

তারেক কয়েকজন লোকের সঙ্গে স্কুলে ফিরে যান বোমা হামলায় নিহতদের কবর দেওয়ার জন্য। তারেক স্মরণ করেন, ‘আমরা আমার স্ত্রীর দেহ একটি চাদরে মুড়ে তিন ঘণ্টা ধরে একটি শ্রেণিকক্ষে অপেক্ষা করেছিলাম। উঠানে তাকে কবর দেওয়ার জন্য বাইরে যেতে পারিনি। বোমাবর্ষণ ও গুলিবর্ষণ অবিরাম ছিল, কিন্তু আমি যেভাবেই হোক আমার স্ত্রীকে কবর দিতে চেয়েছিলাম।’

যারা স্কুলে ছিলেন তাদের মধ্যে একজন সার্জন ছিলেন। তিনি তারেকের সন্তানদেরসহ আহতদের সাধ্যমতো চিকিৎসা করেছিলেন। তারেক বলেন, ‘আমার ভাগনের প্রচুর রক্তক্ষরণ হচ্ছিল। একজন যুবক তাকে স্কুল থেকে বের করে জাবালিয়ার আল-আওদা হাসপাতালে হেঁটে যেতে সাহায্য করেছিল, কিন্তু সে গুরুতর অবস্থায় সেখানে পৌঁছে মারা যায়।’

তারেক এবং শিশুরা রাতে স্কুলে অন্যদের সঙ্গে ছিলেন। মূলত প্রিয়জনদের কবর দেওয়ার জন্য লোকজন ঝুঁকি নিয়ে সেখানে ছিলেন। সকালে তাঁরা স্কুলের দেয়ালের একটি ফাঁক দিয়ে লুকিয়ে বেরিয়ে যান।

বাচ্চাদের নামিয়ে দেওয়ার পর, তারেক সারা দিন জাবালিয়ার হাসপাতালগুলোতে মোহাম্মদের খোঁজ করেন। এরপর বিভিন্ন জায়গায় যেখানে বাস্তুচ্যুত লোকেরা জড়ো হয়েছিল সেখানে খোঁজ করেন। কেউই খোঁজ দিতে পারেনি। কিন্তু তারেককে তাঁর অন্যান্য সন্তানদের দিকেও মনোযোগ দিতে হয়েছিল। একে তো সন্তানেরা চোখের সামনে মায়ের মৃত্যু দেখে ভয়ানক মানসিক আঘাত পেয়েছে, তার ওপর খাবার, ওষুধ ও যত্নের প্রয়োজন ছিল তাদের।

২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারির শেষের দিকে, উত্তর গাজা দুর্ভিক্ষের কবলে পড়ে, তাই তারেক শিশুদের তীব্র ক্ষুধা থেকে বাঁচাতে দক্ষিণে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। রাফাহে পৌঁছানোর পর তারেক আবার মোহাম্মদের খোঁজ শুরু করেন। আত্মীয়, স্বজন, পরিচিতজন, প্রতিবেশী, স্কুল, আশ্রয়শিবির তন্ন তন্ন করে খোঁজেন তিনি।

২৭ জানুয়ারি, যখন বাস্তুচ্যুত পরিবারগুলোকে উত্তর গাজায় ফিরে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়, তখন আবু জাবাল এবং নাবহান পরিবার হেঁটে জাবালিয়ায় ফিরে আসে।

তারেক সকাল ৮টার মধ্যে জাবালিয়ায় তাঁদের বাড়ির ধ্বংসস্তূপের ওপর দাঁড়িয়ে ছিলাম। তাঁরা ভোর ৪টায় রওনা হয়েছিলেন। আর রাসেম ও ফাওয়াহর পরিবার একটু পরে রওনা হয়। পথে তাঁদের একটি সাক্ষাৎকারের জন্য থামানো হয়। সাংবাদিক তাঁকে শিশুটি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেন। রাসেম বিস্তারিত বলেন। ওই সাংবাদিকই বিষয়টি সম্প্রচার করেন। পরিবারটি অবশেষে জাবালিয়ায় রাসেমের বাবা-মায়ের বাড়িতে পৌঁছায়।

পরের দিন সকালে, তারেক টিভি সাক্ষাৎকারের ভিডিওটি দেখেন। তিনি বলেন, ‘ওর আচার আচরণ একটুও বদলায়নি, যদিও একটু বড় হয়েছে। আমি ধ্বংসস্তূপের ওপর চিৎকার করতে শুরু করলাম: আমার ছেলে বেঁচে আছে! আমার ছেলে মোহাম্মদ বেঁচে আছে!’

পরিবারের লোকজন ও প্রতিবেশীরা ছুটে এসে জিজ্ঞেস করে কী হয়েছে। তখন সবাই মিলে টিভি সাক্ষাৎকারটি দেখেন। পরে খোঁজখবর নিয়ে, তারেক জানতে পারেন রাসেমের পরিবার কোথায় আছে। দ্রুত সেখানে ছুটে যান।

তারেক বলেন, ‘আমি রাসেমকে পরিচয় দিলাম। তিনি সঙ্গে সঙ্গেই আমাকে চিনতে পারলেন। মোহাম্মদ আমাকে চিনতে পারেনি। সে কেঁদে দিয়েছিল।’

তখন নাবহান পরিবার বেশ দ্বিধায় পড়ে গিয়েছিল। হামুদ, যার নাম তারা এখন জানতে পারছে মোহাম্মদ, তার পরিবারকে খুঁজে পাওয়ায় তারা খুশি। কিন্তু পরিবারের সদস্য হয়ে ওঠা শিশুটি চলে যাবে এই ভেবে তারা কষ্ট পাচ্ছিল।

রাসেম বলেন, সৌভাগ্যবশত, মোহাম্মদের পরিবার ফিরে পেল। ফাওয়াহর চোখে তখনো ছলছল করছিল। ফাওয়াহ বলেন, ‘হামুদের চলে যাওয়ার দুঃখে আমি সারা রাত কেঁদেছি।’

হামুদ ফাওয়াহকে ‘মা’ বলে ডাকে। হামুদকে কাছে টেনে নিয়ে তিনি বলেন, ‘আমার মেয়েরা পুরো সপ্তাহ ধরে কেঁদেছে। বাড়িটা যেন শোকের বাড়িতে পরিণত হয়েছিল। হামুদ আমাদের পরিবারের অংশ হয়ে গিয়েছিল।’

ফাওয়াহ বলেন, ‘আমি আমার স্বামী ও তারেককে বলেছি, হামুদকে যেন মাঝে মাঝে আমাদের কাছে আনা হয়। সে আমাদের ছেলের মতো।’ ফাওয়াহ হেসে বলেন, ‘সৌভাগ্যবশত, তারা কাছেই থাকে, এবং আমার বাচ্চারা সব সময় তাকে আনতে যায়।’

তারেক বলেন, ‘আমি তাদের কাছে কৃতজ্ঞ। তারা তাকে তাদের নিজের সন্তানের মতো লালন-পালন করেছে... সে এমন একটি পরিবারের সঙ্গে ছিল যারা তাকে সেই মায়ের ভালোবাসা ও যত্ন দিয়েছে যাকে সে হারিয়েছে।’ তারেক আফসোস করেন বলেন, ‘দেখেন, মোহাম্মদ যখন রাসেম, তাঁর স্ত্রী ও তাঁদের পরিবারের লোকজনকে দেখে, সে আমাকে একদম ভুলে যায়!’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ভোটের জোট: আসন সমঝোতা শেষ পর্যায়ে

১১৯ আসনে প্রার্থী ঘোষণা জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্টের, মনোনয়ন পেলেন যাঁরা

উপদেষ্টা পরিষদে রদবদল হচ্ছে, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা নিয়ে গুঞ্জন

চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩২-এর বেশি বহাল থাকছে যেসব প্রতিষ্ঠানে

দিল্লিতে ব্যারিকেড ভেঙে বাংলাদেশ হাইকমিশনে প্রবেশের চেষ্টা হিন্দুত্ববাদীদের, উত্তেজনা

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

নাগরিকত্বের জন্য বসবাসের শর্ত দ্বিগুণ করল জাপান

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

জাপানে নাগরিকত্ব পাওয়ার ক্ষেত্রে বিদেশিদের জন্য বসবাসের ন্যূনতম সময় দ্বিগুণ করার প্রস্তাব দিয়েছে সরকার। নতুন প্রস্তাব অনুযায়ী, জাপানের নাগরিকত্ব পেতে হলে বিদেশিদের দেশটিতে অন্তত ১০ বছর বসবাস করতে হবে। বর্তমানে এই মেয়াদ পাঁচ বছর। একই সঙ্গে নাগরিকত্ব ও স্থায়ী বসবাসের ক্ষেত্রে ভাষা দক্ষতা এবং ভালো আচরণকে বাধ্যতামূলক শর্ত হিসেবে যুক্ত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

মঙ্গলবার (২৩ ডিসেম্বর) যুক্তরাজ্য-ভিত্তিক ইনডিপেনডেন্ট জানিয়েছে, আগামী বছরের মধ্যেই জাপানের অভিবাসন নীতির বড় ধরনের সংস্কার কার্যকর হতে পারে। দেশটির ক্ষমতাসীন জোটের শরিক দল ‘নিপ্পন ইশিন’ বিদ্যমান নাগরিকত্ব নীতিকে ‘অতিরিক্ত শিথিল’ আখ্যা দেওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী সানায়ে তাকাইচি আনুষ্ঠানিকভাবে বিষয়টি পর্যালোচনার নির্দেশ দেন।

গত ৪ ডিসেম্বর তাকাইচির দল লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির এক বৈঠকে উত্থাপিত প্রস্তাবে বলা হয়েছে—নাগরিকত্ব অনুমোদন শুধু বসবাসের সময়ের ওপর নির্ভর করবে না; আবেদনকারীর আচরণ, জীবিকা নির্বাহের সক্ষমতা এবং আয়ের স্থায়িত্বও বিবেচনায় নেওয়া হবে। এ ক্ষেত্রে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার ব্যাপক ক্ষমতা থাকবে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের হাতে।

এর আগে গত ১৭ সেপ্টেম্বর ‘নিপ্পন ইশিন’ দলের পক্ষ থেকে বিচার মন্ত্রণালয়ে বিদ্যমান নীতির তুলনায় আরও কঠোর পদক্ষেপের প্রস্তাব দেওয়া হয়। এই প্রস্তাবে বিদেশি বাসিন্দার সংখ্যা সীমিত করা এবং কিছু ক্ষেত্রে নাগরিকত্ব বাতিলের সুযোগ রাখার কথাও বলা হয়। তবে আরও কট্টর অবস্থান নেয় অতি ডানপন্থী সানসেইতো পার্টি। তারা ‘কিকাজিন’ বা নাগরিকত্ব পাওয়া বিদেশিদের নির্বাচনে প্রার্থী হতে না দেওয়ার ঘোষণা দেয়। সে সময় তারা অভিযোগ করে, সরকার জাতিগত জাপানিদের চেয়ে বিদেশিদের অগ্রাধিকার দিচ্ছে।

তবে প্রস্তাবিত নিয়মে কিছু ব্যতিক্রম রাখার কথাও বলা হয়েছে। যেমন—জাপানে বহু বছর ধরে খেলাধুলায় প্রতিনিধিত্ব করা ক্রীড়াবিদেরা ১০ বছরের শর্ত পূরণ না করলেও নাগরিকত্ব পেতে পারেন। বিচার মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে ১২ হাজার ২৪৮টি নাগরিকত্ব আবেদন জমা পড়ে, যার মধ্যে ৮ হাজার ৮৬৩টি অনুমোদিত হয়।

এ ছাড়া স্থায়ী বসবাসের আবেদনকারীদের জন্য জাপানি ভাষা ও নাগরিক শিক্ষা বাধ্যতামূলক করার বিষয়টিও বিবেচনায় রয়েছে। এই প্রস্তাব ঘিরে দেশটির অনলাইনে তীব্র বিতর্ক শুরু হয়েছে। এই নীতির সমর্থকদের মতে, দীর্ঘমেয়াদি বাসিন্দাদের জন্য এসব শর্ত যুক্তিসংগত। তবে সমালোচকেরা বলছেন, শ্রম ঘাটতিতে ভোগা জাপানে অভিবাসন নিরুৎসাহিত করতে রক্ষণশীল সরকার নতুন বাধা তৈরি করছে।

আসাহি শিম্বুন জানিয়েছে, প্রস্তাবিত ‘সামাজিক অন্তর্ভুক্তি কর্মসূচির’ লক্ষ্য হলো বিদেশিদের ভাষাজ্ঞান ও মৌলিক সামাজিক ধারণা জোরদার করা, যাতে স্থানীয় জনগোষ্ঠীর সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝি কমে এবং বাড়তে থাকা বিদেশি-বিরোধী মনোভাব নিয়ন্ত্রণে আসে। এই উদ্যোগের আওতায় জাপানি ভাষায় দুর্বল শিশুদের স্কুলে ভর্তি হওয়ার আগে সহায়তা দেওয়ার ব্যবস্থাও থাকবে।

২০১৫ সালে জাপানে বিদেশি বাসিন্দার সংখ্যা ছিল প্রায় ২২ লাখ ৩০ হাজার। ২০২৫ সালের জুনে তা বেড়ে দাঁড়ায় প্রায় ৩৯ লাখ ৫০ হাজারে, যা দেশটির মোট জনসংখ্যার প্রায় ৩ শতাংশ। এর মধ্যে প্রায় ৯ লাখ ৩০ হাজার বিদেশি স্থায়ী বাসিন্দার মর্যাদা পেয়েছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ভোটের জোট: আসন সমঝোতা শেষ পর্যায়ে

১১৯ আসনে প্রার্থী ঘোষণা জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্টের, মনোনয়ন পেলেন যাঁরা

উপদেষ্টা পরিষদে রদবদল হচ্ছে, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা নিয়ে গুঞ্জন

চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩২-এর বেশি বহাল থাকছে যেসব প্রতিষ্ঠানে

দিল্লিতে ব্যারিকেড ভেঙে বাংলাদেশ হাইকমিশনে প্রবেশের চেষ্টা হিন্দুত্ববাদীদের, উত্তেজনা

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

সন্তানের অভিভাবকত্ব নিয়ে আইনি লড়াইয়ে পরাজয়, দুই শিশুকে বিষ খাইয়ে বাবা-দাদির আত্মহত্যা

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৭: ৪৫
দুই শিশুকে নিজের কাছে রাখতে না পারার যন্ত্রণা সইতে পারেননি বাবা ও দাদি। ছবি: সংগৃহীত
দুই শিশুকে নিজের কাছে রাখতে না পারার যন্ত্রণা সইতে পারেননি বাবা ও দাদি। ছবি: সংগৃহীত

ভারতের কেরালা রাজ্যে সন্তানদের নিজের কাছে রাখা নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর আইনি লড়াইয়ের এক মর্মান্তিক পরিণতি ঘটেছে। আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী সন্তানদের মায়ের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার ঠিক কয়েক ঘণ্টা আগে দুই শিশুসন্তানকে বিষ খাইয়ে হত্যা করে নিজেরাও আত্মঘাতী হয়েছেন বাবা ও দাদি। কেরালার কান্নুর জেলার পায়্যানুরের রামান্থালিতে এ ঘটনা ঘটে।

তদন্তকারী কর্মকর্তাদের প্রাথমিক তথ্যের বরাত দিয়ে এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অভিযুক্ত কালাধরন এবং তাঁর মা উষা দুই শিশুকে দুধের সঙ্গে কীটনাশক মিশিয়ে খাইয়েছিলেন। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে একটি দুধের বোতল এবং কীটনাশকের খালি শিশি উদ্ধার করেছে। ধারণা করা হচ্ছে, সন্তানদের মৃত্যু নিশ্চিত করার পর কালাধরন ও উষা একই বিষ পান করে আত্মহত্যার পথ বেছে নেন। গতকাল সোমবার সকালে প্রতিবেশীরা দীর্ঘক্ষণ ঘর থেকে কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে পুলিশে খবর দিলে এই আত্মহত্যার বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে।

কালাধরন এবং তাঁর স্ত্রী নয়নতারা দীর্ঘদিন ধরে দাম্পত্য কলহের জেরে আলাদা বসবাস করছিলেন। তাঁদের দুই শিশুসন্তান কালাধরন ও তাঁর মা উষার কাছেই ছিল। সন্তানদের নিজের হেফাজতে পেতে নয়নতারা আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিলেন। দীর্ঘ আইনি প্রক্রিয়া শেষে আদালত নয়নতারার পক্ষে রায় দেন এবং সোমবারের মধ্যে সন্তানদের তাঁর কাছে হস্তান্তরের সময়সীমা বেঁধে দেন।

পুলিশ জানিয়েছে, গত রোববার রাতেই স্থানীয় থানা থেকে কালাধরনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছিল যাতে সোমবার সকালে কোনো ঝামেলা ছাড়াই হস্তান্তর প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা যায়। কিন্তু সন্তানদের মায়ের হাতে তুলে দেওয়ার বিষয়টি মেনে নিতে পারেননি কালাধরন ও তাঁর মা।

ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ একটি সুইসাইড নোট উদ্ধার করেছে। সেখানে সন্তানদের বিচ্ছেদ সহ্য করতে না পারা এবং আদালতের আদেশের প্রতি তাঁদের ক্ষোভ ও মানসিক যন্ত্রণার কথা উল্লেখ রয়েছে বলে জানা গেছে। পুলিশ বর্তমানে এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে একটি ‘অস্বাভাবিক মৃত্যু’র মামলা করেছে। কান্নুর জেলার পুলিশ সুপার বলেন, ‘এটি একটি অত্যন্ত পরিকল্পিত এবং আবেগতাড়িত হত্যাকাণ্ড। আইনি নির্দেশ অমান্য করার চরম পথ বেছে নিয়েছেন তাঁরা।’

পায়্যানুর এলাকায় এ ঘটনার পর থেকে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। প্রতিবেশীদের ভাষ্যমতে, কালাধরন সন্তানদের অত্যন্ত ভালোবাসতেন, কিন্তু সেই ভালোবাসার এমন নৃশংস রূপ কেউ কল্পনাও করতে পারেনি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও এ ঘটনা নিয়ে নিন্দার ঝড় উঠেছে। অনেকে বলছেন, বড়দের দ্বন্দ্বে এভাবে নিরপরাধ শিশুদের প্রাণ যাওয়া কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।

পুলিশ শিশুদের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য পাঠিয়েছে এবং পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখতে একটি বিশেষ তদন্ত দল গঠন করা হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ভোটের জোট: আসন সমঝোতা শেষ পর্যায়ে

১১৯ আসনে প্রার্থী ঘোষণা জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্টের, মনোনয়ন পেলেন যাঁরা

উপদেষ্টা পরিষদে রদবদল হচ্ছে, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা নিয়ে গুঞ্জন

চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩২-এর বেশি বহাল থাকছে যেসব প্রতিষ্ঠানে

দিল্লিতে ব্যারিকেড ভেঙে বাংলাদেশ হাইকমিশনে প্রবেশের চেষ্টা হিন্দুত্ববাদীদের, উত্তেজনা

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ইউক্রেন যুদ্ধ অবসানের আলোচনা প্রকৃত ফলাফলের খুব কাছাকাছি: জেলেনস্কি

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৮: ১৩
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। ছবি: এএফপি
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। ছবি: এএফপি

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি জানিয়েছেন, রাশিয়ার সঙ্গে প্রায় চার বছর ধরে চলা যুদ্ধের অবসান ঘটাতে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় দেশগুলোর সঙ্গে চলমান আলোচনা ‘প্রকৃত ফলাফলের খুব কাছাকাছি’ পৌঁছে গেছে। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

ইউক্রেন সরকারের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা রুস্তম উমেরভের নেতৃত্বে ইউক্রেনীয় আলোচক দল ও ইউরোপীয় প্রতিনিধিরা মার্কিন প্রতিনিধিদের সঙ্গে ধারাবাহিক বৈঠক করে যাচ্ছেন, যার মধ্যে সাম্প্রতিক দিনগুলোতে ফ্লোরিডায় অনুষ্ঠিত আলোচনাও অন্তর্ভুক্ত। অন্যদিকে, রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বিনিয়োগবিষয়ক দূত ও আলোচক কিরিল দিমিত্রিভও ফ্লোরিডায় মার্কিন কর্মকর্তাদের সঙ্গে পৃথকভাবে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন।

ইউক্রেন ও রাশিয়া—উভয় দেশের কর্মকর্তারাই জানিয়েছেন, আলোচনার ফলাফল সম্পর্কে প্রতিবেদন পেশ করতে তাঁদের প্রতিনিধিদল নিজ দেশে ফিরে যাচ্ছে। ইউক্রেনীয় কূটনীতিকদের এক সমাবেশে জেলেনস্কি বলেন, ‘সবকিছুই বেশ সম্মানজনক মনে হচ্ছে... এবং এখানে গুরুত্বপূর্ণ হলো, এটি আমাদের (ইউক্রেন) ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র—উভয় পক্ষেরই কাজ। এটি ইঙ্গিত দেয় যে, আমরা একটি প্রকৃত ফলাফলের খুব কাছাকাছি রয়েছি।’

জেলেনস্কি আরও জানান, আলোচকেরা মার্কিন প্রতিনিধিদের প্রস্তাবিত ২০ দফার একটি পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছেন। কয়েক সপ্তাহ ধরে এটি নিয়ে আলোচনা চলছে। এর আগে প্রাথমিক খসড়াটি রাশিয়ার দিকে বেশি ঝুঁকে আছে—এমন সমালোচনা করে তা প্রত্যাখ্যান করেছিল ইউক্রেনীয় ও ইউরোপীয়রা। তিনি বলেন, এর সবকিছু আদর্শিক না হলেও একটি পরিকল্পনা অন্তত আছে।

লড়াই থামার পর ভবিষ্যতে রাশিয়ার সম্ভাব্য সামরিক তৎপরতা রুখতে ইউক্রেন নিরাপত্তা গ্যারান্টি চেয়ে আসছে এবং দেশটির অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের পরিকল্পনা নিয়েও আলোচনা হয়েছে। জেলেনস্কি বলেন, ‘সব নথিপত্রের মৌলিক কাঠামো তৈরি, এটি খুবই প্রাথমিক বিষয়। এমন কিছু বিষয় আছে, যেগুলোর জন্য আমরা প্রস্তুত নই। আবার আমি নিশ্চিত যে, এমন কিছু বিষয়ও আছে, যার জন্য রুশরা প্রস্তুত নয়।’

ফ্লোরিডার এই আলোচনায় মার্কিন দলের নেতৃত্বে ছিলেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ ও তাঁর সাবেক জামাতা জ্যারেড কুশনার। পরে রাতে দেওয়া এক ভিডিওবার্তায় জেলেনস্কি বলেন, এখন মূল বিষয় হলো, এটা নিশ্চিত করা যে, যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়ার কাছ থেকে কোনো সাড়া পায় কি না—অর্থাৎ দেশটি আগ্রাসন বাদ দিয়ে অন্য কোনো বিষয়ে মনোনিবেশ করতে সত্যিই প্রস্তুত কি না।

জেলেনস্কি আরও উল্লেখ করেন, মস্কোর যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার সক্ষমতা কমিয়ে আনতে ক্রেমলিনের ওপর ক্রমাগত চাপ বজায় রাখা অত্যন্ত জরুরি। তিনি বলেন, রুশ তেলের দাম কমানো, কঠোর বৈশ্বিক নিষেধাজ্ঞা ও অন্যান্য চাপ অব্যাহত রাখাই কেবল একজন জেদি মানুষকে রাজি করাতে পারে। রাশিয়ার যুদ্ধযন্ত্রের জন্য বরাদ্দ অর্থ কমিয়ে আনতে এ বছর ইতিমধ্যে অনেক কিছু করা হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ভোটের জোট: আসন সমঝোতা শেষ পর্যায়ে

১১৯ আসনে প্রার্থী ঘোষণা জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্টের, মনোনয়ন পেলেন যাঁরা

উপদেষ্টা পরিষদে রদবদল হচ্ছে, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা নিয়ে গুঞ্জন

চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩২-এর বেশি বহাল থাকছে যেসব প্রতিষ্ঠানে

দিল্লিতে ব্যারিকেড ভেঙে বাংলাদেশ হাইকমিশনে প্রবেশের চেষ্টা হিন্দুত্ববাদীদের, উত্তেজনা

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ভারতে নারী সরকারি কর্মকর্তাকে ‘রিল তারকা’ বলায় ৪ কলেজশিক্ষার্থী আটক

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৭: ২৭
রাজস্থানের বারমের জেলার জেলা কালেক্টর টিনা দাবি। ছবি: ফেসবুক থেকে নেওয়া
রাজস্থানের বারমের জেলার জেলা কালেক্টর টিনা দাবি। ছবি: ফেসবুক থেকে নেওয়া

ভারতে এক নারী সরকারি কর্মকর্তাকে ‘রিল তারকা’ বলে মন্তব্য করায় চার কলেজশিক্ষার্থীকে আটকের অভিযোগ উঠেছে। ওই নারী কর্মকর্তা হলেন রাজস্থানের বারমেরের জেলা কালেক্টর টিনা দাবি। ২২ বছর বয়সে প্রথম চেষ্টায়ই ইউপিএসসি সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে নজির স্থাপন করেছেন এই আলোচিত ভারতীয় প্রশাসনিক কর্মকর্তা (আইএএস)।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির প্রতিবেদনে জানা যায়, গত শনিবার বারমেরের মহারানা ভূপাল গার্লস কলেজের বাইরে পরীক্ষার ফি বাড়ানোর প্রতিবাদে বিক্ষোভ করছিলেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় বিষয়টি নিয়ে জেলা প্রশাসনের কাছে দাবি জানাতে জেলা কালেক্টরের সঙ্গে দেখা করতে চেয়েছিলেন তাঁরা।

শিক্ষার্থীদের দাবি, এক কর্মকর্তা তাঁদের উদ্দেশে বলেন, টিনা দাবি তাঁদের ‘রোল মডেল’। ওই কর্মকর্তার বক্তব্যে দ্বিমত পোষণ করেন বিজেপি–সমর্থিত ছাত্রসংগঠন অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদ (এবিভিপি)–এর সঙ্গে যুক্ত কয়েকজন শিক্ষার্থী। এ সময় পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে।

শিক্ষার্থীরা বলেন, ‘কালেক্টর কোনো রোল মডেল নন। তিনি যদি রোল মডেল হতেন, তাহলে শিক্ষার্থীদের দাবি শুনতে এখানে আসতেন। তিনি একজন রিল স্টার, সব জায়গায় গিয়ে রিল বানান। কিন্তু আমাদের সমস্যার দিকে কোনো নজর দেন না।’

শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন, তাঁদের অবস্থান কর্মসূচি শেষ হওয়ার পর পুলিশ তাঁদের আটক করে। এর প্রতিবাদে অনেক শিক্ষার্থী থানার সামনে জড়ো হন। আটক শিক্ষার্থীদের মুক্তির দাবি জানান তাঁরা।

তবে জ্যেষ্ঠ পুলিশ কর্মকর্তা মনোজ কুমার দাবি করেন, এ ঘটনায় কাউকে আটক বা গ্রেপ্তার করা হয়নি।

মনোজ কুমার এনডিটিভিকে জানান, পুলিশ কাউকেই আটক বা গ্রেপ্তার করেনি। কোনো শিক্ষার্থীর সঙ্গে, বিশেষ করে, কোনো মেয়ের সঙ্গে অসদাচরণও করা হয়নি। পরিস্থিতি শান্ত করতে চারজন ছেলেকে থানায় আনা হয়েছিল। পরে তাঁদের চলে যেতে বলা হয়। তবে এরপর শিক্ষার্থীরা থানার সামনে জড়ো হয়ে প্রশাসনের কাছে ক্ষমা চাওয়ার দাবি জানার। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এসে কথা বলার পর কিছুক্ষণ পর তাঁরা সরে যান।

শিক্ষার্থী আটকের অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছেন জেলা কালেক্টর টিনা দাবিও। লিখিত বিবৃতিতে তিনি এনডিটিভিকে বলেন, ‘কাউকেই গ্রেপ্তার বা আটক করা হয়নি। ফি বাড়ানোর বিষয়টি সমাধান হয়ে যাওয়ার পরও কয়েকজন শিক্ষার্থী রাস্তা অবরোধ করে বিশৃঙ্খলা তৈরির চেষ্টা করছিল। আমার অধস্তন কর্মকর্তারা কথা বলা ও পরিস্থিতি শান্ত করার জন্য তাদের থানায় নিয়ে যায়। প্রায় দুই ঘণ্টা পর তারা চলে যায়। এরপর আর কোনো সমস্যা ছিল না।’

টিনা দাবি আরও বলেন, বিষয়টি এখন কেবল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেই রয়েছে। সেখানে যা ছড়ানো হচ্ছে, তা শুধু বদনাম করা ও সস্তা প্রচারের চেষ্টা।

এই বক্তব্যের পর টিনা দাবিকে ঘিরে সমালোচনা তীব্র হয়। রাজ্যসভার সদস্য প্রিয়াঙ্কা চতুর্বেদীসহ অনেকেই তাঁর বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে প্রিয়াঙ্কা চতুর্বেদী লেখেন, ‘ভারতে আমলাদের অসহিষ্ণু আচরণের আরেকটি উদাহরণ এটি। দুর্নীতি, ক্ষমতার দম্ভ এবং এখন অসহিষ্ণুতার পরও তাঁরা কঠোর জবাবদিহির বাইরে থেকে যান।’

এদিকে বিজেপি–সমর্থিত ছাত্রসংগঠন অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদ (এবিভিপি) জানিয়েছে, মতপ্রকাশের কারণে শিক্ষার্থীদের ‘গ্রেপ্তার’ করা অত্যন্ত নিন্দনীয় এবং এটি গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের মূলে আঘাত করে।

এক্সে দেওয়া এক বিবৃতিতে এবিভিপি প্রশ্ন তোলে, ‘মতপ্রকাশ কবে থেকে অপরাধ হয়ে গেল?’

তারা জানায়, ‘এই দমনমূলক পদক্ষেপের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছে এবিভিপি এবং গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষায় শিক্ষার্থীদের পাশে দৃঢ়ভাবে দাঁড়াচ্ছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ভোটের জোট: আসন সমঝোতা শেষ পর্যায়ে

১১৯ আসনে প্রার্থী ঘোষণা জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্টের, মনোনয়ন পেলেন যাঁরা

উপদেষ্টা পরিষদে রদবদল হচ্ছে, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা নিয়ে গুঞ্জন

চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩২-এর বেশি বহাল থাকছে যেসব প্রতিষ্ঠানে

দিল্লিতে ব্যারিকেড ভেঙে বাংলাদেশ হাইকমিশনে প্রবেশের চেষ্টা হিন্দুত্ববাদীদের, উত্তেজনা

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত