যুবরাজ এমবিএস সৌদি আরবের ফুটবলকে নিতে চান খ্যাতির চূড়ায়

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : ১৫ অক্টোবর ২০২৩, ০৯: ৫১
Thumbnail image

ফুটবল বিশ্বের বিখ্যাত নামগুলো নিয়ে আসা, মাথা ঘুরিয়ে দেওয়ার মতো দলবদলের অঙ্ক ও বিপুল বিনিয়োগ সৌদি আরবের পেশাদার ফুটবলের শীর্ষ প্রতিযোগিতা সৌদি প্রো লিগকে খ্যাতির চূড়ায় নিয়ে যাচ্ছে। ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো, নেইমার, করিম বেনজেমাসহ ইউরোপের বিখ্যাত ফুটবলাররা গত ৯ মাসে এই লিগে যোগ দিয়েছেন। 

কীভাবে সৌদি প্রো লিগ বিশ্বসেরা হওয়ার পথে আছে, তা আল অ্যারাবিয়া ইংলিশকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তুলে ধরেছেন ইতালিয়ান সিরি আ’র মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকা (এমইএনএ) অঞ্চলের প্রধান আলফনসো ডি স্টেফানো। তাঁর মতে, তৃণমূল থেকে ফুটবলের চিত্র পরিবর্তনের পেছনে রয়েছে সৌদি আরবের পর্যটন খাত ঘিরে যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের (এমবিএস) উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনা। এ জন্য ফুটবলে উল্লেখযোগ্য বিনিয়োগ হচ্ছে। 

এমইএনএর প্রধান বলেন, ‘সৌদি বিনিয়োগে দেশটির পুরুষ ও নারী ফুটবল অনেকটাই পালটে গেছে। নতুন স্টেডিয়াম হচ্ছে, প্রশিক্ষণ সুবিধা উন্নত হয়েছে, তৃণমূল থেকে প্রতিভা খুঁজে বের করা হচ্ছে। এর সঙ্গে ফুটবল প্রযুক্তিতে বিনিয়োগ বাড়ানো হয়েছে। এ ছাড়া শীর্ষ পর্যায়ের কোচ ও খেলোয়াড় নিয়োগ করা হচ্ছে।’ 

তৃণমূল থেকে ফুটবলের চিত্র পরিবর্তনের পেছনে রয়েছে সৌদি আরবের পর্যটন খাত ঘিরে যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের (এমবিএস) উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনা। ছবি: সংগৃহিতজুন মাসে শীর্ষ ক্লাবগুলোকে বেসরকারিকরণের প্রকল্প শুরু করেন মোহাম্মদ বিন সালমান। এর অধীনে সৌদি আরবের পাবলিক ইনভেস্টমেন্ট ফান্ড (পিআইএফ) দেশের শীর্ষ জনপ্রিয় চারটি ক্লাবের ৭৫ শতাংশ শেয়ার কিনে নেয়। এগুলো হলো আল হিলাল, আল ইত্তিহাদ, আল নাসর ও আল আহলি। 

আলফনসো ডি স্টেফানো বলেন, ‘এতে কেবল সৌদি আরবই নয়, পুরো ফুটবল বিশ্বের চিত্রই পাল্টে যাওয়ার এক উত্তেজনাপূর্ণ সম্ভাবনার সামনে আছি আমরা।’ 

সমৃদ্ধির নতুন যুগ 
ডি স্টেফানো বলেছেন, ‘সমৃদ্ধি ও প্রতিযোগিতার এক নতুন যুগে সৌদি ফুটবলকে প্রবেশ করানোর ক্ষেত্রে এই প্রকল্প দারুণ ভূমিকা পালন করবে। উত্তেজনাপূর্ণ সব বিনিয়োগ যেমন ঘটবে, তেমনি বিশ্ববিখ্যাত ফুটবলারদের এখানে নিয়ে আসার দ্বারও উন্মোচিত হচ্ছে। আমরা ইতিমধ্যে ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো, করিম বেনজেমা, এনগোলো কান্তে, নেইমার, জর্ডান হেন্ডারসন, রিয়াদ মাহরেজের মতো খেলোয়াড়দের নিয়ে আসতে পেরেছি। সৌদি জাতীয় দলের কোচ হিসেবে রবার্তো মানচিনির মতো ব্যক্তিত্বের আগমন ঘটেছে।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘সৌদি ফুটবলের উন্নয়নের জন্য অনেক প্রচেষ্টাই এখন চলমান। সেই সঙ্গে হাই প্রোফাইল দলবদলগুলো অবশ্যই সৌদি ফুটবলকে জনপ্রিয় করার ক্ষেত্রে অনেক বড় ভূমিকা পালন করবে। এসব উদ্যোগের মাধ্যমে সৌদি প্রো লিগকে আমি ফুটবলের সেরা লিগগুলোর কাতারে দেখতে পাচ্ছি।’ 

সৌদি প্রো লিগে এখন তারার মেলাছন্দ ফিরে পাচ্ছে নারী ফুটবল 
সৌদি আরবের প্রথম মহিলা আন্তর্জাতিক রেফারি হিসেবে গত জানুয়ারিতে ফিফা কর্তৃক নিযুক্ত হন আনোদ আল-আসমারি। দেশটিতে নারী ফুটবলের জন্য এ ঘটনাকে দেখা হচ্ছে ঐতিহাসিক মাইলফলক হিসেবে। একটু পেছনে ফিরে তাকালে দেখা যাবে, ৪৫০-এর বেশি নিবন্ধিত খেলোয়াড়, ৪৯ জন দক্ষ রেফারি এবং ৯ শতাধিক প্রশিক্ষক নিয়ে ২০১৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় সৌদি আরবের মহিলা দল। সব দিকেই খেলাটিকে বিকশিত করতে সৌদি সরকারের প্রতিশ্রুতিই ব্যক্ত করছে এসব কার্যক্রম। 

এ ছাড়া এএফসি মহিলা এশিয়ান কাপ ২০২৬ আসর আয়োজনের জন্যও চেষ্টা চালাচ্ছে সৌদি আরব। ২০৩৪ সালের ফিফা বিশ্বকাপের আয়োজক হওয়ার দৌড়ে এ সপ্তাহেই শামিল হয়েছে তারা। 

সৌদির অফিশিয়াল সংবাদ সংস্থা এসপিএতে প্রকাশিত হয়েছে মোহাম্মদ বিন সালমানের বিবৃতি। তিনি বলেছেন, ‘বিশ্বকাপের আয়োজক হওয়ার আকাঙ্ক্ষার মাধ্যমে পৃথিবীতে শান্তি ও ভালোবাসার বার্তা ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য সৌদি আরবের প্রচেষ্টার পরিষ্কার বার্তাই প্রকাশ পেয়েছে। কারণ, খেলাধুলার মাধ্যমেই বিশ্বের বিভিন্ন জাতি ও সংস্কৃতি একে অপরের সঙ্গে মিলিত হওয়ার সুযোগ পায়।’ 

এএফসি মহিলা এশিয়ান কাপ ২০২৬ আসর আয়োজনের জন্যও চেষ্টা চালাচ্ছে সৌদি আরব। ছবি: এএফপি

সমৃদ্ধ পর্যটনের সম্ভাবনা
ফুটবলকেন্দ্রিক উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনা সৌদি আরবের পর্যটনেও সুদূরপ্রসারী ও ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন ডি স্টেফানো। তিনি বলেন, ‘শীর্ষ পর্যায়ের খেলোয়াড়দের আগমন, অত্যাধুনিক সুবিধার বিকাশ এবং হাই প্রোফাইল ফুটবল ইভেন্টের আয়োজক হওয়ার মাধ্যমে সৌদি আরবের ফুটবল শিল্প অবশ্যই আরও এগিয়ে যাবে। একটি সমৃদ্ধ সিস্টেম তৈরি হবে, যা সারা দেশের ক্রীড়াবিদ ও ভক্তদের আকর্ষণ করবে।’ 

তিনি বলেন, ‘এমইএনএ অর্থাৎ, মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকা ইতালিয়ান সিরি আ-র একটি বড় বাজার। এখানকার তরুণেরা যেমন ফুটবলের ব্যাপারে আগ্রহী, তেমনি ইতালিয়ান ফুটবলের প্রতিও রয়েছে তাঁদের গভীর আকর্ষণ।’ 

এমইএনএর প্রধান আরও বলেন, ‘এই অঞ্চলে ইতিমধ্যে দেড় কোটিরও বেশি সিরি আ সমর্থক রয়েছেন। তাঁদের অর্ধেকেরই বয়স ২৫-এর কম। এই সমর্থক গোষ্ঠীসহ পুরো অঞ্চলের ফুটবলপ্রেমীদের বৃহত্তর অংশের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করা আমাদের অগ্রাধিকার। আবুধাবিতে নতুন সদর দপ্তর প্রতিষ্ঠা করাটাও আমাদের আঞ্চলিক উপস্থিতিকে শক্তিশালী করেছে। এতে সমর্থকদের সঙ্গে আমাদের সরাসরি সংযোগ ঘটছে। এ ছাড়া, ফুটবলের বাইরেও ভবিষ্যতে অন্যান্য ক্ষেত্রে সহযোগিতার দ্বার প্রশস্ত হবে বলে আমরা আশাবাদী।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত