ইসরায়েলি হামলায় ধ্বংস হয়েছে ইরানের পারমাণবিক স্থাপনা: প্রতিবেদন

অনলাইন ডেস্ক
Thumbnail image
স্যাটেলাইটে তোলা ইরানের পারচিন সামরিক কমপ্লেক্স। ছবি: ম্যাক্সার টেকনোলজিস

ইসরায়েলের সামরিক হামলায় ইরানের পারচিন এলাকার একটি অত্যন্ত গোপন পারমাণবিক অস্ত্র গবেষণা কেন্দ্র ধ্বংস হয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম এক্সিওসের প্রতিবেদনে। গত অক্টোবরের শেষ দিকে এই হামলা চালানো হয়। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন তিন মার্কিন কর্মকর্তা, এক ইসরায়েলি কর্মকর্তা এবং সাবেক এক ইসরায়েলি কর্মকর্তা।

ইসরায়েল ও মার্কিন কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, হামলায় ইরানের গত এক বছরের পারমাণবিক অস্ত্র গবেষণা প্রচেষ্টা বড় ধরনের ধাক্কা খেয়েছে। সাবেক ওই ইসরায়েলি কর্মকর্তা জানিয়েছেন, হামলায় এমন সরঞ্জাম ধ্বংস হয়েছে যা পারমাণবিক অস্ত্রে ব্যবহৃত প্লাস্টিক বিস্ফোরক তৈরির জন্য প্রয়োজনীয়। এই বিস্ফোরক পারমাণবিক অস্ত্র সক্রিয় করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

ইরান দাবি করেছে, তারা পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করছে না। ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি বলেছেন, ‘ইরান কখনোই পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে না।’ জাতিসংঘে ইরানের মিশন এই বিষয়ে মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে সূত্রগুলো এক্সিওসকে জানিয়েছে, ইসরায়েলি হামলার অন্যতম লক্ষ্য ছিল পারচিন সামরিক কমপ্লেক্সের তেলেগান-২ নামে একটি স্থাপনা। এটি তেহরান থেকে প্রায় ২০ মাইল দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থিত।

এই স্থাপনা একসময় ইরানের আমাদ পারমাণবিক অস্ত্র কর্মসূচির অংশ ছিল। ২০০৩ সালে ইরান তাদের সামরিক পারমাণবিক কর্মসূচি বন্ধ করার পর এটি অচল হয়ে ছিল। কিন্তু সম্প্রতি এখানে নতুন করে বিস্ফোরক পরীক্ষার কার্যক্রম শুরু হয়েছিল। ইসরায়েলি হামলার পর উপগ্রহ চিত্রে দেখা গেছে, তেলেগান-২ পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে।

মার্কিন ও ইসরায়েলি কর্মকর্তারা বলেছেন, তেলেগান-২-এ সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ড ছিল পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির গোপন গবেষণার অংশ। এই গবেষণা প্রাথমিকভাবে বেসামরিক উদ্দেশ্যে দেখানোর চেষ্টা করা হয়। এক মার্কিন কর্মকর্তা এ বিষয়ে বলেন, ‘তারা এমন বৈজ্ঞানিক গবেষণা করেছে যা পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির ভিত্তি হিসেবে কাজ করতে পারে। এটি অত্যন্ত গোপনীয় একটি প্রকল্প ছিল। ইরানের সরকারের মাত্র কয়েকজন বিষয়টি জানতেন।’

এ বছরের শুরুতে মার্কিন ও ইসরায়েলি গোয়েন্দারা পারচিনে গবেষণা কার্যক্রম শনাক্ত করেন। এতে কম্পিউটার মডেলিং, ধাতুবিদ্যা এবং বিস্ফোরক গবেষণার মতো কর্মকাণ্ড অন্তর্ভুক্ত ছিল বলেও দাবি করেছে ইসরায়েলি কর্মকর্তারা। গত জুনে হোয়াইট হাউস ইরানকে এসব গবেষণা কার্যক্রম বন্ধ করার সতর্কবার্তা দিয়েছিল। কিন্তু ইরান এই গবেষণা অব্যাহত রাখে বলে কর্মকর্তারা জানান।

এই গবেষণা মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে মূল্যায়নেও পরিবর্তন আনে। আগস্টে এক প্রতিবেদনে জানানো হয়, ইরান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করতে প্রয়োজনীয় মূল গবেষণা কার্যক্রম শুরু করেছে।

এর আগে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ইসরায়েলকে সরাসরি ইরানের পারমাণবিক স্থাপনা লক্ষ্য করে হামলা না চালানোর অনুরোধ করেছিলেন। এতে পুরো মধ্যপ্রাচ্য অঞ্চলে যুদ্ধ শুরুর আশঙ্কা ছিল। তবে তেলেগান-২ ইরানের ঘোষিত পারমাণবিক কর্মসূচির অংশ নয়। তাই ইরান প্রকাশ্যে এই হামলার গুরুত্ব স্বীকার করতে পারছে না।

পরিস্থিতি নিয়ে আগামী সপ্তাহে আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা (আইএইএ)-এর পরিচালনা বোর্ড বৈঠকে বসবে। ইরানের সহযোগিতার অভাবের কারণে তাদের বিরুদ্ধে নিন্দা প্রস্তাব আনার সম্ভাবনা রয়েছে। ইরান হুমকি দিয়েছে, এতে সহযোগিতা আরও কমিয়ে দেবে। আইএইএ প্রধান রাফায়েল গ্রসি ইরান সফর করেছেন। ইরান ইউরোপীয় তিন দেশের সঙ্গে আলোচনার ইচ্ছা প্রকাশ করেছে, তবে চাপের মুখে কোনো আলোচনা করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত