গাজায় দুর্ভিক্ষ ঠেকাতে জরুরি আদেশ না দিতে বিশ্ব আদালতের কাছে ইসরায়েলের আবেদন

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : ১৯ মার্চ ২০২৪, ১৪: ৫২
Thumbnail image

আসন্ন দুর্ভিক্ষ মোকাবিলায় গাজায় মানবিক সহায়তা বাড়ানোর জন্য জরুরি আদেশ না দিতে আন্তর্জাতিক আদালতের (আইসিজে) কাছে আবেদন করেছে ইসরায়েল। গতকাল সোমবার জাতিসংঘের শীর্ষ আদালতে জমা দেওয়া আইনি নথিতে দক্ষিণ আফ্রিকার অনুরোধকে ‘নৈতিকভাবে ঘৃণ্য’ আখ্যা দিয়ে প্রত্যাখ্যান করে দেশটি। 

সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার প্রতিবেদন অনুসারে, ইসরায়েলের দাবি, তারা মানবিক পরিস্থিতি এবং নিরীহ জীবন নিয়ে সত্যিকারের উদ্বিগ্ন, যা গাজায় তার কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে প্রদর্শিত হয়েছে।

ইসরায়েলের আইনজীবীরা অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায়, যেখানে হাজার হাজার ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন এবং ক্ষুধা ক্রমেই বাড়ছে, ইচ্ছাকৃতভাবে মানবিক দুর্ভোগ সৃষ্টির অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। অতিরিক্ত ব্যবস্থার জন্য দক্ষিণ আফ্রিকার বারবার অনুরোধ বিচারব্যবস্থার অপব্যবহার বলে উল্লেখ করেন তারা। 

আইনি নথি অনুসারে, গত ৬ মার্চ দক্ষিণ আফ্রিকার দায়ের করা নতুন পদক্ষেপের অনুরোধে উল্লেখিত অভিযোগগুলো ‘বাস্তবে এবং আইনে সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন, নৈতিকভাবে ঘৃণ্য এবং গণহত্যা কনভেনশন এবং আদালত উভয়েরই অপব্যবহারের প্রতিনিধিত্ব করে’। 

গত জানুয়ারিতে বিশ্ব আদালত গণহত্যা কনভেনশনের আওতায় পড়তে পারে এমন যেকোনো কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকতে এবং গাজায় ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে কোনো গণহত্যামূলক কর্মকাণ্ড যাতে না করে তা নিশ্চিত করতে ইসরায়েলকে নির্দেশ দেয়। ইসরায়েল গণহত্যার অভিযোগকে ভিত্তিহীন বলে আখ্যায়িত করেছে। 

ত্রাণ সংস্থাগুলো বলছে, গাজার ২৩ লাখ মানুষের জন্য প্রয়োজনীয় ত্রাণ মারাত্মকভাবে সীমিত করা হচ্ছে। 

গত ৭ অক্টোবর থেকেই গাজা অবরোধ করে রেখেছে ইসরায়েল। এমনকি অঞ্চলটিতে অতি প্রয়োজনীয় জ্বালানিও প্রবেশ করতে দিচ্ছে না দেশটি।   

আন্তর্জাতিক আদালতের জরুরি পদক্ষেপগুলো অস্থায়ী আদেশ হিসেবে কাজ করে। হেগের আদালত পুরো মামলার শুনানির আগে পরিস্থিতির অবনতি থেকে রক্ষা করতে এ ব্যবস্থা নেওয়া হয়। কারণ এটি এমন একটি প্রক্রিয়া, যাতে সাধারণত কয়েক বছর সময় লেগে যায়।

জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি গাজার উত্তরাঞ্চলে ‘দুর্ভিক্ষ আসন্ন’ ঘোষণা দেওয়ার পরই ইসরায়েলের প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করা হয়েছে। সংস্থাটি বলেছে, এর অবশিষ্ট জনসংখ্যার ৭০ শতাংশ বিপর্যয়কর ক্ষুধার মুখোমুখি রয়েছে এবং ইসরায়েলের আক্রমণ আরও বাড়ানো হলে গাজার মোট জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেককে অনাহারের দ্বারপ্রান্তে ঠেলে দেওয়া হবে। 

গাজায় পাঁচ মাসেরও বেশি সময় ধরে চলা অভিযানের কারণে উপত্যকায় প্রায় ৩২ হাজার মানুষ নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। অঞ্চলটিতে ইসরায়েলি অভিযান শুরু হওয়ার পর থেকে অপুষ্টি ও ক্ষুধার কারণে অন্তত ৩০ জনের মৃত্যু হয়েছে। 

ইউরোপীয় ইউনিয়নের শীর্ষ কূটনীতিক জোসেপ বোরেল গত ১১ মার্চ বলেন, গাজায় আসন্ন দুর্ভিক্ষ ‘সম্পূর্ণরূপে মানবসৃষ্ট’ এবং ‘অনাহারকে যুদ্ধের অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে’। তিনি বলেন, ‘ত্রাণবাহী ট্রাক আটকে দেওয়া হচ্ছে। সীমান্ত ক্রসিংগুলোকে কৃত্রিমভাবে বন্ধ করে রাখায় মানুষ মারা যাচ্ছে।’

এ নিয়ে দ্বিতীয়বার আন্তর্জাতিক আদালতে অতিরিক্ত পদক্ষেপ নিতে অনুরোধ করেছে দক্ষিণ আফ্রিকা। গত ফেব্রুয়ারিতে গাজার দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর রাফাহে হামলা বন্ধে ইসরায়েলকে চাপ দেওয়ার প্রথম অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করা হয়েছিল।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত