রাষ্ট্রদ্রোহ আইন অসাংবিধানিক, পাকিস্তানের উচ্চ আদালতের রায়

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ : ৩১ মার্চ ২০২৩, ২২: ৫৬

ঔপনিবেশিক যুগের রাষ্ট্রদ্রোহ আইনকে সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলে রায় দিয়েছে পাকিস্তানের একটি আদালত। পূর্বাঞ্চলীয় শহর লাহোরের হাইকোর্ট এই রায় দিয়েছে। আদালতের রায়কে স্বাগত জানিয়েছেন পাকিস্তানের বাক্‌স্বাধীনতার পক্ষের আন্দোলনকারী এবং সাংবাদিকেরা। 

গতকাল বৃহস্পতিবার লাহোর হাইকোর্টের একক বেঞ্চ এ রায় দেন। এখন পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্ট উচ্চ আদালতের এ রায় বাতিল না করলে রাষ্ট্রদ্রোহ সম্পর্কিত বিদ্যমান আইন রদের বিষয়টি সারা দেশেই প্রযোজ্য হবে। 

ভারতীয় উপমহাদেশে ব্রিটিশ আমলের এই আইনকে বিরোধীদের দমনে ব্যবহার করার দীর্ঘ ঐতিহ্য রয়েছে। সরকারগুলো রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে এটি ব্যবহার করে। পাকিস্তানের কয়েকজন নাগরিক এই আইনের বিরুদ্ধে আলাদা রিট পিটিশন দিয়েছিলেন। গতকাল বিচারপতি শহীদ করিম আইনটি অসাংবিধানিক বলে রায় দেন। 

সরকারকে জাতীয় নির্বাচন ঘোষণা করতে বাধ্য করার জন্য গণ সমাবেশের আয়োজন করেছেন পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। সারা দেশে তাঁর কর্মী সমর্থকেরা বিক্ষোভ সমাবেশ করছে। এর মধ্যে ইমরান খানকে গ্রেপ্তারের চেষ্টাও হয়েছে। তাঁর বাসভবনে পুলিশ তল্লাশি চালিয়েছে, সেখান অবস্থানরত নেতা কর্মীদের মারধরও করা হয়েছে। ইমরান খানের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগসহ ১০০টিরও বেশি মামলা ঝুলছে। সরকার একেক সময় একেক মামলায় তাঁকে গ্রেপ্তারের হুমকি দিচ্ছে। 

এদিকে প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফের সরকার সুপ্রিম কোর্টের ক্ষমতা সীমিত করার চেষ্টা করছে। আদালত এই নির্বাহী সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে স্বতঃপ্রণোদিত (সুয়ো মোটো) নোটিশ জারি করেছে। 

ভারতীয় উপমহাদেশে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের সময় ১৮৬০ সালে রাষ্ট্রদ্রোহ আইন প্রণয়ন করা হয়। এ আইনে বলা হয়েছে: ‘যে কেউ বক্তব্যের মাধ্যমে, হয় কথ্য বা লিখিত, বা চিহ্ন/প্রতীক দিয়ে, বা দৃশ্যমান উপস্থাপনা দিয়ে, বা অন্য কোনো ভাবে, আইন দ্বারা প্রতিষ্ঠিত কেন্দ্রীয় বা প্রাদেশিক সরকারের বিরুদ্ধে ঘৃণা প্রকাশ বা ঘৃণা উৎপাদনের চেষ্টা করে বা সরকারের প্রতি অবমাননা, বা উত্তেজনা সৃষ্টি বা অসন্তোষ জাগিয়ে তোলার চেষ্টা করলে, তিনি যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত হবেন, সঙ্গে অর্থদণ্ড, বা তিন বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড হতে পারে, সঙ্গে অর্থদণ্ড দেওয়া যেতে পারে, অথবা জরিমানা করা যেতে পারে।’ 

রিটকারীদের একজন আইনজীবী আবুজার সালমান নিয়াজি সম্প্রচার মাধ্যম আল জাজিরাকে বলেন, ‘আইনটি ১৫০ বছরেরও বেশি পুরোনো। এটি অপ্রচলিত এবং অসাংবিধানিক এবং এটি বাতিল যোগ্য।’ 

লাহোর-ভিত্তিক এ আইনজীবী বলেন, ‘আপনার কাছে এমন কোনো আইন থাকতে পারে না যা ভিন্নমত বা বাক্‌স্বাধীনতার অনুমতি দেয় না। আইনটি পাকিস্তানের সংবিধানের ১৯ অনুচ্ছেদের লঙ্ঘন, এ অনুচ্ছেদ বাক্‌স্বাধীনতার সুরক্ষা দেয়।’ 

রাষ্ট্রদ্রোহ আইনের অপব্যবহার
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিরোধী রাজনীতিবিদ এবং সাংবাদিকদের লক্ষ্যবস্তু করার জন্য পাকিস্তানের সরকারগুলো এ আইন ব্যবহার করেছে। সাংবাদিক আরশাদ শরীফ গত অক্টোবরে কেনিয়ায় গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন। এই আইনের অধীনে মামলা খেয়েছেন এমন বিশিষ্ট ব্যক্তিদের মধ্যে তিনি ছিলেন অন্যতম। 

একই ভাবে ভারতে এই আইনের ব্যাপক অপব্যবহার হয়েছে। ক্ষমতাসীন বিজেপি এবং নরেন্দ্র মোদি সরকার নাগরিক সমাজ, অধিকারকর্মী, সাংবাদিক, শিক্ষার্থী, শিক্ষাবিদ, সংখ্যালঘু এবং শান্তিপূর্ণ সমাবেশকারীদের দমনে এ আইন ব্যবহার করেছে। যথেচ্ছ ব্যবহার ঠেকাতে গত বছরের মে মাসে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট রাষ্ট্রদ্রোহ আইন স্থগিতে অন্তর্বর্তীকালীন আদেশ দেন। সরকারও সেটি মেনে নিয়েছে। 

তবে রাষ্ট্রদ্রোহ আইন আদালত স্থগিত করলেও সরকারগুলো তাদের নতুন অস্ত্র হিসেবে পেয়েছে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন। ভারতে রাষ্ট্রদ্রোহ আইন স্থগিত হওয়ার পর এ আইনের ব্যবহার বিপজ্জনকভাবে বেড়েছে। 

পাকিস্তানের মানবাধিকার আইনজীবী ইমান জয়নব মাজারি-হাজির পাকিস্তানের সংসদকে দণ্ডবিধির অন্যান্য ঔপনিবেশিক যুগের আইন সংশোধন বা বাতিল করার কথা বিবেচনা করার আহ্বান জানিয়েছেন। পাকিস্তানের সামরিক আইন যা বেসামরিক ব্যক্তিদের সামরিক আদালতে বিচারের অনুমতি দেয়, সেটি বাতিল করার পক্ষেও কথা বলেন তিনি।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত