Ajker Patrika

স্বাধীনতার আড়াই শ বছরেও বর্ণবাদ থেকে মুক্তি মেলেনি

ইমরান খান
আপডেট : ০৪ জুলাই ২০২১, ১৯: ৫৫
স্বাধীনতার আড়াই শ বছরেও বর্ণবাদ থেকে মুক্তি মেলেনি

এই করোনা মহামারির মধ্যেই আজ ৪ জুলাই উদ্‌যাপন করছে যুক্তরাষ্ট্র। সেই ১৭৭৬ সালে স্বাধীনতা অর্জনের মধ্য দিয়ে দেশটি যে পথচলা শুরু করেছিল, তা গত প্রায় আড়াই শ বছরে শুধু স্থিতিই পায়নি, গোটা বিশ্বের মোড়লের খ্যাতিও তাকে এনে দিয়েছে। ঔপনিবেশিক শাসনের অবসান ঘটিয়ে যে যুক্তরাষ্ট্র সারা বিশ্বকে আশার আলো দেখিয়েছিল, ঐক্যের ভবিষ্যতের, সেই যুক্তরাষ্ট্রের নামই ২৪৫ বছর পর আজ নানা কারণে উঠে আসে বিভাজনের উদ্গাতা হিসেবে। দেশে দেশে বৈরিতা বা দ্বন্দ্ব জিইয়ে রাখার কারিগর হিসেবে যেমন, তেমনি নিজ দেশেও বিভাজনের রেখাটি গত কয়েক বছরে বেশ স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। 

 ১৭৭৬ সালে প্রধান সেনাপতি জর্জ ওয়াশিংটনের নেতৃত্বে ব্রিটিশ বাহিনী বিতাড়িত করার পর ওই বছরের ৪ জুলাই টমাস জেফারসন রচিত ‘স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র’ গৃহীত হয়। আর এর মধ্য দিয়ে ১৩টি আমেরিকান উপনিবেশ একসঙ্গে স্বাধীন হয়। সেই স্বাধীন উপনিবেশগুলোই আজকের ‘যুক্তরাষ্ট্র’। সেই স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রের প্রথম ভাগেই সুস্পষ্টভাবে প্রত্যেক মানুষের অধিকারের স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে, যা কেড়ে নেওয়া যায় না। এই অধিকারের তালিকায় কী কী আছে? আছে বেঁচে থাকার অধিকার, আছে সুখান্বেষণ ও স্বাধীনতার অধিকার। এই এক স্বাধীনতার প্রশ্নেই সর্বস্তরের মানুষ এক কাতারে দাঁড়িয়েছিল। কিন্তু স্বাধীনতার প্রায় আড়াই শতাব্দী পরও এর অনেক কিছুই কাগুজে থেকে গেল। এত দিন এটি খোলসের নিচে চাপা ছিল। কিন্তু গত বছর করোনাকালে জর্জ ফ্লয়েড যখন পুলিশি নির্যাতনে নিহত হলেন, তখনই বোঝা গেল কত অসংগতি এখনো রয়ে গেছে সবাইকে আধুনিকতা, সমানাধিকার ও গণতন্ত্র শেখানো রাষ্ট্রটির ভেতরে। 

যুক্তরাষ্ট্রের দিকে তাকালে এখনো নানা মোড়কে বর্ণবাদ, জাতি বিদ্বেষ, লিঙ্গবৈষম্যের নমুনা দেখা যায়। ১৯৬০–এর দশক থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত দেশটির বেশ কয়েকজন প্রেসিডেন্ট জাতিগত বিদ্বেষ প্রকাশ করেছেন। এ তালিকায় রিচার্ড নিক্সন যেমন আছেন, তেমনি আছেন সদ্য সাবেক হওয়া ডোনাল্ড ট্রাম্প। এমনকি রোনাল্ড রিগানও মনে করতেন—দারিদ্র্য একটি আফ্রিকান–আমেরিকান সমস্যা। আর ট্রাম্পের কথা বলতে গেলে আঙুল ব্যথা (যেহেতু কালি ফুরোনোর কালও বিগত) হয়ে যাবে। এখানে বারাক ওবামার প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হওয়া এবং এই নিয়ে ‘গেল গেল’ রব ওঠার বিষয়টিও স্মরণ করা যেতে পারে। 

তারপরও দু–একটি উদাহরণ তুলে দিতেই হয়। প্রথমেই এ ক্ষেত্রে দগদগে ঘা হিসেবে জর্জ ফ্লয়েডের কথা আসতে হবে। ২০২০ সালের ২৫ মে আফ্রিকান-আমেরিকান জর্জ ফ্লয়েডের মর্মান্তিক মৃত্যু দেখেছে বিশ্ব। মিনিয়াপোলিস শহরে এক শ্বেতাঙ্গ পুলিশ কর্মকর্তা ডেরেক শোভিনের হাঁটুর চাপে নিথর হয়ে গিয়েছিলেন তিনি। মৃত্যুর আগে বারবার তিনি বলেছিলেন একটি কথা—‘আই কান্ট ব্রিদ’। এই তিনটি শব্দ সে সময় গোটা দুনিয়াকে কাঁপিয়ে দিয়েছিল। গোটা দুনিয়া সে সময় আক্ষরিক অর্থেই শ্বাসরুদ্ধ হয়ে দেখছিল জর্জ ফ্লয়েডের মরে যাওয়া। দেখছিল মহাশক্তিধর ও ‘অগ্রসর’ একটি দেশের পাঁজরের গহিনে লুকিয়ে থাকা বর্ণবাদের মঞ্চায়ন। এই ঘটনায় বিশ্বব্যাপী ‘ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার’ আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে। হ্যাঁ, শোভিনের বিচার হয়েছে। বিচারে তাঁকে সাড়ে ২২ বছর সাজা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু শার্লোৎসভিল? 

হয়তো এত দিনে অনেকেই ভুলে গেছেন শার্লোৎসভিলের ঘটনা। সেখানে বর্ণবাদের অভিযোগ থাকা মার্কিন জাতীয় এক নেতার ভাস্কর্য অপসারণের জন্য আন্দোলন করছিলেন কিছু মানুষ। তাদের ওপর তখন হামলা করেছিল রণসাজে সেজে আসা শ্বেতাঙ্গ জাতীয়তাবাদীরা। ঘটনা এখানে থামলে চলত। এই ঘটনায় শুরুতে পুরোপুরি নীরব থাকা তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যখন মুখ খুললেন, তখন তিনি প্রকারান্তরে পক্ষ নিলেন উগ্র শ্বেতাঙ্গ গোষ্ঠীটিরই। 

এটা না হওয়ার কোনো কারণ নেই। ২০১৭ সালের ২০ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের ৪৫ তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে ডোনাল্ড ট্রাম্প হয়তো শপথ নিতেই পারতেন না, যদি মার্কিন সমাজের গহিনে এই বর্ণবাদ ও জাতিবিদ্বেষ লুকিয়ে না থাকত। ট্রাম্প সরাসরি বর্ণবাদী নানা মন্তব্য ও বিতর্কিত সব প্রতিশ্রুতি করেই ক্ষমতায় এসেছিলেন। ফলে তাঁর নির্বাচিত হওয়াটাই বলে দেয় মার্কিন সমাজে এখনো কী পরিমাণ বর্ণ ও জাতিবিদ্বেষ রয়েছে। 

কৃষ্ণাঙ্গ বিদ্বেষ ছাড়াও ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রে থাকা বিভিন্ন দেশের অভিবাসী জনগোষ্ঠী ও মুসলমানদের সম্পর্কে উসকানিমূলক বক্তব্য, অভিবাসন নিষিদ্ধকরণ, বাণিজ্য যুদ্ধ এবং বিতর্কিত নির্বাসন নীতি গ্রহণ করেন। মুসলমানদের জন্য যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন কঠিন করে তোলেন। ট্রাম্পের বর্ণবাদী নীতিগুলোর বেশির ভাগই তাঁর প্রাক্তন উপদেষ্টা বর্ণবাদে অভিযুক্ত রাজনীতিক স্টিফেন ব্যাননের পরিকল্পনা। 

ক্যালিফোর্নিয়া স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গবেষণায় দেখা যায়, করোনা শুরুর পর যুক্তরাষ্ট্রে এশীয়দের বিরুদ্ধে জাতিগত বিদ্বেষ প্রায় দেড় শ শতাংশ বেড়েছে। এ সময় আটলান্টার তিনটি স্পা সেন্টারে হামলা করে আট নারীকে হত্যা করা হয়। এদের মধ্যে ছয়জনই এশিয়ার। এই সময় পথে–ঘাটে এশীয় লোক দেখলে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকেরা হেনস্তা করছে বলেও গণমাধ্যমে বহু খবর এসেছে। এতে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত এশীয় মার্কিনরা বর্ণবিদ্বেষের মতো ভীতিকর অবস্থায় দিন কাটিয়েছেন। করোনাকাল ছাড়াও মধ্য এশীয়-আমেরিকানদের প্রায়ই জাতিগত বিদ্বেষ, সহিংসতা ও ঘৃণামূলক কথাবার্তার মধ্য দিয়ে যেতে হয়। 

নাগরিক অধিকার নিয়ে হোয়াইট হাউসে প্রেসিডেন্ট লিন্ডন বি জনসনের সঙ্গে বৈঠক শেষে বক্তব্য রাখছেন মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র। ৩ ডিসেম্বর, ১৯৬৩এখন পর্যন্ত ৪৬ জন প্রেসিডেন্ট পেয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। তবে কোনো নারী মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেননি বা নির্বাচিতও হননি। এ ক্ষেত্রে নির্বাচনে কয়েকজন অংশ নিলেও নির্বাচিত হতে পারেননি। গেল দুবার হিলারি ক্লিনটন ব্যর্থ হয়েছেন। সর্বশেষ নির্বাচনে কমলা হ্যারিস, এলিজাবেথ ওয়ারেনের মতো প্রার্থীরা ছিলেন। কিন্তু তাঁদের কেউই জায়গাটি নিতে পারেননি। হিলারি ছাড়া আর কেউ এমনকি দলীয় মনোনয়নই পাননি। এ ক্ষেত্রে ‘নারীকে ছোট করে দেখার’ অভিযোগটি বেশ জোরেশোরে উঠেছে। এই অভিযোগের ভিত্তিও বেশ শক্ত। যে কারণে নতুন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে বিভিন্ন পদে নারী কর্মকর্তা নিয়োগের বিষয়টি বেশ জোরের সঙ্গে ঘোষণা করতে দেখা যায়। শুধু প্রেসিডেন্ট কেন, একজন বাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে কমলা হ্যারিসকে পেতে যুক্তরাষ্ট্রকে অপেক্ষা করতে হয়েছে ২৪৪ বছর। 

কথা হলো এত উন্নয়ন, এত প্রাযুক্তিক সামর্থ্য, বিজ্ঞান ও গবেষণায় এত অগ্রগতি সত্ত্বেও একটি দেশ কেন বর্ণবাদের মতো বিষ সযত্নে পুষে রাখে। একটু উদাহরণ দিলেই বিষয়টি পরিষ্কার হবে। যুক্তরাষ্ট্রের নানা সমস্যার পেছনে অভিবাসীদের দায়ী করার প্রবণতা বেশ পুরোনো। অথচ এই অভিবাসীরা প্রতি বছর বিরাট অঙ্কের অর্থ কর হিসেবে পরিশোধ করে। দেশটির উৎপাদন সক্ষমতা, উচ্চশিক্ষাসহ বহু ক্ষেত্রেই অভিবাসীরাই নেতৃত্ব দিচ্ছে। এক সিলিকন ভ্যালির দিকে তাকালেই বিষয়টি স্পষ্ট হবে। তাহলে যেকোনো সামাজিক বা অর্থনৈতিক সংকটে অভিবাসীদের দিকে আঙুল তোলার প্রবণতাটি কেন? উত্তর সহজ, উদোর পিণ্ডি বুধোর ঘাড়ে না চাপলে উদো দায়মুক্ত হবে কী করে? ঠিক, প্রশাসনই সুকৌশলে এই কাজটি করে। তারা নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকতে বরাবরই একটি বলির পাঁঠা খুঁজে বের করে। যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসীরাই এই বলির পাঁঠা। 

বর্ণবাদের বিরুদ্ধে আমৃত্যু লড়ে গেছেন নোবেলজয়ী আফ্রিকান-আমেরিকান মানবাধিকার কর্মী মার্টিন লুথার কিং। তাঁর সবচেয়ে বিখ্যাত বক্তৃতা ‘আই হ্যাভ আ ড্রিম’ তাঁকে অমর করে রেখেছে। মার্টিনের আন্দোলনের মূল কথাই ছিল বর্ণ, গোত্রের কারণে কেউ যেন বৈষম্যের শিকার না হন। সবাই যেন সব ক্ষেত্রে সমান অধিকার পান। ১৯৬৮ সালের ৪ এপ্রিল মহান এই নেতাকেও প্রাণ দিতে হয়েছে শ্বেতাঙ্গ উগ্রপন্থী আততায়ীর গুলিতে। প্রতি বছর কিংয়ের জন্য আলাদা একটি দিন রয়েছে। সেই দিনটিতে কিংকে স্মরণ করা হয়। নেতারা বক্তৃতা করেন। কিন্তু কিংয়ের যে স্বপ্ন, তা আজও অধরা থেকে গেছে। এমনকি এই করোনাকালে টিকা কার্যক্রমের ক্ষেত্রেও উঠেছে বর্ণবাদের অভিযোগ। অথচ এমন হওয়ার কথা ছিল না। বহু বর্ণের মানুষের সম্মিলনে গড়ে ওঠা দেশটির হওয়ার কথা ছিল সত্যিকারের উদার এক দেশ। বাইডেন অনেক আশ্বাস দিচ্ছেন। তিনি সফল হোন—এটাই সবাই চায়। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

খুলনায় এনসিপির শ্রমিক সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতাকে মাথায় গুলি

বিএনপি মনোনীত প্রার্থীর দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা

প্রথম আলো-ডেইলি স্টারে হামলা: লুটের টাকায় টিভি-ফ্রিজ কিনেছিলেন গ্রেপ্তার নাইম

তারা মধ্যযুগীয় কায়দায় পুড়িয়ে মারতে চেয়েছে: নূরুল কবীর

মনোনয়নপত্র কিনে ভুল করেছি, জমা দেব না: কুমিল্লার সাবেক মেয়র সাক্কু

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ট্রাম্পকে তরুণদের ‘রোল মডেল’ বললেন এক সময়ের ঘোর বিরোধী নিকি মিনাজ

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
‘আমেরিকাফেস্ট’ সম্মেলনের মঞ্চে নিকি মিনাজ। ছবি: সংগৃহীত
‘আমেরিকাফেস্ট’ সম্মেলনের মঞ্চে নিকি মিনাজ। ছবি: সংগৃহীত

যুক্তরাষ্ট্রের অ্যারিজোনায় রক্ষণশীল সংগঠন টার্নিং পয়েন্ট ইউএসএ আয়োজিত ‘আমেরিকাফেস্ট’ সম্মেলনে হঠাৎ উপস্থিত হয়ে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্সের প্রশংসা করেছেন মার্কিন র‍্যাপ তারকা নিকি মিনাজ। রোববার (২১ ডিসেম্বর) অনুষ্ঠিত ওই সম্মেলনে তিনি তরুণ পুরুষদের জন্য ট্রাম্প ও ভ্যান্সকে ‘রোল মডেল’ হিসেবে উল্লেখ করেন। মিনাজের এই মন্তব্য রাজনৈতিক অঙ্গনে বেশ চমক সৃষ্টি করেছে।

সোমবার (২২ ডিসেম্বর) ‘ফরচুন’ জানিয়েছে, এই সম্মেলনটি প্রয়াত রক্ষণশীল কর্মী চার্লি কার্কের স্মরণে আয়োজন করা হয়। মঞ্চে নিকি মিনাজের সাক্ষাৎকার নেন চার্লি কার্কের স্ত্রী ও বর্তমানে টার্নিং পয়েন্ট ইউএসএ-এর নেতৃত্বে থাকা অ্যারিকা কার্ক। আলোচনায় ট্রাম্পের প্রতি নতুন সমর্থনের কথা জানান মিনাজ—যদিও অতীতে তিনি ট্রাম্পের কঠোর সমালোচক ছিলেন। পাশাপাশি তিনি নাইজেরিয়ায় খ্রিষ্টানদের ওপর সহিংসতারও নিন্দা জানান।

মিনাজ ক্যালিফোর্নিয়ার ডেমোক্র্যাট গভর্নর গ্যাভিন নিউসমকে কটাক্ষ করে ট্রাম্পের দেওয়া ‘নিউ-স্কাম’ নামটি ব্যবহার করেন। বর্তমান প্রশাসনের প্রশংসা করে তিনি বলেন—বর্তমান প্রশাসনে হৃদয় ও আত্মা আছে এবং ট্রাম্প ও ভ্যান্স দুজনই এমন নেতা, যাদের সঙ্গে সাধারণ মানুষ সহজে নিজেদের মিল খুঁজে পায়।

এদিকে মঞ্চে এক অস্বস্তিকর মুহূর্ত তৈরি হয়, যখন ভ্যান্সের রাজনৈতিক দক্ষতার প্রশংসা করতে গিয়ে মিনাজ তাঁকে ‘অ্যাসাসিন’ বলে ফেলেন। কথাটি বলার পরই তিনি থেমে যান এবং পরিস্থিতি কিছুটা বিব্রতকর হয়ে ওঠে। চার্লি কার্ক হত্যাকাণ্ডের শিকার হওয়ায় শব্দটি উপস্থিত অনেকের মনে আঘাত দেয়।

সম্প্রতি মিনাজ ট্রাম্পের ‘ট্রুথ সোশ্যাল’-এ দেওয়া নাইজেরিয়ায় খ্রিষ্টান নির্যাতন সংক্রান্ত একটি পোস্ট শেয়ার করেছিলেন, যেখানে সম্ভাব্য নিষেধাজ্ঞার কথা বলা হয়। এ নিয়ে তিনি জাতিসংঘে মার্কিন মিশনে আয়োজিত এক প্যানেল আলোচনাতেও অংশ নেন।

নিজের পরিবর্তিত অবস্থান নিয়ে মিনাজ বলেন, ‘মত বদলানো দোষের নয়—মনের কথা বলাই এখন সবচেয়ে বড় অপরাধ হয়ে গেছে।’ বিনোদন জগৎ থেকে সমালোচনার প্রসঙ্গে জানান, তিনি এসব নিয়ে ভাবেন না। একসময় ট্রাম্পের অভিবাসন নীতির তীব্র বিরোধিতা করা এই শিল্পী এখন প্রকাশ্যেই বলছেন, তাঁর মত বদলানো ঠিকই আছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

খুলনায় এনসিপির শ্রমিক সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতাকে মাথায় গুলি

বিএনপি মনোনীত প্রার্থীর দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা

প্রথম আলো-ডেইলি স্টারে হামলা: লুটের টাকায় টিভি-ফ্রিজ কিনেছিলেন গ্রেপ্তার নাইম

তারা মধ্যযুগীয় কায়দায় পুড়িয়ে মারতে চেয়েছে: নূরুল কবীর

মনোনয়নপত্র কিনে ভুল করেছি, জমা দেব না: কুমিল্লার সাবেক মেয়র সাক্কু

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

যুদ্ধের মধ্যেই গাজায় দুবার সন্তান প্রসবের ভয়াবহ স্মৃতি হাদিলের

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
হাদিল আল ঘেরবাওয়ির কোলে ছেলে জাওয়াদ। ছবি: দ্য গার্ডিয়ান
হাদিল আল ঘেরবাওয়ির কোলে ছেলে জাওয়াদ। ছবি: দ্য গার্ডিয়ান

‘এই বিভীষিকা আমি কখনো ভুলতে পারব না’—বলছিলেন হাদিল আল ঘেরবাওয়ি। ২৬ বছর বয়সী এই ফিলিস্তিনি নারী গাজা যুদ্ধে চরম ক্ষুধা, ভয় আর অনিশ্চয়তার মধ্যেই দুটি গর্ভধারণ ও দুবার সন্তান জন্ম দিয়েছেন।

সোমবার (২২ ডিসেম্বর) যুক্তরাজ্যের সংবাদমাধ্যম গার্ডিয়ান-ভিত্তিক ইনডিপেনডেন্ট জানিয়েছে, ২০২৩ সালের অক্টোবরে যুদ্ধ শুরুর সময় হাদিল সাত মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। ঝুঁকিপূর্ণ গর্ভধারণ হওয়ায় তিনি নিয়মিত ডাক্তার দেখাতেন, আলট্রাসাউন্ড করাতেন এবং ভিটামিন নিতেন। গাজা সিটির পূর্বাংশে ইসরায়েল সীমান্তের কাছে বসবাস করায় যুদ্ধ শুরুর প্রথম দিনই তিনি গাজার পশ্চিম অংশে বসবাস করা বাবা-মায়ের বাড়িতে চলে যান। হাদিল ভেবেছিলেন, কয়েক দিনের মধ্যেই তিনি আবার স্বামীর বাড়িতে ফিরে যাবেন। কিন্তু এরপর পরিবারটি অন্তত ১৩ বার বাস্তুচ্যুত হয় এবং স্বামীর বাড়িটিও একদিন পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে যায়।

২০২৩ সালের অক্টোবর মাসেই গাজা সিটিতে একটি আবাসিক ভবনে বড় ধরনের হামলার কাছাকাছি অবস্থানে ছিলেন হাদিল। তাঁর কাছে এটিকে একটি ভূমিকম্প মনে হয়েছিল। পরে আশ্রয় নেন আল-শিফা হাসপাতালে। সেখানে অন্যান্য আশ্রয়প্রার্থীর ভিড় এত বেশি ছিল যে, বাথরুম ব্যবহার করাও প্রায় অসম্ভব ছিল। সেদিনের দৃশ্য আজও তাড়া করে ফেরে হাদিলকে। স্তূপ করে রাখা লাশ, ড্রামে রাখা খণ্ড-বিখণ্ড অঙ্গপ্রত্যঙ্গ আর তীব্র গন্ধ। তিনি বলেন, ‘আমি গর্ভবতী ছিলাম, সহ্য করতে পারিনি।’

অবস্থা এমন দাঁড়ায় যে—নিরাপত্তার আশায় এবার তিনি ও তাঁর স্বামী খান ইউনিসের নাসের হাসপাতালে যান এবং চিকিৎসকদের কাছে আগেভাগেই সন্তান প্রসবের অনুরোধ করেন। হাদিল যখন সন্তান প্রসব করছিলেন, তখন হাসপাতালটির পাশের ভবনেই হামলা হয় এবং আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। বিশৃঙ্খল এই পরিস্থিতিতে সন্তান বদলে যাওয়ার আতঙ্কও গ্রাস করেছিল হাদিলকে। তবে আতঙ্কের মধ্যেই শেষ পর্যন্ত তিনি ছেলে জাওয়াদের জন্ম দেন।

নবজাতক নিয়ে হাদিলকে ৩০ জনের সঙ্গে একটি কক্ষে গাদাগাদি করে থাকতে হয়েছিল। সেই সময়টিতে সেলাইয়ের তীব্র ব্যথার মধ্যেও তিনি কোনো ওষুধ পাননি; রাতের পর রাত চুপচাপ এই ব্যথা সহ্য করেছেন। তাঁর ধারণা, প্রসবের পর তিনি বিষণ্নতায় আক্রান্ত হয়েছিলেন।

কয়েক মাস পর তাঁরা একটি তাঁবুতে ওঠেন। বালু, পোকামাকড় আর প্রচণ্ড ঠান্ডায় একের পর এক নবজাতকের মৃত্যুর খবরে সারাক্ষণ আচ্ছন্ন হয়ে থাকতেন হাদিল। রাতে ছেলেকে জড়িয়ে ধরে বারবার জেগে উঠতেন। জাওয়াদের বয়স ৯ মাস হলে আবারও গর্ভবতী হন তিনি। হাদিল বলেন, ‘তাঁবুতে থেকে আরেকটি সন্তান—ভীষণ ধাক্কা খেয়েছিলাম।’

চলতি বছরের জানুয়ারিতে সাময়িক যুদ্ধবিরতির খবর কিছুটা আশা জাগিয়েছিল তাঁদের। সেই আশা থেকেই ঝুঁকি নিয়ে তাঁরা নিজেদের বাড়িতে ফিরে যান। কিন্তু ছয় সপ্তাহ পরই ভেঙে যায় যুদ্ধবিরতি। পেটে সন্তান নিয়ে আবারও পালাতে হয় হাদিলকে। পালানোর পর তাঁদের বাড়িটিও ধ্বংস হয়ে যায়। যুদ্ধের মধ্যে দ্বিতীয় গর্ভধারণ হাদিলের জন্য ছিল সবচেয়ে কঠিন। এই সন্তান পেটে রাখার ৯ মাসই তাঁর যুদ্ধের মধ্যে কেটেছে। এমনও দিন গেছে, সারা দিন শুধু একটি শসা খেয়ে কাটিয়েছেন। আর কোথাও এক মুঠো খাবার পেলে নিজের ভাগটুকু তিনি ছেলে জাওয়াদকে দিতেন।

দ্বিতীয়বার প্রসবের সময়ও তিনি বাবা-মায়ের বাড়িতে গিয়ে ওঠেন। কারণ ওই বাড়ি থেকে কাছাকাছি একটি হাসপাতালে নবজাতক সুরক্ষার জন্য ইনকিউবেটর ছিল। এক রাতে প্রসবব্যথা শুরু হলে, লিফট না থাকায় পাঁচ তলা থেকে হেঁটেই নামতে হয় হাদিলকে। পরে তিনি অ্যাম্বুলেন্সে ওঠেন এবং ওই হাসপাতালে দ্বিতীয় ছেলে ফারেসের জন্ম দেন। জন্মের সময় ফারেসের ওজন ছিল মাত্র ২ কেজি।

এবারে অ্যানেসথেসিয়া ছাড়াই সেলাই দেওয়া হয় হাদিলকে। আর অন্যকে সুযোগ করে দিতে কিছুক্ষণের মধ্যেই বিছানা খালি করে তাঁকে চেয়ারে বসে থাকতে হয়। ফারেসের জন্মের পাঁচ ঘণ্টা পর, চরম ক্লান্তি ও ব্যথা নিয়ে তিনি আবার পাঁচ তলা সিঁড়ি বেয়ে বাবা-মায়ের ঘরে ফেরেন। এই যুদ্ধ, তাঁর শরীর ও মনে রেখে গেছে এমন ক্ষত—যা ভুলবার নয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

খুলনায় এনসিপির শ্রমিক সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতাকে মাথায় গুলি

বিএনপি মনোনীত প্রার্থীর দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা

প্রথম আলো-ডেইলি স্টারে হামলা: লুটের টাকায় টিভি-ফ্রিজ কিনেছিলেন গ্রেপ্তার নাইম

তারা মধ্যযুগীয় কায়দায় পুড়িয়ে মারতে চেয়েছে: নূরুল কবীর

মনোনয়নপত্র কিনে ভুল করেছি, জমা দেব না: কুমিল্লার সাবেক মেয়র সাক্কু

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

আসাদের খালি হয়ে যাওয়া কুখ্যাত কারাগারগুলো ভরে উঠছে আবার

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
বাশার আল-আসাদের পতনের পর খালি হয়ে গিয়েছিল হোমসের এই কারাগারটি। ছবি: রয়টার্স
বাশার আল-আসাদের পতনের পর খালি হয়ে গিয়েছিল হোমসের এই কারাগারটি। ছবি: রয়টার্স

বাশার আল-আসাদের পতনের পর সিরিয়ার মানুষ ভেবেছিল—দেশটির কুখ্যাত কারাগার অধ্যায়ের অবসান ঘটেছে। বিদ্রোহীরা জেলখানার দরজা ভেঙে বন্দীদের মুক্ত করেছিল, পরিবারের লোকেরা ছুটে গিয়েছিল নিখোঁজ স্বজনদের খোঁজে। কিন্তু এক বছর না পেরোতেই সেই কারাগারগুলো আবার ভরে উঠছে। এবার নতুন সরকারের অধীনেই সিরিয়ায় আবারও ফিরে এসেছে গ্রেপ্তার, নির্যাতন ও চাঁদাবাজির অভিযোগ।

রয়টার্সের এক অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, সিরিয়ার বর্তমান প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারার নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে গত এক বছরে অন্তত ৮২৯ জন নিরাপত্তাজনিত কারণে আটক হয়েছেন। প্রকৃত সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। আটক ব্যক্তিদের বড় অংশই কোনো আনুষ্ঠানিক অভিযোগ বা আদালতের আদেশ ছাড়াই বন্দী রয়েছেন।

সোমবার (২২ ডিসেম্বর) প্রকাশিত রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আসাদ-পরবর্তী সিরিয়ায় প্রথম দফার গ্রেপ্তার শুরু হয়েছিল বিদ্রোহীদের বিজয়ের পরপরই। সে সময় মূলত আসাদের আমলের সেনা সদস্য ও কর্মকর্তাদের আটক করা হয়েছিল। পরে শীতের শেষ দিকে উপকূলীয় অঞ্চলে সহিংসতার জের ধরে আলাউইত সম্প্রদায়ের শত শত মানুষ গ্রেপ্তার হন। বসন্ত ও গ্রীষ্মে দ্রুজ অধ্যুষিত দক্ষিণাঞ্চলেও ব্যাপক ধরপাকড় চলে। একই সঙ্গে সুন্নি, খ্রিষ্টান ও শিয়া সম্প্রদায়ের লোকজনও ‘নিরাপত্তা ঝুঁকি’ বা আসাদের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অস্পষ্ট অভিযোগে আটক হন।

রয়টার্স জানিয়েছে, আসাদ আমলের অন্তত ২৮টি কারাগার ও আটক কেন্দ্র আবার সক্রিয় হয়েছে। এগুলোর অনেকগুলোই অতীতে নির্যাতনের জন্য কুখ্যাত ছিল। যদিও বর্তমান সরকার বলছে, অপরাধীদের বিচারের প্রয়োজনে এসব কেন্দ্র ব্যবহার করা হচ্ছে এবং অনেক বন্দীকে ইতিমধ্যে মুক্তি দেওয়া হয়েছে, তবে কোনো নির্দিষ্ট পরিসংখ্যান তারা প্রকাশ করেনি।

সাক্ষাৎকারে সাবেক বন্দী ও স্বজনেরা জানিয়েছেন, আটক কেন্দ্রগুলোতে ভয়াবহ মানবেতর পরিস্থিতি বিরাজ করছে। গাদাগাদি করে বন্দী রাখা, খাবার ও চিকিৎসার অভাব, ত্বকের রোগ এবং নিয়মিত মারধরের অভিযোগ রয়েছে। অন্তত ১১ জন বন্দী কারা হেফাজতে মারা গেছেন বলে নথিভুক্ত করেছে রয়টার্স। এদের মধ্যে কয়েকজনের মৃত্যুর খবর পরিবার জানতই না—দাফন সম্পন্ন হওয়ার পর তারা বিষয়টি জানতে পারে।

চাঁদাবাজিও নতুন করে মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। ১৪টি পরিবার জানিয়েছে, স্বজনকে মুক্তির বিনিময়ে ৫০০ থেকে ১৫ হাজার ডলার পর্যন্ত দাবি করা হয়েছে। কিছু ক্ষেত্রে এই অঙ্ক ৯০ হাজার ডলার ছাড়িয়েছে। অর্থ পরিশোধের পরও অনেকেই মুক্তি পাননি।

এদিকে সরকার স্বীকার করেছে, প্রতিষ্ঠানগুলোর পুনর্গঠনের সময় কিছু ‘ফাঁকফোকর’ তৈরি হয়েছে এবং কিছু নিরাপত্তা সদস্য নীতিমালা লঙ্ঘন করেছে। তাদের দাবি, চাঁদাবাজি ও সহিংসতার ঘটনায় অন্তত ১৫৯ জন নিরাপত্তা সদস্যকে শাস্তি দেওয়া হয়েছে।

তবে মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলছে, ব্যাপক আটক ও গুমের অভিযোগ নতুন সরকারের বিশ্বাসযোগ্যতাকে প্রশ্নের মুখে ফেলছে। জাতিসংঘের মানবাধিকার দপ্তরও আসাদের পতনের পর ‘বিচারবহির্ভূত হত্যা ও নির্বিচার আটক’-এর তথ্য পাওয়ার কথা জানিয়েছে।

আসাদের শাসনামলের মতো নির্মম নির্যাতন না হলেও, পুরোনো কারাগার ব্যবস্থার পুনরুজ্জীবন সিরিয়ার নতুন ভবিষ্যৎ নিয়ে গভীর উদ্বেগ তৈরি করছে। মানবাধিকারকর্মীদের ভাষায়, ‘শাসক বদলেছে, কিন্তু কারাগারের ছায়া এখনো কাটেনি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

খুলনায় এনসিপির শ্রমিক সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতাকে মাথায় গুলি

বিএনপি মনোনীত প্রার্থীর দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা

প্রথম আলো-ডেইলি স্টারে হামলা: লুটের টাকায় টিভি-ফ্রিজ কিনেছিলেন গ্রেপ্তার নাইম

তারা মধ্যযুগীয় কায়দায় পুড়িয়ে মারতে চেয়েছে: নূরুল কবীর

মনোনয়নপত্র কিনে ভুল করেছি, জমা দেব না: কুমিল্লার সাবেক মেয়র সাক্কু

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

মস্কোতে গাড়িবোমা হামলায় রুশ জেনারেল সারভারভ নিহত

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
জেনারেল সারভারভের গাড়ির নিচে একটি শক্তিশালী বিস্ফোরক ডিভাইস পেতে রাখা হয়েছিল। ছবি: রয়টার্সের সৌজন্যে
জেনারেল সারভারভের গাড়ির নিচে একটি শক্তিশালী বিস্ফোরক ডিভাইস পেতে রাখা হয়েছিল। ছবি: রয়টার্সের সৌজন্যে

রাশিয়ার রাজধানী মস্কোতে এক ভয়াবহ গাড়িবোমা হামলায় দেশটির শীর্ষস্থানীয় এক জেনারেল নিহত হয়েছেন। আজ সোমবার (২২ ডিসেম্বর) সকালে এ ঘটনা ঘটে বলে রুশ কর্মকর্তারা নিশ্চিত করেছেন।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি রাশিয়ার ইনভেস্টিগেটিভ কমিটির বরাতে জানিয়েছে, নিহত ব্যক্তির নাম লেফটেন্যান্ট জেনারেল ফানিল সারভারভ (৫৬)। তিনি রাশিয়ার সশস্ত্র বাহিনীর অপারেশনাল ট্রেনিং বিভাগের প্রধান ছিলেন।

তদন্ত কর্মকর্তাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, আজ স্থানীয় সময় সকালে মস্কোর দক্ষিণাঞ্চলের একটি অ্যাপার্টমেন্ট ব্লকের পার্কিং লটে এই বিস্ফোরণ ঘটে। জেনারেল সারভারভের গাড়ির নিচে একটি শক্তিশালী বিস্ফোরক ডিভাইস পেতে রাখা হয়েছিল। গাড়িটি চালু করার পরপরই সেটির বিস্ফোরণ ঘটে। বিস্ফোরণে গুরুতর আহত অবস্থায় সারভারভকে হাসপাতালে নেওয়া হলে সেখানে তাঁর মৃত্যু হয়।

ঘটনাস্থল থেকে পাওয়া ছবিতে দেখা গেছে, একটি সাদা রঙের গাড়ি বিস্ফোরণে দুমড়েমুচড়ে গেছে এবং সেটির যন্ত্রাংশ উড়ে গিয়ে পাশে থাকা অন্য যানবাহনের ওপর পড়েছে।

রুশ ইনভেস্টিগেটিভ কমিটি এ ঘটনাকে ‘পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড’ হিসেবে অভিহিত করে তদন্ত শুরু করেছে। প্রাথমিক তদন্তে রুশ কর্মকর্তাদের ধারণা, এই হামলার নেপথ্যে ইউক্রেনীয় গোয়েন্দা সংস্থার হাত থাকতে পারে। তবে ইউক্রেন এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক মন্তব্য করেনি।

ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ জানিয়েছেন, জেনারেল সারভারভের মৃত্যুর খবর পাওয়ার পরপরই প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে তা জানানো হয়েছে।

৫৬ বছর বয়সী ফানিল সারভারভ রুশ সামরিক বাহিনীর অত্যন্ত অভিজ্ঞ কর্মকর্তা ছিলেন। রুশ গণমাধ্যমের তথ্যমতে, ফানিল সারভারভ নব্বইয়ের দশক এবং ২০০০ সালের শুরুতে তিনি ওসেটিয়ান-ইঙ্গুশ সংঘাত ও চেচেন যুদ্ধে সরাসরি অংশ নিয়েছিলেন। ২০১৫-১৬ সালে সিরিয়ায় রুশ সামরিক অভিযানেও তিনি নেতৃত্ব দেন।

২০২২ সালে ইউক্রেনে পূর্ণমাত্রার সামরিক অভিযান শুরু করার পর থেকে মস্কোতে হাইপ্রোফাইল ব্যক্তিদের ওপর বেশ কয়েকটি বড় হামলার ঘটনা ঘটেছে। ২০২২ সালে পুতিনের ঘনিষ্ঠ মিত্র আলেকজান্ডার দুগিনের কন্যা দারিয়া দুগিনা গাড়িবোমা হামলায় নিহত হন।

চলতি বছরের এপ্রিলে জেনারেল ইয়ারোস্লাভ মোসকালিক ও ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে জেনারেল ইগর কিরিলভও একই ধরনের হামলায় প্রাণ হারান।

নীতিগত কারণে ইউক্রেন সাধারণত এ ধরনের হামলার দায় স্বীকার করে না। তবে গত বছর জেনারেল কিরিলভ নিহতের ঘটনায় ইউক্রেনীয় নিরাপত্তা সংস্থার জড়িত থাকার ইঙ্গিত দিয়েছিল বিবিসির একটি সূত্র।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

খুলনায় এনসিপির শ্রমিক সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতাকে মাথায় গুলি

বিএনপি মনোনীত প্রার্থীর দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা

প্রথম আলো-ডেইলি স্টারে হামলা: লুটের টাকায় টিভি-ফ্রিজ কিনেছিলেন গ্রেপ্তার নাইম

তারা মধ্যযুগীয় কায়দায় পুড়িয়ে মারতে চেয়েছে: নূরুল কবীর

মনোনয়নপত্র কিনে ভুল করেছি, জমা দেব না: কুমিল্লার সাবেক মেয়র সাক্কু

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত