কীভাবে ভাগ হবে বিল গেটসের ১৪৬ বিলিয়ন ডলারের সম্পদ

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ : ০৪ মে ২০২১, ১৬: ০৫
আপডেট : ০৪ মে ২০২১, ১৬: ০৬

ঢাকা: কয়েক দশক ধরে বিশ্বব্যাপী কোটি কোটি ডলারের দাতব্য কাজের তদারিক করে আসছেন বিল গেটস এবং মেলিন্ডা গেটস। হঠাৎ করেই বিবাহ বিচ্ছেদের ঘোষণা দিয়েছেন এ দম্পতি।

যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় সোমবার তাঁরা টুইটারে ঘোষণা দেন, ২৭ বছরের যৌথ জীবনের সমাপ্তি ঘটাতে যাচ্ছেন তাঁরা। এতে প্রযুক্তি শিল্প, বিনিয়োগ ব্যবসা ও রিয়েল এস্টেট হোল্ডিংয়ের বিশাল পোর্টফোলিও এবং বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্য, জলবায়ু পরিবর্তন নীতি, সামাজিক সাম্য ও নারীর ক্ষমতায়নসহ নানা দাতব্য কর্মকাণ্ডগুলোও এখন বিভক্ত হয়ে পড়ার ঝুঁকিতে পড়েছে।

ব্লুমবার্গ বিলিয়নেয়ার্স সূচক অনুসারে, এই দম্পিতর সম্পদের পরিমান আনুমানিক ১৪৬ বিলিয়ন ডলার। ডিভোর্সের ঘোষণায় তাঁরা আর্থিক পরিকল্পনার কোনও প্রকাশ্য ইঙ্গিত দেননি। যদিও জোর দিয়ে বলেছেন, জনহিতকর কাজ অব্যাহত রাখতে তাঁরা পরস্পরকে সহযোগিতা করবেন।

মাইক্রোসফটের সহ-প্রতিষ্ঠাতা বিল গেটস (৬৫) বর্তমানে বিশ্বের চতুর্থ শীর্ষ ধনী। আর মাইক্রোসফটের সাবেক প্রোডাক্ট ম্যানেজার মেলিন্ডা গেটস (৫৬) বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশনের সহ-পরিচালক। এরই মধ্যে তাঁরা ফাউন্ডেশনে ৫০ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি অর্থ দিয়েছেন।

বিচ্ছেদের পর তাঁরা ফাউন্ডেশনের কো–চেয়ার এবং ট্রাস্টি হিসেবে থাকবেন বলে সংগঠনের একজন মুখপাত্র ই–মেইল বিবৃতিতে জানিয়েছেন।

বিবৃতি বলা হয়েছে, তাঁদের ভূমিকা বা সংস্থার কোনও পরিবর্তনের পরিকল্পনা নেই। তাঁরা কৌশল নির্ধারণ এবং অনুমোদনের জন্য ফাউন্ডেশনের ইস্যুগুলো মূল্যায়ন করবেন। ফাউন্ডেশনের জন্য সামগ্রিক দিকনির্দেশনা ঠিক করতে একসাথে কাজ চালিয়ে যাবেন।

সোমবার কিং কাউন্টিতে বিবাহবিচ্ছেদের আবেদন করেন এই দম্পতি। আদালতে দেওয়া নথির একটি অনুলিপি অনলাইনে প্রকাশ হয়েছে। শোবিজ ম্যাগাজিন টিএমজেড–এর ওয়েবসাইটে প্রকাশিত বিবাহবিচ্ছেদের আবেদনের অনুলিপি অনুসারে, আবেদনে শুধু বিচ্ছেদের কথা বলা হয়েছে। সেখানে কোনো শর্তের বিবরণ নেই। এই বিবাহ বিচ্ছেদকে টিএমজেড ‘অবিচ্ছিন্ন বিচ্ছেদ’ বলে অভিহিত করেছে।

২০১৯ সালে বিশ্বের অন্যতম ব্যয়বহুল বিচ্ছেদর ঘটনা ঘটে। এ বছর অ্যমাাজনের জেফ বেজোস এবং ম্যাকেনজি স্কটের মধ্যকার বিচ্ছেদ ছিল সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিশ্বের শীর্ষ ধনীদের মধ্যে দ্বিতীয় ব্যয়বহুল বিবাহ বিচ্ছেদ।

বিচ্ছেদের পর অ্যামাজন ডটকমের সম্পতি ভাগ হয়ে যায়। ম্যাকেনজি হয়ে যান বিশ্বের শীর্ষ ধনী নারী। এর পরে বিশ্বের অন্যতম প্রভাবশালী সমাজসেবী হয়ে ওঠেন ম্যাকেনজি।

কিন্তু বিল এবং মেলিন্ডা গেটসের জন্য সম্পত্তির ভাগবাটোয়ারা বেজোস দম্পতির মতো অতোটা সহজ হবে না। গেটস দম্পিতর ক্ষেত্রে এটি বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবেই দেখা হচ্ছে। কারণ বেজোসের সম্পতি মূলত অ্যামাজনের শেয়ারেই কেন্দ্রীভূত ছিল।

বিল গেটসের মোট সম্পদের মূল উৎস মাইক্রোসফট। তবে কোম্পানির শেয়ার থেকে তিনি যা পেয়েছেন সেটি তার মোট সম্পত্তির মাত্র ২০ শতাংশ বা তারও কম। তিনি বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশনে তার সম্পত্তির সিংহভাগ স্থানান্তর করেছেন। গত বছর মাইক্রোসফটের বোর্ড ছেড়ে যাওয়ার পর কোম্পানিতে তার সঠিক অংশটি এখনো প্রকাশ করা হয়নি।

গেটসের বৃহত্তম সম্পত্তি হলো ক্যাসকেড ইনভেস্টমেন্ট। এই হোল্ডিং সংস্থাটি তিনি মাইক্রোসফটের শেয়ার বিক্রি এবং লভ্যাংশ থেকে তৈরি করেছেন। ক্যাসকেডের মাধ্যমে তিনি রিয়েল এস্টেট, জ্বালানি এবং হসপিটালিটির পাশাপাশি কানাডিয়ান ন্যাশনাল রেলওয়ে এবং ডিয়ার অ্যান্ড কোংসহ কয়েক ডজন সরকারি সংস্থাতেও বিনিয়োগ করেছেন।

সান ফ্রান্সিসকোর স্লাইডম্যান অ্যান্ড ব্যানক্রফ্ট এলএলপি-এর অংশীদার এবং ডিভোর্স অ্যাটর্নি মনিকা মাজ্জেই বলেন, বিচ্ছেদের সময় ফাউন্ডেশন এবং পারিবারিক বিষয়গুলো কীভাবে পরিচালিত হবে সেটিই সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পায়। আমি দেখেছি বড় বিচ্ছেদগুলোতেও এসব দুই ভাগে ভাগ হয়ে যায়। এতে প্রতিষ্ঠানগুলো স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে।

গেটস দম্পতি কীভাবে তাঁদের সম্পদ ভাগ করতে পারেন ওয়াশিংটনের আইন থেকে সে সম্পর্কে কিছু সূত্র পাওয়া যেতে পারে। এই অঙ্গরাজ্যের আইনে, বিয়ের সময় অর্জিত যে কোনও কিছুরই উভয়ে সমান অংশীদার বলে বিবেচিত হন। তবে এর অর্থ এই নয় যে, সম্পত্তি অর্ধেক করে ফেলাটা বাধ্যতামূলক।

ম্যাককিনলে আরভিনের সঙ্গে যুক্ত ওয়াশিংটনের পারিবারিক আইনজীবী জ্যাকজর্জ বলেন, এটি ৫০–৫০ অংশে ভাগ করা বাধ্যতামূলক নয়। ন্যায়ের ওপর ভিত্তি করে আদালত কম-বেশি করতে পারেন। জনগণ কখনই কারো সম্পত্তি ভাগ করতে পারেন না। কারণ ভাগবাটোয়ারার ব্যাপারগুলো ব্যক্তিগত চুক্তির আড়ালে লুকানো যায়।

ওয়াশিংটনের পারিবারিক আইন অনুযায়ী, বিচ্ছেদের আবেদন দাখিলের পর ৯০ দিন সুপ্তকাল হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এরপর বিচারক চূড়ান্ত আদেশ দেন। গেটস দম্পতির বিচ্ছেদ নথিতে দেখা যাচ্ছে, বিচ্ছেদের আবেদনকারী হিসেবে রয়েছে মেলিন্ডার নাম। আবেদনে দুজনেই স্বাক্ষর করেছেন এবং উল্লেখিত তারিখে তাঁদের বিচ্ছেদ কার্যকর করার আবেদন করেছেন।

এদিকে এই খবরে গেটস দম্পতির বড় মেয়ে জেনিফার ইনস্টাগ্রামে লিখেছেন, এটা আমাদের পুরো পরিবারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জের সময়।

গেটস দম্পতির তিন সন্তান। তাঁদের কনিষ্ঠ সন্তানের বয়স ১৮ বছর।

আরও পড়ুন:

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

সরকারি চাকরিজীবীরা সম্পদের হিসাব না দিলে যেসব শাস্তির মুখোমুখি হতে পারেন

ভারতের পাল্টা আক্রমণে দিশেহারা অস্ট্রেলিয়া

ঢাকা কলেজে সংঘর্ষকালে বোমা বিস্ফোরণে ছিটকে পড়েন সেনাসদস্য—ভাইরাল ভিডিওটির প্রকৃত ঘটনা

ঐশ্বরিয়ার বিচ্ছেদের খবরে মুখ খুললেন অমিতাভ

লক্ষ্মীপুরে জামায়াত নেতাকে অতিথি করায় মাহফিল বন্ধ করে দেওয়ার অভিযোগ

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত