মুফতি আবু দারদা
কোরবানির ধারাবাহিকতা আদম (আ.)-এর যুগ থেকেই চালু হয়েছে। কোরআনে কাবিল ও হাবিলের কোরবানির কথা এসেছে। তাঁদের দুজনের কোরবানি থেকে হাবিলের কোরবানি কবুল হয়েছিল। তবে মুসলিম সমাজে কোরবানি ইবরাহিম (আ.)-এর অনুসরণে পালিত হয়। তাঁর স্মৃতি রক্ষার্থে এ উম্মতের ওপর কোরবানি ওয়াজিব করে দেওয়া হয়েছে। মহানবী (সা.) কোরবানির অনেক মর্যাদা বর্ণনা করেছেন।
সাহাবায়ে কেরাম রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে জিজ্ঞেস করলেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল, কোরবানি প্রথাটা কী?’ রাসুলুল্লাহ (সা.) এরশাদ করেন, ‘এটা তোমাদের পিতা ইবরাহিম (আ.)-এর সুন্নত।’ সাহাবায়ে কেরাম পুনরায় জিজ্ঞেস করেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল, এতে আমাদের কী লাভ রয়েছে?’ রাসুলুল্লাহ (সা.) এরশাদ করেন, ‘কোরবানির পশুর প্রতিটি পশমের বিনিময়ে একটি করে নেকি পাওয়া যাবে।’ সাহাবায়ে কেরাম পুনরায় জিজ্ঞেস করেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল, পশমের বিনিময়ে কি এ পরিমাণ সওয়াব পাওয়া যাবে?’ রাসুলুল্লাহ (সা.) এরশাদ করেন, ‘হ্যাঁ, প্রতিটি পশমের বিনিময়ে একটি করে নেকি দেওয়া হবে।’ (ইবনে মাজাহ: ৩১২৭)
রাসুলুল্লাহ (সা.) প্রতিবছরই কোরবানি করেছেন। আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) মদিনার ১০ বছর জীবনের প্রতিবছরই কোরবানি করেছেন।’ (তিরমিজি: ১৫০৭)
মহানবী (সা.) ঈদগাহেই কোরবানির পশু জবাই করতেন। উট, গরু ও ভেড়া—সবই কোরবানি করতেন তিনি। নিজেই জবাই করতেন। প্রখ্যাত তাবেয়ি হজরত নাফে (রহ.) ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) ঈদগাহে (কোরবানির পশু) জবাই করতেন ও নাহর (উটের কোরবানি) করতেন। (বুখারি: ৫৫৫২)
মহানবী (সা.) সাধারণত প্রতিবছর দুটি ভেড়া জবাই করতেন। একটি নিজের জন্য, অন্যটি উম্মতের জন্য। হজরত আনাস ইবনে মালিক (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘নবী করিম (সা.) দুটি ভেড়া কোরবানি দিতেন। আর আমি দুটি ভেড়া কোরবানি দিতাম।’ (বুখারি: ৫৫৫৩)
অন্য হাদিসে এসেছে, হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘নিশ্চয়ই রাসুলুল্লাহ (সা.) যখন কোরবানি করতে ইচ্ছা করতেন, তিনি শিংবিশিষ্ট, মোটাতাজা দুটি খাসি বা ভেড়া কোরবানি দিতেন। এর একটি তিনি ওই সব উম্মতের জন্য কোরবানি করতেন, যারা আল্লাহর একত্ববাদের সাক্ষ্য দেবে ও তাঁর দায়িত্ব পালনের কথা স্বীকার করবে। অন্যটি তিনি নিজের ও তাঁর পরিবারের নামে জবাই করতেন।’ (ইবনে মাজাহ: ৩১২২)
হজের সময় মহানবী (সা.) স্ত্রীদের জন্য কোরবানি করেছেন। হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, ‘আমরা রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সঙ্গে জিলকদের ২৫ তারিখে বের হলাম, তখন আমরা হজের নিয়ত করেছি। যখন আমরা মক্কার কাছে গেলাম তখন রাসুলুল্লাহ (সা.) আমাদের মধ্যে যারা “হাদি”র (হজে জবাইয়ের জন্য পশু) প্রাণী আনেনি, তাদের ইহরাম খুলে ফেলার নির্দেশ দিলেন। তখন আমাদের মধ্যে কোরবানির দিন গরুর গোশত বিতরণ করা হলো। আমি (বাহককে) বললাম, এটা কী? বাহক বলল, রাসুলুল্লাহ (সা.) বিবিদের পক্ষ থেকে গরু কোরবানি করেছেন।’ (বুখারি: ১৭০৯)
বিদায় হজে মহানবী (সা.) ‘দমে শোকর’ হিসেবে ১০০ উট কোরবানি করেছেন। ৬৩টি উট তিনি নিজে জবাই করেছেন আর বাকিগুলো হজরত আলী (রা.) জবাই করেছেন। হজরত জাবির (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘নবী (সা.) একটি উট হাদি দিলেন। আর জবাইয়ের এক-তৃতীয়াংশে আলী (রা.)-কে শরিক করলেন।’ (ত্বহাবি: ৬২৩৬)
মহানবী (সা.) তাঁর কোরবানি থেকে নিজেও খেতেন, পরিবারকেও আহার করাতেন, গরিব ও আত্মীয়স্বজনকেও আহার করাতেন। বিখ্যাত হাদিসগ্রন্থ আবু দাউদের ব্যাখ্যাগ্রন্থ আউনুল মাবুদে এসেছে—‘মহানবী (সা.)-এর নিয়মিত অভ্যাস ছিল কোরবানির গোশত তিনি নিজে খেতেন, পরিবারকে আহার করাতেন ও মিসকিনদের মধ্যে সদকা করতেন। আর তিনি উম্মতকেও এমন নির্দেশ দিয়েছেন।’ (আউনুল মাবুদ: ৭/৩৪৫)
হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত আছে, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) তাঁর পরিবারকে কোরবানির এক-তৃতীয়াংশ আহার করাতেন, প্রতিবেশীদের এক-তৃতীয়াংশ আহার করাতেন আর ভিক্ষুকদের মধ্যে এক-তৃতীয়াংশ সদকা করতেন।’ (মুগনি: ৯/৪৪৯)
লেখক: ইসলামবিষয়ক গবেষক
কোরবানির ধারাবাহিকতা আদম (আ.)-এর যুগ থেকেই চালু হয়েছে। কোরআনে কাবিল ও হাবিলের কোরবানির কথা এসেছে। তাঁদের দুজনের কোরবানি থেকে হাবিলের কোরবানি কবুল হয়েছিল। তবে মুসলিম সমাজে কোরবানি ইবরাহিম (আ.)-এর অনুসরণে পালিত হয়। তাঁর স্মৃতি রক্ষার্থে এ উম্মতের ওপর কোরবানি ওয়াজিব করে দেওয়া হয়েছে। মহানবী (সা.) কোরবানির অনেক মর্যাদা বর্ণনা করেছেন।
সাহাবায়ে কেরাম রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে জিজ্ঞেস করলেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল, কোরবানি প্রথাটা কী?’ রাসুলুল্লাহ (সা.) এরশাদ করেন, ‘এটা তোমাদের পিতা ইবরাহিম (আ.)-এর সুন্নত।’ সাহাবায়ে কেরাম পুনরায় জিজ্ঞেস করেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল, এতে আমাদের কী লাভ রয়েছে?’ রাসুলুল্লাহ (সা.) এরশাদ করেন, ‘কোরবানির পশুর প্রতিটি পশমের বিনিময়ে একটি করে নেকি পাওয়া যাবে।’ সাহাবায়ে কেরাম পুনরায় জিজ্ঞেস করেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল, পশমের বিনিময়ে কি এ পরিমাণ সওয়াব পাওয়া যাবে?’ রাসুলুল্লাহ (সা.) এরশাদ করেন, ‘হ্যাঁ, প্রতিটি পশমের বিনিময়ে একটি করে নেকি দেওয়া হবে।’ (ইবনে মাজাহ: ৩১২৭)
রাসুলুল্লাহ (সা.) প্রতিবছরই কোরবানি করেছেন। আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) মদিনার ১০ বছর জীবনের প্রতিবছরই কোরবানি করেছেন।’ (তিরমিজি: ১৫০৭)
মহানবী (সা.) ঈদগাহেই কোরবানির পশু জবাই করতেন। উট, গরু ও ভেড়া—সবই কোরবানি করতেন তিনি। নিজেই জবাই করতেন। প্রখ্যাত তাবেয়ি হজরত নাফে (রহ.) ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) ঈদগাহে (কোরবানির পশু) জবাই করতেন ও নাহর (উটের কোরবানি) করতেন। (বুখারি: ৫৫৫২)
মহানবী (সা.) সাধারণত প্রতিবছর দুটি ভেড়া জবাই করতেন। একটি নিজের জন্য, অন্যটি উম্মতের জন্য। হজরত আনাস ইবনে মালিক (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘নবী করিম (সা.) দুটি ভেড়া কোরবানি দিতেন। আর আমি দুটি ভেড়া কোরবানি দিতাম।’ (বুখারি: ৫৫৫৩)
অন্য হাদিসে এসেছে, হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘নিশ্চয়ই রাসুলুল্লাহ (সা.) যখন কোরবানি করতে ইচ্ছা করতেন, তিনি শিংবিশিষ্ট, মোটাতাজা দুটি খাসি বা ভেড়া কোরবানি দিতেন। এর একটি তিনি ওই সব উম্মতের জন্য কোরবানি করতেন, যারা আল্লাহর একত্ববাদের সাক্ষ্য দেবে ও তাঁর দায়িত্ব পালনের কথা স্বীকার করবে। অন্যটি তিনি নিজের ও তাঁর পরিবারের নামে জবাই করতেন।’ (ইবনে মাজাহ: ৩১২২)
হজের সময় মহানবী (সা.) স্ত্রীদের জন্য কোরবানি করেছেন। হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, ‘আমরা রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সঙ্গে জিলকদের ২৫ তারিখে বের হলাম, তখন আমরা হজের নিয়ত করেছি। যখন আমরা মক্কার কাছে গেলাম তখন রাসুলুল্লাহ (সা.) আমাদের মধ্যে যারা “হাদি”র (হজে জবাইয়ের জন্য পশু) প্রাণী আনেনি, তাদের ইহরাম খুলে ফেলার নির্দেশ দিলেন। তখন আমাদের মধ্যে কোরবানির দিন গরুর গোশত বিতরণ করা হলো। আমি (বাহককে) বললাম, এটা কী? বাহক বলল, রাসুলুল্লাহ (সা.) বিবিদের পক্ষ থেকে গরু কোরবানি করেছেন।’ (বুখারি: ১৭০৯)
বিদায় হজে মহানবী (সা.) ‘দমে শোকর’ হিসেবে ১০০ উট কোরবানি করেছেন। ৬৩টি উট তিনি নিজে জবাই করেছেন আর বাকিগুলো হজরত আলী (রা.) জবাই করেছেন। হজরত জাবির (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘নবী (সা.) একটি উট হাদি দিলেন। আর জবাইয়ের এক-তৃতীয়াংশে আলী (রা.)-কে শরিক করলেন।’ (ত্বহাবি: ৬২৩৬)
মহানবী (সা.) তাঁর কোরবানি থেকে নিজেও খেতেন, পরিবারকেও আহার করাতেন, গরিব ও আত্মীয়স্বজনকেও আহার করাতেন। বিখ্যাত হাদিসগ্রন্থ আবু দাউদের ব্যাখ্যাগ্রন্থ আউনুল মাবুদে এসেছে—‘মহানবী (সা.)-এর নিয়মিত অভ্যাস ছিল কোরবানির গোশত তিনি নিজে খেতেন, পরিবারকে আহার করাতেন ও মিসকিনদের মধ্যে সদকা করতেন। আর তিনি উম্মতকেও এমন নির্দেশ দিয়েছেন।’ (আউনুল মাবুদ: ৭/৩৪৫)
হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত আছে, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) তাঁর পরিবারকে কোরবানির এক-তৃতীয়াংশ আহার করাতেন, প্রতিবেশীদের এক-তৃতীয়াংশ আহার করাতেন আর ভিক্ষুকদের মধ্যে এক-তৃতীয়াংশ সদকা করতেন।’ (মুগনি: ৯/৪৪৯)
লেখক: ইসলামবিষয়ক গবেষক
আসর শব্দের অর্থ সময়। পবিত্র কোরআনে আসর নামে একটি সুরা রয়েছে। আল্লাহ তাআলা আসর বা সময়ের শপথ করেছেন। মুসলিমরা দৈনন্দিন যে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করে, তার তৃতীয় ওয়াক্তকে আসর নামে অভিহিত করা হয়। এ ছাড়াও পবিত্র কোরআনে এটিকে সালাত আল-ওসতা বা মধ্যবর্তী নামাজ হিসেবে সম্বোধন করা হয়েছে।
২১ ঘণ্টা আগেজ্ঞানগর্ভ ও উপদেশে ভরা কোরআন জীবনের জন্য অপরিহার্য একটি গাইড বই। মানুষ কোথায় কখন কী করবে, কেন করবে, কীভাবে করবে—তা বলে দেওয়া হয়েছে কোরআনে। কোরআন তথা আল্লাহপ্রদত্ত আসমানি কিতাবের হিদায়াতের বাইরে কোনো সঠিক জীবনদর্শন নেই, কোনো ধর্মদর্শন নেই, কোনো মুক্তির পথ নেই। মানবজাতির সূচনালগ্নেই কথাটি জানিয়ে দেওয়া
২ দিন আগেএকজন মুমিনের কাছে রমজান বছরের শ্রেষ্ঠ মাস। মহানবী (সা.) এ পবিত্র মাসকে বেশ গুরুত্ব দিতেন। অন্যান্য কাজকর্ম থেকে নিজেকে গুটিয়ে অধিক পরিমাণে ইবাদতে মশগুল হতেন। সাহাবিদের অভ্যাসও ছিল একই রকম। গুরুত্ব বিবেচনায় রমজানের প্রস্তুতিও শুরু হতো বেশ আগে থেকেই। রজব মাসের চাঁদ দেখার পর থেকেই মহানবী (সা.) অধীর আগ
২ দিন আগেহাজার বছরের মুসলিম ঐতিহ্যের স্মারক টুপি। ইসলামের সূচনাকাল থেকেই টুপি পরিধানের চল রয়েছে। ফিকহের দৃষ্টিকোণে টুপি পরা সুন্নত। মহানবী (সা.) সর্বদা টুপি পরতেন, হাদিসের একাধিক বর্ণনায় তার প্রমাণ মেলে। সাহাবায়ে কেরাম ও পরবর্তী যুগের সব অনুসরণীয় মুসলিম টুপি পরেছেন। শালীনতা ও সৌন্দর্যের আবরণ টুপি মুসলমানদের
২ দিন আগে