মুফতি আবু আবদুল্লাহ আহমদ
পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা রাসুল (সা.)কে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘নিশ্চয়ই তুমি সুমহান চরিত্রের ওপর প্রতিষ্ঠিত।’ (সুরা কলম: ৪) অন্য আয়াতে রাসুল (সা.)-এর আদর্শই সবার জন্য অনুকরণীয় আদর্শ অভিহিত করে বলেন, ‘আল্লাহর রাসুলের মধ্যে তোমাদের জন্য রয়েছে উত্তম আদর্শ।’ (সুরা আহজাব: ২১)
অর্থাৎ, মানুষের জীবনের ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, রাষ্ট্রীয় ও আন্তর্জাতিক সব বিষয়ে মহান আল্লাহর নির্দেশনা কী, রাসুল (সা.) নিজের জীবনে প্রতিষ্ঠিত করার মাধ্যমে বিশ্ববাসীকে তা দেখিয়ে দিয়েছেন। মানুষ কীভাবে আল্লাহর ইবাদত করবে এবং পরিবারের সদস্য, আত্মীয়স্বজন, প্রতিবেশী, সহকর্মী ও বন্ধুদের সঙ্গে তার নৈতিক আচরণ কেমন হবে, তা স্পষ্ট করে দিয়েছেন। আল্লাহর পক্ষ থেকে আসা অহির ভিত্তিতে একটি ন্যায়পূর্ণ ও বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বিশ্বের মানুষের সামনে এক উন্নত সমাজব্যবস্থার রূপরেখা তুলে ধরেছেন। একটি সুসংহত বাহিনীর মাধ্যমে পৃথিবীতে অরাজকতা সৃষ্টিকারী অত্যাচারী গোষ্ঠীগুলোকে দমন করার বুদ্ধিবৃত্তিক ও শান্তিপূর্ণ নীতিমালা প্রণয়ন করেছেন। জীবনের হাজারো দুঃখ-যাতনা, বাধা-প্রতিবন্ধকতা ও জুলুম-নির্যাতন জয় করে কীভাবে সত্যকে প্রতিষ্ঠিত করতে হয়, সত্যের ওপর অবিচল থাকতে হয়—নিজের ৬৩ বছরের সংগ্রামী জীবনে তা হাতে-কলমে শিখিয়ে গেছেন। তাই তো পবিত্র কোরআনে তাঁকে বলা হয়েছে ‘গোটা বিশ্ববাসীর জন্য রহমত।’ (সুরা আম্বিয়া: ১০৭)
ওপরের আলোচনা থেকে প্রতীয়মান হয়, মানুষ তার জীবনের সব ক্ষেত্রে শুদ্ধতা ও নৈতিকতা অনুশীলন করতে চাইলে, নিজেকে মহান আল্লাহর নির্দেশনা অনুসারে সাজাতে চাইলে রাসুল (সা.)-এর জীবনাদর্শ অনুসরণ করার বিকল্প নেই। এখানেই মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর সিরাত তথা জীবনবৃত্তান্ত পাঠ করার গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা স্পষ্ট হয়ে ওঠে।
মুসলমানদের জন্য আরেকটি দৃষ্টিকোণ থেকেও সিরাতপাঠ গুরুত্বপূর্ণ। তা হচ্ছে, মহানবী (সা.)-এর প্রতি ভালোবাসা ছাড়া ইমান পরিপূর্ণতা পায় না। (বুখারি ও মুসলিম) এ জন্যই শৈশব থেকে শিশুদের মনে তাঁর ভালোবাসা সৃষ্টি করার নির্দেশ এসেছে হাদিসে। (জামেউস সগির) এখন যদি কেউ রাসুলের জীবনবৃত্তান্ত না পড়ে, তাহলে তার অন্তরে তাঁর প্রতি প্রকৃত ভালোবাসা আসবে কীভাবে? ফলে পৃথিবীর ইতিহাসে তিনিই একমাত্র ব্যক্তিত্ব, যার জীবনবৃত্তান্ত পৃথিবীর প্রায় সব দেশে পঠিত হয়। অসংখ্য ভাষায় তাঁর জীবনীগ্রন্থ রচিত হয়েছে। এত অধিক ভাষায়, এত অধিক পরিমাণে পৃথিবীর আর কারও জীবনীগ্রন্থ রচিত হয়নি।
বাংলা ভাষায়ও মৌলিক ও অনূদিত অসংখ্য সিরাতগ্রন্থ রয়েছে। এখানে বাংলা ভাষায় সহজলভ্য কয়েকটি সিরাতগ্রন্থের নাম-পরিচয় তুলে ধরা হলো—
১. সীরাত বিশ্বকোষ (১১ খণ্ড), মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান দারুস সালামের উদ্যোগে গবেষক, স্কলার ও উলামায়ে কেরামের একটি সমন্বিত বোর্ড এটি রচনা করেছে। ঢাকার মাকতাবাতুল আযহার বইটির বাংলা অনুবাদ প্রকাশ করে।
২. সীরাত বিশ্বকোষ (১২ খণ্ড), ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ কর্তৃক সংকলিত ও প্রকাশিত। এতে আদম (আ.) থেকে শুরু করে প্রায় সব নবীর ইতিহাস সংক্ষেপে আলোচনা করে ৪র্থ খণ্ড থেকে ১২তম খণ্ড পর্যন্ত নবীজির জীবনী বিস্তারিত আলোচিত হয়েছে।
৩. ফিকহুস সিরাহ (২ খণ্ড), সিরিয়ান ইসলামি পণ্ডিত ড. সাঈদ রমাদান বুতি এটি রচনা করেন। বাংলাদেশের একাধিক প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান থেকে এর অনুবাদ প্রকাশিত হয়েছে।
৪. সিরাতে খাতামুল আম্বিয়া, উপমহাদেশের প্রখ্যাত আলেম মুফতি মুহাম্মদ শফি উর্দু ভাষায় এটি রচনা করেন। এটি ছোটদের উপযোগী সিরাত গ্রন্থ। কালান্তর প্রকাশনী এর বাংলা অনুবাদ প্রকাশ করেছে।
৫. আর-রাহিকুল মাখতুম, সফিউর রহমান মোবারকপুরি রচিত এই গ্রন্থ বিশ্বব্যাপী সমাদৃত হয়। বাংলাদেশেও এটি বেশ জনপ্রিয়তা লাভ করে। বেশ কিছু প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান এর বাংলা অনুবাদ প্রকাশ করে।
এ ছাড়া ইদ্রিস কান্ধলভী রচিত ৩ খণ্ডের সিরাতুল মোস্তফা, সালেহ আল মুনাজ্জিদ রচিত ২ খণ্ডের যেমন ছিলেন তিনি, ড. আলি আস-সাল্লাবি রচিত ৩ খণ্ডের সিরাতুন্নবি, কবি গোলাম মোস্তফা রচিত ২ খণ্ডের বিশ্বনবী, আবুল হাসান আলি নদভী রচিত নবীয়ে রহমত, ড. সালমান আল-আওদা রচিত মাআল মুস্তফা, ইবনে হিশাম রচিত সিরাতুন নবী (সা.), মোহাম্মদ আকরম খাঁ রচিত মোস্তফা চরিত, নঈম সিদ্দিকী রচিত মানবতার বন্ধু মুহাম্মদ রাসুলুল্লাহ (সা.), গুরুদত্ত্ব সিং রচিত তোমাকে ভালোবাসি হে নবী, মোহাম্মদ ওয়াজেদ আলী রচিত মরুভাস্কর হযরত মোহাম্মদ (স.) ইত্যাদি সিরাত গ্রন্থ উল্লেখযোগ্য।
লেখক: শিক্ষক ও ফতোয়া গবেষক
পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা রাসুল (সা.)কে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘নিশ্চয়ই তুমি সুমহান চরিত্রের ওপর প্রতিষ্ঠিত।’ (সুরা কলম: ৪) অন্য আয়াতে রাসুল (সা.)-এর আদর্শই সবার জন্য অনুকরণীয় আদর্শ অভিহিত করে বলেন, ‘আল্লাহর রাসুলের মধ্যে তোমাদের জন্য রয়েছে উত্তম আদর্শ।’ (সুরা আহজাব: ২১)
অর্থাৎ, মানুষের জীবনের ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, রাষ্ট্রীয় ও আন্তর্জাতিক সব বিষয়ে মহান আল্লাহর নির্দেশনা কী, রাসুল (সা.) নিজের জীবনে প্রতিষ্ঠিত করার মাধ্যমে বিশ্ববাসীকে তা দেখিয়ে দিয়েছেন। মানুষ কীভাবে আল্লাহর ইবাদত করবে এবং পরিবারের সদস্য, আত্মীয়স্বজন, প্রতিবেশী, সহকর্মী ও বন্ধুদের সঙ্গে তার নৈতিক আচরণ কেমন হবে, তা স্পষ্ট করে দিয়েছেন। আল্লাহর পক্ষ থেকে আসা অহির ভিত্তিতে একটি ন্যায়পূর্ণ ও বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বিশ্বের মানুষের সামনে এক উন্নত সমাজব্যবস্থার রূপরেখা তুলে ধরেছেন। একটি সুসংহত বাহিনীর মাধ্যমে পৃথিবীতে অরাজকতা সৃষ্টিকারী অত্যাচারী গোষ্ঠীগুলোকে দমন করার বুদ্ধিবৃত্তিক ও শান্তিপূর্ণ নীতিমালা প্রণয়ন করেছেন। জীবনের হাজারো দুঃখ-যাতনা, বাধা-প্রতিবন্ধকতা ও জুলুম-নির্যাতন জয় করে কীভাবে সত্যকে প্রতিষ্ঠিত করতে হয়, সত্যের ওপর অবিচল থাকতে হয়—নিজের ৬৩ বছরের সংগ্রামী জীবনে তা হাতে-কলমে শিখিয়ে গেছেন। তাই তো পবিত্র কোরআনে তাঁকে বলা হয়েছে ‘গোটা বিশ্ববাসীর জন্য রহমত।’ (সুরা আম্বিয়া: ১০৭)
ওপরের আলোচনা থেকে প্রতীয়মান হয়, মানুষ তার জীবনের সব ক্ষেত্রে শুদ্ধতা ও নৈতিকতা অনুশীলন করতে চাইলে, নিজেকে মহান আল্লাহর নির্দেশনা অনুসারে সাজাতে চাইলে রাসুল (সা.)-এর জীবনাদর্শ অনুসরণ করার বিকল্প নেই। এখানেই মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর সিরাত তথা জীবনবৃত্তান্ত পাঠ করার গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা স্পষ্ট হয়ে ওঠে।
মুসলমানদের জন্য আরেকটি দৃষ্টিকোণ থেকেও সিরাতপাঠ গুরুত্বপূর্ণ। তা হচ্ছে, মহানবী (সা.)-এর প্রতি ভালোবাসা ছাড়া ইমান পরিপূর্ণতা পায় না। (বুখারি ও মুসলিম) এ জন্যই শৈশব থেকে শিশুদের মনে তাঁর ভালোবাসা সৃষ্টি করার নির্দেশ এসেছে হাদিসে। (জামেউস সগির) এখন যদি কেউ রাসুলের জীবনবৃত্তান্ত না পড়ে, তাহলে তার অন্তরে তাঁর প্রতি প্রকৃত ভালোবাসা আসবে কীভাবে? ফলে পৃথিবীর ইতিহাসে তিনিই একমাত্র ব্যক্তিত্ব, যার জীবনবৃত্তান্ত পৃথিবীর প্রায় সব দেশে পঠিত হয়। অসংখ্য ভাষায় তাঁর জীবনীগ্রন্থ রচিত হয়েছে। এত অধিক ভাষায়, এত অধিক পরিমাণে পৃথিবীর আর কারও জীবনীগ্রন্থ রচিত হয়নি।
বাংলা ভাষায়ও মৌলিক ও অনূদিত অসংখ্য সিরাতগ্রন্থ রয়েছে। এখানে বাংলা ভাষায় সহজলভ্য কয়েকটি সিরাতগ্রন্থের নাম-পরিচয় তুলে ধরা হলো—
১. সীরাত বিশ্বকোষ (১১ খণ্ড), মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান দারুস সালামের উদ্যোগে গবেষক, স্কলার ও উলামায়ে কেরামের একটি সমন্বিত বোর্ড এটি রচনা করেছে। ঢাকার মাকতাবাতুল আযহার বইটির বাংলা অনুবাদ প্রকাশ করে।
২. সীরাত বিশ্বকোষ (১২ খণ্ড), ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ কর্তৃক সংকলিত ও প্রকাশিত। এতে আদম (আ.) থেকে শুরু করে প্রায় সব নবীর ইতিহাস সংক্ষেপে আলোচনা করে ৪র্থ খণ্ড থেকে ১২তম খণ্ড পর্যন্ত নবীজির জীবনী বিস্তারিত আলোচিত হয়েছে।
৩. ফিকহুস সিরাহ (২ খণ্ড), সিরিয়ান ইসলামি পণ্ডিত ড. সাঈদ রমাদান বুতি এটি রচনা করেন। বাংলাদেশের একাধিক প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান থেকে এর অনুবাদ প্রকাশিত হয়েছে।
৪. সিরাতে খাতামুল আম্বিয়া, উপমহাদেশের প্রখ্যাত আলেম মুফতি মুহাম্মদ শফি উর্দু ভাষায় এটি রচনা করেন। এটি ছোটদের উপযোগী সিরাত গ্রন্থ। কালান্তর প্রকাশনী এর বাংলা অনুবাদ প্রকাশ করেছে।
৫. আর-রাহিকুল মাখতুম, সফিউর রহমান মোবারকপুরি রচিত এই গ্রন্থ বিশ্বব্যাপী সমাদৃত হয়। বাংলাদেশেও এটি বেশ জনপ্রিয়তা লাভ করে। বেশ কিছু প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান এর বাংলা অনুবাদ প্রকাশ করে।
এ ছাড়া ইদ্রিস কান্ধলভী রচিত ৩ খণ্ডের সিরাতুল মোস্তফা, সালেহ আল মুনাজ্জিদ রচিত ২ খণ্ডের যেমন ছিলেন তিনি, ড. আলি আস-সাল্লাবি রচিত ৩ খণ্ডের সিরাতুন্নবি, কবি গোলাম মোস্তফা রচিত ২ খণ্ডের বিশ্বনবী, আবুল হাসান আলি নদভী রচিত নবীয়ে রহমত, ড. সালমান আল-আওদা রচিত মাআল মুস্তফা, ইবনে হিশাম রচিত সিরাতুন নবী (সা.), মোহাম্মদ আকরম খাঁ রচিত মোস্তফা চরিত, নঈম সিদ্দিকী রচিত মানবতার বন্ধু মুহাম্মদ রাসুলুল্লাহ (সা.), গুরুদত্ত্ব সিং রচিত তোমাকে ভালোবাসি হে নবী, মোহাম্মদ ওয়াজেদ আলী রচিত মরুভাস্কর হযরত মোহাম্মদ (স.) ইত্যাদি সিরাত গ্রন্থ উল্লেখযোগ্য।
লেখক: শিক্ষক ও ফতোয়া গবেষক
জুবাইদা বিনতে জাফর ইবনে মানসুর পঞ্চম আব্বাসি খলিফা হারুনুর রশিদের স্ত্রী ও জাফর ইবনুল মানসুরের কন্যা। তাঁর মা ছিলেন আল-খায়জুরানের বড় বোন সালসাল ইবনে আত্তা। জুবাইদার আসল নাম আমাতুল আজিজ। দাদা আল-মানসুর তাঁকে আদর করে জুবাইদা (ছোট মাখনের টুকরা) নামে ডাকতেন এবং এ নামেই তিনি ইতিহাসে বিখ্যাত।
২০ ঘণ্টা আগেকুয়েতে অনুষ্ঠিত ১৩তম আন্তর্জাতিক হিফজুল কোরআন প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান অর্জন করেছেন বাংলাদেশের হাফেজ আনাস মাহফুজ। বিশ্বের ৭৪টি দেশের প্রতিযোগীদের পেছনে ফেলে দেশের জন্য এ গৌরব বয়ে আনেন তিনি।
২১ ঘণ্টা আগেবিয়ে ইসলামি জীবনব্যবস্থার একটি মৌলিক অংশ। এটি ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও সামাজিক জীবনে শান্তি ও স্থিতি নিয়ে আসে। তবে বিয়ের আগে আর্থিক সচ্ছলতা অর্জন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এটি বিয়ে-পরবর্তী জীবনে দায়িত্ব পালনের জন্য ব্যক্তিকে সক্ষম করে।
২১ ঘণ্টা আগে