মুফতি আবু দারদা
দেশের প্রতি ভালোবাসা মানুষের স্বভাবজাত। দেশের স্বার্থবিরোধী সব ধরনের অন্যায়-অনাচার রুখে দাঁড়ানো একজন মুমিনের ইমানি দায়িত্ব। পাশাপাশি দেশের জন্য, মানুষের জন্য কাজ করা এবং তাদের ইমান আখলাক সংশোধনে মনোযোগ দেওয়া ইসলামের অন্যতম শিক্ষা। পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে আল্লাহ তাআলা অসংখ্য নবী-রাসুল পাঠিয়েছেন। তাঁরা নিজেদের ভূখণ্ডে ইসলামের মর্মবাণী ছড়িয়ে দিয়েছেন এবং মানুষকে আল্লাহর পথে ডেকেছেন। কোরআন-হাদিসে নবী-রাসুলদের দেশপ্রেমের প্রমাণ পাওয়া যায়। এখানে কয়েকটি উদাহরণ তুলে ধরা হলো।
কোরআনে দেশপ্রেমের শিক্ষা
আল্লাহর নবী মুসা (আ.) নিজের জন্মভূমি মিসরের বাদশাহ ফেরাউনসহ সব শ্রেণির মানুষকে ইমানের দাওয়াত দিয়েছিলেন। ভাই হারুন (আ.)-এর সঙ্গে মিলে তিনি মিসরের মানুষের ইমান আনার জন্য সারা জীবন সংগ্রাম করেছেন। বনি ইসরাইলকে ফেরাউনের অত্যাচার থেকে মুক্ত করেছেন। সেই সব নিয়ামতের কথা নিজের জাতিকে স্মরণ করিয়ে দিয়ে তিনি বলেন, ‘হে আমার সম্প্রদায়, তোমাদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ স্মরণ করো, যখন তিনি তোমাদের মধ্য থেকে নবী পাঠিয়েছিলেন এবং তোমাদের রাজত্বের অধিকারী করেছিলেন। আর বিশ্বজগতে কাউকেই যা তিনি দেননি, তা তোমাদের দিয়েছেন।’ (সুরা মায়িদা: ২০)
একইভাবে হজরত নুহ (আ.) সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা বলেছেন, ‘আমি তো নুহকে পাঠিয়েছিলাম তার সম্প্রদায়ের কাছে। সে বলল, ‘হে আমার সম্প্রদায়, আল্লাহর ইবাদত করো, তিনি ছাড়া তোমাদের অন্য কোনো ইলাহ নেই। তবু কি তোমরা সাবধান হবে না?’ (সুরা মুমিন: ২৩) অন্য আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আমি প্রত্যেক রাসুলকেই স্বজাতির ভাষাভাষী করে পাঠিয়েছি।’ (সুরা ইবরাহিম: ৪)
উদ্ধৃত আয়াতগুলোতে ‘কাওমিহি’ বা ‘স্বজাতি’ শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। এর দ্বারা দেশ, দেশের মানুষ, দেশের ভাষা ও নিজ সম্প্রদায়ের প্রতি সবিশেষ গুরুত্বের প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে।
অন্যায়ভাবে কাউকে নিজ দেশ ও মাতৃভূমি ত্যাগে বাধ্য করা ইসলামের চোখে খুব গর্হিত অপরাধ। তাই মক্কার কাফির কর্তৃক স্বদেশভূমি মক্কা থেকে রাসুল (সা.)-কে বিতাড়নের চেষ্টাকে কোরআনে ষড়যন্ত্র ও অন্যায় হিসেবে শনাক্ত করা হয়েছে। আল্লাহ বলেন, ‘স্মরণ করো, কাফিররা তোমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করেছে তোমাকে বন্দী করার জন্য, হত্যা অথবা নির্বাসিত করার জন্য। তারা ষড়যন্ত্র করেছে এবং আল্লাহও কৌশল অবলম্বন করেছেন; আর আল্লাহই সর্বশ্রেষ্ঠ কৌশলী।’ (সুরা আনফাল: ৩০)
হাদিসে দেশপ্রেমের শিক্ষা
মহানবী (সা.) মাতৃভূমি মক্কাকে ভীষণ ভালোবাসতেন। তাই তো মক্কা ছেড়ে চলে যাওয়ার সময় তিনি বলেছিলেন, ‘(হে মক্কা) ভূখণ্ড হিসেবে তুমি কতই-না উত্তম, আমার কাছে তুমি কতই-না প্রিয়। যদি আমার স্বজাতি আমাকে বের করে না দিত, তবে কিছুতেই আমি অন্যত্র বসবাস করতাম না।’
(তিরমিজি: ৩৯২৬)
অন্য হাদিসে এসেছে, আবদুল্লাহ বিন আদি বিন হারাম (রা.) বলেন, ‘আমি রাসুল (সা.)-কে খাজওয়ারা নামক স্থানে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেছি। সেখানে তিনি বলেছেন, আল্লাহর কসম (হে মক্কা), আল্লাহর জমিনে তুমিই সর্বশ্রেষ্ঠ...যদি তোমার কাছ থেকে আমাকে বের করে দেওয়া না হতো, তবে আমি তোমায় ছেড়ে অন্য কোথাও যেতাম না।’ (তিরমিজি: ৩৯২৫)
এই আবেগময় বেদনাকাতর অভিব্যক্তি রাসুল (সা.)-এর দেশপ্রেমের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। অন্য হাদিসে আনাস (রা.) বলেন, ‘আমি খায়বর অভিযানে খাদেম হিসেবে রাসুল (সা.)-এর সঙ্গে গেলাম। অভিযান শেষে রাসুল (সা.) যখন ফিরে এলেন, উহুদ পাহাড় তাঁর দৃষ্টিগোচর হলো। তিনি বললেন, ‘এই পাহাড় আমাদের ভালোবাসে, আমরাও একে ভালোবাসি।’
(বুখারি: ২৮৮৯)
হিজরত করে মদিনায় স্থায়ী হওয়ার পর রাসুল (সা.) প্রায়ই মক্কায় ফিরে যেতে ব্যাকুল হয়ে পড়তেন। আল্লাহ তাঁকে সান্ত্বনা দিয়ে বলেছেন, ‘যিনি তোমার জন্য কোরআনকে বিধান বানিয়েছেন, তিনি তোমাকে অবশ্যই তোমার জন্মভূমিতে ফিরিয়ে আনবেন।’
(সুরা কাসাস: ৮৫)
রাসুল (সা.)-এর সাহাবিরাও নিজ দেশকে খুবই ভালোবাসতেন। হিজরতের পর মদিনায় আবু বকর (রা.) ও বেলাল (রা.) জ্বরাক্রান্ত হলেন, অসুস্থ অবস্থায় তাঁদের মনে স্বদেশভূমি মক্কার স্মৃতিচিহ্ন জেগে উঠল। তাঁরা জন্মভূমি মক্কার দৃশ্যাবলি স্মরণ করে কবিতা আবৃত্তি করতে লাগলেন। তাঁদের এই অবস্থা দেখে রাসুল (সা.) দোয়া করলেন, ‘হে আল্লাহ, আমরা মক্কাকে যেমন ভালোবাসি, তার চেয়েও বেশি ভালোবাসা মদিনার প্রতি আমাদের অন্তরে দান করুন।’ (বুখারি: ৬৩৭২)
লেখক: ইসলামবিষয়ক গবেষক
দেশের প্রতি ভালোবাসা মানুষের স্বভাবজাত। দেশের স্বার্থবিরোধী সব ধরনের অন্যায়-অনাচার রুখে দাঁড়ানো একজন মুমিনের ইমানি দায়িত্ব। পাশাপাশি দেশের জন্য, মানুষের জন্য কাজ করা এবং তাদের ইমান আখলাক সংশোধনে মনোযোগ দেওয়া ইসলামের অন্যতম শিক্ষা। পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে আল্লাহ তাআলা অসংখ্য নবী-রাসুল পাঠিয়েছেন। তাঁরা নিজেদের ভূখণ্ডে ইসলামের মর্মবাণী ছড়িয়ে দিয়েছেন এবং মানুষকে আল্লাহর পথে ডেকেছেন। কোরআন-হাদিসে নবী-রাসুলদের দেশপ্রেমের প্রমাণ পাওয়া যায়। এখানে কয়েকটি উদাহরণ তুলে ধরা হলো।
কোরআনে দেশপ্রেমের শিক্ষা
আল্লাহর নবী মুসা (আ.) নিজের জন্মভূমি মিসরের বাদশাহ ফেরাউনসহ সব শ্রেণির মানুষকে ইমানের দাওয়াত দিয়েছিলেন। ভাই হারুন (আ.)-এর সঙ্গে মিলে তিনি মিসরের মানুষের ইমান আনার জন্য সারা জীবন সংগ্রাম করেছেন। বনি ইসরাইলকে ফেরাউনের অত্যাচার থেকে মুক্ত করেছেন। সেই সব নিয়ামতের কথা নিজের জাতিকে স্মরণ করিয়ে দিয়ে তিনি বলেন, ‘হে আমার সম্প্রদায়, তোমাদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ স্মরণ করো, যখন তিনি তোমাদের মধ্য থেকে নবী পাঠিয়েছিলেন এবং তোমাদের রাজত্বের অধিকারী করেছিলেন। আর বিশ্বজগতে কাউকেই যা তিনি দেননি, তা তোমাদের দিয়েছেন।’ (সুরা মায়িদা: ২০)
একইভাবে হজরত নুহ (আ.) সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা বলেছেন, ‘আমি তো নুহকে পাঠিয়েছিলাম তার সম্প্রদায়ের কাছে। সে বলল, ‘হে আমার সম্প্রদায়, আল্লাহর ইবাদত করো, তিনি ছাড়া তোমাদের অন্য কোনো ইলাহ নেই। তবু কি তোমরা সাবধান হবে না?’ (সুরা মুমিন: ২৩) অন্য আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আমি প্রত্যেক রাসুলকেই স্বজাতির ভাষাভাষী করে পাঠিয়েছি।’ (সুরা ইবরাহিম: ৪)
উদ্ধৃত আয়াতগুলোতে ‘কাওমিহি’ বা ‘স্বজাতি’ শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। এর দ্বারা দেশ, দেশের মানুষ, দেশের ভাষা ও নিজ সম্প্রদায়ের প্রতি সবিশেষ গুরুত্বের প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে।
অন্যায়ভাবে কাউকে নিজ দেশ ও মাতৃভূমি ত্যাগে বাধ্য করা ইসলামের চোখে খুব গর্হিত অপরাধ। তাই মক্কার কাফির কর্তৃক স্বদেশভূমি মক্কা থেকে রাসুল (সা.)-কে বিতাড়নের চেষ্টাকে কোরআনে ষড়যন্ত্র ও অন্যায় হিসেবে শনাক্ত করা হয়েছে। আল্লাহ বলেন, ‘স্মরণ করো, কাফিররা তোমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করেছে তোমাকে বন্দী করার জন্য, হত্যা অথবা নির্বাসিত করার জন্য। তারা ষড়যন্ত্র করেছে এবং আল্লাহও কৌশল অবলম্বন করেছেন; আর আল্লাহই সর্বশ্রেষ্ঠ কৌশলী।’ (সুরা আনফাল: ৩০)
হাদিসে দেশপ্রেমের শিক্ষা
মহানবী (সা.) মাতৃভূমি মক্কাকে ভীষণ ভালোবাসতেন। তাই তো মক্কা ছেড়ে চলে যাওয়ার সময় তিনি বলেছিলেন, ‘(হে মক্কা) ভূখণ্ড হিসেবে তুমি কতই-না উত্তম, আমার কাছে তুমি কতই-না প্রিয়। যদি আমার স্বজাতি আমাকে বের করে না দিত, তবে কিছুতেই আমি অন্যত্র বসবাস করতাম না।’
(তিরমিজি: ৩৯২৬)
অন্য হাদিসে এসেছে, আবদুল্লাহ বিন আদি বিন হারাম (রা.) বলেন, ‘আমি রাসুল (সা.)-কে খাজওয়ারা নামক স্থানে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেছি। সেখানে তিনি বলেছেন, আল্লাহর কসম (হে মক্কা), আল্লাহর জমিনে তুমিই সর্বশ্রেষ্ঠ...যদি তোমার কাছ থেকে আমাকে বের করে দেওয়া না হতো, তবে আমি তোমায় ছেড়ে অন্য কোথাও যেতাম না।’ (তিরমিজি: ৩৯২৫)
এই আবেগময় বেদনাকাতর অভিব্যক্তি রাসুল (সা.)-এর দেশপ্রেমের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। অন্য হাদিসে আনাস (রা.) বলেন, ‘আমি খায়বর অভিযানে খাদেম হিসেবে রাসুল (সা.)-এর সঙ্গে গেলাম। অভিযান শেষে রাসুল (সা.) যখন ফিরে এলেন, উহুদ পাহাড় তাঁর দৃষ্টিগোচর হলো। তিনি বললেন, ‘এই পাহাড় আমাদের ভালোবাসে, আমরাও একে ভালোবাসি।’
(বুখারি: ২৮৮৯)
হিজরত করে মদিনায় স্থায়ী হওয়ার পর রাসুল (সা.) প্রায়ই মক্কায় ফিরে যেতে ব্যাকুল হয়ে পড়তেন। আল্লাহ তাঁকে সান্ত্বনা দিয়ে বলেছেন, ‘যিনি তোমার জন্য কোরআনকে বিধান বানিয়েছেন, তিনি তোমাকে অবশ্যই তোমার জন্মভূমিতে ফিরিয়ে আনবেন।’
(সুরা কাসাস: ৮৫)
রাসুল (সা.)-এর সাহাবিরাও নিজ দেশকে খুবই ভালোবাসতেন। হিজরতের পর মদিনায় আবু বকর (রা.) ও বেলাল (রা.) জ্বরাক্রান্ত হলেন, অসুস্থ অবস্থায় তাঁদের মনে স্বদেশভূমি মক্কার স্মৃতিচিহ্ন জেগে উঠল। তাঁরা জন্মভূমি মক্কার দৃশ্যাবলি স্মরণ করে কবিতা আবৃত্তি করতে লাগলেন। তাঁদের এই অবস্থা দেখে রাসুল (সা.) দোয়া করলেন, ‘হে আল্লাহ, আমরা মক্কাকে যেমন ভালোবাসি, তার চেয়েও বেশি ভালোবাসা মদিনার প্রতি আমাদের অন্তরে দান করুন।’ (বুখারি: ৬৩৭২)
লেখক: ইসলামবিষয়ক গবেষক
জুবাইদা বিনতে জাফর ইবনে মানসুর পঞ্চম আব্বাসি খলিফা হারুনুর রশিদের স্ত্রী ও জাফর ইবনুল মানসুরের কন্যা। তাঁর মা ছিলেন আল-খায়জুরানের বড় বোন সালসাল ইবনে আত্তা। জুবাইদার আসল নাম আমাতুল আজিজ। দাদা আল-মানসুর তাঁকে আদর করে জুবাইদা (ছোট মাখনের টুকরা) নামে ডাকতেন এবং এ নামেই তিনি ইতিহাসে বিখ্যাত।
৯ ঘণ্টা আগেকুয়েতে অনুষ্ঠিত ১৩তম আন্তর্জাতিক হিফজুল কোরআন প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান অর্জন করেছেন বাংলাদেশের হাফেজ আনাস মাহফুজ। বিশ্বের ৭৪টি দেশের প্রতিযোগীদের পেছনে ফেলে দেশের জন্য এ গৌরব বয়ে আনেন তিনি।
১০ ঘণ্টা আগেবিয়ে ইসলামি জীবনব্যবস্থার একটি মৌলিক অংশ। এটি ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও সামাজিক জীবনে শান্তি ও স্থিতি নিয়ে আসে। তবে বিয়ের আগে আর্থিক সচ্ছলতা অর্জন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এটি বিয়ে-পরবর্তী জীবনে দায়িত্ব পালনের জন্য ব্যক্তিকে সক্ষম করে।
১০ ঘণ্টা আগে