আজকের তারাবি: জীবন-মৃত্যুর রহস্য ও স্ত্রীর অধিকার আদায়ের আদেশ

রায়হান রাশেদ
প্রকাশ : ২৪ মার্চ ২০২৩, ১৬: ৫১
আপডেট : ১৩ মার্চ ২০২৪, ১১: ১০

আজ খতমে তারাবিতে দ্বিতীয় পারার দ্বিতীয় অর্ধেক ও তৃতীয় পারার পুরো অংশ—মোট দেড় পারা পড়া হবে। সুরা বাকারার ২০৪ থেকে সুরা আলে ইমরানের ৯১ নম্বর আয়াত পর্যন্ত এই অংশে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের আলোচনা স্থান পেয়েছে। মদ-জুয়া, সুদ, স্ত্রীর অধিকার, ইসা (আ.)-এর জন্মসহ অনেক কথা এখানে আলোচিত হয়েছে। এখান থেকে অংশবিশেষ এখানে তুলে ধরা হলো—

মদ ও জুয়া ভয়াবহ অপরাধ
সুরা বাকারার ২১৯ নম্বর আয়াতে মদ-জুয়া নিয়ে ইসলামের অবস্থানের কথা জানিয়ে দিয়েছেন আল্লাহ তাআলা। তিনি মদ ও জুয়া হারাম ঘোষণা করেছেন। তবে পবিত্র কোরআনে প্রথমে মদ ও জুয়াকে ‘অপছন্দের বিষয়’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে এ দুটির কুফল তুলে ধরে ধীরে ধীরে হারাম করা হয়েছে। মদের অধীনে ওই সব নেশা জাতীয় দ্রব্য অন্তর্ভুক্ত; যা মস্তিষ্কের বিকৃত ঘটায়। এভাবে জুয়াও তার সব ধরন ও প্রকারকে অন্তর্ভুক্ত করে। 

সব ধরনের মাদক বা নেশাদ্রব্য ইসলামে নিষিদ্ধ। জ্ঞান ও বিবেক-বুদ্ধি সুরক্ষার জন্য এ বিষয়ে কঠোর শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে। কারণ, সুষ্ঠু স্বাভাবিক জ্ঞান সুরক্ষিত না হলে মানুষ নিজের, পরিবারের, দেশ, জাতি ও রাষ্ট্রের সবার ক্ষতি করবে। মদ ও জুয়া অপরাধের আকর, যাতে চক্রবৃদ্ধি হারে অপরাধের শৃঙ্খল তৈরি হয়। মাদকের নেশায়, অবৈধ অর্থের লোভে অন্ধ ও মাতাল হয়েই খুনখারাবিসহ নানা অপরাধের জালে আবদ্ধ হয় মানুষ। 

স্ত্রীর সম্মান ও অধিকার
সুরা বাকারার ২২৮ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তাআলা নারী অধিকারের মূলনীতি স্পষ্ট ভাষায় বলে দিয়েছেন। ইসলাম-পূর্বকালে পৃথিবীর কোনো প্রান্তেই স্ত্রীর অধিকার স্বীকৃত ছিল না। নারীকে স্বাধীন ভাবা হতো না। তাদের যাবতীয় অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হতো। মানবসভ্যতা সুদীর্ঘকাল পর্যন্ত স্ত্রীর অধিকার হরণের এ গুরুতর পাপে নিমজ্জিত ছিল। ইসলাম সব ধরনের প্রান্তিকতামুক্ত বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ি ত্যাগ করে মধ্যমপন্থা নির্দেশ করেছে। ইসলাম স্ত্রীকে অধিকারহীন করেনি, আবার সব বিষয়ে স্বামীর সমান করেনি। সংসার জীবনে স্ত্রীরও কিছু অধিকার আছে স্বামীর ওপর, আবার স্বামীরও কিছু অধিকার আছে স্ত্রীর ওপর। স্ত্রীর প্রতি স্বামীর কিছু কর্তব্য আছে, আবার স্বামীর প্রতি স্ত্রীরও কিছু কর্তব্য আছে। সম্মান উভয়ের আছে। 

মহান আল্লাহ স্বামী-স্ত্রীর উভয়ের অধিকারের কথা বলতে গিয়ে স্ত্রীর অধিকারের কথা আগে বলেছেন। বর্ণনা ধারার মাধ্যমে সতর্ক করে দিয়েছেন যে, স্ত্রীর অধিকারই বেশি গুরুত্বপূর্ণ। একই বিষয়ে মহানবী (সা.) বিদায় হজের ভাষণে বলেছেন, ‘স্ত্রীদের ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় করো। কেননা, তুমি তোমার স্ত্রীকে গ্রহণ করেছ আল্লাহর জিম্মায়।’ 

সুরা আলে ইমরান—ইমরানপরিবারের গল্প
সুরা আলে ইমরান মদিনায় অবতীর্ণ। এ সুরার আয়াত সংখ্যা ২০০। কোরআনের তৃতীয় সুরা এটি। আলে ইমরান অর্থ ইমরানের পরিবার। ইমরান (আ.)-এর বংশধর সম্পর্কে এই সুরায় বিশেষভাবে আলোচনা করা হয়েছে বলে এর নাম আলে ইমরান রাখা হয়েছে। 

ছবি: আজকের পত্রিকাপবিত্র কোরআন শ্রেষ্ঠ কিতাব
সুরা আলে ইমরানের ১-৯ নম্বর আয়াতের শুরুতে পবিত্র কোরআনের মাহাত্ম্য তুলে ধরা হয়েছে। এ কোরআন পূর্ববর্তী গ্রন্থের সত্যায়নকারী এবং এটিই সত্য ও মিথ্যার মাঝে প্রকৃত পার্থক্যকারী, এই কোরআনের ওপর ইমানদারেরা শতভাগ আস্থা ও বিশ্বাস রাখেন এবং আমল করেন। যাদের অন্তরে বক্রতা-কুটিলতা রয়েছে, তারা অপব্যাখ্যার অপচেষ্টা করে। 

মারিয়াম ও ইসা (আ.)-এর ঘটনা
সুরা আলে ইমরানের ৩০-৬২ নম্বর আয়াতে ইমরান (আ.)-এর বংশধর, বৃদ্ধ বয়সে জাকারিয়া (আ.)-এর সন্তান লাভ, ইসা (আ.)-এর মা মারিয়াম (আ.)-এর জন্ম, মারিয়াম (আ.)-এর বায়তুল মুকাদ্দাসের সেবক হওয়া, পরবর্তীতে কুমারী অবস্থায় আল্লাহর আদেশে গর্ভবতী হওয়া, ইসা (আ.)-এর অলৌকিক জন্ম, বিশ্ববাসীর জন্য আল্লাহর কুদরতের বহিঃপ্রকাশ, দোলনায় ইসা (আ.)-এর কথোপকথন, তাঁকে জীবিত অবস্থায় আসমানে তুলে নেওয়া ও বনি ইসরাইলের প্রতিক্রিয়ার বিস্তারিত বিবরণ তুলে ধরা হয়েছে। 

এ ছাড়া সুরা আলে ইমরানে রাত-দিনের বিবর্তন, জীবন-মৃত্যুর রহস্য, মাতৃগর্ভে মানুষের আকার-আকৃতি, তালুত (আ.) ও জালুতের যুদ্ধের কাহিনি, সুদ হারাম, ঋণ দেওয়ার পদ্ধতি, সব নবী-রাসুল এক আল্লাহর দাওয়াত দিয়েছেন ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আলোচিত হয়েছে। 

লেখক: ইসলামবিষয়ক গবেষক ও সাংবাদিক

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত