Ajker Patrika

ধর্মীয় সম্প্রীতির নতুন ভুবন: আমিরাতে একই কমপ্লেক্সে মসজিদ-গির্জা-সিনাগগ

ইসলাম ডেস্ক
আপডেট : ২৯ জুন ২০২৩, ১৮: ০২
ধর্মীয় সম্প্রীতির নতুন ভুবন: আমিরাতে একই কমপ্লেক্সে মসজিদ-গির্জা-সিনাগগ

চলতি বছরের মার্চে সংযুক্ত আরব আমিরাতের আবুধাবিতে আব্রাহামিক ফ্যামিলি হাউস নামের একটি জৌলুশপূর্ণ কমপ্লেক্সের উদ্বোধন করা হয়। তিনটি প্রসিদ্ধ আব্রাহামিক ধর্মের (ইসলাম, ইহুদি ও খ্রিষ্টান) তিনটি আইকনিক উপাসনালয় নিয়ে নির্মিত কমপ্লেক্সটি এরই মধ্যে আন্তধর্মীয় সংলাপ ও সম্প্রীতির বৈশ্বিক কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। ধর্মীয় স্বাতন্ত্র্য বজায় রেখেই কীভাবে একজন মসজিদের ইমাম, গির্জার বিশপ ও সিনাগগের রাব্বি একসঙ্গে চলতে পারেন—তা মানুষের সামনে তুলে ধরাই কমপ্লেক্সটি প্রতিষ্ঠার মূল লক্ষ্য। যদিও এ নিয়ে অনেকে আপত্তিও জানাচ্ছেন। 

স্থাপত্যে ধর্মীয় সহাবস্থানের বার্তা
আব্রাহামিক ফ্যামিলি হাউস আবুধাবির সাদিয়াত সাংস্কৃতিক জেলায় অবস্থিত। এর পাশেই রয়েছে বিখ্যাত ল্যুভর মিউজিয়ামের আবুধাবি শাখা, জায়েদ ন্যাশনাল মিউজিয়ামসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা। 

ধর্মীয় সহিষ্ণুতা ছড়িয়ে দিতে ২০১৯ সালে এই কমপ্লেক্সের নির্মাণকাজ শুরু করে সংযুক্ত আরব আমিরাত। ভিত্তিফলকে দেশটির প্রেসিডেন্ট শেখ মুহাম্মদ বিন জায়েদ আল-নাহিয়ান, দুবাইয়ের শাসক শেখ মুহাম্মদ বিন রশিদ, পোপ ফ্রান্সিস ও কায়রোর আল-আজহার গ্র্যান্ড মসজিদের ইমাম আহমেদ আল-তাইয়েবের স্বাক্ষর রয়েছে। 

ঘানা বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ স্থপতি স্যার ডেভিড অ্যাডজায়ে আব্রাহামিক ফ্যামিলি হাউসের নান্দনিক নকশাটি তৈরি করেন। যথেষ্ট প্রাকৃতিক আলো-বাতাসের ব্যবস্থাসহ কমপ্লেক্সের নকশা সম্পর্কে তিনি বলেছেন, ‘মানুষের জীবনে সমৃদ্ধি আনাই আমার নকশার উদ্দেশ্য। এই স্থাপনায় বিচরণের মাধ্যমে সব ধর্মের মানুষ শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের প্রয়োজনীয় দিকগুলো শিখবে।’ 

আব্রাহামিক ফ্যামিলি হাউসে তিনটি অত্যাধুনিক উপাসনালয় রয়েছে। প্রতিটিরই দৈর্ঘ্য, প্রস্থ ও উচ্চতা ৩০ মিটার। কমপ্লেক্সের ভেতরের প্রতিটি লেখা তিনটি ভাষায়—আরবি, ইংরেজি ও হিব্রু। 

এ ছাড়া প্রতিটি উপাসনালয়ের পাশেই রয়েছে পবিত্র হওয়ার ব্যবস্থা। গির্জার পাশে ব্যাপটিস্ট্রি, সিনাগগের পাশে মিকভা এবং মসজিদের পাশে অজুখানা। পুরো কমপ্লেক্সেই রয়েছে ত্রিভুজ আকৃতির ছোট-শান্ত হ্রদ, যা তিন ধর্মের সহাবস্থানকে উপস্থাপন করে। 
 
চুনাপাথরের তৈরি ভবনগুলোর সামনের দিকে নকশা প্রতিটি ধর্মের স্বতন্ত্র বিশ্বাসের প্রতিনিধিত্ব করে। ক্যাথলিক গির্জাটির নাম রাখা হয়েছে হোলিনেস ফ্রান্সিস চার্চ। সোজাসুজি অনেকগুলো কলাম দিয়ে বাইরের নকশা করা হয়েছে। এতে একসঙ্গে ৩০০ জন বসার ব্যবস্থা রয়েছে। 

মসজিদের নাম আহমেদ আল-তাইয়েব মসজিদ। এর সামনের দিকে রয়েছে সাতটি খিলান, যা ইসলামের একটি উল্লেখযোগ্য সংখ্যা। মসজিদে ৩২২ জন মুসল্লির একসঙ্গে নামাজ আদায়ের ব্যবস্থা রয়েছে। রয়েছে নারীদের নামাজের স্থানও। 

সিনাগগের নাম রাখা হয়েছে ইহুদি দার্শনিক মোজেস বেন মাইমনের নামে। সিনাগগের দেয়ালে ইহুদি ধর্মের ১০ আদেশ (টেন কম্যানডেন্ট) লেখা হয়েছে। এর বাইরের নকশা ত্রিভুজ আকৃতির, যা হজরত ইবরাহিম (আ.)-এর তাঁবু, নিরাপত্তা ও আতিথেয়তার প্রতীক। 

কমপ্লেক্সের মসজিদটির নাম আহমেদ আল-তাইয়েব মসজিদ। এর সামনের দিকে রয়েছে সাতটি খিলান, যা ইসলামের একটি উল্লেখযোগ্য সংখ্যা। ছবি: আরব নিউজতিন ধর্মকে এক করা উদ্দেশ্য নয়
তিনটি আব্রাহামিক ধর্মের অনুসারীদের মধ্যে শান্তি ও সংলাপের বন্ধন তৈরি করার লক্ষ্য নিয়ে এই এটি নির্মিত। এই স্থাপত্য মোগল বাদশাহ আকবরে দিন-ই-ইলাহির মতো কিছুর সঙ্গে সম্পর্কিত নয়। ২০১৯ সালে পোপ ফ্রান্সিস ও আল-আজহারের গ্র্যান্ড ইমাম আহমেদ আল-তাইয়েবের মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এর ফলে নির্মিত হয় আব্রাহামিক ফ্যামিলি হাউস। উদ্যোক্তারা বলেছেন, এর উদ্দেশ্য কোনোভাবেই তিন ধর্মকে এক করে ফেলা নয়। যদিও প্রথম দিকে অনেকেই এই বিষয়ে বিভ্রান্ত ছিলেন। 

কমপ্লেক্সে অবস্থিত আহমেদ আল-তাইয়েব মসজিদের ইমাম মাহমুদ নাগাহ বলেন, ‘প্রথম যখন এই কমপ্লেক্স নির্মাণ শুরু হয়, তখন অনেকের মধ্যেই ভুল-বোঝাবুঝির সৃষ্টি হয়েছিল। তাঁরা মনে করেছিলেন, এটি তিন ধর্মকে এক করে আব্রাহামিক ধর্ম নামের একটি নতুন ধর্ম তৈরির মিশন।’ 

মাহমুদ নাগাহ আরও জানান, এই ভুল-বোঝাবুঝির অবসান ঘটাতে তিনি মানুষের সামনে বিষয়গুলো তুলে ধরেছিলেন। কীভাবে ধর্মীয় স্বাতন্ত্র্য বজায় রেখে পাশাপাশি ধর্মগুলো অবস্থান করতে পারে, তা ব্যাখ্যা করেছিলেন। তাঁর উদ্দেশ্য হলো, মুসলমানেরা যখন মসজিদে আসবেন, তখন যেন তাঁরা নিজে থেকেই বলেন—এটি তো আমিরাতের অন্য মসজিদগুলোর মতো একটি সাধারণ মসজিদই। 

তিনটি উপাসনালয়ই আকারে আয়তনে সমান। মাহমুদ নাগাহ বলেন, ‘আমরা এখানে (মসজিদে) গির্জা ও সিনাগগ থেকে সম্পূর্ণ স্বতন্ত্রভাবে কাজ করছি। তা সত্ত্বেও আমরা এক স্থানে জড়ো হই এবং আন্তধর্মীয় সংলাপে অংশ নিই। যে দিকগুলো আমাদের ধর্মে এক, সেসব বিষয়ে আমরা আলাপ করি।’ 

মাহমুদ আরও বলেন, ‘ধর্মগুলোকে মানুষের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টির জন্য ব্যবহার করা উচিত নয়। বরং সবাইকে ঐক্যের সুতোয় গাঁথাই ধর্মীয় বিশ্বাসের লক্ষ্য হওয়া উচিত। আমি মনে করি, মানুষের সবচেয়ে বড় শত্রু অজ্ঞতা, যা মানুষে-মানুষে যোগাযোগ গড়ে তোলার প্রধান অন্তরায়।’ 

ক্যাথলিক গির্জাটির নাম রাখা হয়েছে হোলিনেস ফ্রান্সিস চার্চ। সোজাসুজি অনেকগুলো কলাম দিয়ে এর বাইরের নকশা করা হয়েছে। ছবি: আরব নিউজআমিরাতে ইহুদিদের ‘নতুন পথচলা’
২০২০ সালের সেপ্টেম্বরের শুরুতে, সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাহরাইন ও মরক্কো ইসরায়েলের সঙ্গে মার্কিন মধ্যস্থতায় সম্পর্ক স্বাভাবিক করে। এর ফলে আমিরাতে ইসরায়েলের জন্য বাণিজ্য, কূটনীতি ও নিরাপত্তা সহযোগিতার দরজা খোলে। সম্পর্ক স্বাভাবিক করার এই প্রক্রিয়াকে বিশ্বের অনেক দেশ ও মুসলমানেরা স্বাভাবিকভাবে না নিলেও আমিরাতে ইহুদিদের আগমন ঠেকানো যায়নি। 

আব্রাহামিক ফ্যামিলি হাউসের মোজেস বেন মাইমন সিনাগগের প্রধান রাব্বি ইয়াহুদা সারনা বলেন, ‘এটি উপসাগরীয় অঞ্চলে ১০০ বছরের মধ্যে প্রথম বিশেষ উদ্দেশ্যে নির্মিত সিনাগগ। আমিরাতে ইহুদিদের সংখ্যা বাড়ছে। কারণ এখানে মানুষ নিরাপদ বোধ করছে। বিলাসী জীবন পাচ্ছে।’ 

ইয়াহুদা সারনা আরও বলেন, ‘আমি ২০১০ সালে কানাডা থেকে আমিরাতে এসেছি। বিশ্বব্যাপী যখন ইহুদি-বিদ্বেষ বেড়েই চলেছে, তখন ইহুদিরা আমিরাতে নিরাপদ বোধ করছে। এখানে হলোকাস্ট থেকে বেঁচে ফেরাদের সন্তানেরা যেমন রয়েছে, তেমনি ইয়েমেনে হুতিদের হাতে নির্যাতিত ইহুদিরাও রয়েছে। সাদ্দামের আমলে ইরাক থেকে পালিয়ে আসা ইহুদি যেমন রয়েছে, ইরান থেকে চলে আসা ইহুদিও রয়েছে।’ 

সিনাগগের নাম রাখা হয়েছে ইহুদি দার্শনিক মোজেস বেন মাইমনের নামে। বাইরের নকশা ত্রিভুজ আকৃতির কলামে তৈরি, যা হজরত ইবরাহিম (আ.)-এর তাঁবু, নিরাপত্তা ও আতিথেয়তার প্রতীকধর্মীয় সহাবস্থানের অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত
আব্রাহামিক ফ্যামিলি হাউসের প্রাথমিক সাফল্যে উচ্ছ্বসিত রাব্বি ইয়াহুদা সারনা বিশ্বের অন্যান্য দেশেও এমন প্রকল্প দেখতে চান, যেখানে শত মতপার্থক্য থাকার পরও সব ধর্মের অনুসারীরা সহাবস্থান করতে পারবে। আহমেদ আল-তাইয়েব মসজিদের ইমাম মাহমুদ নাগাহও তাঁর সঙ্গে একমত। 

কমপ্লেক্সে অবস্থিত ফ্রান্সিস চার্চের প্রধান যাজক পাওলো মার্তিনেলি বলেন, ‘এখানে প্রার্থনা করতে একত্র হওয়া চমৎকার ব্যাপার। আমাদের বিশ্বাস স্পষ্টই আলাদা। তবে আমরা একই পরিসরে ভিন্ন ভিন্ন ধর্ম পালন করছি। আমরা বিশ্বকে দেখাতে চাই, বিশ্বাস আলাদা হলেও একসঙ্গে কাজ করা সম্ভব।’ 

পাওলো মার্তিনেলি আরও বলেন, ‘আমি মনে করি, এমন স্থাপনা পৃথিবীর যে কোনো স্থানেই ধর্মীয় সহাবস্থানের বার্তা ছড়িয়ে দেবে।’ 

আরব নিউজ থেকে সংক্ষিপ্ত অনুবাদ: ইজাজুল হক

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

নির্বাচনের কারণে এগিয়ে এল কওমি মাদ্রাসার কেন্দ্রীয় পরীক্ষা

ইসলাম ডেস্ক 
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কারণে দেশের কওমি মাদ্রাসাগুলোর কেন্দ্রীয় বোর্ড পরীক্ষা এগিয়ে আনা হয়েছে। কওমি সর্বোচ্চ স্তর দাওরায়ে হাদিস (তাকমিল) ও বেফাকের কেন্দ্রীয় পরীক্ষার পূর্বঘোষিত তারিখ পরিবর্তন করা হয়েছে।

নতুন সূচি অনুযায়ী, কওমি মাদ্রাসা শিক্ষাবোর্ড বেফাকের কেন্দ্রীয় পরীক্ষা শুরু হবে ১৭ জানুয়ারী (শনিবার)। এ ছাড়া ২০২৬ সালের দাওরায়ে হাদিস পরীক্ষা শুরু হবে ২৭ জানুয়ারি (মঙ্গলবার)।

কওমি মাদ্রাসা শিক্ষাবোর্ড আল-হাইআতুল উলয়া লিল-জামিআতিল কওমিয়া বাংলাদেশ ও বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশের পক্ষ থেকে আজ রোববার (১৪ ডিসেম্বর) এ তথ্য জানানো হয়।

আল-হাইআতুল উলয়ার অফিস ব্যবস্থাপক মু. অছিউর রহমান স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ২০২৬ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠেয় জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পরিপ্রেক্ষিতে পরীক্ষার তারিখ পরিবর্তন করা হয়েছে। ৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত স্থায়ী কমিটির ৬৬ নম্বর সভার সিদ্ধান্ত ও ১৪ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত মনিটরিং সেলের সভার সিদ্ধান্তক্রমে এই পরিবর্তন আনা হয়েছে।

নতুন সময়সূচি অনুযায়ী, ২৭ জানুয়ারি (মঙ্গলবার) থেকে পরীক্ষা শুরু হবে। টানা ১০ দিন পরীক্ষা চলার পর ৫ ফেব্রুয়ারি (বৃহস্পতিবার) পরীক্ষা শেষ হবে।

প্রথম দিনের পরীক্ষা শুরু হবে সকাল ৮টায় এবং শেষ হবে বেলা ১১টা ৩০ মিনিটে। অবশিষ্ট ৯ দিন পরীক্ষা শুরু হবে সকাল ৯টায় এবং শেষ হবে দুপুর ১২টা ৩০ মিনিটে।

প্রথম দিন তিরমিজি শরিফ প্রথম খণ্ডের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। আর শেষ দিন পরীক্ষা হবে মুওয়াত্তায়ে ইমাম মালিক ও মুওয়াত্তায়ে ইমাম মুহাম্মদ কিতাবের।

এ ছাড়া কওমি মাদ্রাসা শিক্ষাবোর্ড বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশের প্রধান পরিচালক মাওলানা উবায়দুর রহমান খান নদভী জানান, বেফাকের কেন্দ্রীয় পরীক্ষা শুরু হবে ১৭ জানুয়ারী (শনিবার)। শুক্রবারসহ চলবে ২৪ জানুয়ারি (শনিবার) পর্যন্ত।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

শুরু হচ্ছে পুষ্টি ভার্সেস অব লাইট সিজন-২ কোরআন প্রতিযোগিতা

ইসলাম ডেস্ক 
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

পবিত্র মাহে রমজান উপলক্ষে কোরআন তিলাওয়াত প্রতিযোগিতা পুষ্টি ভার্সেস অব লাইট সিজন-২ আয়োজনের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা করা হয়েছে। ‘টি কে গ্রুপ’-এর উদ্যোগে এই ‘ইসলামিক রিয়্যালিটি শো’টি দ্বিতীয়বারের মতো অনুষ্ঠিত হতে চলেছে।

রোববার (১৪ ডিসেম্বর) রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেওয়া হয়।

সংবাদ সম্মেলনে টি কে গ্রুপের বিজনেস ডিরেক্টর মোহাম্মদ মোফাচ্ছেল হক দেশবরেণ্য ইসলামি চিন্তাবিদ, আলেম ও শীর্ষস্থানীয় গণমাধ্যমের উপস্থিতিতে বলেন, ‘দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের মেধাবী কিশোর-কিশোরী হাফেজদের জাতীয় পর্যায়ে তুলে ধরা এবং তাদের মূল্যায়ন করার উদ্দেশ্যে পুষ্টি পবিত্র কোরআন চর্চার যে যাত্রা শুরু করেছে, তা অব্যাহত থাকবে। আমাদের বিশ্বাস, দ্বিতীয় এই আসরে পুষ্টি ভার্সেস অব লাইট আরও জনপ্রিয়তা অর্জন করবে।’

তিনি আরও উল্লেখ করেন, টি কে গ্রুপের বিভিন্ন সামাজিক কর্মকাণ্ডের মধ্যে ইসলামের খেদমতে এই আয়োজন সাধারণ ধর্মপ্রাণ মুসলমানগণের কাছে স্মরণীয় হয়ে থাকবে।

অনুষ্ঠানে টি কে গ্রুপের পরিচালক (এইচআর) আলমাস রাইসুল গনিও বক্তব্য দেন।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন কারি এবং ‘পুষ্টি ভার্সেস অব লাইট’-এর প্রধান বিচারক শায়খ আহমাদ বিন ইউসুফ আল আজহারী। তিনি বলেন, ‘কিশোর ও তরুণ প্রজন্মকে পবিত্র কোরআনের প্রতি অনুরাগী করতে এই আয়োজন প্রশংসার দাবিদার। সমাজে ইসলামি মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠায় টি কে গ্রুপের এই উদ্যোগকে আমি সাধুবাদ জানাই।’

দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের খুদে প্রতিভাবান হাফেজগণ প্রাথমিক অডিশন রাউন্ডে অংশগ্রহণের সুযোগ পাবে। অভিজ্ঞ বিচারক এবং আলেমগণের বিবেচনায় সেরা প্রতিযোগীরা মূল পর্বে অংশগ্রহণ করবে। রিজিওনাল অডিশনে অংশগ্রহণকারী প্রতিযোগীরা পুষ্টির পক্ষ থেকে আকর্ষণীয় উপহার পাবে।

২২ ডিসেম্বর থেকে দেশব্যাপী অডিশন পর্ব শুরু হবে। চূড়ান্ত পর্ব পবিত্র রমজান মাসজুড়ে প্রতিদিন বিকেল ৫টা হতে মাগরিবের আজানের আগে দেশের অন্যতম চ্যানেল ‘নাইন’-এ প্রচারিত হবে। চূড়ান্ত পর্যায়ে বিজয়ীরা পাবেন লক্ষাধিক টাকাসহ বিভিন্ন আকর্ষণীয় পুরস্কার।

সংবাদ সম্মেলনে টি কে গ্রুপের বিভিন্ন ইউনিটের হেড অব সেলস, হেড অব বিজনেসসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

প্রবীণ সুফি পীর জুলফিকার আহমদ নকশবন্দি আর নেই

ইসলাম ডেস্ক 
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

প্রখ্যাত সুফি সাধক, নকশবন্দি তরিকার প্রভাবশালী পীর ও ইসলামিক স্কলার শায়খ জুলফিকার আহমদ নকশবন্দি ইন্তেকাল করেছেন।

আজ রোববার (১৪ ডিসেম্বর) পাকিস্তানের লাহোরে তিনি শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেন। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।

তাঁর ইন্তেকালের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন তাঁরই খলিফা মাওলানা মাসুমুল হক। একই তথ্য নিশ্চিত করেছেন পাকিস্তানের গণমাধ্যম ম্যাসেজ টিভির পরিচালক আবদুল মতিন।

শায়খ জুলফিকার আহমদ নকশবন্দি ১৯৫৩ সালের ১ এপ্রিল পাকিস্তানের ঝং জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি নকশবন্দি তরিকার একজন খ্যাতিমান সুফি সাধক ছিলেন এবং দেওবন্দি আন্দোলনের সঙ্গে তাঁর গভীর সম্পর্ক ছিল। ইসলামি আধ্যাত্মিকতা, তাজকিয়া ও আত্মশুদ্ধির ক্ষেত্রে তিনি বিশ্বব্যাপী সুপরিচিত ছিলেন।

শায়খ জুলফিকার আহমদ ঝং জেলায় মাহদুল ফাকির আল ইসলামি নামে একটি ইসলামি প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেন। প্রতিষ্ঠানটি তাজকিয়া, ইসলাহে নফস ও সুফি শিক্ষার একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত। দেশ-বিদেশে তাঁর অসংখ্য মুরিদ ও অনুসারী রয়েছেন।

শায়খ জুলফিকার আহমদ নকশবন্দি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে দাওয়াতি সফর করেছেন। দারুল উলুম দেওবন্দসহ বহু গুরুত্বপূর্ণ ইসলামি প্রতিষ্ঠানে তিনি বক্তব্য দিয়েছেন। তাঁর বয়ান ও নসিহত ইউটিউবসহ বিভিন্ন ডিজিটাল মাধ্যমে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করে।

শায়খ জুলফিকার আহমদ একজন প্রথিতযশা লেখকও ছিলেন। ফিকহ, আত্মশুদ্ধি, পারিবারিক জীবন এবং নারীদের ইসলামি ভূমিকা বিষয়ে রচিত তাঁর বহু গ্রন্থ মুসলিম সমাজে বিশেষভাবে সমাদৃত।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

অপমৃত্যু থেকে রক্ষা করে যে আমল

ইসলাম ডেস্ক 
আপডেট : ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৯: ২৪
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

ইসলামে দান-সদকা অত্যন্ত মর্যাদাপূর্ণ একটি আমল। পবিত্র কোরআন ও হাদিসে এর অসংখ্য ফজিলতের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। সদকা কেবল দরিদ্রের প্রয়োজনই মেটায় না, বরং এটি বান্দা ও তার প্রতিপালকের মধ্যে সম্পর্ককে আরও মজবুত করে। মহানবী (সা.) সদকার এমন কিছু অসামান্য ফজিলত বর্ণনা করেছেন, যা আমাদের জীবনে এর গুরুত্ব আরও বাড়িয়ে দেয়।

সদকার এক অন্যতম ফজিলত হলো, এটি আল্লাহর ক্রোধ প্রশমিত করে। হাদিসে মহানবী (সা.) বলেন, ‘দান-সদকা আল্লাহর ক্রোধ কমায় এবং মানুষকে অপমৃত্যু থেকে রক্ষা করে।’ (জামে তিরমিজি)

মানুষ জীবনে ইচ্ছায়-অনিচ্ছায় নানা পাপ করে আল্লাহর নাফরমানিতে লিপ্ত হয়, ফলে সে আল্লাহর বিরাগভাজন হয়। এমতাবস্থায় আল্লাহর রাগ কমানোর জন্য এবং তাঁর সন্তুষ্টি ফিরে পাওয়ার জন্য সদকা এক ফলপ্রসূ আমল। সদকার বরকতে আল্লাহ সেই রাগ দূর করে দেন। এ ছাড়া, এই হাদিসের মাধ্যমে জানা যায়, সদকার কারণে আল্লাহ তাআলা দানশীল ব্যক্তিকে অপমৃত্যু থেকে রক্ষা করেন এবং তাকে ইমানের সঙ্গে মৃত্যু দান করেন।

দান-সদকা যে শুধু পরকালে সওয়াব বৃদ্ধি করে তা নয়; বরং এর বরকতে আল্লাহ দুনিয়ার সম্পদও বহুগুণ বাড়িয়ে দেন। এক হাদিসে আবু উমামা (রা.) থেকে বর্ণিত, আবু জর (রা.) রাসুল (সা.)-কে জিজ্ঞেস করলেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল, সদকা কী?’ জবাবে তিনি বললেন, ‘কয়েক গুণ। (অর্থাৎ, কোনো ব্যক্তি যে পরিমাণ আল্লাহর জন্য দান করবে, তার কয়েক গুণ বেশি সওয়াব সে পাবে)। আর আল্লাহ তাআলা বিপুল ভান্ডারের অধিকারী।’ (মুসনাদে আহমাদ)

অনেক হাদিসবিশারদ এই হাদিসের ব্যাখ্যায় বলেছেন, সদকার বরকতে আল্লাহ দুনিয়ায়ও সম্পদ বহুগুণ বাড়িয়ে দেন। আর পরকালে যে প্রতিদান সে পাবে, তা হবে এর চেয়েও বহুগুণ বেশি। বাস্তবেও দেখা যায়, যে ব্যক্তি আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস রেখে নিষ্ঠার সঙ্গে দান করেন, তাঁর সম্পদ অদ্ভুতভাবে বেড়ে যায়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত