রমজানে কোরআন পাঠের ঐতিহ্য মুকাবালা

ইজাজুল হক
আপডেট : ৩১ মার্চ ২০২৩, ০৮: ৩২
Thumbnail image

রমজান কোরআন তিলাওয়াতের মাস। এ মাসে পুরো বিশ্বের মসজিদগুলোতে ও মুসলিমদের ঘরে-ঘরে সুরেলা কণ্ঠে কোরআন তিলাওয়াত করতে শোনা যায়। বিশেষ করে রমজানের ‘মুকাবালা’ অনুষ্ঠান মুসলমানদের হাজার বছরের ঐতিহ্য।

মুকাবালা—একাধিক ব্যক্তির একে অন্যকে কোরআন তিলাওয়াত করে শোনানোর এক বিশেষ পদ্ধতি। ইসলামি বিশ্বাসমতে, মুকাবালা প্রথম সম্পাদিত হয়েছিল মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) ও ফেরেশতা জিবরাইল (আ.)-এর মধ্যে। সেখান থেকেই মুসলিম বিশ্বে এটি রমজানের স্থায়ী ঐতিহ্য হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। এশিয়া, আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্য এমনকি ইউরোপের মসজিদগুলোতেও ক্বারিদের সুরেলা কণ্ঠের তিলাওয়াত শোনা যায়। তিলাওয়াতের সব নিয়মকানুন মেনেই মুকাবালায় কোরআন পাঠ করা হয়।

বিশুদ্ধ হাদিস অনুসারে, মহানবী (সা.) মৃত্যুর আগের রমজানে দুটি মুকাবালা সম্পন্ন করেছিলেন। যেহেতু কোরআন রমজান মাসেই নাজিল হয়েছিল, তাই নবী (সা.) প্রথমে ফেরেশতা জিবরাইল (আ.)-এর তিলাওয়াত শুনতেন, এরপর তিনি নিজেই জিবরাইল (আ.)-কে ওই অংশ তিলাওয়াত করে শোনাতেন।

সাহাবায়ে কেরাম ও তাদের পরিবারের সদস্যরাও রমজানে মুকাবালার আয়োজন করতেন। হাদিসে এসেছে, মহানবী (স.) ভালো তিলাওয়াত করতে পারেন এমন সাহাবিদের তিলাওয়াত শুনতেন এবং কখনো কখনো অশ্রুসজল হয়ে পড়তেন।

এরপর ঐতিহ্যটি ইসলামের সঙ্গে পুরো বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে এবং পরবর্তী খলিফা ও সুলতানেরা এর বিশ্বস্ত প্রবক্তা হয়ে ওঠেন। ইতিহাসবিদ ইবনে খাল্লিকান বলেন, আব্বাসীয় রাজবংশের পঞ্চম খলিফা হারুনুর রশিদের স্ত্রী জুবায়দার প্রায় ১০০ জন কোরআনের হাফেজ খাদেম ছিলেন, যাঁরা প্রাসাদে কোরআন তিলাওয়াত করতেন। 
ইস্তাম্বুলের বিখ্যাত তোপকাপি প্রাসাদ জাদুঘরের যে অংশে মহানবী (সা.)-এর স্মৃতিবিজড়িত পবিত্র নিদর্শনগুলো সংরক্ষিত আছে, সেখানে দিনের প্রায় প্রতি ঘণ্টায় কোরআন তিলাওয়াত করার এই ঐতিহ্য আজও অব্যাহত রয়েছে।

আজও মুসলিম বিশ্বে সেই মুকাবালা ঐতিহ্য টিকে আছে, যা মহানবী (সা.) ও সাহাবিদের যুগে ছিল। কিছু বলকান দেশে, যেমন মেসিডোনিয়ায়, রমজানের আগে থেকেই মুকাবালা শুরু হয়।

পুরোনো ইস্তাম্বুলেও রমজানের ১৫ দিন আগেই মসজিদে মুকাবালার আয়োজন শুরু হয়। উসমানি আমলে মসজিদের খাদেমকে ‘কুজান’ বলা হতো। নামাজের আগে পবিত্র কোরআন থেকে এক পারা তিলাওয়াত করা তাঁদের অন্যতম দায়িত্ব ছিল। এ ছাড়া কিছু বড় প্রাসাদে সুন্দর কণ্ঠের ইমাম ও মুয়াজ্জিনদের নিযুক্ত করা হতো, যাঁরা সাহ্‌রির পর মুকাবালার তিলাওয়াত করতেন।

ইস্তাম্বুলের আইয়ুব সুলতান মসজিদের মুকাবালার এক ঐশ্বরিক ক্ষমতা ছিল বলে বিশ্বাস করা হতো। এমনকি সাধারণ লোকজনও রমজানের সময় মসজিদের তিলাওয়াতে যোগ দিতেন। সুলতানও কখনো কখনো এসব কর্মসূচিতে অংশ নিতেন।

এখনো তুর্কিয়েতে রমজানে মুকাবালার আয়োজন করা হয়। সাধারণত রমজানের প্রথম দিনেই শুরু হয় এবং ঈদের এক দিন আগে তা সম্পন্ন হয়। ইস্তাম্বুলে, বিশেষ করে বড় মসজিদগুলোতে, বিখ্যাত হাফেজরা এখনো রমজানের সময় ঐতিহ্যটি পালন করেন। নারীরা বাড়ির ভেতরে সমবেত হয়ে মুকাবালার আয়োজন করেন। 
মিসরে মসজিদ, বাড়ি, রেডিও ও টেলিভিশনে বিখ্যাত ক্বারি ও হাফিজদের তিলাওয়াত শোনেন ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা। কিছু রেডিও স্টেশন ধারাবাহিকভাবে কোরআন তিলাওয়াত সম্প্রচার করে।

বাংলাদেশেও মুকাবালার প্রচলন রয়েছে। তবে তা মুকাবালা হিসেবে প্রসিদ্ধ নয়। মসজিদ, মাদ্রাসা, বাড়িঘর, রেডিও, টেলিভিশন ইত্যাদিতে ধারাবাহিক কোরআন তিলাওয়াতের আয়োজন মুকাবালারই অংশ। 

সূত্র: টিআরটি ওয়ার্ল্ড

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

সদা প্রস্তুত থাকতে ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টকে সেনাপ্রধানের আহ্বান

বাংলাদেশে ‘মাইনাস টু’ ফর্মুলা ফিরে আসছে কি?

বাংলাদেশ ঘুরে গেলেন পাকিস্তানের আইএসআই প্রধান, দাবি ভারতীয় গণমাধ্যমের

মাস্কের চাপেই ডিওজিই থেকে রামাস্বামীর পদত্যাগ, শুরুতেই ট্রাম্প প্রশাসনে অন্তর্দ্বন্দ্বের ইঙ্গিত

গাড়িচালককে মারধর: কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ইসি সচিবের কক্ষের সামনে হট্টগোল

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত