আমজাদ ইউনুস
ক্যালিগ্রাফি বা লিপিকলা মুসলিম সংস্কৃতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। ইসলামি লিপিকলার সূচনা মূলত পবিত্র কোরআনকে লিখিতরূপে সংরক্ষণ প্রচেষ্টার মধ্য দিয়ে শুরু হয়। এরপর মুসলিম অক্ষরশিল্পীরা এ শিল্পকে যুগে যুগে নান্দনিক সব অনুশীলনের মধ্য দিয়ে শিল্পকলার গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গে পরিণত করেন। এখানে মুসলিম লিপিকলার ৫ বিখ্যাত শিল্পীর কথা তুলে ধরেছেন আমজাদ ইউনুস।
ইবনে মুকলা
ইবনে মুকলা (৮৮৬-৯৪০ খ্রি.) ছিলেন ইসলামের ইতিহাসে সবচেয়ে বিখ্যাত এবং প্রভাবশালী ক্যালিগ্রাফারদের একজন। তিনি আব্বাসি খেলাফতের সময়ে কাজ করতেন এবং আরবি ক্যালিগ্রাফির নাসখ, তাওকিক ও রুকাশৈলীর প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে পরিচিত। ইবনে মুকলার হাতে বিকশিত ক্যালিগ্রাফিশৈলী আধুনিক আরবি ক্যালিগ্রাফির ভিত্তি হিসেবে বিবেচিত হয়। লিপিশিল্পকে তিনি সংশোধন ও পরিমার্জন করে প্রথম জ্যামিতিক পদ্ধতিতে বিন্যস্ত করেন এবং বিজ্ঞানসম্মত ধারায় দাঁড় করান। সর্বপ্রথম তিনিই লিপিকলার মৌলিক বিন্যাসরীতি উদ্ভাবন করেন। কৌণিক লিপিরীতি থেকে বক্রাকার লিপির উত্তরণে তিনি সর্বাধিক অবদান রাখেন। এ ছাড়া নাসখ লিখনপদ্ধতি তাঁর হাতেই সুষমামণ্ডিত রূপ পায়।
ইবনুল বাওয়াব
আবুল হাসান আলি ইবনে হিলাল বুওয়ায়হি ইবনুল বাওয়াব (মৃত্যু ১০২২ বা ১০৩১ খ্রি.) ছিলেন আব্বাসি শাসনামলের একজন খ্যাতনামা আরবি হস্তলিপিবিশারদ। তিনি বাগদাদের খলিফাদের দরবারের একজন দারোয়ানের পুত্র ছিলেন। তিনি ইবনে মুকলার শৈলীর ওপর ভিত্তি করে নিজস্ব শৈলী তৈরি করেন। কুফিক ও নাসখশৈলীতে বিশেষ পারদর্শী ছিলেন ইবনুল বাওয়াব। তাঁর লেখা কোরআন এবং অন্য গ্রন্থগুলো শৈল্পিক বিচারে অত্যন্ত মূল্যবান।
ইয়াকুত আল-মুস্তাসিমি
ইয়াকুত আল-মুস্তাসিমি (মৃত্যু ১২৯৮ খ্রি.) কুফিক, নাসখ, ও অন্যান্য শৈলীতে পারদর্শী ছিলেন। নিজের যুগের সবচেয়ে বিখ্যাত ক্যালিগ্রাফার ছিলেন। তাঁর কাজগুলো এখনো ইসলামি ক্যালিগ্রাফির মানদণ্ড হিসেবে বিবেচিত হয়। তিনি বাগদাদে শেষ আব্বাসি খলিফা আল-মুস্তাসিমের ক্রীতদাস ছিলেন। ইয়াকুত সাহিত্যপ্রেমী ছিলেন। বেশ কিছু কবিতাও রচনা করেন তিনি। তবে আরব ইতিহাসে তিনি একজন লিপিশিল্পী হিসেবেই সুখ্যাতি লাভ করেন।
মানুষ তাঁর অপূর্ব সুষমামণ্ডিত নান্দনিক লেখার জন্য তাঁকে ‘কিবলাতুল কুত্তাব’ বা ‘কিবলাতুল খত্তাতিন’ (চারু হস্তলিপিকারদের মধ্যমণি) বলে অভিহিত করত। তিনি মূলত ইবনুল বাওয়াবের ধারা-ঐতিহ্যকে অনুকরণ করে এগিয়ে গেছেন। লিখনশিল্পে তাঁর গুরুত্বপূর্ণ বিশেষত্ব হলো—তিনি কলমের মাথাকে তির্যকভাবে কাটেন। এভাবে তিনি লিখনশৈলীতে ব্যবহৃত কলমের উন্নতি সাধিত করে লিপিকলাকে আরও সাবলীল ও ছন্দময় করে তুলেছেন।
সুলতান আলি মাশহাদি
সুলতান আলি মাশহাদি (১৪৫৩-১৫২০ খ্রি.) ছিলেন তিমুরিদ সাম্রাজ্যের একজন বিখ্যাত ফারসি ক্যালিগ্রাফার। তিনি নাসখ ও নাস্তালিকশৈলীতে দক্ষ ছিলেন, যা পারস্য এবং পরবর্তী সময়ে ভারতীয় উপমহাদেশের লিপিকলায় বিশাল প্রভাব ফেলেছিল। তাঁর কাজ ছিল অত্যন্ত নিখুঁত, যা তাকে সময়ের শ্রেষ্ঠ অক্ষরশিল্পী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছিল। তার কাজগুলো ইরান, ভারত ও তুরস্কের বিভিন্ন স্থানে সংরক্ষিত রয়েছে। তিনি তিমুরিদ শাসকদের জন্য কাজ করতেন এবং বিভিন্ন রাজকীয় পাণ্ডুলিপি ও বইয়ের শিরোনাম, প্রচ্ছদ ও অন্যান্য ক্যালিগ্রাফিক কাজে মনোনিবেশ করেছিলেন। তাঁর শিল্পকর্মগুলো পারস্যের সাহিত্য-সংস্কৃতিতে গভীর প্রভাব ফেলেছে। সুলতান আলি মাশহাদি বহু পাণ্ডুলিপি লেখা ও অলংকরণের কাজ করেছেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ‘দেওয়ান-ই-হাফিজ’।
মির আলি তাবরিজি
মির আলি তাবরিজি (১৩৬০-১৪২০) ছিলেন প্রাচীন ইরানের একজন প্রখ্যাত ক্যালিগ্রাফার। তিনি নাস্তালিকশৈলীর উদ্ভাবক এবং এই শৈলীর উৎকর্ষসাধনে কাজ করেন। তাঁর কাজগুলো এখনো ইরানে এবং অন্যান্য মুসলিম দেশে অত্যন্ত সমাদর পেয়েছে। মির আলি তাবরিজি তাঁর কর্মজীবনে তিমুরিদ সাম্রাজ্যের অধীনে কাজ করেছিলেন এবং রাজকীয় পৃষ্ঠপোষকতার অধীনে অনেক মূল্যবান পাণ্ডুলিপি লেখা ও অলংকরণের কাজ করেন। নাস্তালিক লিপি পারসি সাহিত্য ও শিল্পকলায় একটি গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন ছিল। নাস্তারিক লিপি পারস্য ও পরবর্তী সময়ে মোগল ভারতেও জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। মির আলি তাবরিজি এ শৈলীতে অনেক কাব্যগ্রন্থ এবং রাজকীয় পাণ্ডুলিপি উৎকীর্ণ করেন। তিনি অনেক প্রসিদ্ধ কবির কাজ ক্যালিগ্রাফির মাধ্যমে প্রকাশ করেছিলেন, যার মধ্যে হাফিজ, শেখ সাদি ও রুমি অন্যতম।
ক্যালিগ্রাফি বা লিপিকলা মুসলিম সংস্কৃতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। ইসলামি লিপিকলার সূচনা মূলত পবিত্র কোরআনকে লিখিতরূপে সংরক্ষণ প্রচেষ্টার মধ্য দিয়ে শুরু হয়। এরপর মুসলিম অক্ষরশিল্পীরা এ শিল্পকে যুগে যুগে নান্দনিক সব অনুশীলনের মধ্য দিয়ে শিল্পকলার গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গে পরিণত করেন। এখানে মুসলিম লিপিকলার ৫ বিখ্যাত শিল্পীর কথা তুলে ধরেছেন আমজাদ ইউনুস।
ইবনে মুকলা
ইবনে মুকলা (৮৮৬-৯৪০ খ্রি.) ছিলেন ইসলামের ইতিহাসে সবচেয়ে বিখ্যাত এবং প্রভাবশালী ক্যালিগ্রাফারদের একজন। তিনি আব্বাসি খেলাফতের সময়ে কাজ করতেন এবং আরবি ক্যালিগ্রাফির নাসখ, তাওকিক ও রুকাশৈলীর প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে পরিচিত। ইবনে মুকলার হাতে বিকশিত ক্যালিগ্রাফিশৈলী আধুনিক আরবি ক্যালিগ্রাফির ভিত্তি হিসেবে বিবেচিত হয়। লিপিশিল্পকে তিনি সংশোধন ও পরিমার্জন করে প্রথম জ্যামিতিক পদ্ধতিতে বিন্যস্ত করেন এবং বিজ্ঞানসম্মত ধারায় দাঁড় করান। সর্বপ্রথম তিনিই লিপিকলার মৌলিক বিন্যাসরীতি উদ্ভাবন করেন। কৌণিক লিপিরীতি থেকে বক্রাকার লিপির উত্তরণে তিনি সর্বাধিক অবদান রাখেন। এ ছাড়া নাসখ লিখনপদ্ধতি তাঁর হাতেই সুষমামণ্ডিত রূপ পায়।
ইবনুল বাওয়াব
আবুল হাসান আলি ইবনে হিলাল বুওয়ায়হি ইবনুল বাওয়াব (মৃত্যু ১০২২ বা ১০৩১ খ্রি.) ছিলেন আব্বাসি শাসনামলের একজন খ্যাতনামা আরবি হস্তলিপিবিশারদ। তিনি বাগদাদের খলিফাদের দরবারের একজন দারোয়ানের পুত্র ছিলেন। তিনি ইবনে মুকলার শৈলীর ওপর ভিত্তি করে নিজস্ব শৈলী তৈরি করেন। কুফিক ও নাসখশৈলীতে বিশেষ পারদর্শী ছিলেন ইবনুল বাওয়াব। তাঁর লেখা কোরআন এবং অন্য গ্রন্থগুলো শৈল্পিক বিচারে অত্যন্ত মূল্যবান।
ইয়াকুত আল-মুস্তাসিমি
ইয়াকুত আল-মুস্তাসিমি (মৃত্যু ১২৯৮ খ্রি.) কুফিক, নাসখ, ও অন্যান্য শৈলীতে পারদর্শী ছিলেন। নিজের যুগের সবচেয়ে বিখ্যাত ক্যালিগ্রাফার ছিলেন। তাঁর কাজগুলো এখনো ইসলামি ক্যালিগ্রাফির মানদণ্ড হিসেবে বিবেচিত হয়। তিনি বাগদাদে শেষ আব্বাসি খলিফা আল-মুস্তাসিমের ক্রীতদাস ছিলেন। ইয়াকুত সাহিত্যপ্রেমী ছিলেন। বেশ কিছু কবিতাও রচনা করেন তিনি। তবে আরব ইতিহাসে তিনি একজন লিপিশিল্পী হিসেবেই সুখ্যাতি লাভ করেন।
মানুষ তাঁর অপূর্ব সুষমামণ্ডিত নান্দনিক লেখার জন্য তাঁকে ‘কিবলাতুল কুত্তাব’ বা ‘কিবলাতুল খত্তাতিন’ (চারু হস্তলিপিকারদের মধ্যমণি) বলে অভিহিত করত। তিনি মূলত ইবনুল বাওয়াবের ধারা-ঐতিহ্যকে অনুকরণ করে এগিয়ে গেছেন। লিখনশিল্পে তাঁর গুরুত্বপূর্ণ বিশেষত্ব হলো—তিনি কলমের মাথাকে তির্যকভাবে কাটেন। এভাবে তিনি লিখনশৈলীতে ব্যবহৃত কলমের উন্নতি সাধিত করে লিপিকলাকে আরও সাবলীল ও ছন্দময় করে তুলেছেন।
সুলতান আলি মাশহাদি
সুলতান আলি মাশহাদি (১৪৫৩-১৫২০ খ্রি.) ছিলেন তিমুরিদ সাম্রাজ্যের একজন বিখ্যাত ফারসি ক্যালিগ্রাফার। তিনি নাসখ ও নাস্তালিকশৈলীতে দক্ষ ছিলেন, যা পারস্য এবং পরবর্তী সময়ে ভারতীয় উপমহাদেশের লিপিকলায় বিশাল প্রভাব ফেলেছিল। তাঁর কাজ ছিল অত্যন্ত নিখুঁত, যা তাকে সময়ের শ্রেষ্ঠ অক্ষরশিল্পী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছিল। তার কাজগুলো ইরান, ভারত ও তুরস্কের বিভিন্ন স্থানে সংরক্ষিত রয়েছে। তিনি তিমুরিদ শাসকদের জন্য কাজ করতেন এবং বিভিন্ন রাজকীয় পাণ্ডুলিপি ও বইয়ের শিরোনাম, প্রচ্ছদ ও অন্যান্য ক্যালিগ্রাফিক কাজে মনোনিবেশ করেছিলেন। তাঁর শিল্পকর্মগুলো পারস্যের সাহিত্য-সংস্কৃতিতে গভীর প্রভাব ফেলেছে। সুলতান আলি মাশহাদি বহু পাণ্ডুলিপি লেখা ও অলংকরণের কাজ করেছেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ‘দেওয়ান-ই-হাফিজ’।
মির আলি তাবরিজি
মির আলি তাবরিজি (১৩৬০-১৪২০) ছিলেন প্রাচীন ইরানের একজন প্রখ্যাত ক্যালিগ্রাফার। তিনি নাস্তালিকশৈলীর উদ্ভাবক এবং এই শৈলীর উৎকর্ষসাধনে কাজ করেন। তাঁর কাজগুলো এখনো ইরানে এবং অন্যান্য মুসলিম দেশে অত্যন্ত সমাদর পেয়েছে। মির আলি তাবরিজি তাঁর কর্মজীবনে তিমুরিদ সাম্রাজ্যের অধীনে কাজ করেছিলেন এবং রাজকীয় পৃষ্ঠপোষকতার অধীনে অনেক মূল্যবান পাণ্ডুলিপি লেখা ও অলংকরণের কাজ করেন। নাস্তালিক লিপি পারসি সাহিত্য ও শিল্পকলায় একটি গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন ছিল। নাস্তারিক লিপি পারস্য ও পরবর্তী সময়ে মোগল ভারতেও জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। মির আলি তাবরিজি এ শৈলীতে অনেক কাব্যগ্রন্থ এবং রাজকীয় পাণ্ডুলিপি উৎকীর্ণ করেন। তিনি অনেক প্রসিদ্ধ কবির কাজ ক্যালিগ্রাফির মাধ্যমে প্রকাশ করেছিলেন, যার মধ্যে হাফিজ, শেখ সাদি ও রুমি অন্যতম।
আসর শব্দের অর্থ সময়। পবিত্র কোরআনে আসর নামে একটি সুরা রয়েছে। আল্লাহ তাআলা আসর বা সময়ের শপথ করেছেন। মুসলিমরা দৈনন্দিন যে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করে, তার তৃতীয় ওয়াক্তকে আসর নামে অভিহিত করা হয়। এ ছাড়াও পবিত্র কোরআনে এটিকে সালাত আল-ওসতা বা মধ্যবর্তী নামাজ হিসেবে সম্বোধন করা হয়েছে।
১ দিন আগেজ্ঞানগর্ভ ও উপদেশে ভরা কোরআন জীবনের জন্য অপরিহার্য একটি গাইড বই। মানুষ কোথায় কখন কী করবে, কেন করবে, কীভাবে করবে—তা বলে দেওয়া হয়েছে কোরআনে। কোরআন তথা আল্লাহপ্রদত্ত আসমানি কিতাবের হিদায়াতের বাইরে কোনো সঠিক জীবনদর্শন নেই, কোনো ধর্মদর্শন নেই, কোনো মুক্তির পথ নেই। মানবজাতির সূচনালগ্নেই কথাটি জানিয়ে দেওয়া
২ দিন আগেএকজন মুমিনের কাছে রমজান বছরের শ্রেষ্ঠ মাস। মহানবী (সা.) এ পবিত্র মাসকে বেশ গুরুত্ব দিতেন। অন্যান্য কাজকর্ম থেকে নিজেকে গুটিয়ে অধিক পরিমাণে ইবাদতে মশগুল হতেন। সাহাবিদের অভ্যাসও ছিল একই রকম। গুরুত্ব বিবেচনায় রমজানের প্রস্তুতিও শুরু হতো বেশ আগে থেকেই। রজব মাসের চাঁদ দেখার পর থেকেই মহানবী (সা.) অধীর আগ
২ দিন আগেহাজার বছরের মুসলিম ঐতিহ্যের স্মারক টুপি। ইসলামের সূচনাকাল থেকেই টুপি পরিধানের চল রয়েছে। ফিকহের দৃষ্টিকোণে টুপি পরা সুন্নত। মহানবী (সা.) সর্বদা টুপি পরতেন, হাদিসের একাধিক বর্ণনায় তার প্রমাণ মেলে। সাহাবায়ে কেরাম ও পরবর্তী যুগের সব অনুসরণীয় মুসলিম টুপি পরেছেন। শালীনতা ও সৌন্দর্যের আবরণ টুপি মুসলমানদের
২ দিন আগে