মানুষের প্রাণের সুরক্ষায় ইসলাম

ইজাজুল হক
প্রকাশ : ০২ আগস্ট ২০২৪, ০৮: ৫৪

আল্লাহ তাআলা সৃষ্টির সেরা জীব হিসেবেই মানুষকে সৃষ্টি করেছেন। তাকে পৃথিবীতে আল্লাহর প্রতিনিধি হওয়ার যোগ্যতা দান করেছেন। এমনকি পবিত্র ফেরেশতাদের ওপরও তাকে শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন। তাকে সৃষ্টি করেছেন পৃথিবীর সব সৃষ্টির চেয়ে সুন্দরতম অবয়বে। তার জীবনকে করেছেন অমূল্য। এ কারণে ইসলামে মানুষকে বিক্রি করা দূরের কথা, তার কোনো অঙ্গপ্রত্যঙ্গ, এমনকি রক্তের একটি বিন্দুও বিক্রি করা জায়েজ নেই। মানুষের জীবন সুরক্ষায় ইসলাম সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছে।

মানুষের দেহে সঞ্চারিত প্রাণ মহান আল্লাহর সবচেয়ে বড় আমানত। এই প্রাণ যেমন তিনি নিজ ইচ্ছায় তাদের দান করেছেন, এর সমাপ্তিদানের অধিকারও তাঁরই হাতে। জীবন-মৃত্যুর মালিক তিনিই। পৃথিবীতে কাউকে অন্যায়ভাবে কারও প্রাণ কেড়ে নেওয়ার অধিকার দেওয়া হয়নি। এমনকি ব্যক্তি নিজেও নিজের প্রাণনাশ করতে পারে না। এ কারণেই ইসলামে আত্মহত্যা করা মহাপাপ। এ ছাড়া ইসলামের সবচেয়ে কড়া আইন কিসাসও মানুষের জীবনের সুরক্ষায় প্রণয়ন করা হয়েছে।

পৃথিবীর সব অশান্তির মূলে রয়েছে মানুষ হত্যা। হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমেই শুরু হয়েছিল পৃথিবীর প্রথম অনাচার। ফেরেশতারাও মানুষ সৃষ্টির আগে মহান আল্লাহর কাছে এ কারণেই আপত্তি জানিয়েছিলেন। বলেছিলেন, ‘তারা তো সেখানে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করবে এবং খুনখারাবি করবে। আমরা তো আছিই, আপনার সপ্রশংস তাসবিহ পাঠে নিয়োজিত।’ (সুরা বাকারা: ৩০) তার পরও আল্লাহ তাআলা মহত্তম উদ্দেশ্যে পৃথিবীতে তাঁর বিধান প্রতিষ্ঠার জন্য মানুষ সৃষ্টি করলেন। একই সঙ্গে রক্তপাত-হানাহানি বন্ধের দায়িত্বও অর্পিত হয় মানুষেরই কাঁধে।

এ কারণেই পবিত্র কোরআনের বিভিন্ন স্থানে মানুষ হত্যার শাস্তি হিসেবে কঠোর আইন প্রয়োগের কথা এসেছে। হত্যাকারীর কাছ থেকে আইনানুগভাবে কিসাস নেওয়ার বিধান দেওয়া হয়েছে। অনিচ্ছাকৃত হত্যাকাণ্ডের বিচার কী হবে, তা-ও বিস্তারিত বলা হয়েছে কোরআনে। আইন প্রয়োগের মাধ্যমে কখন মানুষকে হত্যা করা যাবে, তা-ও বলা আছে ফিকহের কিতাবে। পাশাপাশি হত্যাকাণ্ডের জঘন্যতা সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করেছেন নবীজি। হাদিসে এসেছে, মানুষ হত্যা পৃথিবীর চারটি সবচেয়ে বড় গুনাহের একটি। আল্লাহর সঙ্গে অন্য কাউকে উপাস্য মানার গুনাহের পরেই মানুষ হত্যার গুনাহের স্থান। ইচ্ছাকৃত মানুষ খুনের শাস্তি পৃথিবীতে মৃত্যুদণ্ডের পাশাপাশি পরকালেও সোজা জাহান্নাম।

হত্যাকাণ্ডকে অনেকভাবে নিন্দা করা হয়েছে ইসলামে। একজন মানুষকে হত্যা করা পুরো মানবজাতিকে হত্যা করার শামিল বলা হয়েছে পবিত্র কোরআনে। ইরশাদ হয়েছে, ‘নরহত্যা বা পৃথিবীতে  ফ্যাসাদ সৃষ্টির অপরাধে অভিযুক্ত ব্যক্তি ছাড়া কেউ কাউকে হত্যা করলে সে যেন দুনিয়ার সমগ্র মানবগোষ্ঠীকে হত্যা করল।’ (সুরা মায়িদা: ৩২) একই কথা ভিন্ন শব্দে উচ্চারিত হয়েছে মহানবী (সা.)-এর কণ্ঠেও। তিনি বলেন, ‘আল্লাহ তাআলার কাছে একজন মুসলিম হত্যার চেয়ে পুরো বিশ্ব ধ্বংস হয়ে যাওয়া সহজতর।’ (তিরমিজি: ১৩৯৫)

মহানবী (সা.) নরহত্যাকে আল্লাহর প্রতি অবিশ্বাস তথা কুফরি বলে আখ্যা দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘কোনো মুসলমানকে গালি দেওয়া আল্লাহর অবাধ্যতা এবং তাকে হত্যা করা কুফরি।’ (বুখারি: ৪৮; মুসলিম: ৬৪) অন্য হাদিসে নরহত্যাকে ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ আখ্যা দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আশা করা যায়, সব গুনাহ আল্লাহ তাআলা ক্ষমা করে দেবেন। তবে দুটি গুনাহ তিনি ক্ষমা করবেন না। তা হলো কোনো মানুষ কাফির অবস্থায় মৃত্যুবরণ করা অথবা ইচ্ছাকৃত কেউ কোনো মুমিনকে হত্যা করা।’ (নাসায়ি: ৩৯৮৪)

পৃথিবীতে মানুষের হক সংশ্লিষ্ট অপরাধগুলোর মধ্যে প্রথম অবস্থানে রয়েছে হত্যাকাণ্ড। তাই দুনিয়ার সব আইনে যেমন এর বিচারকে প্রাধান্য দেওয়া হয়, তেমনি পরকালে বিচার দিবসেও আল্লাহ তাআলা প্রথমে হত্যাকাণ্ডের বিচার করবেন। হাদিসে এসেছে, মহানবী (সা.) বলেন, ‘কিয়ামতের দিন প্রথম যে বিষয়ে মানুষের ফয়সালা করা হবে, তা হলো রক্তপাতের বিচার।’ (মুসলিম: ১৬৭৮)

হত্যাকাণ্ডের পরকালীন শাস্তি প্রসঙ্গে পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘কোনো মুমিনের জন্য সমীচীন নয়, সে অন্য মুমিনকে হত্যা করবে। অবশ্য ভুলবশত করে ফেললে অন্য কথা।...আর কেউ স্বেচ্ছায় কোনো মুমিনকে হত্যা করলে তার শাস্তি জাহান্নাম, সেখানে সে চিরকাল অবস্থান করবে। আর আল্লাহ তার প্রতি ক্রুদ্ধ হন, তাকে অভিশপ্ত করেন এবং তার জন্য ভীষণ শাস্তি প্রস্তুত রাখেন।’ (সুরা নিসা: ৯২-৯৩)

হত্যাকাণ্ডের বিচার কেমন হবে, তারও কিঞ্চিৎ ধারণা হাদিসে দিয়েছেন মহানবী (সা.)। তিনি বলেন, ‘হত্যাকৃত ব্যক্তি হত্যাকারীকে সঙ্গে নিয়ে কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাআলার সামনে উপস্থিত হবে। হত্যাকৃত ব্যক্তির মাথা তার হাতেই থাকবে। শিরাগুলো থেকে তখন রক্ত পড়বে। সে আল্লাহ তাআলাকে উদ্দেশ্য করে বলবে—হে আমার রব, এই ব্যক্তি আমাকে হত্যা করেছে। এমনকি সে হত্যাকারীকে আরশের খুব কাছে নিয়ে যাবে।’ শ্রোতারা এই হাদিসের বর্ণনাকারী সাহাবি হজরত ইবনে আব্বাস (রা.)কে ওই হত্যাকারীর তওবা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি ওপরে উল্লিখিত সুরা নিসার ৯৩ নম্বর আয়াতটি তিলাওয়াত করে বললেন, ‘এই আয়াত রহিত হয়নি। পরিবর্তনও হয়নি। অতএব তার তওবা কোনো কাজেই আসবে না।’ (তিরমিজি: ৩০২৯)

পৃথিবীর সব মানুষ যদি একজন নিরপরাধ মানুষকে হত্যা করতে একমতও হয়ে যায়, তবু আল্লাহ তাআলা হত্যাকারীদের ক্ষমা করবেন না। সবাইকে কঠিন শাস্তির মুখোমুখি করবেন। রাসুল (সা.) বলেন, ‘যদি আকাশ ও পৃথিবীর সবাই মিলেও কোনো মুমিন হত্যায় অংশ নেয়, তবু আল্লাহ তাআলা তাদের সবাইকে মুখ থুবড়ে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবেন।’ (তিরমিজি: ১৩৯৮)

লেখক: সহসম্পাদক, আজকের পত্রিকা

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

আবু সাঈদকে ৪–৫ ঘণ্টা পরে হাসপাতালে নেওয়া হয়—শেখ হাসিনার দাবির সত্যতা কতটুকু

মেট্রোরেল থেকে আমলাদের বিদায়, অগ্রাধিকার প্রকৌশলীদের

হইহুল্লোড় থেমে গেল আর্তচিৎকারে

বিমানবন্দরে সাংবাদিক নূরুল কবীরকে হয়রানির তদন্তের নির্দেশ প্রধান উপদেষ্টার

কবি নজরুল ও সোহরাওয়ার্দী কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ৩৫ কলেজের শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত