আমিনুল ইসলাম হুসাইনী
রমজানের বরকতে পৃথিবীতে বয়ে চলেছে পুণ্যের ফোয়ারা। বহমান সে ফোয়ারায় ভেসে যাচ্ছে মুমিনের ভুল-ত্রুটি ও গুনাহের জঞ্জাল। তাই তো আতর-আগরের ঘ্রাণে বিমোহিত চারপাশ। মসজিদগুলো মুখরিত মুমিন বান্দার আনাগোনায়। জান্নাতি সমীরণের এই পরিবেশে নিজেকে সিক্ত করার এই-ই তো সময়। অথচ আমরা অবচেতন কিংবা অজ্ঞতায় ডুবে যাচ্ছি পাপের সাগরে। দল বেঁধে অপচয়ের মতো পাপে মেতে উঠছি। সংযমের মাসে হচ্ছি অসংযমী। অতিভোজনকে দিচ্ছি মনগড়া অনুমোদন। বলছি—‘রমজানে যত খুশি খাও, আল্লাহ এর হিসাব নেবেন না।’ অথচ কোরআন-হাদিসের কোথাও এমন কথা বলা হয়নি। বরং বলা হয়েছে, ‘যে ব্যক্তি পেট ভর্তি করে খাবার খায়, তার ওই পেট একটি নিকৃষ্ট পাত্র।’ (আহমাদ: ২৩৮০)
রমজান হোক কিংবা অন্য যেকোনো সময়, অতিভোজন আর অপচয় ইসলামে নিন্দনীয়। অথচ রমজানকে কেন্দ্র করে আমাদের সমাজে অসংখ্য ইফতার মাহফিল বা পার্টি হয়ে থাকে। এসব আয়োজন তখনই পুণ্যের হতো, যখন তা দুস্থ, অভাবী, অনাহারীর মুখে হাসি ফোটাত। কিন্তু তা আর হচ্ছে কই? অধিকাংশ ইফতার পার্টিতেই গরিব-অসহায়দের প্রবেশ বারণ থাকে। সেখানে কেবল তাদেরই দাওয়াত করা হয়, যাদের না আছে খাবারের কোনো অভাব, না আছে অপকর্মের।
ধনাঢ্যদের ইফতার পার্টিতে যে পরিমাণ খাবার জোগান দেওয়া হয়, তার বেশির ভাগই অপচয় হয়। বস্তা বস্তা খাবার ডাস্টবিনে ফেলে দেওয়া হয়। অথচ কত মানুষ খাবারের অভাবে অভুক্ত থাকছে। ঠিকমতো সাহরি ও ইফতার করতে পারছে না। তাদের কথা একটু ভাবুন। তাদের যাতনা উপলব্ধির জন্যই তো রমজান। সমাজের দরিদ্র, পীড়িত, অভুক্তের যন্ত্রণা অনুধাবন করে তাদের প্রতি সদয় হতেই রমজানের আগমন।
প্রতি বছর রমজান আসে, রমজান যায়। আমরা থেকে যাই আগের মতোই বিলাসী, অসংযমী। আমাদের অপচয়ের মাত্রা বাড়তে থাকে দিনের পর দিন। মনে রাখবেন আল্লাহর দেওয়া রিজিকের এমন অপচয় জঘন্য অপরাধ। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, ‘তোমরা খাও এবং পান করো। কোনো অবস্থাতেই অপচয় করো না। আল্লাহ অপচয়কারীদের পছন্দ করেন না।’ (সুরা আরাফ: ৩১)
অপচয়ের এই রীতি ফুলে ফেঁপে ওঠে ধনীদের ঘরে। তারা সাহরি ও ইফতারে ১০-২০ পদ খাবার নিয়ে বসেন। যতটুকু না খায়, তার চেয়ে বেশি নষ্ট করে। অথচ আল্লাহর রাসুল (সা.)-এর সাহরি ও ইফতার ছিল খুবই সাধারণ, সাদাসিধে। খেজুর, ছাতু ও পানিই ছিল তাঁর সাহরি ও ইফতারের সাধারণ উপাদান। সেসবও যে পেট ভরে খেতেন, তা কিন্তু নয়। খুব সামান্যই খেতেন। দু-একটি খেজুর কিংবা দু-এক লোকমা ছাতু—তাতেই বরকতময় সাহরি ও ইফতার সারতেন। আর আমরা? আমরা মনে করি সাহরি মানে পেট ভরে গলা পর্যন্ত খাওয়া।
পেট ভরে না খেলে রোজা রাখা কষ্ট হবে—এমন ধারণা সঠিক নয়। সাহরি হলো বরকতময় নিয়ামত। পেট ভরে খাওয়া লাগে না। অল্পতেই হয়ে যায়। মনে রাখবেন, রমজান মানে কেবলই ইফতার পার্টি, ভোজনবিলাস কিংবা খাদ্য-বিনোদন নয়। রমজান মানে সাহরি ও ইফতারে ১০-২০ পদের খাবার থাকা নয়। বরং এসব অপচয়। আল্লাহ বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই যারা অপচয় করে তারা শয়তানের ভাই এবং শয়তান তার রবের প্রতি অতিশয় অকৃতজ্ঞ।’ (সুরা বনি ইসরাইল: ২৭)
রমজান মাস, সহমর্মিতার মাস। দান সদকার মাস। এই মাসে এক টাকা দান করলে ৭০০ টাকা দানের সওয়াব পাওয়া যায়। আল্লাহ চাইলে, আরও বেশিও দিতে পারেন। বরকতময় এই মাসে আমরা ভোগ-বিলাসে মত্ত না হয়ে, অপচয়ের মতো গুনাহে লিপ্ত না থেকে, অসহায়দের পাশে দাঁড়াই। তাদের প্রতি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিই। কত মানুষ এখনো না খেয়ে অভুক্ত থাকে। একটু খোঁজ নিলেই তাদের সংখ্যা দেখে আঁতকে উঠবেন। রাস্তার টোকাই থেকে গার্মেন্টস কর্মী, এমনকি অনেক সম্ভ্রান্ত পরিবারেও মানুষ অভাব অনটনে কাতরাচ্ছে। তাদের প্রতি একটু সদয় হোন, সহানুভূতিশীল হোন। মানুষ তো মানুষের জন্যই।
আল্লাহ তাআলা আমাদের যে অর্থ-বিত্ত দিয়েছেন, এর হিসেব কিন্তু আল্লাহর কাছে কড়ায়-গন্ডায় দিতে হবে। তাই অপচয় করা থেকে বেঁচে থাকি এবং অসহায়দের সাহায্য সহযোগিতা করি। অভুক্তের মুখে লুকমা তুলে দিয়ে খুশির ফুল ফুটাই। সেই ফুলেই বর্ণিল হবে আমাদের পরকাল।
লেখক: খতিব, কসবা জামে মসজিদ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া
রমজানের বরকতে পৃথিবীতে বয়ে চলেছে পুণ্যের ফোয়ারা। বহমান সে ফোয়ারায় ভেসে যাচ্ছে মুমিনের ভুল-ত্রুটি ও গুনাহের জঞ্জাল। তাই তো আতর-আগরের ঘ্রাণে বিমোহিত চারপাশ। মসজিদগুলো মুখরিত মুমিন বান্দার আনাগোনায়। জান্নাতি সমীরণের এই পরিবেশে নিজেকে সিক্ত করার এই-ই তো সময়। অথচ আমরা অবচেতন কিংবা অজ্ঞতায় ডুবে যাচ্ছি পাপের সাগরে। দল বেঁধে অপচয়ের মতো পাপে মেতে উঠছি। সংযমের মাসে হচ্ছি অসংযমী। অতিভোজনকে দিচ্ছি মনগড়া অনুমোদন। বলছি—‘রমজানে যত খুশি খাও, আল্লাহ এর হিসাব নেবেন না।’ অথচ কোরআন-হাদিসের কোথাও এমন কথা বলা হয়নি। বরং বলা হয়েছে, ‘যে ব্যক্তি পেট ভর্তি করে খাবার খায়, তার ওই পেট একটি নিকৃষ্ট পাত্র।’ (আহমাদ: ২৩৮০)
রমজান হোক কিংবা অন্য যেকোনো সময়, অতিভোজন আর অপচয় ইসলামে নিন্দনীয়। অথচ রমজানকে কেন্দ্র করে আমাদের সমাজে অসংখ্য ইফতার মাহফিল বা পার্টি হয়ে থাকে। এসব আয়োজন তখনই পুণ্যের হতো, যখন তা দুস্থ, অভাবী, অনাহারীর মুখে হাসি ফোটাত। কিন্তু তা আর হচ্ছে কই? অধিকাংশ ইফতার পার্টিতেই গরিব-অসহায়দের প্রবেশ বারণ থাকে। সেখানে কেবল তাদেরই দাওয়াত করা হয়, যাদের না আছে খাবারের কোনো অভাব, না আছে অপকর্মের।
ধনাঢ্যদের ইফতার পার্টিতে যে পরিমাণ খাবার জোগান দেওয়া হয়, তার বেশির ভাগই অপচয় হয়। বস্তা বস্তা খাবার ডাস্টবিনে ফেলে দেওয়া হয়। অথচ কত মানুষ খাবারের অভাবে অভুক্ত থাকছে। ঠিকমতো সাহরি ও ইফতার করতে পারছে না। তাদের কথা একটু ভাবুন। তাদের যাতনা উপলব্ধির জন্যই তো রমজান। সমাজের দরিদ্র, পীড়িত, অভুক্তের যন্ত্রণা অনুধাবন করে তাদের প্রতি সদয় হতেই রমজানের আগমন।
প্রতি বছর রমজান আসে, রমজান যায়। আমরা থেকে যাই আগের মতোই বিলাসী, অসংযমী। আমাদের অপচয়ের মাত্রা বাড়তে থাকে দিনের পর দিন। মনে রাখবেন আল্লাহর দেওয়া রিজিকের এমন অপচয় জঘন্য অপরাধ। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, ‘তোমরা খাও এবং পান করো। কোনো অবস্থাতেই অপচয় করো না। আল্লাহ অপচয়কারীদের পছন্দ করেন না।’ (সুরা আরাফ: ৩১)
অপচয়ের এই রীতি ফুলে ফেঁপে ওঠে ধনীদের ঘরে। তারা সাহরি ও ইফতারে ১০-২০ পদ খাবার নিয়ে বসেন। যতটুকু না খায়, তার চেয়ে বেশি নষ্ট করে। অথচ আল্লাহর রাসুল (সা.)-এর সাহরি ও ইফতার ছিল খুবই সাধারণ, সাদাসিধে। খেজুর, ছাতু ও পানিই ছিল তাঁর সাহরি ও ইফতারের সাধারণ উপাদান। সেসবও যে পেট ভরে খেতেন, তা কিন্তু নয়। খুব সামান্যই খেতেন। দু-একটি খেজুর কিংবা দু-এক লোকমা ছাতু—তাতেই বরকতময় সাহরি ও ইফতার সারতেন। আর আমরা? আমরা মনে করি সাহরি মানে পেট ভরে গলা পর্যন্ত খাওয়া।
পেট ভরে না খেলে রোজা রাখা কষ্ট হবে—এমন ধারণা সঠিক নয়। সাহরি হলো বরকতময় নিয়ামত। পেট ভরে খাওয়া লাগে না। অল্পতেই হয়ে যায়। মনে রাখবেন, রমজান মানে কেবলই ইফতার পার্টি, ভোজনবিলাস কিংবা খাদ্য-বিনোদন নয়। রমজান মানে সাহরি ও ইফতারে ১০-২০ পদের খাবার থাকা নয়। বরং এসব অপচয়। আল্লাহ বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই যারা অপচয় করে তারা শয়তানের ভাই এবং শয়তান তার রবের প্রতি অতিশয় অকৃতজ্ঞ।’ (সুরা বনি ইসরাইল: ২৭)
রমজান মাস, সহমর্মিতার মাস। দান সদকার মাস। এই মাসে এক টাকা দান করলে ৭০০ টাকা দানের সওয়াব পাওয়া যায়। আল্লাহ চাইলে, আরও বেশিও দিতে পারেন। বরকতময় এই মাসে আমরা ভোগ-বিলাসে মত্ত না হয়ে, অপচয়ের মতো গুনাহে লিপ্ত না থেকে, অসহায়দের পাশে দাঁড়াই। তাদের প্রতি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিই। কত মানুষ এখনো না খেয়ে অভুক্ত থাকে। একটু খোঁজ নিলেই তাদের সংখ্যা দেখে আঁতকে উঠবেন। রাস্তার টোকাই থেকে গার্মেন্টস কর্মী, এমনকি অনেক সম্ভ্রান্ত পরিবারেও মানুষ অভাব অনটনে কাতরাচ্ছে। তাদের প্রতি একটু সদয় হোন, সহানুভূতিশীল হোন। মানুষ তো মানুষের জন্যই।
আল্লাহ তাআলা আমাদের যে অর্থ-বিত্ত দিয়েছেন, এর হিসেব কিন্তু আল্লাহর কাছে কড়ায়-গন্ডায় দিতে হবে। তাই অপচয় করা থেকে বেঁচে থাকি এবং অসহায়দের সাহায্য সহযোগিতা করি। অভুক্তের মুখে লুকমা তুলে দিয়ে খুশির ফুল ফুটাই। সেই ফুলেই বর্ণিল হবে আমাদের পরকাল।
লেখক: খতিব, কসবা জামে মসজিদ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া
জুবাইদা বিনতে জাফর ইবনে মানসুর পঞ্চম আব্বাসি খলিফা হারুনুর রশিদের স্ত্রী ও জাফর ইবনুল মানসুরের কন্যা। তাঁর মা ছিলেন আল-খায়জুরানের বড় বোন সালসাল ইবনে আত্তা। জুবাইদার আসল নাম আমাতুল আজিজ। দাদা আল-মানসুর তাঁকে আদর করে জুবাইদা (ছোট মাখনের টুকরা) নামে ডাকতেন এবং এ নামেই তিনি ইতিহাসে বিখ্যাত।
১০ ঘণ্টা আগেকুয়েতে অনুষ্ঠিত ১৩তম আন্তর্জাতিক হিফজুল কোরআন প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান অর্জন করেছেন বাংলাদেশের হাফেজ আনাস মাহফুজ। বিশ্বের ৭৪টি দেশের প্রতিযোগীদের পেছনে ফেলে দেশের জন্য এ গৌরব বয়ে আনেন তিনি।
১০ ঘণ্টা আগেবিয়ে ইসলামি জীবনব্যবস্থার একটি মৌলিক অংশ। এটি ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও সামাজিক জীবনে শান্তি ও স্থিতি নিয়ে আসে। তবে বিয়ের আগে আর্থিক সচ্ছলতা অর্জন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এটি বিয়ে-পরবর্তী জীবনে দায়িত্ব পালনের জন্য ব্যক্তিকে সক্ষম করে।
১০ ঘণ্টা আগে