রায়হান রাশেদ
আজ খতমে তারাবিতে পবিত্র কোরআনের ১৯তম পারা তিলাওয়াত করা হবে। সুরা ফুরকানের ২১ থেকে সুরা শুআরা ও সুরা নামলের ১ থেকে ৫৯ নম্বর আয়াত পর্যন্ত পড়া হবে। এই অংশে আল্লাহর কুদরত, আল্লাহর বিশেষ বান্দাদের গুণ, অপচয়, সোলায়মান (আ.) ও পিঁপড়ার ঘটনা, হুদহুদ পাখির সংবাদ সংগ্রহ, সাবার রানি বিলকিসের আত্মসমর্পণসহ নানা বিষয় আলোচিত হয়েছে। এখানে সংক্ষেপে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তুলে ধরা হলো—
কিয়ামতের দিন অবিশ্বাসীদের ভয়ানক অবস্থা
সুরা ফুরকানের ২১ থেকে ৩৪ নম্বর আয়াতে অবিশ্বাসীদের কিছু আপত্তি ও অনর্থক দাবির জবাব দেওয়া হয়েছে। তারা বলে, ‘আমাদের কাছে ফেরেশতা আসে না কেন কিংবা কেন আমরা আল্লাহকে দেখি না?’ এসব লোকের অন্তরে রয়েছে গুরুতর ব্যাধি এবং এরা অবাধ্যতায় মেতে উঠেছে। জবাবে বলা হয়েছে, মুশরিকেরা মৃত্যুর সময় ফেরেশতাদের দেখতে পাবে। কিয়ামতের দিনটা হবে জালিমদের জন্য ভয়ানক। সেদিন তাদের আফসোস ছাড়া কিছুই করার থাকবে না। তারা আফসোস করবে আর আঙুল কামড়ে বলবে, ‘হায়, যদি রাসুলের পথে চলতাম! হায়, যদি অমুককে বন্ধু না বানাতাম!’
আল্লাহর বান্দাদের ১৪ গুণ
সুরা ফুরকানের ৬৩ থেকে ৭৭ নম্বর আয়াতে আল্লাহর বান্দাদের বিশেষ কিছু গুণের কথা বলা হয়েছে। যথা—
১. তাঁরা পৃথিবীতে বিনয়ের সঙ্গে চলাফেরা করে
২. মূর্খদের মার্জনা করে
৩. রাত জেগে ইবাদত করে
৪. জাহান্নামের আজাবের ভয় করে
৫. তাঁরা মিতব্যয়ী
৬. আল্লাহর ইবাদত করে
৭. অন্যায়ভাবে কাউকে হত্যা করে না
৮. ব্যভিচার করে না
৯. পাপ করলে তওবা করে
১০. মিথ্যা সাক্ষ্য দেয় না
১১. বেহুদা আমোদ-প্রমোদ এড়িয়ে চলে
১২. আল্লাহর কালাম যথাযথ শোনে
১৩. উত্তম স্ত্রী ও সন্তান লাভে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করে
১৪. সঠিক পথের দিশা ও অন্যদের সঠিক পথ দেখানোর তৌফিক কামনা করে
সুরা শুআরা—বিভিন্ন জাতি ধ্বংসের বর্ণনা
সুরা শুআরা মক্কায় অবতীর্ণ। এই সুরার আয়াতসংখ্যা ২২৭। কোরআনের ২৬তম সুরা এটি। সুরার শুরুতে আল্লাহ তাআলা নবীজি (সা.)কে সান্ত্বনা দিয়েছেন। কাফেররা ইমান না আনার কারণে নবীজির মন খারাপ হতো। আল্লাহ চাইলে পৃথিবীর সবাই ইমানদার হয়ে যেতে বাধ্য। কিন্তু তিনি কাউকে ইসলাম গ্রহণে বাধ্য করেন না। মানুষের কাছে উপদেশ ও নিদর্শন পাঠিয়ে গ্রহণ-অগ্রহণের সুযোগ দেন।
এই সুরার ১০ থেকে ১৯১ নম্বর আয়াত পর্যন্ত মুসা-হারুন (আ.) ও ফেরাউনের ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ, ইবরাহিম (আ.) ও তাঁর পিতার কাহিনি, নুহ (আ.)-এর জাতি ধ্বংসের কারণ, হুদ (আ.) ও আদ জাতির বর্ণনা, সালেহ (আ.) ও সামুদ জাতির ঘটনা, লুত (আ.)-এর জাতি ধ্বংসের কারণ, শোয়াইব (আ.) ও মাদায়েনবাসীর বিবরণ উল্লেখ রয়েছে।
সুরা নামল—পিঁপড়ার গল্পগাথা
সুরা নামল মক্কায় অবতীর্ণ। এই সুরার আয়াতের সংখ্যা ৯৩। কোরআনের ২৭তম সুরা এটি। নামল অর্থ পিঁপড়া। এ সুরায় সোলায়মান (আ.)-এর সঙ্গে পিঁপড়ার কথোপকথন স্থান পাওয়ায় এটিকে সুরা নামল বলা হয়।
পিঁপড়া যেভাবে স্বজাতিকে রক্ষা করেছিল
সোলায়মান (আ.)কে আল্লাহ তাআলা বিশেষ জ্ঞান ও ক্ষমতা দান করেছিলেন। তিনি বাদশাহ ও অঢেল ধন-সম্পদের অধিকারী ছিলেন। তাঁর কাছে ওই সময়ে মানবসমাজে ব্যবহৃত সব ধরনের বস্তুসামগ্রীসহ বিশাল সেনাবাহিনী ছিল। রাজ্য নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালনার কাজে তিনি জিন ও পাখিসহ অন্য প্রাণীদের কাজে লাগাতেন। তিনি মানুষের ভাষাসহ অন্যান্য প্রাণীর ভাষা বুঝতেন।
আল্লাহ বলেন, ‘যখন সোলায়মান ও তার বাহিনী পিঁপড়ার উপত্যকায় পৌঁছাল, তখন এক নারী পিঁপড়া বলল, হে পিঁপড়ারা, গর্তে প্রবেশ করো। এমন যেন না হয়, সোলায়মান এবং তার সৈন্যরা তোমাদের পিষে ফেলবে, তোমরা তা টেরও পাবে না। সোলায়মান (আ.) পিঁপড়ার কথায় মৃদু হাসলেন।’ (সুরা নামল: ১৮)
সুরা নামলের উল্লিখিত আয়াত থেকে পিঁপড়ার জীবনযাত্রা সম্পর্কে চারটি ধারণা পাওয়া যায়।
১. পিঁপড়া কথা বলতে পারে। যেমন আয়াতে বর্ণিত পিঁপড়াটি অন্যদের সঙ্গে করেছে।
২. পিঁপড়া নারীশাসিত পতঙ্গ। তাদের একজন রানি থাকে। পুরুষ পিঁপড়া ঘরে, নারী পিঁপড়া বাইরে থাকে। যখন সোলায়মান (আ.) এবং তাঁর বাহিনী এসে পড়ে, রানি সবাইকে নিজ নিজ ঘরে প্রবেশের নির্দেশ দেয়।
৩. পিঁপড়া আলাদা করে মানুষ চিনতে পারে। যেমন সোলায়মান (আ.)-কে চিনেছিল।
৪. পিঁপড়া বিপৎসংকেত বুঝতে পারে। পিঁপড়া সোলায়মানের আগমন এবং বিপৎসংকেত বুঝতে পেরে সবাইকে সতর্ক করেছিল।
আল্লাহর বিস্ময়কর সৃষ্টি পিঁপড়া। বিজ্ঞানীরা বলছেন, পৃথিবীতে ২২ হাজার প্রজাতির পিঁপড়া রয়েছে। এর মধ্যে বিজ্ঞানীরা ১২ হাজার ৫০০ প্রজাতির পিঁপড়ার শ্রেণিবিন্যাস করতে পেরেছেন। পিঁপড়া-মানবখ্যাত পতঙ্গবিজ্ঞানী ড. উইলসনের মতে, পিঁপড়া বিবেকসম্পন্ন, সামাজিক ও পরিশ্রমী প্রাণী। নিজস্ব বাজার এবং উন্নতমানের যোগাযোগব্যবস্থাও রয়েছে তাদের মধ্যে। তারা খাদ্য সঞ্চয় করে। পিঁপড়ারা মানুষের মতোই তাদের মৃতদেহ কবর দেয়। পোকামাকড়দের মধ্যে সবচেয়ে বড় মস্তিষ্কের অধিকারী হলো পিঁপড়া। অন্য প্রাণীদের তুলনায় এদের মস্তিষ্কে প্রায় আড়াই লাখ কোষ বেশি রয়েছে।
রানি বিলকিসের আত্মসমর্পণ
সুরা নামলের ২০ থেকে ৩১ নম্বর আয়াতে সোলায়মান (আ.)-এর সংবাদ সংগ্রহের মাধ্যম হিসেবে হুদহুদ পাখির উল্লেখ রয়েছে। সোলায়মান (আ.)-এর রাষ্ট্রীয় কাজে ব্যবহৃত হতো হুদহুদ পাখি। পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতে কী হচ্ছে, কী চিন্তা-ভাবনা চলছে, কোথায় কী ঘটছে, কোন রাজা কোথায় সৈন্য পাঠাচ্ছে, কেন পাঠাচ্ছে ইত্যাদি বিষয়ে খোঁজখবর নেওয়ার জন্য তিনি এই পাখি ব্যবহার করতেন। নবী একবার পাখিকে খুঁজে পাচ্ছেন না। কোরআনে ঘটনার বর্ণনা এসেছে এভাবে, ‘একদিন সোলায়মান (আ.) পাখিদের খোঁজখবর নিলেন, এরপর বললেন, কী হলো, হুদহুদকে দেখছি না কেন? নাকি সে অনুপস্থিত? আমি অবশ্যই তাকে কঠোর শাস্তি দেব কিংবা হত্যা করব, যদি না সে অনুপস্থিত থাকার যথাযথ কারণ দেখায়। কিছুক্ষণ পর হুদহুদ এসে বলল, আপনি অবগত নন এমন একটি বিষয়ে আমি অবগত হয়েছি। আমি সাবা থেকে নিশ্চিত সংবাদ নিয়ে আগমন করেছি। আমি এক নারীকে সাবাবাসীর ওপর রাজত্ব করতে দেখেছি। তাকে সবকিছুই দেওয়া হয়েছে এবং তার একটা বিরাট সিংহাসন আছে। আমি তাকে ও তার সম্প্রদায়কে দেখলাম তারা আল্লাহর পরিবর্তে সূর্যকে সিজদা করছে। শয়তান তাদের দৃষ্টিতে তাদের কার্যাবলি সুশোভিত করে দিয়েছে। এরপর তাদের সৎপথ থেকে নিবৃত্ত করেছে। অতএব তারা সৎপথ পায় না।’ (সুরা নামল: ২০-২৪)
সোলায়মান (আ.) রানি বিলকিসের কাছে বার্তা পাঠালেন। সব ভেবেচিন্তে তিনি নবীর দরবারে এলেন। রাজপ্রাসাদের স্বচ্ছ কাচের সড়কে ভ্রমে পড়ে গেলেন এবং গোড়ালির কাপড় টেনে ওপরে তুলে ফেললেন। স্বচ্ছ স্ফটিক নির্মিত প্রাসাদ দেখে রানি যারপরনাই বিস্মিত হলেন। এদিকে আবার নিজের সিংসাহন সোলায়মানের কাছে দেখে বিস্ময়ে তাজ্জব বনে গেলেন। পরে সোলায়মান (আ.)-এর ধর্মে দীক্ষিত হন।
এ ছাড়া তারাবির আজকের অংশে পূর্ববর্তী নবী ও তাঁদের জাতি, আল্লাহর একাত্ববাদ, কোরআনের নেয়ামত, অবিশ্বাসীদের প্রশ্নের জবাব, আল্লাহর নেয়ামত, অহংকার, ব্যবসায় সঠিক ওজন দেওয়া, মানুষের হক নষ্টের পরিণাম, বিভিন্ন জাতির ধ্বংসের বিবরণ, মুমিন জীবনে পরীক্ষা ও মুমিনদের পুরস্কার ইত্যাদি বিষয় আলোচিত হয়েছে।
লেখক: ইসলামবিষয়ক গবেষক ও সাংবাদিক
আজ খতমে তারাবিতে পবিত্র কোরআনের ১৯তম পারা তিলাওয়াত করা হবে। সুরা ফুরকানের ২১ থেকে সুরা শুআরা ও সুরা নামলের ১ থেকে ৫৯ নম্বর আয়াত পর্যন্ত পড়া হবে। এই অংশে আল্লাহর কুদরত, আল্লাহর বিশেষ বান্দাদের গুণ, অপচয়, সোলায়মান (আ.) ও পিঁপড়ার ঘটনা, হুদহুদ পাখির সংবাদ সংগ্রহ, সাবার রানি বিলকিসের আত্মসমর্পণসহ নানা বিষয় আলোচিত হয়েছে। এখানে সংক্ষেপে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তুলে ধরা হলো—
কিয়ামতের দিন অবিশ্বাসীদের ভয়ানক অবস্থা
সুরা ফুরকানের ২১ থেকে ৩৪ নম্বর আয়াতে অবিশ্বাসীদের কিছু আপত্তি ও অনর্থক দাবির জবাব দেওয়া হয়েছে। তারা বলে, ‘আমাদের কাছে ফেরেশতা আসে না কেন কিংবা কেন আমরা আল্লাহকে দেখি না?’ এসব লোকের অন্তরে রয়েছে গুরুতর ব্যাধি এবং এরা অবাধ্যতায় মেতে উঠেছে। জবাবে বলা হয়েছে, মুশরিকেরা মৃত্যুর সময় ফেরেশতাদের দেখতে পাবে। কিয়ামতের দিনটা হবে জালিমদের জন্য ভয়ানক। সেদিন তাদের আফসোস ছাড়া কিছুই করার থাকবে না। তারা আফসোস করবে আর আঙুল কামড়ে বলবে, ‘হায়, যদি রাসুলের পথে চলতাম! হায়, যদি অমুককে বন্ধু না বানাতাম!’
আল্লাহর বান্দাদের ১৪ গুণ
সুরা ফুরকানের ৬৩ থেকে ৭৭ নম্বর আয়াতে আল্লাহর বান্দাদের বিশেষ কিছু গুণের কথা বলা হয়েছে। যথা—
১. তাঁরা পৃথিবীতে বিনয়ের সঙ্গে চলাফেরা করে
২. মূর্খদের মার্জনা করে
৩. রাত জেগে ইবাদত করে
৪. জাহান্নামের আজাবের ভয় করে
৫. তাঁরা মিতব্যয়ী
৬. আল্লাহর ইবাদত করে
৭. অন্যায়ভাবে কাউকে হত্যা করে না
৮. ব্যভিচার করে না
৯. পাপ করলে তওবা করে
১০. মিথ্যা সাক্ষ্য দেয় না
১১. বেহুদা আমোদ-প্রমোদ এড়িয়ে চলে
১২. আল্লাহর কালাম যথাযথ শোনে
১৩. উত্তম স্ত্রী ও সন্তান লাভে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করে
১৪. সঠিক পথের দিশা ও অন্যদের সঠিক পথ দেখানোর তৌফিক কামনা করে
সুরা শুআরা—বিভিন্ন জাতি ধ্বংসের বর্ণনা
সুরা শুআরা মক্কায় অবতীর্ণ। এই সুরার আয়াতসংখ্যা ২২৭। কোরআনের ২৬তম সুরা এটি। সুরার শুরুতে আল্লাহ তাআলা নবীজি (সা.)কে সান্ত্বনা দিয়েছেন। কাফেররা ইমান না আনার কারণে নবীজির মন খারাপ হতো। আল্লাহ চাইলে পৃথিবীর সবাই ইমানদার হয়ে যেতে বাধ্য। কিন্তু তিনি কাউকে ইসলাম গ্রহণে বাধ্য করেন না। মানুষের কাছে উপদেশ ও নিদর্শন পাঠিয়ে গ্রহণ-অগ্রহণের সুযোগ দেন।
এই সুরার ১০ থেকে ১৯১ নম্বর আয়াত পর্যন্ত মুসা-হারুন (আ.) ও ফেরাউনের ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ, ইবরাহিম (আ.) ও তাঁর পিতার কাহিনি, নুহ (আ.)-এর জাতি ধ্বংসের কারণ, হুদ (আ.) ও আদ জাতির বর্ণনা, সালেহ (আ.) ও সামুদ জাতির ঘটনা, লুত (আ.)-এর জাতি ধ্বংসের কারণ, শোয়াইব (আ.) ও মাদায়েনবাসীর বিবরণ উল্লেখ রয়েছে।
সুরা নামল—পিঁপড়ার গল্পগাথা
সুরা নামল মক্কায় অবতীর্ণ। এই সুরার আয়াতের সংখ্যা ৯৩। কোরআনের ২৭তম সুরা এটি। নামল অর্থ পিঁপড়া। এ সুরায় সোলায়মান (আ.)-এর সঙ্গে পিঁপড়ার কথোপকথন স্থান পাওয়ায় এটিকে সুরা নামল বলা হয়।
পিঁপড়া যেভাবে স্বজাতিকে রক্ষা করেছিল
সোলায়মান (আ.)কে আল্লাহ তাআলা বিশেষ জ্ঞান ও ক্ষমতা দান করেছিলেন। তিনি বাদশাহ ও অঢেল ধন-সম্পদের অধিকারী ছিলেন। তাঁর কাছে ওই সময়ে মানবসমাজে ব্যবহৃত সব ধরনের বস্তুসামগ্রীসহ বিশাল সেনাবাহিনী ছিল। রাজ্য নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালনার কাজে তিনি জিন ও পাখিসহ অন্য প্রাণীদের কাজে লাগাতেন। তিনি মানুষের ভাষাসহ অন্যান্য প্রাণীর ভাষা বুঝতেন।
আল্লাহ বলেন, ‘যখন সোলায়মান ও তার বাহিনী পিঁপড়ার উপত্যকায় পৌঁছাল, তখন এক নারী পিঁপড়া বলল, হে পিঁপড়ারা, গর্তে প্রবেশ করো। এমন যেন না হয়, সোলায়মান এবং তার সৈন্যরা তোমাদের পিষে ফেলবে, তোমরা তা টেরও পাবে না। সোলায়মান (আ.) পিঁপড়ার কথায় মৃদু হাসলেন।’ (সুরা নামল: ১৮)
সুরা নামলের উল্লিখিত আয়াত থেকে পিঁপড়ার জীবনযাত্রা সম্পর্কে চারটি ধারণা পাওয়া যায়।
১. পিঁপড়া কথা বলতে পারে। যেমন আয়াতে বর্ণিত পিঁপড়াটি অন্যদের সঙ্গে করেছে।
২. পিঁপড়া নারীশাসিত পতঙ্গ। তাদের একজন রানি থাকে। পুরুষ পিঁপড়া ঘরে, নারী পিঁপড়া বাইরে থাকে। যখন সোলায়মান (আ.) এবং তাঁর বাহিনী এসে পড়ে, রানি সবাইকে নিজ নিজ ঘরে প্রবেশের নির্দেশ দেয়।
৩. পিঁপড়া আলাদা করে মানুষ চিনতে পারে। যেমন সোলায়মান (আ.)-কে চিনেছিল।
৪. পিঁপড়া বিপৎসংকেত বুঝতে পারে। পিঁপড়া সোলায়মানের আগমন এবং বিপৎসংকেত বুঝতে পেরে সবাইকে সতর্ক করেছিল।
আল্লাহর বিস্ময়কর সৃষ্টি পিঁপড়া। বিজ্ঞানীরা বলছেন, পৃথিবীতে ২২ হাজার প্রজাতির পিঁপড়া রয়েছে। এর মধ্যে বিজ্ঞানীরা ১২ হাজার ৫০০ প্রজাতির পিঁপড়ার শ্রেণিবিন্যাস করতে পেরেছেন। পিঁপড়া-মানবখ্যাত পতঙ্গবিজ্ঞানী ড. উইলসনের মতে, পিঁপড়া বিবেকসম্পন্ন, সামাজিক ও পরিশ্রমী প্রাণী। নিজস্ব বাজার এবং উন্নতমানের যোগাযোগব্যবস্থাও রয়েছে তাদের মধ্যে। তারা খাদ্য সঞ্চয় করে। পিঁপড়ারা মানুষের মতোই তাদের মৃতদেহ কবর দেয়। পোকামাকড়দের মধ্যে সবচেয়ে বড় মস্তিষ্কের অধিকারী হলো পিঁপড়া। অন্য প্রাণীদের তুলনায় এদের মস্তিষ্কে প্রায় আড়াই লাখ কোষ বেশি রয়েছে।
রানি বিলকিসের আত্মসমর্পণ
সুরা নামলের ২০ থেকে ৩১ নম্বর আয়াতে সোলায়মান (আ.)-এর সংবাদ সংগ্রহের মাধ্যম হিসেবে হুদহুদ পাখির উল্লেখ রয়েছে। সোলায়মান (আ.)-এর রাষ্ট্রীয় কাজে ব্যবহৃত হতো হুদহুদ পাখি। পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতে কী হচ্ছে, কী চিন্তা-ভাবনা চলছে, কোথায় কী ঘটছে, কোন রাজা কোথায় সৈন্য পাঠাচ্ছে, কেন পাঠাচ্ছে ইত্যাদি বিষয়ে খোঁজখবর নেওয়ার জন্য তিনি এই পাখি ব্যবহার করতেন। নবী একবার পাখিকে খুঁজে পাচ্ছেন না। কোরআনে ঘটনার বর্ণনা এসেছে এভাবে, ‘একদিন সোলায়মান (আ.) পাখিদের খোঁজখবর নিলেন, এরপর বললেন, কী হলো, হুদহুদকে দেখছি না কেন? নাকি সে অনুপস্থিত? আমি অবশ্যই তাকে কঠোর শাস্তি দেব কিংবা হত্যা করব, যদি না সে অনুপস্থিত থাকার যথাযথ কারণ দেখায়। কিছুক্ষণ পর হুদহুদ এসে বলল, আপনি অবগত নন এমন একটি বিষয়ে আমি অবগত হয়েছি। আমি সাবা থেকে নিশ্চিত সংবাদ নিয়ে আগমন করেছি। আমি এক নারীকে সাবাবাসীর ওপর রাজত্ব করতে দেখেছি। তাকে সবকিছুই দেওয়া হয়েছে এবং তার একটা বিরাট সিংহাসন আছে। আমি তাকে ও তার সম্প্রদায়কে দেখলাম তারা আল্লাহর পরিবর্তে সূর্যকে সিজদা করছে। শয়তান তাদের দৃষ্টিতে তাদের কার্যাবলি সুশোভিত করে দিয়েছে। এরপর তাদের সৎপথ থেকে নিবৃত্ত করেছে। অতএব তারা সৎপথ পায় না।’ (সুরা নামল: ২০-২৪)
সোলায়মান (আ.) রানি বিলকিসের কাছে বার্তা পাঠালেন। সব ভেবেচিন্তে তিনি নবীর দরবারে এলেন। রাজপ্রাসাদের স্বচ্ছ কাচের সড়কে ভ্রমে পড়ে গেলেন এবং গোড়ালির কাপড় টেনে ওপরে তুলে ফেললেন। স্বচ্ছ স্ফটিক নির্মিত প্রাসাদ দেখে রানি যারপরনাই বিস্মিত হলেন। এদিকে আবার নিজের সিংসাহন সোলায়মানের কাছে দেখে বিস্ময়ে তাজ্জব বনে গেলেন। পরে সোলায়মান (আ.)-এর ধর্মে দীক্ষিত হন।
এ ছাড়া তারাবির আজকের অংশে পূর্ববর্তী নবী ও তাঁদের জাতি, আল্লাহর একাত্ববাদ, কোরআনের নেয়ামত, অবিশ্বাসীদের প্রশ্নের জবাব, আল্লাহর নেয়ামত, অহংকার, ব্যবসায় সঠিক ওজন দেওয়া, মানুষের হক নষ্টের পরিণাম, বিভিন্ন জাতির ধ্বংসের বিবরণ, মুমিন জীবনে পরীক্ষা ও মুমিনদের পুরস্কার ইত্যাদি বিষয় আলোচিত হয়েছে।
লেখক: ইসলামবিষয়ক গবেষক ও সাংবাদিক
জুবাইদা বিনতে জাফর ইবনে মানসুর পঞ্চম আব্বাসি খলিফা হারুনুর রশিদের স্ত্রী ও জাফর ইবনুল মানসুরের কন্যা। তাঁর মা ছিলেন আল-খায়জুরানের বড় বোন সালসাল ইবনে আত্তা। জুবাইদার আসল নাম আমাতুল আজিজ। দাদা আল-মানসুর তাঁকে আদর করে জুবাইদা (ছোট মাখনের টুকরা) নামে ডাকতেন এবং এ নামেই তিনি ইতিহাসে বিখ্যাত।
১২ ঘণ্টা আগেকুয়েতে অনুষ্ঠিত ১৩তম আন্তর্জাতিক হিফজুল কোরআন প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান অর্জন করেছেন বাংলাদেশের হাফেজ আনাস মাহফুজ। বিশ্বের ৭৪টি দেশের প্রতিযোগীদের পেছনে ফেলে দেশের জন্য এ গৌরব বয়ে আনেন তিনি।
১২ ঘণ্টা আগেবিয়ে ইসলামি জীবনব্যবস্থার একটি মৌলিক অংশ। এটি ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও সামাজিক জীবনে শান্তি ও স্থিতি নিয়ে আসে। তবে বিয়ের আগে আর্থিক সচ্ছলতা অর্জন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এটি বিয়ে-পরবর্তী জীবনে দায়িত্ব পালনের জন্য ব্যক্তিকে সক্ষম করে।
১২ ঘণ্টা আগে