চিকিৎসাবিদ্যা চর্চায় নবীজির উৎসাহ

আবদুল আযীয কাসেমি
Thumbnail image

শরীরের যত্ন নেওয়া এবং শারীরিক সুস্থতার প্রতি লক্ষ রাখাকে ইসলাম মানুষের সুখ-শান্তির আবশ্যক উপাদান হিসেবে গণ্য করেছে। অবশ্য চিকিৎসা পেশা শেখানো নবী-রাসুলদের মৌলিক দায়িত্বের অন্তর্ভুক্ত নয়, জাগতিক জ্ঞানবিজ্ঞান বিশ্লেষণ করাও তাঁদের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে না। তাই চিকিৎসাকে মানুষের প্রচেষ্টা, গবেষণা ও অভিজ্ঞতার ওপর ছেড়ে দেওয়ার কথা বলে ইসলাম। তবে মহানবী (সা.) মাঝেমধ্যে চিকিৎসা বিষয়ে সচেতনতামূলক অনেক নির্দেশনা দিয়েছেন এবং জাগতিক চিকিৎসা করার প্রতি মানুষকে উদ্বুদ্ধ করেছেন।

পরীক্ষা-নিরীক্ষানির্ভর গবেষণামূলক চিকিৎসাশাস্ত্রের চর্চায় মহানবী (সা.) অনুপ্রেরণা দিয়েছেন। হজরত জাবের (রা.)-এর সূত্রে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘প্রতিটি রোগেরই প্রতিষেধক রয়েছে। সুতরাং অসুস্থতার সময় যথাযথ ওষুধ প্রয়োগ করা হলে মহান ও মহামহিম আল্লাহর হুকুমে সেটির নিরাময় হয়।’ (মুসলিম: ৬৯) অন্য হাদিসে এসেছে, হজরত ওসামা বিন শরিক (রা.) বলেন, মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা রোগের চিকিৎসা গ্রহণ করো। কারণ, আল্লাহ তাআলা এমন কোনো রোগ সৃষ্টি করেননি, যার চিকিৎসার জন্য ওষুধের ব্যবস্থা রাখেননি। তবে বার্ধক্য এমন একটি রোগ, যার কোনো চিকিৎসা নেই।’ (আবু দাউদ: ৩৮৫৫) আরেক হাদিসে ইরশাদ এসেছে, হজরত আবদুল্লাহ বিন মাসউদ (রা.) বলেন, নবী (সা.) বলেছেন, ‘নিঃসন্দেহে আল্লাহ তাআলা প্রতিটি রোগের জন্য প্রতিষেধক তৈরি করেছেন। যার সৌভাগ্য হয়, সে জানতে পারে; আর যার সৌভাগ্য হয় না, সে জানতে পারে না।’ (ইবনে হিব্বান: ৬০৬২) 

নবী (সা.) চিকিৎসার আদেশের পাশাপাশি এই শাস্ত্রে দক্ষ ব্যক্তিদের প্রাধান্য দিতেন। যায়েদ বিন আসলাম বলেন, রাসুল (সা.)-এর যুগে এক ব্যক্তির শরীর জখম হয়ে রক্ত জমেছিল। লোকটি আনমার গোত্রের দুজন ব্যক্তিকে তার চিকিৎসার জন্য ডাকলেন। তারা এসে রোগীর নাড়ি পরীক্ষা করে দেখল। তাদের দেখে নবী (সা.) বললেন, ‘তোমাদের দুজনের মধ্যে চিকিৎসা সম্পর্কে কে অধিক জ্ঞাত ও অভিজ্ঞ?’ তারা বলল, ‘হে আল্লাহর নবী, এ বিষয়টি চর্চায় কি কোনো উপকার আছে?’ নবী (সা.) জবাবে বললেন, ‘যে মহান সত্তা রোগের অস্তিত্ব দিয়েছেন, তিনিই সব রোগের জন্য প্রতিষেধকের ব্যবস্থা রেখেছেন। অর্থাৎ, মহান আল্লাহ তাআলা।’ (মুআত্তা মালিক: ১৬৮৯) 
খন্দকের যুদ্ধে হজরত সাদ বিন মুআজ (রা.)-এর গায়ে একটি তির বিদ্ধ হয়। তখন তাঁর চিকিৎসার জন্য নবী (সা.) বিশিষ্ট নারী সাহাবি রুফাইদা (রা.)কে নিয়োজিত করেন। কারণ তিনি চিকিৎসাবিদ্যায় বেশ পারদর্শী ও অভিজ্ঞ ছিলেন। তখনকার পরিবেশে পুরুষের চিকিৎসায় নারী নিয়োজিত হওয়ার প্রথা ছিল না। কিন্তু এ বিদ্যায় রুফাইদা (রা)-এর অসামান্য জ্ঞান ও দক্ষতার কারণে নবী (সা.) তাঁকে এ মর্যাদায় ভূষিত করেছিলেন।

আরবের শ্রেষ্ঠ চিকিৎসক ছিলেন সাকিফ গোত্রের হারিস বিন কালাদা। নবী (সা.) হজরত সাদ বিন আবি ওয়াক্কাসকে পাঠিয়েছিলেন তাঁর কাছে চিকিৎসা গ্রহণ করতে। অথচ তিনি তখনো ইসলাম গ্রহণ করেননি। তবু পেশাগত দক্ষতার কারণে তাঁর কাছে একজন মুসলিমের চিকিৎসার অনুমতি তিনি দিয়েছিলেন।

অভিজ্ঞ চিকিৎসককে ইসলাম অত্যন্ত মর্যাদা প্রদান করেছে, যারা চিকিৎসায় অনভিজ্ঞ হয়ে মানুষের জীবন ঝুঁকিতে ফেলে, তাদের ব্যাপারে উচ্চারিত হয়েছে কঠিন হুঁশিয়ারি। অদক্ষ চিকিৎসক কোনো ক্ষতি করলে সেটার ক্ষতিপূরণ অবশ্যই তাকে প্রদান করতে হবে। আবদুল্লাহ বিন আমরের বর্ণনায়, নবী (সা.) বলেন, ‘চিকিৎসাবিদ্যার জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা ছাড়া যে ব্যক্তি চিকিৎসা প্রদান করবে, ক্ষতির দায় তাকেই নিতে হবে।’ (আবু দাউদ: ৪৫৮৬) 

লেখক: শিক্ষক ও হাদিস গবেষক

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত