যেসব কারণে নামাজ শ্রেষ্ঠ ইবাদত

ড. আবু সালেহ মুহাম্মদ তোহা
Thumbnail image

ইসলামের মৌলিক স্তম্ভগুলোর মধ্যে নামাজ একটি শ্রেষ্ঠ ইবাদত। যে পাঁচটি ভিত্তির ওপর ইসলাম দাঁড়িয়ে আছে, এর মধ্যে নামাজ দ্বিতীয়। নামাজ ছাড়া ইসলামের মৌলিকত্ব অসম্ভব। ইমানের পর ইসলামে নামাজের চেয়ে অধিক গুরুত্বপূর্ণ আর কোনো ইবাদত নেই। কোরআন মজিদে ৮৩ বার নামাজের প্রসঙ্গ বর্ণিত হয়েছে। 

নামাজেই ইমানের পরিচয়
পবিত্র কোরআনে মুমিন-মুত্তাকির পরিচয় দিতে গিয়ে ইমানের পরেই নামাজের কথা বলা হয়েছে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘(মুত্তাকি তারা) যারা অদৃশ্যের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে। সালাত কায়েম করে এবং আমি তাদের যা কিছু দিয়েছি তা থেকে (আল্লাহর সন্তোষজনক কাজে) ব্যয় করে।’ (সুরা বাকারা: ৩) নামাজই ইমানের পরিচয় বহন করে। যে সঠিকভাবে নামাজ আদায় করে, সে-ই প্রকৃত মুমিন। মহান আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘মুমিনরা সফলকাম হয়েছে, যারা নিজেদের নামাজে বিনয়াবনত।’ (সুরা মুমিনুন: ১-২) 

নামাজ সবার জন্য সব সময়
ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে নামাজ ও রোজা ধনী-গরিব সবার জন্যই ফরজ। হজ ও জাকাতের বিধান শুধু ধনী ব্যক্তিদের জন্য প্রযোজ্য। শারীরিক অসুস্থতাসহ কিছু কিছু ক্ষেত্রে ফরজ রোজা ভঙ্গ করার হুকুম রয়েছে এবং পরে তা আদায় করে নেওয়া যায়। রোজা ভঙ্গের পর কাফ্ফারা আদায় করার বিধানও রয়েছে। তবে নামাজের ক্ষেত্রে কাজা করার হুকুম শুধু বিশেষ ক্ষেত্রেই দেওয়া হয়েছে। যদি কোনো ব্যক্তি দাঁড়িয়ে নামাজ আদায় করতে না পারেন, তিনি যেন বসে নামাজ আদায় করেন। যদি কারও বসে নামাজ আদায় করতে কষ্ট হয়, তিনি যেন শুয়ে নামাজ আদায় করেন। দেহে জ্ঞান থাকা পর্যন্ত কোনো অবস্থায় কোনো ব্যক্তির জন্য নামাজ বাদ দেওয়ার বিধান নেই। আল্লাহ বলেন, ‘যারা দাঁড়িয়ে, বসে ও শুয়ে আল্লাহকে স্মরণ করে...।’ (সুরা আল ইমরান: ১৯১) 

ঊর্ধ্বাকাশে বিধান প্রণয়ন
মহান আল্লাহ নবী (সা.)কে সাত আসমান পার করে ঊর্ধ্বালোকে তাঁর কাছে নিয়ে গিয়ে নামাজের বিধান দিয়েছেন। অন্য কোনো ইবাদতের ক্ষেত্রে এমনটি হয়নি। সুতরাং নামাজ যে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘এরপর আল্লাহ আমার উম্মতের ওপর ৫০ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ করে দেন। এরপর তা নিয়ে আমি ফিরে আসি। অবশেষে যখন মুসা (আ.)কে অতিক্রম করি; তখন তিনি বললেন, আল্লাহ তাআলা আপনার উম্মতের ওপর কী ফরজ করেছেন? আমি বললাম, ৫০ ওয়াক্ত নামাজ। তিনি বললেন, আপনি আপনার পালনকর্তার কাছে ফিরে যান; কেননা, আপনার উম্মত তা পালন করতে পারবে না। আমি ফিরে গেলাম।

আল্লাহ তাআলা কিছু অংশ কমিয়ে দিলেন। আমি মুসা (আ.)কে পুনরায় অতিক্রম করাকালে তিনি আবার জানতে চাইলেন, আর আমি বললাম, কিছু অংশ কমিয়ে দিয়েছেন। তিনি বললেন, আপনি পুনরায় আপনার রবের কাছে ফিরে যান। কারণ আপনার উম্মত এটিও আদায় করতে পারবে না। আমি ফিরে গেলাম। তখন আরও কিছু অংশ কমিয়ে দেওয়া হলো। আবারও মুসা (আ.)কে অতিক্রম করাকালে তিনি আবার জানতে চাইলেন। বললাম, কিছু অংশ কমিয়ে দিয়েছেন। তিনি বললেন, আপনি পুনরায় আপনার প্রতিপালকের কাছে যান। কারণ আপনার উম্মত এটিও আদায় করতে সক্ষম হবে না। তখন আমি পুনরায় গেলাম, তখন আল্লাহ বললেন, এই পাঁচই (নেকির দিক দিয়ে) পঞ্চাশ (বলে গণ্য হবে)। আমার কথার কোনো রদবদল হয় না।’ (মুসলিম: ১৬৩) 

পরিশুদ্ধি অর্জনের মাধ্যম
নিজেকে পরিশুদ্ধ করার একমাত্র ইবাদত নামাজ। নামাজের মাধ্যমেই মানুষ যাবতীয় পাপ থেকে মুক্ত থেকে পবিত্র জীবনযাপন করতে পারে। নিয়মিত নামাজ আদায় করতে থাকলে একসময় এই নামাজই মানুষকে অশ্লীল ও অন্যায় কাজ থেকে ফিরিয়ে রাখবে। আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই নামাজ (মানুষকে) অশ্লীল ও খারাপ কাজ থেকে বিরত রাখে।’ (সুরা আনকাবুত: ৪৫) 

পাপ থেকে মুক্তির উপায়
নামাজ মানুষকে পাপমুক্ত করে পবিত্র ও পরিচ্ছন্ন করে। হাদিসে বলা হয়েছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘আচ্ছা তোমরা বলো তো যদি কারও বাড়ির দরজার সামনে একটি নদী থাকে, যাতে সে প্রতিদিন পাঁচবার করে গোসল করে, তাহলে তার শরীরে কি কোনো ময়লা অবশিষ্ট থেকে যাবে?’ সাহাবিগণ বললেন, ‘কোনো ময়লা অবশিষ্ট থাকবে না।’ তিনি বললেন, ‘পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের উদাহরণও সেইরূপ। এর দ্বারা আল্লাহ পাপরাশি নিশ্চিহ্ন করে দেন।’ (বুখারি: ৫২৮) 

সমস্যার সমাধান নামাজ
আল্লাহর সাহায্য পাওয়ার জন্য তাঁর নির্দেশিত পদ্ধতি হলো, নামাজের মাধ্যমে তাঁর সাহায্য প্রার্থনা করা। যেকোনো বিপদাপদ ও সমস্যায় পড়লে আল্লাহর সাহায্য ও অনুগ্রহের প্রত্যাশায় নামাজে মগ্ন হওয়া চাই। পাশাপাশি পারিপার্শ্বিকভাবেও চেষ্টা করতে হবে। এতে আল্লাহর সাহায্য সহজে পাওয়া যাবে। আল্লাহ বলেন, ‘হে ইমানদারগণ, তোমরা ধৈর্য ও নামাজের মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনা করো।’ (সুরা বাকারা: ১৫৩) হুযাইফা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) কোনো কঠিন সমস্যার সম্মুখীন হলে নামাজ আদায় করতেন। (আবু দাউদ: ১৩১৯) 

গুরুত্বের সঙ্গে নামাজ আদায়
কোরআন মজিদে যেভাবে নামাজিদের প্রশংসা করা হয়েছে, তেমনি নামাজে অবহেলাকারীদের প্রতি ধমক ও হুঁশিয়ারিমূলক বক্তব্যও এসেছে। আল্লাহ বলেন, ‘কাজেই দুর্ভোগ সেই নামাজিদের, যারা তাদের নামাজ সম্বন্ধে উদাসীন।’ (সুরা মাউন: ৪-৫) এ জন্য খুব গুরুত্বসহকারে, সময়ের প্রতি লক্ষ রেখে, পুরুষদের জন্য জামাতের সঙ্গে নামাজ আদায় করতে হবে। নামাজে মনোযোগ ফেরাতে ইহসানের বিকল্প নেই। ইহসানের ব্যাখ্যায় হাদিসে বলা হয়েছে—ওমর ইবনুল খাত্তাব থেকে হতে বর্ণিত, জিবরাইল (আ.) নবীজিকে বললেন, ‘আমাকে ইহসান সম্পর্কে বলুন।’ তিনি (সা.) বললেন, ইহসান হলো, ‘তুমি এমনভাবে আল্লাহর ইবাদত করবে, যেন তুমি তাঁকে দেখছ। আর তুমি যদি তাঁকে না-ও দেখ, তিনি তোমাকে অবশ্যই দেখছেন।’ (বুখারি: ৫০) 

লেখক: সহযোগী অধ্যাপক, আরবি বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

কারা পরিদর্শক হলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক

ট্রাম্পের অভিষেক: সি আমন্ত্রণ পেলেও পাননি মোদি, থাকছেন আরও যাঁরা

ট্রাম্পের শপথের আগেই বার্নিকাটসহ তিন কূটনীতিককে পদত্যাগের নির্দেশ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতিকে বিচারের মুখোমুখি করতে হবে: সলিমুল্লাহ খান

সংস্কারের কিছু প্রস্তাবে মনঃক্ষুণ্ন বিএনপি

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত