ইসলামে সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর ৮ করণীয়

ইসলাম ডেস্ক
প্রকাশ : ১২ ডিসেম্বর ২০২৩, ১৮: ২১

সন্তান আল্লাহর অনন্য নেয়ামত। কোনো পরিবারে সন্তান ভূমিষ্ঠ হলে খুশির জোয়ার বয়ে যায়। ইসলামে সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর বেশ কিছু করণীয় রয়েছে। এখানে তা সংক্ষেপে তুলে ধরা হলো—

 ১. আল্লাহর প্রশংসা করা
সন্তান ভূমিষ্ঠ হলে আল্লাহর প্রশংসা করা, শুকরিয়া আদায় করা ও সন্তানের জন্য দোয়া করা উচিত। পবিত্র কোরআনে ইবরাহিম (আ.) সম্পর্কে বলা হয়েছে, সন্তান লাভের পর তিনি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেছেন, ‘সব প্রশংসা আল্লাহর, যিনি বৃদ্ধ বয়সে আমাকে ইসমাইল ও ইসহাককে দান করেছেন। নিশ্চয়ই আমার রব দোয়া শোনেন।’ (সুরা ইবরাহিম: ৩৯) 

২. প্রিয়জনদের সুসংবাদ দেওয়া 
সন্তান ভূমিষ্ঠের সুসংবাদ প্রিয়জনদের জানানো নবীদের সুন্নত। আবার সংবাদ জানার পর মা–বাবাকে মোবারকবাদ দেওয়া এবং খুশি প্রকাশ করাও সওয়াবের কাজ। পবিত্র কোরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘হে জাকারিয়া, আমি তোমাকে একটি পুত্র সন্তানের সুসংবাদ দিচ্ছি, তার নাম ইয়াহইয়া। আগে কাউকে আমি এই নাম দিইনি।’ (সুরা মারইয়াম: ৭) 

ইবনুল কাইয়িম (রহ.) বলেন, ‘সন্তান জন্মের সংবাদ পেলে তার জন্য কল্যাণ ও বরকতের দোয়া করা কর্তব্য।’ (তুহফাতুল মওলুদ) 

৩. আজান–একামত দেওয়া
সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার পরপরই ডান কানে আজান দেওয়া সুন্নত। আবু রাফে (রা.) বর্ণনা করেন, ‘ফাতিমার ঘরে হাসান ইবন আলি ভূমিষ্ঠ হলে আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)–কে তার কানে আজান দিতে দেখেছি।’ (আবু দাউদ ও তিরমিজি) কিছু কিছু বর্ণনায় বাম কানে একামত দেওয়ার কথাও এসেছে। 

৪. তাহনিক করা
ইমাম নববি (রহ.) বলেন, সন্তান ভূমিষ্ঠ হলে খেজুর দিয়ে তাহনিক করা সুন্নত। অর্থাৎ খেজুর চিবিয়ে নবজাতকের মুখের তালুতে আলতোভাবে মালিশ করা এবং তার মুখ খুলে দেওয়া, যাতে তার পেটে এর কিছু অংশ প্রবেশ করে। খেজুর সম্ভব না হলে অন্য কোনো মিষ্টি দ্রব্য দিয়ে তাহনিক করা যেতে পারে। (শরহে মুহাজ্জাব: ৮ / ৪২৪) 

আনাস (রা.) বলেন, ‘আব্দুল্লাহ ইবনে আবু তালহা ভূমিষ্ঠ হলে আমি তাকে রাসুলুল্লাহ (সা.) কাছে নিয়ে গেলাম। তিনি বললেন, “তোমার কাছে কি খেজুর আছে?” বললাম, হ্যাঁ। রাসুল (সা.) খেজুর চিবালেন। এরপর তা বের করে বাচ্চার মুখে দিলেন। বাচ্চাটি জিহ্বা দিয়ে চুষে ও ঠোঁটে লেগে থাকা অংশ চেটে খেতে লাগল।’ (মুসলিম) 

৫. মাথা মোড়ানো ও সদকা করা
ছেলে বা মেয়ে হোক, জন্মের সপ্তম দিন চুল কাটা এবং চুলের ওজন পরিমাণ রুপা সদকা করা সুন্নত। আলী (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘রাসুল (সা.) হাসানের পক্ষ থেকে একটি বকরি আকিকা দিয়েছেন এবং বলেছেন, হে ফাতেমা, তার মাথা মুণ্ডন করো ও তার চুলের ওজন পরিমাণ রুপা সদকা করো।’ (তিরমিজি) 

৬. আকিকা করা
নবজাতকের পক্ষ থেকে পশু জবাই করাকে আকিকা বলা হয়। অনেক আলিমের মতে, আকিকা সুন্নতে মুয়াক্কাদা। ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, ‘রাসুল (সা.) হাসান ও হুসাইনের পক্ষ থেকে একটি করে বকরি জবাই করেছেন।’ আনাস (রা.)–এর বর্ণনায় দুটি বকরির কথাও এসেছে। (আবু দাউদ) 

ইমাম মালেক (রহ.) মুআত্তায় বর্ণনা করেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যার সন্তান হয়, সে যদি সন্তানের পক্ষ থেকে আকিকা করতে চায়, তবে তা করা উচিত। প্রত্যেক সন্তান তার আকিকার বিনিময়ে বন্ধক হিসেবে রক্ষিত। সপ্তম দিন তার পক্ষ থেকে আকিকা করো, নাম রাখ ও চুল কাটো।’ (সুনানে আরবাআ) 

ছেলের পক্ষ থেকে দুটি এবং মেয়ের পক্ষ থেকে একটি ছাগল আকিকা করা সুন্নত। 

৭. অর্থবাচক নাম রাখা
ভূমিষ্ঠ হওয়ার প্রথম দিন বা সপ্তম দিন নবজাতকের নাম রাখা সুন্নত। রাসুল (সা.) বলেন, ‘আজ রাতে আমার একটি সন্তান ভূমিষ্ঠ হয়েছে। আমার পিতা ইবরাহিমের নামানুসারে তার নামকরণ করেছি ইবরাহিম।’ (মুসলিম) 

হাদিসের ভাষ্য মতে, নবজাতকের নাম সুন্দর ও অর্থবাচক রাখা সুন্নত। রাসুল (সা.) বলেন, ‘কিয়ামতের দিন তোমাদেরকে তোমাদের নিজ নামে ও তোমাদের বাপ–দাদার নামে ডাকা হবে। অতএব তোমাদের নাম সুন্দর করে নাও।’ (আহমদ ও ইবনে হিব্বান)

৮. খতনা করানো
খতনা করানো সুন্নত। কোনো কোনো হাদিসে জন্মের সপ্তম দিনে খতনা করানোর কথা এসেছে। জাবির (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) হাসান এবং হুসাইনের সপ্তম দিন আকিকা দিয়েছেন এবং খতনা করিয়েছেন। (তবরানি) 

মূলত খতনার বয়স জন্মের এক সপ্তাহ পর থেকে শুরু হয়। তবে সাবালক হওয়ার আগে করে ফেলার ব্যাপারে মত দিয়েছেন অধিকাংশ আলিম।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত