ইজাজুল হক, ঢাকা
বনি ইসরাইলের একদল লোককে আল্লাহ তাআলা বানর ও শূকরের পরিণত করে শাস্তি দিয়েছিলেন। শনিবারে তাদের মাছ ধরতে নিষেধ করা হয়েছিল। কিন্তু তারা তা কৌশলে অমান্য করতে থাকে। ফলে আল্লাহর আজাব অনিবার্য হয়ে পড়েছিল। পবিত্র কোরআনের একাধিক সুরার একাধিক আয়াতে এই গল্পের কথা এসেছে। ঘটনার সংক্ষিপ্ত বর্ণনা ও প্রাসঙ্গিক আলোচনা এখানে তুলে ধরা হলো।
ঘটনাটি কখন, কোথায় ঘটেছিল
ঘটনাটি কোথায় ঘটেছিল—এ ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য পবিত্র কোরআনে বর্ণিত নেই। তবে এটুকু বলা হয়েছে, ঘটনা সাগর উপকূলের এবং সেখানকার বাসিন্দারা মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। মুফাসসিররা এ ব্যাপারে একাধিক জায়গার কথা বলেছেন। তবে প্রসিদ্ধ মত হলো—জায়গাটির নাম আয়লা। লোহিত সাগরের তীরেই এটির অবস্থান। সিনাই থেকে মিসর কিংবা মিসর থেকে মক্কা যাওয়ার পথ থেকে বসতিটি দেখা যেত। (ইবনে কাসির, ফাতহুল বারি)
ঘটনার সময়কাল সম্পর্কেও কোরআনে স্পষ্ট কোনো তথ্য নেই। সময়টি খ্রিষ্টপূর্ব ১১০০ সাল বলে ধারণা করা হয়। প্রসিদ্ধি আছে, ঘটনাটি দাউদ (আ.)-এর যুগের। তবে এ মত সঠিক বলে মনে করেন না অধিকাংশ মুফাসসির। ইবনে কাসির, তাবারি, ইবনে হাইয়ান ও রাজির মতো মুফাসসিররা এই মতের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। তাঁরা মনে করেন, ঘটনার সময় আয়লা জনপদে কোনো নবী ছিলেন না। বরং ঘটনাটি ঘটেছিল মুসা (আ.) ও দাউদ (আ.)-এর যুগের মাঝামাঝি সময়ে। কোরআনের বর্ণনাশৈলী থেকেই এই মতের পক্ষে প্রমাণ মেলে। (ইবনে কাসির, কাসাসুল কোরআন)
অবাধ্যতায় যেভাবে জড়িয়েছিল তারা
ঘটনাটি ইসলামের ইতিহাসে আসহাবুস সাবতের গল্প নামে পরিচিত। আরবি ‘সাবত’ শব্দের অর্থ শনিবার। আসহাবুস সাবত বলতে তাদের বোঝানো হয়, শনিবারে আল্লাহর বিধান লঙ্ঘন করার কারণে যাদের শাস্তি দেওয়া হয়েছিল। মুসা (আ.)-এর আমলে বনি ইসরাইলের সাপ্তাহিক ইবাদতের দিন শনিবার নির্ধারণ করা হয়েছিল। এদিনে তাদের ওপর বিভিন্ন বিধি-নিষেধ আরোপ করা হয়। সেই ধারাবাহিকতায় এদিনে তাদের জন্য সাগর থেকে মাছ ধরাও নিষেধ ছিল। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তাদের আরও বলেছিলাম, শনিবারে সীমা লঙ্ঘন করো না এবং তাদের থেকে দৃঢ় ওয়াদা নিয়েছিলাম।’ (সুরা নিসা: ১৫৪)
সাগর উপকূলের জনপদ আয়লার প্রায় সব মানুষই মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করতেন। আল্লাহর বিধান হিসেবে তাঁরা সপ্তাহের বাকি দিনগুলোতে মাছ ধরলেও শনিবারে আল্লাহর ইবাদত করতেন। একসময় আল্লাহ তাঁদের পরীক্ষায় ফেললেন। শনিবারে মাছ শিকার না করার কারণে দেখা গেল, বিপুল পরিমাণ মাছ সমুদ্রের তীরে এসে জড়ো হতে থাকে। ফলে কিছু অবাধ্য মানুষের পক্ষে লোভ সামলানো কঠিন হয়ে পড়ে এবং তারা মাছ ধরতে কৌশলের আশ্রয় নেয়। শুক্রবারে জাল ফেলে বা গর্ত করে রাখত তারা। শনিবারে মাছ এসে সেই জালে বা গর্তে আটকে গেলে রোববারে এসে তারা তা শিকার করে নিত। পরে দেখা গেল, অনেকে শনিবারেই প্রকাশ্যে মাছ ধরতে লাগল। এটি ছিল সরাসরি আল্লাহর বিধানের লঙ্ঘন।
পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আর তাদের (মদিনার ইহুদিদের) সাগরতীরের লোকজনের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করো, যখন তারা শনিবারে সীমা লঙ্ঘন করত; যখন শনিবার পালনের দিন মাছ তাদের সামনে এসে পানিতে ভাসত। তবে যেদিন তারা শনিবার পালন করত না, সেদিন তা তাদের কাছে আসত না। এভাবেই আমরা তাদের পরীক্ষা করলাম, কারণ তারা অবাধ্যতায় লিপ্ত ছিল। (সুরা আরাফ: ১৬৩)
আল্লাহর আজাব এল যেভাবে
এ সময় আয়লায় তিন ধরনের লোক ছিল। এক. অবাধ্যতার সঙ্গে যুক্ত। দুই. অবাধ্যতার সঙ্গে যুক্ত নয় এবং অবাধ্যদের নিষেধও করত না; বরং নিষেধকারীদের বাধা দিত। তিন. অবাধ্যতার সঙ্গে যুক্ত নয় এবং অবাধ্যদের নিষেধ করত।
এই তিন দলের কথা তুলে ধরে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আর স্মরণ করো, যখন তাদের একদল বলেছিল, আল্লাহ যাদের ধ্বংস করবেন কিংবা কঠোর শাস্তি দেবেন, তোমরা তাদের সদুপদেশ দাও কেন? তারা বলেছিল, তোমাদের প্রতিপালকের কাছে দায়মুক্তির জন্য এবং যাতে তারা সাবধান হয় এ জন্য।’ (সুরা আরাফ: ১৬৪)
সমাজের ভালো মানুষগুলোর কথাও যখন অবাধ্যরা শুনল না, তখন আল্লাহ তাদের প্রতি ভীষণ ক্রুদ্ধ হলেন এবং কঠিন সাজা দিলেন। তাদের বানর ও শূকরে পরিণত করলেন। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তোমাদের মধ্যে যারা শনিবার সম্পর্কে সীমা লঙ্ঘন করেছিল, তাদের তোমরা অবশ্যই চেন, আমি তাদের বলেছিলাম—তোমরা ঘৃণিত বানরে পরিণত হও।’ (সুরা বাকারা: ৬৫) অন্য আয়াতে বলা হয়েছে, ‘বলো, ‘আমি কি তোমাদের এর চেয়ে নিকৃষ্ট পরিণামের সংবাদ দেব, যা আল্লাহর কাছে আছে? যাকে আল্লাহ লানত করেছেন এবং যার প্রতি ক্রোধান্বিত হয়েছেন আর যাদের কাউকে তিনি বানর ও কাউকে শূকর বানিয়েছেন… ।’ (সুরা মায়েদা: ৬০)
কিছু আয়াতে শুধু বানর বানানোর কথা এলেও একটি আয়াতে শূকর বানিয়ে দেওয়ার কথাও এসেছে। কাতাদা বলেছেন, ‘তাদের যুবকদের বানরে এবং বৃদ্ধদের শূকরে পরিণত করা হয়েছিল।’ আর শাস্তি পাওয়ার পরও তারা নিজেদের আত্মীয়স্বজনকে চিনত এবং তাদের কাছে এসে অঝোরে অশ্রু ঝরাত। (তাফসিরে জাকারিয়া)
কোরআনের আয়াত থেকে এ কথা স্পষ্ট যে, যারা অবাধ্যদের উপদেশ দিয়েছিলেন, আল্লাহ তাঁদের রক্ষা করেছিলেন। আর যারা অবাধ্যতায় লিপ্ত ছিল, আল্লাহ তাদের সাজা দিয়েছিলেন। যেমন আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘এরপর যে উপদেশ তাদের দেওয়া হয়েছিল, তারা যখন তা ভুলে গেল, তখন যারা অসৎ কাজ থেকে নিষেধ করত, তাদের আমি উদ্ধার করি। আর যারা অবাধ্য হয়েছিল, তাদের আমি কঠোর শাস্তি দেই।... ’ (আরাফ: ১৬৫)
তবে যারা অবাধ্যতায় লিপ্ত হননি, আবার নিষেধও করেননি—তাদের পরিণতি কী হয়েছিল, তা সরাসরি কোরআনের আয়াত থেকে জানা যায় না। মুফাসসিরদের কেউ কেউ তাদেরও শাস্তিপ্রাপ্তদের অন্তর্ভুক্ত করেছেন। তবে অধিকাংশ মুফাসসিরের মতে, আল্লাহ তাদের রক্ষা করেছিলেন। (কাসাসুল কোরআন)
একালের বানর-শূকর কি ইহুদিদের বংশধর
অনেকে মনে করেন, একালের বানর-শূকর বনি ইসরাইলের সেই শাস্তিপ্রাপ্ত লোকজনের বংশধর। এ ধারণা সঠিক নয়। কারণ, শাস্তি পাওয়ার তৃতীয় দিনেই তাদের সবার মৃত্যু হয়েছিল এবং তারা পৃথিবীতে বংশবিস্তার করেনি। (কাসাসুল কোরআন)
এক সাহাবি মহানবী (সা.)-কে জিজ্ঞেস করলেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল, একালের বানর-শূকরগুলো কি সেই রূপান্তরিত ইহুদিদের বংশধর?’ তিনি বললেন, ‘আল্লাহ তাআলা যখন কোনো জাতিকে ধ্বংস করেন বা আজাব দেন, তখন তাদের বংশ পৃথিবীতে বাকি রাখেন না। মূলত বানর-শূকর তাদের আগে থেকেই ছিল।’ (মুসলিম: ২৬৬৩)
কেয়ামতের আগে মানুষ কি বানর-শূকরে পরিণত হবে
বুখারি শরিফের এক হাদিসে কিয়ামতের আগে কিছু মানুষকে বানর ও শূকরে পরিণত করার হুঁশিয়ারি এসেছে। এটিকে হাদিস বিশারদরা কিয়ামতের অন্যতম আলামত হিসেবে উল্লেখ করেছেন। মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘আমার উম্মতের মধ্যে এমন কিছু দল সৃষ্টি হবে, যারা ব্যভিচার, রেশমি কাপড়, মদ ও বাদ্যযন্ত্র হালাল মনে করবে। একইভাবে এমন কিছু দল থাকবে, যারা পাহাড়ের পাদদেশে বসবাস করবে, বিকেল বেলায় যখন তারা পশুর পাল নিয়ে ফিরবে, তখন তাদের কাছে কোনো অভাবী ভিক্ষুক এলে বলবে, আগামীকাল সকালে এসো। এদিকে রাতের আঁধারেই আল্লাহ তাদের ধ্বংস করে দেবেন। পাহাড় ধসিয়ে দেবেন। আর বাকিদের কেয়ামত পর্যন্ত বানর ও শূকর বানিয়ে রাখবেন।’ (বুখারি: ৫৫৯০)
গল্প থেকে শিক্ষা
আসহাবুস সাবতের গল্প থেকে আমাদের জন্য শেখার অনেক উপাদান রয়েছে। এখানে কয়েকটি তুলে ধরা হলো—
এক. সৎ কাজের আদেশ দেওয়া এবং অসৎ কাজে নিষেধ করা ইসলামে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব। সমাজে কেউ অন্যায় করলে তাকে নিবৃত্ত করার সাধ্যমতো চেষ্টা করার নির্দেশ দেয় ইসলাম। এই মহান দায়িত্ব পালন না করলে সমাজের সবাইকে আল্লাহর শাস্তির মুখে পড়তে হবে।
দুই. আল্লাহ যা আদেশ করেছেন, তা নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করা জরুরি। কোনো প্রকারের কৌশল, বাহানা বা প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে তা এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করা নিষেধ। মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘ইহুদিরা যে গুনাহগুলো করেছিল, তোমরা তা করিও না। এতে তোমরা তাদের মতো হারাম বিষয় কৌশল করে হালাল করে ফেলবে।’ (ইবনে কাসির)
তিন. বিকৃতির শাস্তি আল্লাহ বিকৃতির মাধ্যমেই দেন। তারা মহান আল্লাহর বিধান বিকৃত করেছিল, আল্লাহ তাদের আকৃতি বিকৃত করে বানর বানিয়ে দেন।
চার. আল্লাহ কোনো বিধান আবশ্যক করে দিলে সেই বিধানের পেছনের কারণ না খুঁজে তা পালন করাই বান্দার প্রধান কর্তব্য।
বনি ইসরাইলের একদল লোককে আল্লাহ তাআলা বানর ও শূকরের পরিণত করে শাস্তি দিয়েছিলেন। শনিবারে তাদের মাছ ধরতে নিষেধ করা হয়েছিল। কিন্তু তারা তা কৌশলে অমান্য করতে থাকে। ফলে আল্লাহর আজাব অনিবার্য হয়ে পড়েছিল। পবিত্র কোরআনের একাধিক সুরার একাধিক আয়াতে এই গল্পের কথা এসেছে। ঘটনার সংক্ষিপ্ত বর্ণনা ও প্রাসঙ্গিক আলোচনা এখানে তুলে ধরা হলো।
ঘটনাটি কখন, কোথায় ঘটেছিল
ঘটনাটি কোথায় ঘটেছিল—এ ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য পবিত্র কোরআনে বর্ণিত নেই। তবে এটুকু বলা হয়েছে, ঘটনা সাগর উপকূলের এবং সেখানকার বাসিন্দারা মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। মুফাসসিররা এ ব্যাপারে একাধিক জায়গার কথা বলেছেন। তবে প্রসিদ্ধ মত হলো—জায়গাটির নাম আয়লা। লোহিত সাগরের তীরেই এটির অবস্থান। সিনাই থেকে মিসর কিংবা মিসর থেকে মক্কা যাওয়ার পথ থেকে বসতিটি দেখা যেত। (ইবনে কাসির, ফাতহুল বারি)
ঘটনার সময়কাল সম্পর্কেও কোরআনে স্পষ্ট কোনো তথ্য নেই। সময়টি খ্রিষ্টপূর্ব ১১০০ সাল বলে ধারণা করা হয়। প্রসিদ্ধি আছে, ঘটনাটি দাউদ (আ.)-এর যুগের। তবে এ মত সঠিক বলে মনে করেন না অধিকাংশ মুফাসসির। ইবনে কাসির, তাবারি, ইবনে হাইয়ান ও রাজির মতো মুফাসসিররা এই মতের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। তাঁরা মনে করেন, ঘটনার সময় আয়লা জনপদে কোনো নবী ছিলেন না। বরং ঘটনাটি ঘটেছিল মুসা (আ.) ও দাউদ (আ.)-এর যুগের মাঝামাঝি সময়ে। কোরআনের বর্ণনাশৈলী থেকেই এই মতের পক্ষে প্রমাণ মেলে। (ইবনে কাসির, কাসাসুল কোরআন)
অবাধ্যতায় যেভাবে জড়িয়েছিল তারা
ঘটনাটি ইসলামের ইতিহাসে আসহাবুস সাবতের গল্প নামে পরিচিত। আরবি ‘সাবত’ শব্দের অর্থ শনিবার। আসহাবুস সাবত বলতে তাদের বোঝানো হয়, শনিবারে আল্লাহর বিধান লঙ্ঘন করার কারণে যাদের শাস্তি দেওয়া হয়েছিল। মুসা (আ.)-এর আমলে বনি ইসরাইলের সাপ্তাহিক ইবাদতের দিন শনিবার নির্ধারণ করা হয়েছিল। এদিনে তাদের ওপর বিভিন্ন বিধি-নিষেধ আরোপ করা হয়। সেই ধারাবাহিকতায় এদিনে তাদের জন্য সাগর থেকে মাছ ধরাও নিষেধ ছিল। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তাদের আরও বলেছিলাম, শনিবারে সীমা লঙ্ঘন করো না এবং তাদের থেকে দৃঢ় ওয়াদা নিয়েছিলাম।’ (সুরা নিসা: ১৫৪)
সাগর উপকূলের জনপদ আয়লার প্রায় সব মানুষই মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করতেন। আল্লাহর বিধান হিসেবে তাঁরা সপ্তাহের বাকি দিনগুলোতে মাছ ধরলেও শনিবারে আল্লাহর ইবাদত করতেন। একসময় আল্লাহ তাঁদের পরীক্ষায় ফেললেন। শনিবারে মাছ শিকার না করার কারণে দেখা গেল, বিপুল পরিমাণ মাছ সমুদ্রের তীরে এসে জড়ো হতে থাকে। ফলে কিছু অবাধ্য মানুষের পক্ষে লোভ সামলানো কঠিন হয়ে পড়ে এবং তারা মাছ ধরতে কৌশলের আশ্রয় নেয়। শুক্রবারে জাল ফেলে বা গর্ত করে রাখত তারা। শনিবারে মাছ এসে সেই জালে বা গর্তে আটকে গেলে রোববারে এসে তারা তা শিকার করে নিত। পরে দেখা গেল, অনেকে শনিবারেই প্রকাশ্যে মাছ ধরতে লাগল। এটি ছিল সরাসরি আল্লাহর বিধানের লঙ্ঘন।
পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আর তাদের (মদিনার ইহুদিদের) সাগরতীরের লোকজনের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করো, যখন তারা শনিবারে সীমা লঙ্ঘন করত; যখন শনিবার পালনের দিন মাছ তাদের সামনে এসে পানিতে ভাসত। তবে যেদিন তারা শনিবার পালন করত না, সেদিন তা তাদের কাছে আসত না। এভাবেই আমরা তাদের পরীক্ষা করলাম, কারণ তারা অবাধ্যতায় লিপ্ত ছিল। (সুরা আরাফ: ১৬৩)
আল্লাহর আজাব এল যেভাবে
এ সময় আয়লায় তিন ধরনের লোক ছিল। এক. অবাধ্যতার সঙ্গে যুক্ত। দুই. অবাধ্যতার সঙ্গে যুক্ত নয় এবং অবাধ্যদের নিষেধও করত না; বরং নিষেধকারীদের বাধা দিত। তিন. অবাধ্যতার সঙ্গে যুক্ত নয় এবং অবাধ্যদের নিষেধ করত।
এই তিন দলের কথা তুলে ধরে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আর স্মরণ করো, যখন তাদের একদল বলেছিল, আল্লাহ যাদের ধ্বংস করবেন কিংবা কঠোর শাস্তি দেবেন, তোমরা তাদের সদুপদেশ দাও কেন? তারা বলেছিল, তোমাদের প্রতিপালকের কাছে দায়মুক্তির জন্য এবং যাতে তারা সাবধান হয় এ জন্য।’ (সুরা আরাফ: ১৬৪)
সমাজের ভালো মানুষগুলোর কথাও যখন অবাধ্যরা শুনল না, তখন আল্লাহ তাদের প্রতি ভীষণ ক্রুদ্ধ হলেন এবং কঠিন সাজা দিলেন। তাদের বানর ও শূকরে পরিণত করলেন। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তোমাদের মধ্যে যারা শনিবার সম্পর্কে সীমা লঙ্ঘন করেছিল, তাদের তোমরা অবশ্যই চেন, আমি তাদের বলেছিলাম—তোমরা ঘৃণিত বানরে পরিণত হও।’ (সুরা বাকারা: ৬৫) অন্য আয়াতে বলা হয়েছে, ‘বলো, ‘আমি কি তোমাদের এর চেয়ে নিকৃষ্ট পরিণামের সংবাদ দেব, যা আল্লাহর কাছে আছে? যাকে আল্লাহ লানত করেছেন এবং যার প্রতি ক্রোধান্বিত হয়েছেন আর যাদের কাউকে তিনি বানর ও কাউকে শূকর বানিয়েছেন… ।’ (সুরা মায়েদা: ৬০)
কিছু আয়াতে শুধু বানর বানানোর কথা এলেও একটি আয়াতে শূকর বানিয়ে দেওয়ার কথাও এসেছে। কাতাদা বলেছেন, ‘তাদের যুবকদের বানরে এবং বৃদ্ধদের শূকরে পরিণত করা হয়েছিল।’ আর শাস্তি পাওয়ার পরও তারা নিজেদের আত্মীয়স্বজনকে চিনত এবং তাদের কাছে এসে অঝোরে অশ্রু ঝরাত। (তাফসিরে জাকারিয়া)
কোরআনের আয়াত থেকে এ কথা স্পষ্ট যে, যারা অবাধ্যদের উপদেশ দিয়েছিলেন, আল্লাহ তাঁদের রক্ষা করেছিলেন। আর যারা অবাধ্যতায় লিপ্ত ছিল, আল্লাহ তাদের সাজা দিয়েছিলেন। যেমন আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘এরপর যে উপদেশ তাদের দেওয়া হয়েছিল, তারা যখন তা ভুলে গেল, তখন যারা অসৎ কাজ থেকে নিষেধ করত, তাদের আমি উদ্ধার করি। আর যারা অবাধ্য হয়েছিল, তাদের আমি কঠোর শাস্তি দেই।... ’ (আরাফ: ১৬৫)
তবে যারা অবাধ্যতায় লিপ্ত হননি, আবার নিষেধও করেননি—তাদের পরিণতি কী হয়েছিল, তা সরাসরি কোরআনের আয়াত থেকে জানা যায় না। মুফাসসিরদের কেউ কেউ তাদেরও শাস্তিপ্রাপ্তদের অন্তর্ভুক্ত করেছেন। তবে অধিকাংশ মুফাসসিরের মতে, আল্লাহ তাদের রক্ষা করেছিলেন। (কাসাসুল কোরআন)
একালের বানর-শূকর কি ইহুদিদের বংশধর
অনেকে মনে করেন, একালের বানর-শূকর বনি ইসরাইলের সেই শাস্তিপ্রাপ্ত লোকজনের বংশধর। এ ধারণা সঠিক নয়। কারণ, শাস্তি পাওয়ার তৃতীয় দিনেই তাদের সবার মৃত্যু হয়েছিল এবং তারা পৃথিবীতে বংশবিস্তার করেনি। (কাসাসুল কোরআন)
এক সাহাবি মহানবী (সা.)-কে জিজ্ঞেস করলেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল, একালের বানর-শূকরগুলো কি সেই রূপান্তরিত ইহুদিদের বংশধর?’ তিনি বললেন, ‘আল্লাহ তাআলা যখন কোনো জাতিকে ধ্বংস করেন বা আজাব দেন, তখন তাদের বংশ পৃথিবীতে বাকি রাখেন না। মূলত বানর-শূকর তাদের আগে থেকেই ছিল।’ (মুসলিম: ২৬৬৩)
কেয়ামতের আগে মানুষ কি বানর-শূকরে পরিণত হবে
বুখারি শরিফের এক হাদিসে কিয়ামতের আগে কিছু মানুষকে বানর ও শূকরে পরিণত করার হুঁশিয়ারি এসেছে। এটিকে হাদিস বিশারদরা কিয়ামতের অন্যতম আলামত হিসেবে উল্লেখ করেছেন। মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘আমার উম্মতের মধ্যে এমন কিছু দল সৃষ্টি হবে, যারা ব্যভিচার, রেশমি কাপড়, মদ ও বাদ্যযন্ত্র হালাল মনে করবে। একইভাবে এমন কিছু দল থাকবে, যারা পাহাড়ের পাদদেশে বসবাস করবে, বিকেল বেলায় যখন তারা পশুর পাল নিয়ে ফিরবে, তখন তাদের কাছে কোনো অভাবী ভিক্ষুক এলে বলবে, আগামীকাল সকালে এসো। এদিকে রাতের আঁধারেই আল্লাহ তাদের ধ্বংস করে দেবেন। পাহাড় ধসিয়ে দেবেন। আর বাকিদের কেয়ামত পর্যন্ত বানর ও শূকর বানিয়ে রাখবেন।’ (বুখারি: ৫৫৯০)
গল্প থেকে শিক্ষা
আসহাবুস সাবতের গল্প থেকে আমাদের জন্য শেখার অনেক উপাদান রয়েছে। এখানে কয়েকটি তুলে ধরা হলো—
এক. সৎ কাজের আদেশ দেওয়া এবং অসৎ কাজে নিষেধ করা ইসলামে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব। সমাজে কেউ অন্যায় করলে তাকে নিবৃত্ত করার সাধ্যমতো চেষ্টা করার নির্দেশ দেয় ইসলাম। এই মহান দায়িত্ব পালন না করলে সমাজের সবাইকে আল্লাহর শাস্তির মুখে পড়তে হবে।
দুই. আল্লাহ যা আদেশ করেছেন, তা নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করা জরুরি। কোনো প্রকারের কৌশল, বাহানা বা প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে তা এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করা নিষেধ। মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘ইহুদিরা যে গুনাহগুলো করেছিল, তোমরা তা করিও না। এতে তোমরা তাদের মতো হারাম বিষয় কৌশল করে হালাল করে ফেলবে।’ (ইবনে কাসির)
তিন. বিকৃতির শাস্তি আল্লাহ বিকৃতির মাধ্যমেই দেন। তারা মহান আল্লাহর বিধান বিকৃত করেছিল, আল্লাহ তাদের আকৃতি বিকৃত করে বানর বানিয়ে দেন।
চার. আল্লাহ কোনো বিধান আবশ্যক করে দিলে সেই বিধানের পেছনের কারণ না খুঁজে তা পালন করাই বান্দার প্রধান কর্তব্য।
সন্ধ্যাবেলার কিছু গুরুত্বপূর্ণ আমল রয়েছে। মহানবী (সা.) সাহাবিদের এসব আমল করার উপদেশ দিতেন। এখানে কয়েকটি আমলের
৪ ঘণ্টা আগেইবাদতের নিয়তে করা সব কাজই নেক আমলের অন্তর্ভুক্ত। আর নেক আমল মানুষের জীবনের প্রকৃত সম্পদ। এর মাধ্যমে পাওয়া যাবে জান্নাত। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘এবং যারা ইমান এনেছে ও সৎকর্ম করেছে, তারাই জান্নাতের অধিকারী, তারা সেখানে চিরকাল থাকবে।’ (সুরা বাকারা: ৮২)
১ দিন আগেভ্রমণের সময় নামাজের ক্ষেত্রে বিশেষ ছাড় দিয়েছে ইসলাম। কোনো ব্যক্তি নিজের আবাসস্থল থেকে ৪৮ মাইল তথা ৭৮ কিলোমিটার দূরের কোনো গন্তব্যে ভ্রমণের নিয়তে বের হয়ে তাঁর এলাকা পেরিয়ে গেলেই শরিয়তের দৃষ্টিতে সে মুসাফির হয়ে যায়। (জাওয়াহিরুল ফিকহ: ১/৪৩৬)
২ দিন আগে