মুফতি আবু আবদুল্লাহ আহমদ
ইসলামে নাগরিকদের সম্পদের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণাধিকার রাষ্ট্রকে প্রদান করা হয়নি। আবার সব সম্পদের নিরঙ্কুশ মালিকানা জনগণের হাতেও ন্যস্ত করা হয়নি। অর্থাৎ ইসলাম ব্যক্তি মালিকানার স্বীকৃতি দেয়, তবে তা সামষ্টিক অধিকার নিশ্চিত করার পর। ইসলাম নাগরিকদের ব্যক্তিমালিকানাকে সম্পূর্ণরূপে উপেক্ষা করেনি, যেন তারা তাদের মেধা ও শ্রমকে সর্বোচ্চ পর্যায়ে কাজে লাগানোর উৎসাহ হারিয়ে না ফেলে। আবার প্রদত্ত ব্যক্তিমালিকানা যেন সামষ্টিক স্বার্থের ওপর কোনোরূপ বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি না করতে পারে, একই সময়ে তার প্রতিও গুরুত্বসহকারে লক্ষ রাখা হয়েছে।
তাই যতক্ষণ পর্যন্ত এ দুই মালিকানার মাঝে কোনোরূপ বিরোধের আশঙ্কা দেখা না দিয়েছে; ততক্ষণ পর্যন্ত সব ধরনের মালিকানাকে যথাযথ মর্যাদায় সংরক্ষণ করা হয়েছে। কিন্তু যেখানে ব্যক্তিমালিকানা ও রাষ্ট্রীয় মালিকানার মাঝে বিরোধ পরিলক্ষিত হয়েছে এবং উভয় ক্ষেত্রে ভারসাম্য রক্ষা করা কিংবা সামঞ্জস্য বিধান করা অসম্ভব হয়েছে, সেখানে ইসলাম সামষ্টিক স্বার্থকে ব্যক্তিস্বার্থের ওপর প্রাধান্য দিয়েছে।
এ মূলনীতির আলোকে ইসলামি অর্থনীতিবিদেরা বলেন, দেশে স্বাভাবিক অবস্থা বিরাজ করলে নাগরিকদের ব্যক্তিমালিকানাধীন সম্পদে হস্তক্ষেপ করা বা জোরপূর্বক তা গ্রহণ করার অধিকার সরকারের নেই। কারণ রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘একজনের সম্পদ, প্রাণ ও মর্যাদা হরণ করা অন্যজনের জন্য সম্পূর্ণ হারাম।’ (মুসলিম) এর ব্যাখ্যায় ইমাম আবু ইউসুফ (রহ.) বলেন, ‘শরিয়ত নির্ধারিত ন্যায়সংগত অধিকার ছাড়া কারও কাছ থেকে কোনো জিনিস বলপূর্বক গ্রহণ করা রাষ্ট্রপ্রধানের জন্যও বৈধ নয়।’ (কিতাবুল খারাজ, পৃ.৬৬)
তবে যদি দেশে কোনো কারণে অস্বাভাবিক পরিস্থিতি বিরাজ করে, কিংবা চরম খাদ্যসংকট ও দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়, তাহলে প্রথমে রাষ্ট্রীয় কোষাগারের সম্পদ দিয়ে তার মোকাবিলা করার চেষ্টা করা হবে। যদি তাতেও মানুষের ন্যূনতম পর্যায়ের অন্ন, বস্ত্র ও বাসস্থানের ব্যবস্থা করা সম্ভব না হয়, তাহলে বিত্তবানদের সম্পদ দিয়ে এই সংকট মোকাবিলার জন্য রাষ্ট্রপ্রধানের পক্ষ থেকে আহ্বান জানানো হবে। তারা যদি স্বতঃস্ফূর্তভাবে এ দায়িত্ব পালনে এগিয়ে না আসে, তাহলে তাদের অতিরিক্ত সম্পদ জবরদস্তিমূলক আদায় করে অথবা তাদের ওপর জোরপূর্বক নির্ধারিত কর ধার্য করে তা দ্বারা অভাবীদের অভাব দূর করতে হবে।
এ ক্ষেত্রে বিত্তবানেরা যদি ইতিপূর্বে শরিয়তের আবশ্যকীয় জাকাত-সদকা যথাযথভাবে আদায় করেও থাকে, তবু নিঃস্ব লোকজনের জীবন-জীবিকার অধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে রাষ্ট্র বিত্তশালীদের ওপর অতিরিক্ত কর আরোপ করার অধিকার রাখে। প্রখ্যাত ইসলামি আইনবিদ আল্লামা ইবনে হাজম জাহেরি (রহ.)-এর সপক্ষে বেশ কিছু হাদিস উল্লেখ করেছেন তাঁর ‘আল মুহাল্লা’ নামক কিতাবে। যেমন রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যার কাছে প্রয়োজনের অতিরিক্ত পানাহারের উপকরণ রয়েছে, তা যার অভাব রয়েছে তাকে দিয়ে দেওয়া উচিত।’
আলী (রা.) বলেন, ‘বিত্তবানদের সম্পদ দ্বারা গরিবদের জীবন-জীবিকার ন্যূনতম চাহিদা পূরণ করাকে আল্লাহ তাআলা ফরজ করে দিয়েছেন। যদি গরিবরা অন্ন, বস্ত্র কিংবা অন্য কোনো আর্থিক সংকটের মুখোমুখি হয়, তাহলে তা এ কারণে হবে যে, বিত্তবানেরা তাদের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করেনি। কিয়ামতের দিন এ ব্যাপারে তারা আল্লাহর দরবারে জিজ্ঞাসিত হবে এবং এর জন্য তাদের শাস্তি দেওয়া হবে।’
এ ধরনের আরও কয়েকটি হাদিস উল্লেখ করার পর ইবনে হাজম জাহেরি (রহ.) বলেন, প্রতিটি অঞ্চলের বিত্তবানদের ওপর ফরজ হচ্ছে সেখানকার গরিব ও বিত্তহীনদের আর্থিক জীবনের দায়িত্বভার গ্রহণ করা। যদি বাইতুল মালের আয় দ্বারা বিত্তহীনদের জীবন ধারণের সংস্থান করা সম্ভব না হয়, তাহলে রাষ্ট্রপ্রধান তাদের দায়িত্ব গ্রহণের জন্য বিত্তবানদের বাধ্য করতে পারবেন। অর্থাৎ, তাদের প্রয়োজনাতিরিক্ত সম্পদ বাধ্যতামূলকভাবে আদায় করে গরিবদের প্রয়োজনে ব্যয় করতে পারবেন।
সাহাবি আবু সাইদ খুদরি (রা.)-এর উদ্ধৃতি দিয়ে ইবনে হাজম আরও বলেন, এ ব্যাপারে সব সাহাবি একমত যে যদি কোনো লোক ক্ষুধার্ত বা বিবস্ত্র থাকে অথবা প্রয়োজনীয় বাসস্থানের ব্যবস্থা করতে অক্ষম হয়, তাহলে বিত্তবানদের প্রয়োজনের অতিরিক্ত সম্পদ দিয়ে তার ব্যবস্থা করা ফরজ। (আল মুহাল্লা: ৬ / ১৫৬)
লেখক: শিক্ষক ও ফতোয়া গবেষক
ইসলামে নাগরিকদের সম্পদের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণাধিকার রাষ্ট্রকে প্রদান করা হয়নি। আবার সব সম্পদের নিরঙ্কুশ মালিকানা জনগণের হাতেও ন্যস্ত করা হয়নি। অর্থাৎ ইসলাম ব্যক্তি মালিকানার স্বীকৃতি দেয়, তবে তা সামষ্টিক অধিকার নিশ্চিত করার পর। ইসলাম নাগরিকদের ব্যক্তিমালিকানাকে সম্পূর্ণরূপে উপেক্ষা করেনি, যেন তারা তাদের মেধা ও শ্রমকে সর্বোচ্চ পর্যায়ে কাজে লাগানোর উৎসাহ হারিয়ে না ফেলে। আবার প্রদত্ত ব্যক্তিমালিকানা যেন সামষ্টিক স্বার্থের ওপর কোনোরূপ বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি না করতে পারে, একই সময়ে তার প্রতিও গুরুত্বসহকারে লক্ষ রাখা হয়েছে।
তাই যতক্ষণ পর্যন্ত এ দুই মালিকানার মাঝে কোনোরূপ বিরোধের আশঙ্কা দেখা না দিয়েছে; ততক্ষণ পর্যন্ত সব ধরনের মালিকানাকে যথাযথ মর্যাদায় সংরক্ষণ করা হয়েছে। কিন্তু যেখানে ব্যক্তিমালিকানা ও রাষ্ট্রীয় মালিকানার মাঝে বিরোধ পরিলক্ষিত হয়েছে এবং উভয় ক্ষেত্রে ভারসাম্য রক্ষা করা কিংবা সামঞ্জস্য বিধান করা অসম্ভব হয়েছে, সেখানে ইসলাম সামষ্টিক স্বার্থকে ব্যক্তিস্বার্থের ওপর প্রাধান্য দিয়েছে।
এ মূলনীতির আলোকে ইসলামি অর্থনীতিবিদেরা বলেন, দেশে স্বাভাবিক অবস্থা বিরাজ করলে নাগরিকদের ব্যক্তিমালিকানাধীন সম্পদে হস্তক্ষেপ করা বা জোরপূর্বক তা গ্রহণ করার অধিকার সরকারের নেই। কারণ রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘একজনের সম্পদ, প্রাণ ও মর্যাদা হরণ করা অন্যজনের জন্য সম্পূর্ণ হারাম।’ (মুসলিম) এর ব্যাখ্যায় ইমাম আবু ইউসুফ (রহ.) বলেন, ‘শরিয়ত নির্ধারিত ন্যায়সংগত অধিকার ছাড়া কারও কাছ থেকে কোনো জিনিস বলপূর্বক গ্রহণ করা রাষ্ট্রপ্রধানের জন্যও বৈধ নয়।’ (কিতাবুল খারাজ, পৃ.৬৬)
তবে যদি দেশে কোনো কারণে অস্বাভাবিক পরিস্থিতি বিরাজ করে, কিংবা চরম খাদ্যসংকট ও দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়, তাহলে প্রথমে রাষ্ট্রীয় কোষাগারের সম্পদ দিয়ে তার মোকাবিলা করার চেষ্টা করা হবে। যদি তাতেও মানুষের ন্যূনতম পর্যায়ের অন্ন, বস্ত্র ও বাসস্থানের ব্যবস্থা করা সম্ভব না হয়, তাহলে বিত্তবানদের সম্পদ দিয়ে এই সংকট মোকাবিলার জন্য রাষ্ট্রপ্রধানের পক্ষ থেকে আহ্বান জানানো হবে। তারা যদি স্বতঃস্ফূর্তভাবে এ দায়িত্ব পালনে এগিয়ে না আসে, তাহলে তাদের অতিরিক্ত সম্পদ জবরদস্তিমূলক আদায় করে অথবা তাদের ওপর জোরপূর্বক নির্ধারিত কর ধার্য করে তা দ্বারা অভাবীদের অভাব দূর করতে হবে।
এ ক্ষেত্রে বিত্তবানেরা যদি ইতিপূর্বে শরিয়তের আবশ্যকীয় জাকাত-সদকা যথাযথভাবে আদায় করেও থাকে, তবু নিঃস্ব লোকজনের জীবন-জীবিকার অধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে রাষ্ট্র বিত্তশালীদের ওপর অতিরিক্ত কর আরোপ করার অধিকার রাখে। প্রখ্যাত ইসলামি আইনবিদ আল্লামা ইবনে হাজম জাহেরি (রহ.)-এর সপক্ষে বেশ কিছু হাদিস উল্লেখ করেছেন তাঁর ‘আল মুহাল্লা’ নামক কিতাবে। যেমন রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যার কাছে প্রয়োজনের অতিরিক্ত পানাহারের উপকরণ রয়েছে, তা যার অভাব রয়েছে তাকে দিয়ে দেওয়া উচিত।’
আলী (রা.) বলেন, ‘বিত্তবানদের সম্পদ দ্বারা গরিবদের জীবন-জীবিকার ন্যূনতম চাহিদা পূরণ করাকে আল্লাহ তাআলা ফরজ করে দিয়েছেন। যদি গরিবরা অন্ন, বস্ত্র কিংবা অন্য কোনো আর্থিক সংকটের মুখোমুখি হয়, তাহলে তা এ কারণে হবে যে, বিত্তবানেরা তাদের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করেনি। কিয়ামতের দিন এ ব্যাপারে তারা আল্লাহর দরবারে জিজ্ঞাসিত হবে এবং এর জন্য তাদের শাস্তি দেওয়া হবে।’
এ ধরনের আরও কয়েকটি হাদিস উল্লেখ করার পর ইবনে হাজম জাহেরি (রহ.) বলেন, প্রতিটি অঞ্চলের বিত্তবানদের ওপর ফরজ হচ্ছে সেখানকার গরিব ও বিত্তহীনদের আর্থিক জীবনের দায়িত্বভার গ্রহণ করা। যদি বাইতুল মালের আয় দ্বারা বিত্তহীনদের জীবন ধারণের সংস্থান করা সম্ভব না হয়, তাহলে রাষ্ট্রপ্রধান তাদের দায়িত্ব গ্রহণের জন্য বিত্তবানদের বাধ্য করতে পারবেন। অর্থাৎ, তাদের প্রয়োজনাতিরিক্ত সম্পদ বাধ্যতামূলকভাবে আদায় করে গরিবদের প্রয়োজনে ব্যয় করতে পারবেন।
সাহাবি আবু সাইদ খুদরি (রা.)-এর উদ্ধৃতি দিয়ে ইবনে হাজম আরও বলেন, এ ব্যাপারে সব সাহাবি একমত যে যদি কোনো লোক ক্ষুধার্ত বা বিবস্ত্র থাকে অথবা প্রয়োজনীয় বাসস্থানের ব্যবস্থা করতে অক্ষম হয়, তাহলে বিত্তবানদের প্রয়োজনের অতিরিক্ত সম্পদ দিয়ে তার ব্যবস্থা করা ফরজ। (আল মুহাল্লা: ৬ / ১৫৬)
লেখক: শিক্ষক ও ফতোয়া গবেষক
৭ ধরনের গুনাহকে বিধ্বংসী আখ্যা দিয়ে তা থেকে বিরত থাকার জন্য বিশেষভাবে উপদেশ দিয়েছেন মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)। (রিয়াদুস সালেহিন: ১৮০২) কাজগুলো হলো—
১৯ ঘণ্টা আগেসড়ককে মানুষের চলাচলের উপযোগী করা ইমানের পরিচায়ক। মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘ইমানের ৭০টির বেশি শাখা আছে, এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও প্রধান শাখা হলো, এ কথার স্বীকৃতি দেওয়া যে, আল্লাহ তাআলা ছাড়া কোনো মাবুদ নেই। আর সবচেয়ে নিচের শাখাটি হলো, সড়কে কোনো কষ্টদায়ক বস্তু বা প্রতিবন্ধকতা থাকলে তা সরিয়ে দেওয়া।’ (
২ দিন আগেশীতকালে দিনের দৈর্ঘ্য বছরের যেকোনো সময়ের তুলনায় কম হয় এবং আবহাওয়া থাকে শীতল, যা রোজা রাখার জন্য সবচেয়ে বেশি উপযোগী সময়। অপর দিকে শীতের রাত অনেক দীর্ঘ হয়, ফলে রাতের প্রথম প্রহরে ঘুমিয়ে নিয়ে শেষ প্রহরে আল্লাহর ইবাদত ও তাহাজ্জুদে মগ্ন হওয়ার সুবর্ণ সুযোগ পাওয়া যায়। এ কারণে হাদিসে শীতকালকে ইবাদতের বসন্তক
৩ দিন আগেআল্লাহ মানুষকে দুভাবে পরীক্ষা করেন। বিপদ দিয়ে এবং নিয়ামত দিয়ে। নিয়ামতের পরীক্ষা বিপদের পরীক্ষার চেয়ে কঠিন। বিপদের সময় মানুষ আল্লাহর স্মরণ করে; তার সাহায্য প্রার্থনা করে।
৪ দিন আগে