ড. আবু সালেহ মুহাম্মদ তোহা
রোজা এমন এক গুরুত্বপূর্ণ ফরজ ইবাদত, যেটিকে আল্লাহ তাআলা নিজের বলে ঘোষণা দিয়েছেন এবং অন্যান্য ইবাদত-বন্দেগি থেকে রোজাকে ভিন্ন মর্যাদা দিয়েছেন। রোজা কেবলই আল্লাহর জন্য আর আল্লাহ্ তাআলা কোনো মাধ্যম ছাড়া নিজেই রোজার প্রতিদান দেবেন। রোজাদারের মুখের গন্ধও আল্লাহর কাছে মিশকে আম্বরের ঘ্রাণের চেয়েও অধিক পছন্দনীয় ও প্রিয়। রোজা পাপ থেকে রক্ষার ঢালস্বরূপ। রোজা তাকওয়া অর্জনের সোপান। রোজার মাধ্যমে তাকওয়ার সফল অনুশীলন হয়ে থাকে।
কোরআন-হাদিসে তাকওয়া
তাকওয়ার আভিধানিক অর্থ বিরত থাকা হলেও শরিয়তের পরিভাষায় তাকওয়া হলো—শুধুই আল্লাহর ভয়ে যাবতীয় অন্যায় কাজ থেকে বিরত থাকা। যার মধ্যে তাকওয়া থাকে, তাকে বলে মুত্তাকি। মুত্তাকির পরিচয় প্রসঙ্গে আল্লাহ বলেন, ‘যারা অদৃশ্যের প্রতি ইমান রাখে, নামাজ আদায় করে এবং আমি তাদের যে রিজিক দিয়েছি, তা থেকে ব্যয় করে। আর যারা আপনার ওপর যা নাজিল করা হয়েছে এবং আপনার আগে যা নাজিল করা হয়েছে তার প্রতি ইমান রাখে, আর তারা আখিরাতের প্রতি নিশ্চিত বিশ্বাসী।’ (সুরা বাকারা: ৩-৪)
তাকওয়ার প্রতি উৎসাহিত করে আল্লাহ বলেন, ‘হে মুমিনগণ, তোমরা আল্লাহকে যথাযথভাবে ভয় করো এবং তোমরা মুসলমান না হয়ে কোনো অবস্থায়ই ইন্তেকাল কোরো না।’ (সুরা আলে-ইমরান: ১০২)
তাকওয়ার প্রতি উৎসাহিত করে রাসুলুল্লাহ (সা.) এক মর্মস্পর্শী ভাষণে সুস্পষ্ট করে বলেন। ইরবাজ ইবনে সারিয়া (রা.) বলেন, একদিন রাসুলুল্লাহ (সা.) আমাদের নিয়ে নামাজ আদায় করলেন। এরপর আমাদের দিকে মুখ ফিরে বসলেন এবং আমাদের এক মর্মস্পর্শী উপদেশ দিলেন। এতে আমাদের চোখ অশ্রুসিক্ত হলো এবং অন্তর বিগলিত হলো। এক ব্যক্তি বলে উঠল, ‘হে আল্লাহর রাসুল, মনে হয় এটি বিদায়ী উপদেশ।’ তখন তিনি বললেন, ‘আমি তোমাদের তাকওয়া তথা আল্লাহভীতির উপদেশ দিচ্ছি এবং আমিরের কথা শুনতে ও তাঁর আনুগত্য করতে বলছি, যদিও তিনি হাবশি দাস হন।...’ (আবু দাউদ: ৪৬০৯; তিরমিজি: ২৬৭৬; ইবনে মাজাহ: ৪২)
ইবাদতের উদ্দেশ্য তাকওয়া অর্জন
সব ইবাদতেরই উদ্দেশ্য তাকওয়া অর্জন করা। আল্লাহ বলেন, ‘হে মানুষ, তোমরা তোমাদের সেই প্রতিপালকের ইবাদত করো, যিনি তোমাদের ও তোমাদের পূর্ববর্তীদের সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা মুত্তাকি হতে পারো।’ (সুরা বাকারা: ২১)
নামাজ, রোজা, হজ, জাকাত, কোরবানিসহ সব ইবাদতের মাধ্যমে বান্দা তাকওয়া অর্জন করবে—এমনটিই কাম্য বিষয়।
রমজানে তাকওয়ার অনুশীলন
রোজা তাকওয়া অর্জনের অন্যতম মাধ্যম। রমজান তাকওয়া অর্জনের অনুশীলন ও প্রশিক্ষণের মাস। আল্লাহ বলেন, ‘হে মুমিনগণ, তোমাদের জন্য রোজার বিধান দেওয়া হলো, যেমন বিধান তোমাদের পূর্ববর্তীগণকে দেওয়া হয়েছিল, যাতে তোমরা মুত্তাকি হতে পারো।’ (সুরা বাকারা: ১৮৩)
বিভিন্নভাবে রোজা পালনে তাকওয়ার অনুশীলন ও প্রশিক্ষণ হয়ে থাকে। প্রয়োজন শুধু সেই তাকওয়াকে ধরে রাখা আর সেই আলোকে জীবন পরিচালনা করা। ব্যক্তি, পরিবার, সমাজসহ জীবনের সব শাখা-প্রশাখায় তাকওয়ার আলোকে সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও তা বাস্তবায়ন করা। রোজার মাধ্যমে বিভিন্নভাবে তাকওয়ার অনুশীলন হয়ে থাকে। যথা:
এক. রোজাদার সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য পানাহার, যৌনাচার ও পাপাচার থেকে বিরত থাকে। দিনভর মনোলোভা খাবার ও স্ত্রীর মনোরম আকর্ষণ তাকে পরাস্ত করতে পারে না। পৃথিবীর কোনো শক্তি ও ভয় নয়; বরং আল্লাহর সন্তুষ্টি ও ভয় তাকে জাগ্রত করে রাখে। আল্লাহর স্মরণ তাকে সর্বদা সংযত রাখে। আল্লাহকে সর্বদা স্মরণ করার এই সক্ষমতা রোজাই তাকে দান করে।
দুই. রমজান মাসে ইবাদতের অনুকূল পরিবেশ বিরাজ করে। রহমত ও জান্নাতের দুয়ার খোলা, জাহান্নাম বন্ধ আর শয়তান বন্দী থাকে। আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রতিনিয়ত ঘোষণা আসতে থাকে, ‘হে কল্যাণ অন্বেষী! অগ্রসর হও, হে অকল্যাণের পথিক! থেমে যাও।’
অন্যদিকে আল্লাহ তাআলা ইবাদতের সওয়াব বাড়িয়ে দেন। নফলের সওয়াব ফরজের মতো আর ফরজের সওয়াব ৭০টি ফরজের সমান হয়ে যায়। এ মাসে আল্লাহ তাআলা তাঁর ক্ষমা ও অনুগ্রহের মাত্রা বাড়িয়ে দেন। আল্লাহ তাআলা প্রতিদিন ইফতারের সময় অসংখ্য ব্যক্তিকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিয়ে থাকেন। এসবের প্রভাবে মানুষের মধ্যে ভালো কাজের প্রতি আগ্রহ জন্মায় ও খোদাভীতি তথা তাকওয়ার সৃষ্টি হয়।
কোনো ইবাদত করে আল্লাহর দরবারে তা কবুল হওয়ার আশা এবং কবুল না হওয়ার ভয় রাখা উচিত। রোজাদারের দিন কাটবে আল্লাহর আজাবের ভয় এবং রহমতের আশার মধ্য দিয়ে আর রাত কাটবে নামাজ, দোয়া ও কান্নাকাটির মধ্য দিয়ে। তাহলে রমজানের সওয়াব, বরকত ও রহমত পূর্ণভাবে পাওয়া যাবে।
লেখক: সহযোগী অধ্যাপক, আরবি বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।ছবি: পিক্সাবে
রোজা এমন এক গুরুত্বপূর্ণ ফরজ ইবাদত, যেটিকে আল্লাহ তাআলা নিজের বলে ঘোষণা দিয়েছেন এবং অন্যান্য ইবাদত-বন্দেগি থেকে রোজাকে ভিন্ন মর্যাদা দিয়েছেন। রোজা কেবলই আল্লাহর জন্য আর আল্লাহ্ তাআলা কোনো মাধ্যম ছাড়া নিজেই রোজার প্রতিদান দেবেন। রোজাদারের মুখের গন্ধও আল্লাহর কাছে মিশকে আম্বরের ঘ্রাণের চেয়েও অধিক পছন্দনীয় ও প্রিয়। রোজা পাপ থেকে রক্ষার ঢালস্বরূপ। রোজা তাকওয়া অর্জনের সোপান। রোজার মাধ্যমে তাকওয়ার সফল অনুশীলন হয়ে থাকে।
কোরআন-হাদিসে তাকওয়া
তাকওয়ার আভিধানিক অর্থ বিরত থাকা হলেও শরিয়তের পরিভাষায় তাকওয়া হলো—শুধুই আল্লাহর ভয়ে যাবতীয় অন্যায় কাজ থেকে বিরত থাকা। যার মধ্যে তাকওয়া থাকে, তাকে বলে মুত্তাকি। মুত্তাকির পরিচয় প্রসঙ্গে আল্লাহ বলেন, ‘যারা অদৃশ্যের প্রতি ইমান রাখে, নামাজ আদায় করে এবং আমি তাদের যে রিজিক দিয়েছি, তা থেকে ব্যয় করে। আর যারা আপনার ওপর যা নাজিল করা হয়েছে এবং আপনার আগে যা নাজিল করা হয়েছে তার প্রতি ইমান রাখে, আর তারা আখিরাতের প্রতি নিশ্চিত বিশ্বাসী।’ (সুরা বাকারা: ৩-৪)
তাকওয়ার প্রতি উৎসাহিত করে আল্লাহ বলেন, ‘হে মুমিনগণ, তোমরা আল্লাহকে যথাযথভাবে ভয় করো এবং তোমরা মুসলমান না হয়ে কোনো অবস্থায়ই ইন্তেকাল কোরো না।’ (সুরা আলে-ইমরান: ১০২)
তাকওয়ার প্রতি উৎসাহিত করে রাসুলুল্লাহ (সা.) এক মর্মস্পর্শী ভাষণে সুস্পষ্ট করে বলেন। ইরবাজ ইবনে সারিয়া (রা.) বলেন, একদিন রাসুলুল্লাহ (সা.) আমাদের নিয়ে নামাজ আদায় করলেন। এরপর আমাদের দিকে মুখ ফিরে বসলেন এবং আমাদের এক মর্মস্পর্শী উপদেশ দিলেন। এতে আমাদের চোখ অশ্রুসিক্ত হলো এবং অন্তর বিগলিত হলো। এক ব্যক্তি বলে উঠল, ‘হে আল্লাহর রাসুল, মনে হয় এটি বিদায়ী উপদেশ।’ তখন তিনি বললেন, ‘আমি তোমাদের তাকওয়া তথা আল্লাহভীতির উপদেশ দিচ্ছি এবং আমিরের কথা শুনতে ও তাঁর আনুগত্য করতে বলছি, যদিও তিনি হাবশি দাস হন।...’ (আবু দাউদ: ৪৬০৯; তিরমিজি: ২৬৭৬; ইবনে মাজাহ: ৪২)
ইবাদতের উদ্দেশ্য তাকওয়া অর্জন
সব ইবাদতেরই উদ্দেশ্য তাকওয়া অর্জন করা। আল্লাহ বলেন, ‘হে মানুষ, তোমরা তোমাদের সেই প্রতিপালকের ইবাদত করো, যিনি তোমাদের ও তোমাদের পূর্ববর্তীদের সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা মুত্তাকি হতে পারো।’ (সুরা বাকারা: ২১)
নামাজ, রোজা, হজ, জাকাত, কোরবানিসহ সব ইবাদতের মাধ্যমে বান্দা তাকওয়া অর্জন করবে—এমনটিই কাম্য বিষয়।
রমজানে তাকওয়ার অনুশীলন
রোজা তাকওয়া অর্জনের অন্যতম মাধ্যম। রমজান তাকওয়া অর্জনের অনুশীলন ও প্রশিক্ষণের মাস। আল্লাহ বলেন, ‘হে মুমিনগণ, তোমাদের জন্য রোজার বিধান দেওয়া হলো, যেমন বিধান তোমাদের পূর্ববর্তীগণকে দেওয়া হয়েছিল, যাতে তোমরা মুত্তাকি হতে পারো।’ (সুরা বাকারা: ১৮৩)
বিভিন্নভাবে রোজা পালনে তাকওয়ার অনুশীলন ও প্রশিক্ষণ হয়ে থাকে। প্রয়োজন শুধু সেই তাকওয়াকে ধরে রাখা আর সেই আলোকে জীবন পরিচালনা করা। ব্যক্তি, পরিবার, সমাজসহ জীবনের সব শাখা-প্রশাখায় তাকওয়ার আলোকে সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও তা বাস্তবায়ন করা। রোজার মাধ্যমে বিভিন্নভাবে তাকওয়ার অনুশীলন হয়ে থাকে। যথা:
এক. রোজাদার সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য পানাহার, যৌনাচার ও পাপাচার থেকে বিরত থাকে। দিনভর মনোলোভা খাবার ও স্ত্রীর মনোরম আকর্ষণ তাকে পরাস্ত করতে পারে না। পৃথিবীর কোনো শক্তি ও ভয় নয়; বরং আল্লাহর সন্তুষ্টি ও ভয় তাকে জাগ্রত করে রাখে। আল্লাহর স্মরণ তাকে সর্বদা সংযত রাখে। আল্লাহকে সর্বদা স্মরণ করার এই সক্ষমতা রোজাই তাকে দান করে।
দুই. রমজান মাসে ইবাদতের অনুকূল পরিবেশ বিরাজ করে। রহমত ও জান্নাতের দুয়ার খোলা, জাহান্নাম বন্ধ আর শয়তান বন্দী থাকে। আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রতিনিয়ত ঘোষণা আসতে থাকে, ‘হে কল্যাণ অন্বেষী! অগ্রসর হও, হে অকল্যাণের পথিক! থেমে যাও।’
অন্যদিকে আল্লাহ তাআলা ইবাদতের সওয়াব বাড়িয়ে দেন। নফলের সওয়াব ফরজের মতো আর ফরজের সওয়াব ৭০টি ফরজের সমান হয়ে যায়। এ মাসে আল্লাহ তাআলা তাঁর ক্ষমা ও অনুগ্রহের মাত্রা বাড়িয়ে দেন। আল্লাহ তাআলা প্রতিদিন ইফতারের সময় অসংখ্য ব্যক্তিকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিয়ে থাকেন। এসবের প্রভাবে মানুষের মধ্যে ভালো কাজের প্রতি আগ্রহ জন্মায় ও খোদাভীতি তথা তাকওয়ার সৃষ্টি হয়।
কোনো ইবাদত করে আল্লাহর দরবারে তা কবুল হওয়ার আশা এবং কবুল না হওয়ার ভয় রাখা উচিত। রোজাদারের দিন কাটবে আল্লাহর আজাবের ভয় এবং রহমতের আশার মধ্য দিয়ে আর রাত কাটবে নামাজ, দোয়া ও কান্নাকাটির মধ্য দিয়ে। তাহলে রমজানের সওয়াব, বরকত ও রহমত পূর্ণভাবে পাওয়া যাবে।
লেখক: সহযোগী অধ্যাপক, আরবি বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।ছবি: পিক্সাবে
ভ্রমণের সময় নামাজের ক্ষেত্রে বিশেষ ছাড় দিয়েছে ইসলাম। কোনো ব্যক্তি নিজের আবাসস্থল থেকে ৪৮ মাইল তথা ৭৮ কিলোমিটার দূরের কোনো গন্তব্যে ভ্রমণের নিয়তে বের হয়ে তাঁর এলাকা পেরিয়ে গেলেই শরিয়তের দৃষ্টিতে সে মুসাফির হয়ে যায়। (জাওয়াহিরুল ফিকহ: ১/৪৩৬)
৭ ঘণ্টা আগেজুবাইদা বিনতে জাফর ইবনে মানসুর পঞ্চম আব্বাসি খলিফা হারুনুর রশিদের স্ত্রী ও জাফর ইবনুল মানসুরের কন্যা। তাঁর মা ছিলেন আল-খায়জুরানের বড় বোন সালসাল ইবনে আত্তা। জুবাইদার আসল নাম আমাতুল আজিজ। দাদা আল-মানসুর তাঁকে আদর করে জুবাইদা (ছোট মাখনের টুকরা) নামে ডাকতেন এবং এ নামেই তিনি ইতিহাসে বিখ্যাত।
১ দিন আগেকুয়েতে অনুষ্ঠিত ১৩তম আন্তর্জাতিক হিফজুল কোরআন প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান অর্জন করেছেন বাংলাদেশের হাফেজ আনাস মাহফুজ। বিশ্বের ৭৪টি দেশের প্রতিযোগীদের পেছনে ফেলে দেশের জন্য এ গৌরব বয়ে আনেন তিনি।
১ দিন আগে